Breaking News

সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ানক আর অত্যন্ত বিষাক্ত রাসেল ভাইপার।

যেখানে শংখীনীদের খুঁচিয়ে মারা হয় সেখানে রাসেল ভাইপাররা মাথাচাড়া দেবেই…

সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ানক আর অত্যন্ত বিষাক্ত রাসেল ভাইপার।

জেনে রাখুন,
প্রকৃতিকে স্বাভাবিকভাবে টিকে থাকতে না দিলে কপালে শনি আছে সকলের।।।

একসময় এই রাসেল ভাইপার সাপদের শুধুমাত্র বরেন্দ্র অঞ্চলে দেখা মিললেও এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। নিরীহ উপকারী সাপ(শংখীনী, ঘরেলক্ষ্মী ইত্যাদি) মেরে ফেলা সহজ আর মানুষের আনন্দের খোরাকও বলা চলে। এই নির্বিচার হত্যার অনিবার্য ফল প্রকৃতির ভারসাম্যহীনতা, যা সবসময়ই মানবজাতির জন্য নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনে।

পৃথিবীর সব সাপ মানুষকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে কিন্তু একমাত্র কিলিংমেশিন খ্যাত ‘রাসেল ভাইপার’ এর সেই বৈশিষ্ট্য নেই। বিষধর সাপ হিসেবে পৃথিবীতে রাসেল ভাইপারের অবস্থান ৫ নাম্বারে কিন্তু হিংস্রতা আর আক্রমণের দিক থেকে তার অবস্থান প্রথমে।

এরা আক্রমণের ক্ষেত্রে এতই ক্ষিপ্র যে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির তথ্য মতে, রাসেল ভাইপার ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের ১ ভাগ সময়ের ভিতরে কামড়ের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে । পৃথিবীতে প্রতিবছর যত মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায় তার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ এই রাসেল ভাইপারের কামড়ে মারা যায়। এদের বিষদাঁত বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বড়। এরা প্রচণ্ড জোরে হিস হিস শব্দ করতে পারে।

রাসেল ভাইপারের বিষ হোমোটক্সিন যার কারণে কামড় দিলে মানুষের মাংস পচে যায়। ভয়ংকর এই রাসেল ভাইপারের বাংলা নাম ‘চন্দ্রবোড়া’ তবে রাসেল ভাইপার নামেই তারা বেশী পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম: Daboia russelii।

এরা একেবারে সামনে থেকে মাথা উঁচু করে কামড় বসায়। এদের বিষের তীব্রতা এতো বেশি যে খুব কম রোগী বাঁচে। যে স্থানে কামড় দেয় সে স্থানে পচন শুরু হয়। অন্যান্য সাপের বেলায় ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলে রোগীকে নিরাপদ ভাবা হয় কিন্তু রাসেল ভাইপারের বেলায় রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ী ফেরার পথেও মারা গেছে এমন রেকর্ডও আছে।

রাসেল ভাইপার যে মানুষকে কামড়ায় তাকে বাঁচানো খুবই কষ্টকর। অনেক সময় রাসেল ভাইপারের বিষ নিষ্ক্রিয় করা গেলেও দংশিত স্থানে পচন ধরে। তারপর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ওই রোগী মারা যান। পচা অংশ কেটে ফেলার পরেও জীবন বাঁচানো যায় না দ্রুত পচন ধরে সারা শরীরে। এর অসহিষ্ণু ব্যবহার ও লম্বা বিষদাঁতের জন্য অনেক বেশি লোক দংশিত হন।

সাপটির বিষক্রিয়ায় অত্যধিক রক্তক্ষরণ ঘটে এবং অনেক যন্ত্রণার পর মৃত্যু হতে পারে রোগীর। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভয়ে হার্ট অ্যাটাকে অনেকের মৃত্যু হয়।

অন্যান্য সাপ শিকারের সময় শিকারকে কামড় দিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেলে কিন্তু হিংস্র রাসেল ভাইপার শিকারকে শুধু একা নয় তার পুরো পরিবারসহ খেতে ভালবাসে তাই অন্যান্য সাপ যেমন একটি ইঁদুরকে কামড় দিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেলে রাসেল ভাইপার সে ক্ষেত্রে কামড় দিয়ে ছেড়ে দেয়। প্রচণ্ড বিষের যন্ত্রণায় ইঁদুর যখন তার গর্তের দিকে ছুটে চলে রাসেল ভাইপার তার পিছু পিছু গিয়ে সে গর্তে ঢুকে সব ইঁদুরকে খেয়ে ফেলে।

এরা দেখতে অনেকটা অজগরের মত তবে এদের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৪ থেকে ৫ ফুট হয়। তবে চলতি মাসে চাপাইনবাগঞ্জে এলাকাবাসী একটি রাসেল ভাইপারকে মেরে ফেলে যার দৈর্ঘ্য ৮ ফুট। এত লম্বা রাসেল ভাইপার পৃথিবীর কোথাও এর আগে দেখা গেছে এমন কোন তথ্য নেই। বাংলাদেশ উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্র এলাকাসহ পদ্মার তীরবর্তী প্রতিটি এলাকায় এদের দেখা যায়। গত কয়েক বছরে এদের উপস্থিতি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ধারনা ছিল এরা বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মাঝে ২৫ বছর এদের দেখা মিলেনি কিন্তু প্রায় ২৫ বছর পর আবার ভয়ঙ্কর বিষধর সাপ রাসেল ভাইপারের দেখা মিলে ২০১২ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলে। সেই বছর এর বিষে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জে মারা যায় ১৫ জন।

