কবুতরের ডিম নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ন কথা যারা কবুতর পালেন সবার জেনে রাখা উচিত এ বিষয় গুলি।
সাধারনত ১০ পর ঝড়ার পর জোড়া দিলে ৮-১৫ দিনের মধ্যে কবুতর ডিম পাড়ে। ( ব্যতিক্রম হতে পারে)। ডিম পাড়ার ১-২ আগে মাদি কবুতর ডিম পাড়ার জন্য হাড়িতে বসে থাকে, আর যদি ছাড়া কবুতর হয় তাহলে নর মাদি উভয়ই মিলে খড় কুটা, পাতা, গাছের ছোট ডাল দিয়ে বাসা তৈরী করে এবং মাদি সেই বাসায় বসে থাকে। কবুতর সাধারনত বিকালে বা সন্ধার পর ডিম পাড়ে। প্রথম ডিম পাড়ার ১ দিন পর দ্বীতিয় ডিমটি পাড়ে। ডিম পাড়ার পর ১৭-১৯ দিন নর মাদি উভয় কবুতর মিলে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায়।
আমাদের যা করনীয়ঃ
১> ডিমের জন্য কবুতরকে একটি পরিস্কার হাড়ি দিন। হাড়িতে কাপর বা ঝুট বা খড় বা কুরা বা ভুসি মধ্যখানটা একটু নিচু রেখে সমান ভাবে বিছিয়ে দিন, তবে কাপর বা ঝুট হলে ভাল হয় কারন খড় বা কুরা বা ভুসিতে পোকা হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
২> অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই ডিম পাড়ার তারিখ লিখে রাখবেন।
৩> প্রথম ডিমটি পাড়ার পর একটি প্লাস্টিকের ডিম দিয়ে কবুতর যে ডিমটি পেড়েছে তা সরিয়ে ফেলুন। মনে রাখবেন এটা খুব জরুরি।
৪> দ্বীতিয় ডিমটি পাড়ার পর প্রথম ডিমটি হাড়িতে দিয়ে প্লাস্টিকের ডিমটি সরিয়ে ফেলুন। দুটি ডিম একসাথে তা দেয়া শুরু করলে দুটি বাচ্চা বাচার সম্ভবনা ৮০% বেড়ে য়ায়। কারন প্রথম ডিমটি বেশির ভাগ সময়ই নর বাচ্চা থাকে আর আগে ফুটার কারনে বাচ্চার সাইজটা বড় হয়ে যায়। তাই স্বাভাবিক ভাবেই পরের বাচ্চাটি আকারে একটু ছোট থাকে। এই ছোট বড়র কারনে বড় বাচ্চাটি বেশি খাবার পায় এবং ছোট বাচ্চাটি কম খাবার পাওয়ার কারনে দুর্বল হয়ে এক সময় মারা যেতে পারে। তাই সবসময় দুটি ডিম একসাথে তা দিতে দিন।
৫> অনেক সময় কবুতর পাতলা খোসাযুক্ত ডিম পাড়ে। এই ডিমে সাধারনত বাচ্চা হয় না। আর এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। প্রথমবার ডিম পাড়ার সময় এমন হতে পারে। আর ডিম পাড়ার আগে যদি কবুতর ভয় পায় তাহলেও অনেক সময় এরকম ডিম পাড়ে। ভিটামিনের অভাবজনিত কারনেও এটা হতে পারে। পাতলা খোসা যুক্ত একটা আর একটা যদি স্বাভাবিক ডিম হয় তাহলে পাতলা খোসার ডিমটি ফেলে দিন না হলে এটা ফেটে গিয়ে ভাল ডিমটিও নস্ট হয়ে যেতে পারে। মোট কথা পাতলা খোসার ডিম চোখে পড়া মাত্র সরিয়ে ফেলুন আর ফেলে দিন।
৬> অনেক সময় কবুতর তিনটি ডিম পাড়ে। তবে তিন নাম্বার ডিমের সাইজটা আকারে ছোট হবে। বেশির ভাগ সময়ই তিনটি বাচ্চাই ফুটে। তবে বাচ্চা ফুটার পর বিষেশ যত্ন নিতে হয় তিনটি বাচ্চাকে টিকিয়ে রাখার জন্য।
৭> অনেক সময় চারটি ডিমও দেখতে পারেন। তবে এতে খুশি হওয়ার কিছু নাই। কারন এই ডিম গুলি একটাও ফুটবে না। দুইটা মাদি যখন জোড়া মিলে তখন চার ডিম পাড়ে। আর চার ডিম দেখলে কনফার্ম হবেন জোড়ার দুইটাই মাদি।
৮> ডিম পাড়ার ৪-৫ দিন পর ডিম দুটি টর্চ বা আলোতে নিয়ে পরিক্ষা করুন ডিম জমছে বা ফার্টেইল হয়েছে কিনা। যদি দেখেন ডিমের মধ্যে শিরা বা রগের মত দেখা যাচ্ছে তাহলে বুঝবেন ডিমগুলি ফার্টেইল বা এতে বাচ্চা হবে। আর যদি দেখেন ডিমের কুসুম দেখা যাচ্ছে বা ডিমের ভিতরে কোন পরিবর্তন হয় নাই তাহলে এই ডিমে বাচ্চা হবে না। তখন এই ডিম ফেলে দিন এতে কবুতর আবার ডিম পাড়ার জন্য দ্রুত তৈরী হবে।
৯> ডিম চেক করার সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন। ডিমে বসা কবুতর কোন কারনে বিরক্ত হলে খুব রাগত থাকে এবং যে কোন মুল্যে ডিম রক্ষার চেস্টা করে।
১০> যখন ডিম চেক করবেন তখন হাড়িতে বসা কবুতরের বুকের নিচে হাত দিয়ে কবুতরটা সরিয়ে হাড়িটা বের করে নিয়ে আসুন। খুব সাবধানে ডিম নাড়াচাড়া করবেন। ভুলেও ডিমে ঝাকি দিবেন না। চেক করা হয়ে গেলে সাবধানে হাড়িটা যথাস্হানে রেখে দিন।
১১> ষোলো দিনে ডিমগুলি আরেকবার চেক করুন। যদি ডিমের ভিতরের বাচ্চা সুস্হ থাকে তাহলে ডিমটা কানে দিলে কট কট শব্দ সুনতে পাবেন (ব্যাতিক্রম হতে পারে)।
ডিম গুলি রাখার আগে ভেজা নেকড়া বা ঝুট দিয়ে মুছে দিতে পারেন এতে ডিমের খোসা নরম হবে এবং খুব সহজে বাচ্চা ডিম থেকে বের হতে পারবে।
১২> যদি আপনি দ্বীতিয় ডিম দেয়ার তারিখটি ধরেন তা হলে সতেরতম দিনে ডিমে বাচ্চা ফুটার কথা। আর বাচ্চা ফুটার সময় একটু বিশেষ নজর দেয়া দরকার। অনেক সময় কবুতর ডিমের খোসা সরায় না, এ ক্ষেত্রে এ কাজটা আপনাকে করতে হবে, খোসা গুলিকে হাড়ি থেকে সরিয়ে দিন। খালি খোসার কারনে বাচ্চার মৃত্যু ঘটতে পারে।
১৩> অনেক সময় বাচ্চা ডিম থেকে বের হতে পারে না এ ক্ষেত্রে আপনাকে বিশেষ ভুমিকা নিতে হবে এবং খুব আলতো করে ধরে ধিরে ধিরে ডিমের চারিদিক গোলাকার ভাবে ভেংগে বাচ্চাটিকে বের করতে হবে আর বাচ্চা বের হবার পর এর নাভি এন্টিসেপটিক জাতিয় ঔষধ দিয়ে মুছে দিন, এতে নাভিতে ইনফ্যাকশনের সম্ভবনা অনেক কমে যাবে।
১৪> হাত দিয়ে ডিম থেকে বাচ্চা বের করার সময় যদি দেখেন কুসুম এখনো বাহিরে বা রক্ত বের হচ্ছে তাহলে ঐ অবস্হায় ডিমটা রেখে দিন ৬-৮ ঘন্টা পর বাচ্চাটি আবার ডিম থেকে বের করে নিন।
Collected from Exit BD