Breaking News

২০১৯-২০২০ বাজেট প্রতিক্রিয়ায় পোল্ট্রি শিল্প এবং মানববন্ধনঃ খামারী দের বাচাঁতে হবে, খামার বাচাঁতে হবে।

২০১৯-২০২০ বাজেট প্রতিক্রিয়ায় পোল্ট্রি শিল্প
এবারও হতাশ হয়েছে পোল্ট্রি শিল্প
পণ্য আমদানিতে অগ্রিম কর (এ.টি) প্রত্যাহারের দাবি
ঢাকা, ১৯ জুন ২০১৯: বিগত বছরের মত এবারও আশা ভঙ্গ হয়েছে পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তাদের। পোল্ট্রি ফিডের অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল ‘ভ‚ট্টা’ আমদানিতে অগ্রিম আয়কর এবং ‘সয়াবিন অয়েল কেক’ এর উপর থেকে রেগুলেটরি শুল্ক প্রত্যাহার না হওয়ায় এবং সব ধরনের পণ্য আমদানিতে নতুনভাবে আগাম কর (এ.টি) আরোপ হওয়ায় চরম হতাশা এখন পোল্ট্রি শিল্পে। আজ ১৯ জুন, ২০১৯ মহাখালিতে অবস্থিত প্যারাগন হাউসে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে পোল্ট্রি নেতারা বলেন- উৎপাদন খরচ কমিয়ে দেশীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানী বাজারে প্রবেশের যে স্বপ্ন তাঁরা দেখছিলেন প্রস্তাবিত বাজেটে তা পূরণ হয়নি। ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ফিআব) এবং ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
ফিআব সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান বলেন- সয়াবিন অয়েল কেক এর উপর আরোপিত ৫% রেগুলেটরি ডিউটি; কটন সীড ও পাম নাটসের উপর থেকে ৫% সিডি ও ৫% এটিভি; এবং ভ‚ট্টার ওপর থেকে ৫% এআইটি প্রত্যাহারই ছিল এবারের অন্যতম দাবি। আশা করা হয়েছিল এ দাবি পূরণ হলে পোল্ট্রি ফিড এবং সেই সাথে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ কিছুটা কমবে। তিনি বলেন- সয়াবিন অয়েল কেক আমদানিতে আরডি এবং ভ‚ট্টা আমদানিতে এআইটি বহাল রাখা হয়েছে; পাম নাটস বা কারনেল এবং কটন সীডের ওপর থেকে কাস্টমস শুল্ক তুলে নিয়ে নতুন করে ৫% হারে রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করা হয়েছে। জনাব এহতেশাম বলেন- প্রস্তাবিত বাজেটে ফিডের উপকরণ হিসেবে যে ৩টি উপকরণে কর ও শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে [১. অ্যামোনিয়া বাইন্ডার, ২. লিভার প্রটেকটর, রেনাল প্রটেকটর, রেসপিরেটরি প্রটেকটর, এবং ৩. ভ্যাকসিন স্ট্যাবিলাইজার (থিওসাফফেট)]সেগুলোর সাথে ফিড ইন্ডাষ্ট্রি’র কোন সম্পর্ক নেই। ফলে কার্যত তেমন কোন সুফল আসবে না। তবে বিদ্যমান সুবিধাদি বহাল রাখা এবং রাইস ব্রান এর রপ্তানী শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবে সন্তোষ প্রকাশ করেন ফিআব সাধারণ সম্পাদক মোঃ আহসানুজ্জামান। একই সাথে ডি-অয়েলড রাইস ব্রান (ডিওআরবি) এর উপরও সমহারে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেন তিনি। তাঁর মতে যেহেতু এ দু’টি উপকরণ মূলত একই পণ্য তাই শুল্ক সমান না হলে এক পণ্যের নামে অন্য পণ্য রপ্তানী করে মুনাফা লুটার চেষ্টা করবে সুযোগ সন্ধানীরা। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে সরকারের নতুন একটি সিদ্ধান্ত মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন আহসানুজ্জামান। এ সিদ্ধান্ত মতে সব ধরণের পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ৫ শতাংশ হারে আগাম কর (এ.টি) প্রদান করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএবি) সভাপতি রাকিবুর রহমান টুটুল বলেন- অর্থ বিল ২০১৯ এর ৭১ নম্বর অনুচ্ছেদে ২০১২ সনের ৪৭ নং আইনের ধারা ৩১ এর সংশোধন করে সকল আমদানিকৃত পণ্য সরবরাহের উপর ৫% হারে আগাম কর (অঞ) ধার্য্য করা হয়েছে। এসআরও নং ১৭২-আইন/২০১৯/২৯-মূসক তারিখ ১৩ জুন ২০১৯ মূলে এই আগাম কর (অঞ) ধার্য্য করা হয়েছে যা পোল্ট্রি খাতের উপর প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন- পোল্ট্রিখাত মূল্য সংযোজন কর (মূসক) থেকে অব্যহতি পাওয়ার কারণে হ্রাসকৃত অর্থ সমন্বয়েরও কোন সুযোগ নেই। তাই এ বিধান প্রযোজ্য হলে একদিন বয়সী জিপি/পিএস বাচ্চা, যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিপুল পরিমাণ অর্থ অগ্রিম কর হিসেবে কর্তন করা হবে। ফলশ্রæতিতে বাচ্চার উৎপাদন কার্যক্রমে চলতি মূলধনের সংকট সৃষ্টি হবে। সর্বোপরি পোল্ট্রির ডিম ও মাংস উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সার্বিকভাবে পোল্ট্রি খাতের জন্য এ বিধান রহিত করার অনুরোধ জানান জনাব টুটুল।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন- জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের পর থেকেই ‘পোল্ট্রি ফিডের দাম কমবে’ বলে গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হচ্ছে এতে সাধারণ খামারিরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। গতকাল ১৮ জুন প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে ‘পোল্ট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পে’ অর্থ বরাদ্দ দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান জনাব মসিউর।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- আয়করের সমতার নীতি অনুসরণের লক্ষ্যে উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল সংগ্রহের উপর ‘উৎস আয়কর’ কর্তনের বিধান পুণঃসংযোজন করা হয়েছে। এ বিধানটি কার্যকর হলে দেশীয় উৎস থেকে সংগৃহীত পোল্ট্রি ফিড তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ যেমন ভ‚টা, রাইস ব্রান সহ বিভিন্ন উপকরণ ক্রয়ে ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত ‘উৎস কর’ কর্তন করতে হবে। এতে পোল্ট্রি ফিডের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে, যা সামগ্রিকভাবে পোল্ট্রি’র উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেবে। পোল্ট্রি সংশ্লিষ্টরা বলেন- বিগত কয়েক বছর ধরে পোল্ট্রি খাতের উন্নয়ন এবং ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে বাজেটে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলে অনুরোধ জানিয়ে আসছেন তাঁরা। একই সাথে তাঁদের দাবির যৌক্তিকতাও উপস্থাপন করে আসছেন কিন্তু কার্যত তেমন কোন সুফল পাচ্ছেন না। গত মে মাসে “কৃষির বাজেট কৃষকের বাজেট” অনুষ্ঠানে মাননীয় অর্থমন্ত্রী ‘পোল্ট্রি বীমা’ চালু’র আশ্বাস দিলেও বাজেটে তার প্রতিফলন নেই। সাশ্রয়ী মূল্যের ডিম ও মুরগির মাংসের যোগান নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এবং
প্রতিযোগিতামূলক রপ্তানী বাজারে বাংলাদেশী পোল্ট্রি পণ্যের প্রবেশ সহজতর করতে পোল্ট্রি শিল্পের যৌক্তিক দাবিগুলো পুনর্বিবেচনার দাবি জানান পোল্ট্রি সংশ্লিষ্টরা।

মানব বন্ধন

২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে পোল্ট্রি ফিডে ব্যবহৃত কাচাঁমালের মূল্যবৃদ্ধির আশংকায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারীরা; এর ফলে পোল্ট্রি ফিডের দাম আরেক দফা বাড়বে যা তাদের কে পুজির সংকটে ফেলবে। তাই পোল্ট্রি খামারীদের সুরক্ষায় পোল্ট্রি খাতের উপর আরোপিত সকল কর ও শুল্ক বাতিলের দাবি জানিয়ে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
অর্থ বিল ২০১৯ এর ৭১ নম্বর অনুচ্ছেদে ২০১২ সনের ৪৭ নং আইনের ধারা ৩১ এর সংশোধন করে সকল আমদানির উপর ৫ শতাংশ হারে আগাম কর ধার্য্য করা হয়েছে এবং সেই সাথে কাঁচামাল সংগ্রহের উপর উৎস আয়কর কর্তনের বিধান পুণ:সংযোজন করা হয়েছে। যার ফলে পোল্ট্রি ফিডের উৎপাদন খরচ ৮-১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
প্রন্তিক খামারীরা তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে তারা আপামর মানুষের জন্য স্বল্পমুল্যে ডিম ও মুরগীর মাংস (প্রোটিন এর উৎস) যোগান দিয়ে আসছেন। কিন্তু তারা কি তার মুল্য পাচ্ছেন?
খামারী দের বাচাঁতে হবে, খামার বাচাঁতে হবে।
মানববন্ধনে স্লোগান-
কম দামে ফিড চাই
ডিম ও মুরগীর ন্যায্য দাম চাই
সহজ শর্তে ঋন চাই
পোল্ট্রি বীমা চাই
পোল্ট্রি বান্ধব বাজেট চাই।

Please follow and like us:

About admin

Check Also

পোল্ট্রি খামারীদের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানব বন্ধনঃ

খাবারের ও বাচ্চার দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে লাখ লাখ তরুণ পোল্ট্রি খামারী সহ ৬০লাখ লোক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »