সহজে ক্যাটল ফিড ফর্মুলেশনঃ.ডেইরী এবং ফ্যাটেনিং।
ক্যাটলে মাইক্রোবিয়াল ড্রাইজেশন হয়।ফাইবার বেশি লাগে।তাই রাফেজ বেশি দিতে হয়।বয়স এবং প্রডাকশন স্টেজ অনুযায়ী
এনার্জি,প্রোটিনের চাহিদা কম বেশি হয়।ডেইরীতে ক্যালসয়াম ১২% আর ফসফরাস ৮% দিতে হয়।পোল্ট্রিতে ফাইবার ৪-৬% লাগে।পোল্ট্রিতে মেইনলি এনজাইমেটিক ডাইজেশন হয় মাইক্রোবিয়াল না।ক্যাটলে ড্রাইমেটার হিসাবে ফর্মুলা করা হয়।পোল্ট্রিতে সেভাবে হয় না।
ক্যাটল ফিড ফর্মুলেশন বলতে আসলে টি এম আর কে বুঝানো হয় যা রাফেজ(ঘাস এবং কাচাঘাস) এবং দানাদার দিয়ে করতে হয় কিন্তু আমরা দানাদারকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি।পোল্ট্রিতে ফিড ফর্মুলা বলতে দানাদারকে বুঝানো হয়।
ক্যাটল খাবারে এনার্জি ২৬০০-২৭০০কিলোক্যালরি
প্রোটিন ১৪-১৭%
ফাইবার ২৫%
এ ডি এফ ২৫%(ডাইজেস্টেবল সেলোলোজ,হেলিসেলোলোজ,লিগনিন)
এন ডি এফ ৩০-৩৫%(ডাইজেস্টেবল এবং আন ডাইজেস্টেবল সেলোলোজ,হেমিসেলোলোজ,লিগনিন).
নিচের আইটেম গুলো দিয়ে টি এম আর করা হয়।
কাচাঘাস/সাইলেজ,খড়/ইউ এম এস,দানাদার,ফার্মেন্টেড কর্ন,হে এবং রেডি ফিড।
যে যতগুলো আইটেম দিবে তত খাবারের কোয়ালিটি ভাল হবে।
খাবার বডিওয়েট অনুযায়ী ড্রাইম্যাটার হিসাবে দিতে হবে।ডেইরীতে বডি ওয়েটের ৩-৪% পর্যন্ত (ফ্যাট% এর উপর নির্ভর করে কম বেশি হয়) খাবার দেয়া হয়।ফ্যাটেনিং এর জন্য বডি ওয়টের ৩% খাবার দেয়া দিতে হয়ে যদি গরুর বয়স ২ বছর হয়।৩ বা বেশি বছরের গরু হলে ২% ড্রাইম্যাটার দিতে হবে।
৩০০কেজি ওজনের ১০লিটার দুধ দেয় এমন একটা গাভীর ফিড ফর্মুলেশনঃ
৩০০কেজির জন্য ৯কেজি ড্রাইম্যাটার লাগবে ৩% হিসাবে।
দুধ এবং বেডিওয়েট হিসাবে আলাদাভাবে ড্রাইম্যাটার বের করা যায় যেমন বডিওয়েটের ২% আর প্রতি লিটার দুধের জন্য ০০.৩০-০.৩৩% হিসাবে একই আসে মানে ৯কেজি।
৯কেজি ড্রাইম্যাটারকে ৪০-৬০% হিসাবে ভাগ করতে হবে। রাফেজ দিতে হবে ৬০% আর দানাদার দিতে হবে ৪০%।৬০% হিসাবে ৫কেজি আর ৪০% হিসাবে দানাদার ৪কেজি।
৫কেজি রাফেজকে আবার ৪০-৬০% হিসাবে ভাগ করতে হবে।
খড় ৪০% ২কেজি আর ঘাস ৬০% ৩কেজি।
এখন গাভীকে ড্রাইম্যাটার থেকে নরমাল ঘাস ও খড় কতটুকু দিতে হবে তা বের করতে হবে।
যেমন খড় ড্রাইমেটার ২কেজিঃবাস্তবে হবে ২.৫কেজি খড়(৯০% ড্রাই ম্যাটার হিসাবে)
ঘাস ৩কেজি মানে বাস্তবে ১৫কেজি কারণ ৮০% আর্দ্রতা।
দানাদার ৪কেজি মানে ৪.৫কেজি।(৯০% আর্দ্রতা)
তাহলে গাভীকে আমি দিবো ১৫কেজি ঘাস,২.৫কেজি খড় আর ৪.৫কেজি দানাদার।
এখন আমি যে উপাদান দিলাম তাতে এনার্জি, প্রোটিন,ক্যালসিয়াল ও ফস ফরাস,ফাইবার ঠিক আছে কিনা তা বের করবো।
প্রোটিন লাগবে
৩০০কেজির জন্য ৩০০গ্রাম
১০লিটার দুধের জন্য ১০গুণ ৮০ঃ৮০০গ্রাম
মোট ১১০০গ্রাম।
প্রতি লিটার দুধের জন্য ৭৫-১০০গ্রাম।আমি ৮০ধরে হিসাব করলাম।ফ্যাট% এর উপর ভিত্তি করে কম বেশি হয়।
এখন দেখবো খাবারে ১১০০গ্রাম আছে কিনা।
৪কেজি খাবারে পাব ৮০০গ্রাম প্রোটিন(১কেজিতে ২০% হিসাবে ২০০গ্রাম)
১৫কেজি ঘাসে ৩০০গ্রাম ১০% প্রোটিন হিসাবে।
খড়ে পাব ৪% হিসাবে ২কেজিতে ৮০গ্রাম।
মোট ৮০০+৩০০+৮০ঃ১১৮০গ্রাম।
যা দরকার তাই পাইলাম।
এবার এনার্জি বের করবো
৩০০কেজির জন্য লাগবে ৩০মেঘাজুল(১০০কেজির জন্য ১০-১২ মেগাজুল)
১লিটার দুধের জন্য ৫ মেঘাজুল হিসাবে ১০লিটারে ৫০মেঘাজুল।
মোট লাগবে ৮০মেগাজুল।
খাবার থেকে পাব।
৪কেজি খাবারে পাব ৪০মেগাজুল(প্রতি কেজি দানাদারে ১০-১২ মেগাজুল)
১৫কেজি ঘাসে পাব ৩০মেগাজুল।প্রতি কেজিতে ২ মেগাজুল)
২ কেজি খড়ে পাব ১০মেগাজুল(খড়ে প্রতি কেজিতে ৫-৬মেগাজুল)
মোট পাব ৪০+৩০+১০ঃ৮০মেগাজুল যা সরকার তাই পাইলাম।
গাভীর ওজন ৩৫০কেজি হলে ড্রাইমেটার ১.৫কেজি বাড়াতে হবে মানে ৫০কেজি কম বেশি জন্য দেড় কেজি কম বেশি হবে।
ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস কতটুকু লাগবে এবং কিভাবে বের করবোঃ
১০০কেজিতে লাগবে ৪গ্রাম তাহলে ৩০০কেজিতে১২গ্রাম।
দুধের জন্য ১লিটারে ৩.২৫ গ্রাম তাহলে ১০লিটারে ৩২.৫০গ্রাম
ফসফরাস লাগবে ১০০কেজি ৩গ্রাম
৩০০কেজি ৯গ্রাম
দুধের জন্য ১লিটারে ২গ্রাম ১০লিটারে ২০গ্রাম।
মোট ক্যালসিয়াম লাগবে ১২+৩২.৫০ঃ ৪২.৫০গ্রাম আর ফসফরাস ৯+২০ঃ২৯গ্রাম।
যদি রেডি ফিড দেই তাহলে প্রতি কেজি ক্যালসিয়াম পাব ১২.৫গ্রাম আর ফসফরাস পাব ৮ গ্রাম।
৪কেজিতে ক্যালসিয়াম পাব ৫০গ্রাম আর ফসফরাস পাব
৩২গ্রাম।মানে চাহিদার সমান পাব।
দানাদারে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস কতটুকু পাব তা জেনে নিতে হবে তবে ফর্মুলা অনুযায়ী কাছাকাছি পাব।
এবার দানাদার খাবারের ফর্মুলেশনঃ
দানাদার ৪ কেজি কিভাবে বানাবোঃ
দানাদার ৫৫-৬০% শর্করা
প্রোটিন ২৫-৩০%
ফ্যাট ১০%
লাইমস্টোন/ঝিনুক ভাংগা ৩%
ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স ২-৩%।
প্রতি গাভীকে চিটাগুড় ১০০-১৫০গ্রাম
লবণ ৬০গ্রাম
সোডা ৫০গ্রাম।
যদি খাবারে না দেয় হয়।
একটা মডেল ফর্মুলা
শর্করা
ভুট্রা ভাংগা ২০কেজি
গম ভাংগা ২০কেজি
রাইস ব্রান ১০কেজি
প্রোটিন
ছোলা/খেসারীর ভুষি ১০কেজি
সয়াবিন/মসুরী ১৫কেজি
ফ্যাট এবং প্রোটিন
তিলের খৈল ২০কেজি
ডি সি পি/লাইমস্টোন ৩কেজি
সোডা ১কেজি
লবন ১ কেজি।
অথবা
গমের ভূষি ৩৫কেজি
ভুট্রা ভাংগা ১০কেজি
রাইস ব্রান ১৫কেজি
সয়াবিন খৈল ৫কেজি
মুগ/মসুরী ২৫কেজি
মসুর ১০কেজি
অথবা
গম/ভুট্রা ভাংগা ২৫কেজি
গমের ভুষি ২০কেজি
চালের কুড়া ২০কেজি
সয়াবিনের খৈল ১৫কেজি
খেসারী ভূষি ১২ কেজি
তিল/সরিষার খৈল ৮কেজি
অথবা
গম/ভুট্রা ভাংগা ২৫কেজি
গমের ভুষি ১৫কেজি
চালের কুড়া ২০কেজি
তিল/সরিষার খৈল ১০কেজি
ছোলা/মটরের ভুষি ১০কেজি
মসুরের ভুষি ১০কেজি
ডাল ভাংগা ১০কেজি
ডি সি পি ১.৫কেজি।
কোম্পানীর রেডি খাবার দিলে কস্ট করে বানানোর দরকার নাই।নির্ধারিত পরিমাণ দিলেই হবে।
দেশী এবং সংকর জাতের গাভীর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬কেজি আর পিউর জাতের গাভীর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৮কেজি দানাদার দিতে হবে।কাজেই অধিক উতপাদন শীল এবং বড় গাভী পালন বেশি লাভ জনক কারণ বেশি খাবে না।
গাভীর ক্ষেত্রে এনার্জি ৫-১০% বেশি হিতে হবে আর ফ্যাটেনিং এর ক্ষেত্রে প্রোটিন বাড়িয়ে দিতে হয়।
ডেইরী ফর্মুলেশনে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস কে গুরুত্ব দিতে হবে।ফ্যাটেনিং এর ক্ষেত্রে প্রোটিন কে গুরুত্ব দিতে হয়।ডেইরীতে বডিওয়েট ও দুধকে বিবেচনা করে ড্রাইমেটার সহ অন্য সব কিছর কিছুর হিসাব বের করতে হয়।ফ্যাটেনিং এর ক্ষেত্রে শুধু বডিওয়েটকে ধরেই হিসাব করা হয়।ফ্যাটেনিং এ ক্যালসিয়াম কম দিতে হবে।।
ফ্যাটেনিং ফিড ফর্মুলেশনঃ.
২০০কেজি ওজনের একটা ষাড়ের জন্য ড্রাইমেটার বডিওয়েটের ২.৫% হিসাবে লাগবে ৫কেজি।
এই ক্ষেত্রে ৫কেজিকে দানাদার ৪০% সমান ২কেজি এবং রাফেজ ৬০% সমান ৩কেজি করতে হবে।
রাফেজ ৩কেজি আবার ৪০% এবং ৬০% করে ভাগ করতে হবে।এতে আমরা ১কেজি খড়(১.৫কেজি) এবং ২কেজি কাচাঘাস(১০কেজি) করে ভাগ করতে পারি।
কেউ কেউ হয়ত খড়ের পরিবর্তে ইউ এম এস দিবে সেক্ষেত্রে খড়ের অর্ধেক দিলেই হবে কারণ ইউ এম এসে প্রায় খড়ের দ্বিগুন প্রোটিন ও এনার্জি থাকে।
যদি সাইলেজ দিতে চায় তাহলে ঘাসের চেয়ে কিছু কম(১০% কম)দিলেই হবে কারণ সাইলেজের ড্রাইমেটার ৩০%মানে ১০% বেশি (ঘাসের ২০%)।
তবে যত বেশি আইটেম দেয়া হবে খাবারের মান তত ভাল হবে।
শুধু কাচাঘাস দিয়ে গাভী পালা যাবে?