গবেষকদের ধারনা, ২৫ বছর বিলুপ্ত থাকার পরে বন্যার পানিতে ভেসে ভারত থেকে এই সাপ বাংলাদেশে এসেছে। কারণ পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় এই সাপের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশী।

২০১২ সালের পরের বছর ২০১৩ সালে আবারো রাজশাহীতে এর দেখা মিলে। এ পর্যন্ত এই সব অঞ্চলে গত কয়েক বছরে এই সাপের কামড়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই সাপের আক্রমণে সব থেকে বেশী মারা যায় কৃষক। এদের আক্রমণ সব চেয়ে বেশী হয়েছে ধান ক্ষেতে তবে সাধারণত ঝোপঝাড়, শুকনা গাছের গুড়ি, ডাব গাছের নিচে, গোয়াল ঘর এই সব জায়গায় এই সাপ থাকতে বেশি পছন্দ করে।

তবে চরিত্রগতভাবে এই সাপ স্থলে যতটা ক্ষিপ্র পানিতে ততই দুর্বল থাকায় বন্যার পানিতে ভেসে আসা নিয়ে বিতর্ক আছে।

রাসেল ভাইপার বংশবিস্তার করে খুব দ্রুত। অন্যান্য সাপ যেখানে ২০ থেকে ৪০টা ডিম দেয় সেখানে একটি রাসেল ভাইপার ৮০টা পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। ফলে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এই রাসেল ভাইপার।

১৫ বছর যাবত ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফির পাশাপাশি বন্যপ্রাণী নিয়ে গবেষণা করছেন আদনান আজাদ আসিফ। তিনি জানান, সাপুড়ে বা অন্য কোন মাধ্যম থেকে এই সাপকে দেখে এর ধারনা পাওয়া যাবে না।

তিনি তার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এই পর্যন্ত ৪ বার বুনো পরিবেশে এই সাপের মুখোমুখি হয়েছি, সামনা-সামনি না দেখলে বুঝা যাবে না এই সাপ কতটা ভয়ংকর এবং দু:সাহসী।

তিনি আরও জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে এই সাপের আক্রমণ বেশী হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে সে এলাকার মাটি এবং রাসেল ভাইপারের গায়ের রঙ প্রায় এক তাই অনেক সময় না দেখেই মানুষ কাছে চলে যায়। এই সাপকে দেখলে নিরাপদে সরে যাওয়াই উত্তম তবে কিছু বিষয়ে সচেতন থাকলে এর থেকে বাঁচা সম্ভব। যেমন-
১। আশেপাশের পুরাতন পরে থাকা গাছের নিচে খেয়াল না করে হাত না দেওয়া।
২। ধান কাটার সময় গামবুট ব্যাবহার করা।
৩। ধান কাটা শুরুর আগে হাড়ি-পাতিল বা অন্য কিছু দিয়ে প্রচণ্ড শব্দ করা যেন সে ভয়ে পালিয়ে যায়।
৪। যেহেতু এরা খুবই হিংস্র তাই যে সব এলাকায় বেশী দেখা যায় সে সব এলাকায় সচেতনভাবে চলাফেরা করা এবং উপস্থিতি লক্ষ্য করলে সামনে থেকে সরে যাওয়া।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, আগে এখনকার মতো মুহূর্তেই খবর জানা যেত না তাই হয়তো জানা যেত না কখন কোথায় কোন সাপের দেখা মিলে। কিন্তু এখন ইন্টারনেটের কারণে মুহূর্তেই সবাই জানতে পারছি এবং পরিচয় ও সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। ২৫ বছর বিলুপ্ত ছিল এই মতের সাথে আমি একমত না। তবে রাসেল ভাইপার খুবই হিংস্র এদের থেকে বাঁচতে হলে সচেতন হতে হবে।

প্রকৃতিকে জানুন, প্রকৃতিকে ভালবাসুন।।।

আর হ্যা, দয়াকরে আমার বন্ধুরা, “একটা ময়লাও যেখানে সেখানে ফেলবেন না। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলুন, টাকায় না হলেও সৌন্দর্যে আমরা পাশ্চাত্যকে পিছনে ফেলতে পারব।”

Some link:
https://www.prothomalo.com/…/%E0%A6%AD%E0%A7%9F%E0%A6%82%E0…

Collected

Please follow and like us:

About admin

Check Also

বিলুপ্তপ্রায় পাঁচটি প্রাণী- রাজশকুন, ঘড়িয়াল, মিঠাপানির কুমির, নীলগাই এবং শুশুক

বর্তমান সময়ে জীববৈচিত্র্য পড়েছে মহা সংকটে। ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে তালিকাভুক্ত অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »