Breaking News

ফার্মিং এর পরিকল্পনাঃ

ফার্মিং এর পরিকল্পনাঃ
আমরা একটা কথা প্রায়ই শুনে থাকি, বিশেষ করে যারা ব্যবসায় শিক্ষা নিয়ে পড়াশোনা করেছি তারা অন্যদের তুলনায় একটু বেশীই শুনেছি বোধহয় “একটি ভাল বা উত্তম পরিকল্পনা যেকোন কাজ সম্পন্ন হওয়ার অর্ধেকের সমান”।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের মতই ফার্মিং তথা যেকোন ব্যবসায় শুরুর পূর্বে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম।

আমার ফেসবুক পেজ, ম্যাসেঞ্জার, ইউটিউব চ্যানেল এবং গ্রুপ-Turkey & Poultry Masters Community School এ প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ জানতে চান “ভাই আমি দেশী মুরগি/টার্কি মুরগি/গরু বা ছাগলের খামার করেতে চাই তো শুরুটা কিভাবে করবো ভাই দয়াকরে পরামর্শ দেন”।
তাদের জন্য এবং ফার্মিং এ আসতে চাওয়া নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট। ইনশাআল্লাহ লেখাটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়লে ফার্মিং স্টার্টআপের একটি সুষ্ঠু গাইডলাইন পাবেন।

ধাপ-০১ : আপনার পছন্দক্রম সাজানঃ
কৃষি একটা বিশাল সেক্টর। এখানে অসংখ্য প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ফার্মিং এ পরিকল্পনার এই ধাপে আপনাকে আপনার ভালোলাগার জিনিসগুলো খুঁজে বের করতে হবে। আচ্ছা একটু সহজ করে বুঝানোর চেষ্টা করি। আমাদের প্রত্যেকেরই কিন্তু রুচি ও পছন্দের ভিন্নতা রয়েছে। যেমন ধরুন- এই মুহূর্তে আপনি কৃষি বিষয়ক আমার এই লেখাটি পড়ছেন। ঠিক একই মুহূর্তে কিন্তু আপনার বা আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা বন্ধুদের মধ্যে অধিকাংশই লেখাটি ইগনর করছে। বলুনতো কেন ?

কারন কৃষিটা তাদের ভালোলাগার প্রাইয়োরিটিতে নাই।
আবার আমরা যারা কৃষি ভালবাসি তাদেরও কিন্তু সবার একই জিনিস ভাললাগেনা। কারো হয়তো গরু ভালোলাগে, কারো আবার ছাগল। কারো টার্কি ভাললাগে, কারো আবার কাদাকনাথ মুরগি। কারো ফিসারী ভাললাগে, কারো আবার হাঁস। কেউবা আবার দেশী মুরগি নিয়ে ছক কষছেন।

তো যাইহোক যে জিনিসটা আপনার ভাললাগেনা বা যেই কাজটা করতে আপনি মজা পাননা সেই প্রোডাক্টটা নিয়ে কাজ করে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আমার মতে ফার্মিং করার পূর্বে পরিকল্পনার ১ম ধাপে আপনি একটি নোটবুকে আপনার পছন্দক্রম সাজিয়ে নিন। যেমনঃ আপনার পছন্দ তালিকায় সবার শীর্ষে যদি থাকে ছাগল পালন। তাহলে নোটবুকে ১নম্বরে লিখুন ছাগল পালন। এরপর খুঁজে বের করুন পরবর্তী ভালোলাগার জিনিসটা কি ?
যদি আপনার ২য় ভালোলাগার জিনিস হয় দেশী মুরগি। তাহলে নোটবুকে ২নম্বরে লিখুন দেশী মুরগি। এভাবে আপনার পছন্দক্রম সাজিয়ে নিন।

ধাপ-০২ : বাজার সম্ভাব্যতা যাচাই করুনঃ
আমার মতে ফার্মিং এ পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এটি। একটা পন্য উৎপাদন করা যতটা সহজ, বাজারজাত করা ঠিক ততটাই কঠিন। আপনার উৎপাদিত পণ্য যদি যথাযথ ভাবে বাজারজাত করতে না পারেন, কিংবা বাজারে সঠিক মূল্য না পান তাহলে আপনার ব্যবসায় টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবেনা। ধরুন আপনি লক্ষ টাকা দামের কোন প্রোডাক্ট উৎপাদন করলেন, কিন্তু বাজারে এর চাহিদা নাই কিংবা বাজারজাত করনে জটিলতা রয়েছে, তাহলে আপনার প্রজেক্টটি নিশ্চিত লসে পরবে।
আবার অপরদিকে আপনি যদি ৫০পয়সা দামের কোন প্রোডাক্টও উৎপাদন করেন এবং বাজারে এর প্রচুর চাহিদা থাকে, তাহলে এই ৫০পয়সার প্রোডাক্ট উৎপাদন করেই আপনার ব্যবসার গ্রোথ বাড়বে।
তাই পরিকল্পনার এই ধাপে আপনার পছন্দক্রমের প্রোডাক্টগুলোর বাজার সম্ভাব্যতা নিম্নোক্ত পয়েন্টের আলোকে যাচাই করুন।

(ক) আপনার উৎপাদিত পণ্যটির পাইকারী বাজার দর কেমন ?
আপনি যে পণ্যটি উৎপাদন করবেন তার স্থানীয় পাইকারী বাজার ভালভাবে যাচাই করুন। খুচরা বাজারে দাম যতই থাকুক না কেন তা মূল্যায়ন করে কোন সিদ্ধান্তে আসা যাবেনা। কারন আপনি যখন বাণিজ্যিক ভাবে কোন প্রোডাক্ট উৎপাদন করবেন, তখন আপনাকে অবশ্যই পাইকারী মূল্যেই প্রোডাক্ট বিক্রয় করতে হবে।

(খ) আপনার উৎপাদিত পণ্যটির স্থানীয় চাহিদা কতটুকু ?
আপনার উৎপাদিত পণ্যটির স্থানীয় চাহিদা কি পরিমাণ সেটা যাচাই করুন। ধরুন আপনি কোন মফস্বল শহরে কিংবা শহরের বাইরে প্রজেক্ট করলেন। সেখান হতে উৎপাদিত পণ্য অবশ্যই আপনাকে ১মে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হবে।
মনেকরি- আমার দেশী মুরগির খামার। তো আমার স্থানীয় বাজারে মাসে একহাজার কেজি দেশী মুরগিরে মাংসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দেখা গেল আমি মাসে উৎপাদন করছি দুই হাজার কেজি মাংস। তাহলে নিশ্চিত ভাবেই বাজারে দাম পরে যাবে। আমি আমার পণ্যের উপযুক্ত বাজার মূল্য পাবনা।
আবার আমার উৎপাদিত পণ্য দূরবর্তী অন্যকোন জেলার বড় বাজারে নিয়ে গেলেও ট্রান্সপোর্টেশন কস্ট বেশী পরে যাবে, বিধায় নেওয়া সম্ভব নাও হতেপারে।

এক্ষেত্রে আপনি আপনার স্থানীয় বাজারের চাহিদার পরিমাণ অনুযায়ী প্রোডাক্ট উৎপাদন না করলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

(গ) আপনার উৎপাদিত পণ্যটি বৃহত্তর বা বড় আকারে উৎপাদন করলে বাজারজাত করনে কি ধরণের প্রতিবদ্ধকতা আছে ?
আপনি যদি বাণিজ্যিকভাবে কোন পণ্য উৎপাদন করেন, তাহলে আপনার পরিকল্পনার একটি অংশ হিসাবে এটাও ভাবতে হবে প্রতিমাসে আপনি সর্বোচ্চ কি পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করতে পারবেন। আপনার উৎপাদিত সর্বোচ্চ পরিমাণ পণ্য বাজারজাত করনে কি ধরনে প্রতিবদ্ধকতা বা সমস্যার সম্মুখিন হতে হতেপারে।

ধাপ-০৩ : স্থানীয় বা নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারঃ
আমার মতে ফার্মিং এ পরিকল্পনার ৩য় ধাপে আপনাকে আপনার স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং সেগুলো ব্যবহার করে কোন ধরনের প্রোডাক্ট উৎপাদন করা যায় সেটা নোট করতে হবে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারনে একেক অঞ্চল একেক ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। যেমন ধরুন- রাজশাহী অঞ্চলে আমের ফলন হয় অত্যাধিক, আবার উত্তরবঙ্গে গম ও ভূট্টার ফলন বেশী হয়।

আমাদের কারো অবস্থান হয়তো নদী বা বিলাঞ্চলে, কারো বা বণাঞ্চলে। তো যাইহোক এই ধাপে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী আমার অঞ্চল কোন ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। আমার অঞ্চলে যদি গম, ভূট্টা বা অন্যকোন খাদ্যশস্য ভালো হয়, তাহলে আমার পরিকল্পনা করতে হবে এই খাদ্যশস্যগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আমি কি ধরনের প্রাণী বা পাখী পালন করতে পারবো। আমার অবস্থানের আশেপাশে যদি পর্যাপ্ত চারণভূমি থাকে তাহলে আমি নিশ্চিত ভাবেই সেখানে গরু-ছাগলের খামার করলে লাভবান হবো। আবার আমার অবস্থান যদি হয় বিলাঞ্চলে তাহলে নিশ্চিত ভাবেই হাঁসের খামার করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকবে।

মোদ্দকথা- আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে কিভাবে বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র মূল্যে স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করা যায়। তাহলে আমাদের উৎপাদন খরচ কমে যাবে এবং নিশ্চিতভাবেই প্রজেক্ট লাভের দিকে যাবে।

ধাপ-০৩ : চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাঃ
ফার্মিং এর পরিকল্পনার সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে আপনার জন্য উপযুক্ত পণ্য কোনটি সেটি খুঁজে বের করে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া।
ধরুন- আপনার ভালোলাগার তালিকার ১মে রয়েছে দুগ্ধ খামার। কিন্তু আপনার এলাকায় দুধের দাম মাত্র ৩৫-৪০টাকা লিটার। তাহলে এক্ষেত্রে যদি আপনি আপনার ১ম ভালোলাগাকে প্রাইরোটি দেন তাহলে নিশ্চিত ভাবেই আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
তো এক্ষেত্রে আমার ২য় ভালোলাগাকে নিয়ে উপরোক্ত পয়েন্টগুলোর আলোকে চুলচেড়া বিশ্লেষণ করতে হবে। যদি সেটিও আমার জন্য উপযুক্ত না হয়, তাহলে পরবর্তী পছন্দক্রম নিয়ে ভাবতে হবে। এভাবে উপরোক্ত সবগুলো ধাপের মানদন্ডে আপনার প্রতিটি ভালোলাগার জিনিসগুলোকে যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে কোন পন্যটি আমার বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত এবং সেটা নিয়েই কর্মযজ্ঞে ঝাপিয়ে পরতে হবে।

পরিশেষে: আমরা অধিকাংশ নতুন উদ্যোক্তা ইউটিউব কিংবা টিভি প্রতিবেদন দেখে কোনকিছু বিচার বিশ্লেষণ না করেই হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা ফার্ম করে ফেলি। পরবর্তীতে তা আর টিকিয়ে রাখতে পারিনা। সকল নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলবো-ইউটিউবে দেখলাম কেউ একজন একটা ছাগলের খামার করে মাসে লক্ষ টাকা আয় করছে। আবার কেউ একজন দেশী মুরগির খমার করে হাজার হাজার টাকা আয় করছে। তো সেটা দেখেই আমি কোন কিছু যাচাই বাছাই নাকরেই ছাগলের বা মুরগির খামার করে ফেললাম।

একটি সুন্দর পরিকল্পনার কথা আমার মাথায়ই আসলোনা কিংবা ভাবলাম পরিকল্পনা করে সময় নষ্ট করার কি দরকার। এমনটা কখনোই করা যাবেনা। নিজের আবেগ নয় বিবেক দিয়ে বাস্তবতার নিরিখে একটা উত্তম পরিকল্পনা করতে হবে। ইনশাআল্লাহ্ তাহলেই্‌ আমি সফল হতে পারবো।

একটা প্রবাদ আছে- “চেষ্টা করলে মানুষ সবকিছুই পারে”। কিন্তু আমি বলবো- চেষ্টা করলে মানুষ সবকিছুই পারে কিন্তু সবাই সবকিছু পারেনা এটাই বাস্তবতা। সফলতার পথ অত্যন্ত কন্টকময়।

➤বিঃদ্রঃ পোস্টটি পড়ে উপকৃত হলে কপি নয়, শেয়ার করে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিন।
-চাষী মানিক
পরিচালক
শখের খামার এগ্রো প্রজেক্ট
ও এডমিন
Turkey & Poultry Masters Community School

Please follow and like us:

About admin

Check Also

টিপস ৩২

ডিমের কোয়ালিটির সাথে জড়িত বিষয় ক্রোমিয়াম ও কপার(Pluming process in uterus) এস কর্বিক এসিড ক্টন …

Translate »