উত্তরঃবাংলাদেশে যাবে না কারণ আমাদের হে মানে যে রাফেজে ২০% প্রোটিন থাকে সেগুলো পর্যাপ্ত নাই যেমন আল্ফা আল্ফা,রাই ও বাকলা ঘাস নাই।তবে মটর,মসুর,ছোলা,মাসকলাই যদি পর্যাপ্ত চাষ করা যায় এবং হে বানানো যায় তাহলে হয়ত সম্ভব।
শুধু ভাল কাচা ঘাসে(নেপিয়ার,পারা,জার্মান,জারা,ভুট্রা) প্রোটিন ১০% থাকে আর নরমালী জমিতে যে ঘাস হয় সেগুলো ২-৭% প্রোটিন থাকে।
কেউ যদি মনে করে আমি ঘাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবো তাহলেও হবে না কারণ শুধু নরমাল কাচাঘাস দিলে ৩০০কেজি ওজনের ১০লিটার দুধ দেয় এমন গাভীর জন্য প্রোটিনের চাহিদা পূরণে ৬০-৭০কেজি ঘাস লাগবে। এই পরিমাণ ঘাস গাভীটি খেতে পারবেনা তাই এটা সম্ভব না। এনার্জি যদি সাইলেজ দিয়ে পূরণ করতে চাই তাহলে লাগবে ২৮কেজি সাইলেজ যা গাভীটি খেতে পারবেনা।
অতএব শুধু সাইলেজ দিয়েও পালা যাবে না।তেমনি খড় দিয়েও পালা যাবে না।দানাদার দিলেও সম্ভব না কারণ এত পরিমাণ দানাদার দিলে গাভীর এসিডিটি হবে এবং মারা যাবে।তাছাড়া ফাইবারের চাহিদা ২৫% যা দানাদার দিয়ে পূরন হবে না।ফাইবারের অভাবে অন্ত্রের পেরিস্টালসিস মটিলিটি কমে যাবে এবং গ্যাস হবে। আল্টিমেটলি গাভী মারা যাবে।বাচলেও হিটে আসবে না।আসলেও কনসিভ করবে না।মানে লস হবে।খরচ অনেক অনেক বেশি হবে মানে লস হবে।তাছাড়া দানাদারে পেঠ ভরার অনূভূতি আসবে না।কারণ রাফেজ দিয়েই সেটা সম্ভব অন্য কিছু দিয়ে না।
কাজেই ফিড ফর্মুলেশন করতে হবে সমন্বিতভাবে মানে সব গুলো আইটেম দিয়ে খড়/ইউ এম এস,ঘাস/সাইলেজ এবং দানাদার দিয়ে।
ফ্যাটেনিং এর ফিড ফর্মুলেশনঃ
দুধের হিসাব বাদ দিয়ে ফর্মুলা করলেই ফ্যাটেনিং এর ফর্মুলা হয়ে যাবে।শুধু বডিওয়েট অনুযায়ী হিসাব করলেই হবে।
মডেল ফিড ফর্মুলেশন।
ডা মোঃ ওমর ফারুক ভাই এর এভারেজ ফিড ফর্মুলেশন নিচে দেয়া হল। নির্দিস্ট করে দিতে হলে ড্রাইমেটার অনুযায়ী স্পেসিফিক গরুর জন্য করতে হবে।
১.বাছুর বয়স ২য়-৩য় মাস
দুধ ৩.৫-৪কেজি প্রতিদিন ৩ মাস
দানাদার ৪০০-৭০০গ্রাম
২ বকনাঃ. বয়স ৬ মাস
দানাদার ১.৭৫কেজি
কাচাঘাস ৩কেজি
৩.গাভী
দানাদার ২.৫-৩কেজি
কাচাঘাস ১০-১৩কেজি
ইউ এম এস ২.৫-৩কেজি