হাই-টেক ডেইরি ফার্ম এর যাত্রা শুরু করলো ইয়ন বায়ো সায়েন্স
কার্গো বিমানে চড়ে এলো ২২৫ টি উন্নত জাতের গর্ভবতী গাভী
দেশের প্রথম হাইটেক ডেইরি ফার্মের যাত্রা শুরু করল ইয়ন গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইয়ন বায়ো-সায়েন্স লি: কার্গো বিমানে চড়ে এলো ২২৫টি উন্নত জাতের গর্ভবতী গাভী
দেশের দুধের চাহিদা মেটাতে বিশ্বের উন্নত প্রযুক্তির হাই-টেক ডেইরি ফার্ম এর যাত্রা শুরু করলো ইয়ন বায়ো সায়েন্স লি:। রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় এই হাই টেক ডেইরি ফার্ম স্থাপন করা হয়েছে। এলক্ষ্যে, সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া থেকে দুইশত পঁচিশ (২২৫) টি গাভী সফলভাবে আমদানি করা হয়েছে।
গত ১২ নভেম্বর, ২০১৯ মঙ্গলবার, এটলাস (অঞখঅঝ) কার্গো বিমানে করে অস্ট্রেলিয়ার মেলর্বোন এয়ারপোর্ট থেকে ভোর সাড়ে ৫টায় হযরত শাহ জালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এ অবতরণ করে। পরবর্তীতে গাভীগুলোকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ফার্মে নিয়ে আসা হয়। বিমানে করে এভাবে গাভী নিয়ে এসে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির সন্নিবেশন ঘটিয়ে এই ডেইরি ফার্ম এর কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ ধরনের প্রকল্প বাংলাদেশে প্রথম।
বাংলাদেশে চাহিদার তুলনায় কেবল মাত্র ২৫% দুধ স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত হয়। প্রতি বছর উৎপাদন ঘাটতি জনিত কারণে আমাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটাতে বিপুল পরিমাণ দুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশে অধিক দুগ্ধ উৎপাদনের প্রধান অন্তরায় হলো উন্নত অধিক উৎপাদনশীল জাতের গবাদি প্রাণির অভাব। এছাড়া, গোচারণ ভূমির এবং সুষম গো-খাদ্য ব্যবহারে কৃষকের সঠিক জ্ঞানের অভাব, বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ও উহার প্রতিষেধকের অপ্রতুলতা প্রভৃতি বাধা হিসাবে পরিগণিত হয়।
বাংলাদেশের আবহাওয়া জনিত কারণে বছরে প্রায় ছয় মাস উন্নত জাতের পিওর ব্রীড গবাদি পশু যেমন হলস্টিন ফ্রিজিয়ান গাভী পালন করা একটি বড় অন্তরায়।
এসব সীমাবদ্ধতা পেরোতে দেশের অন্যতম প্রধান এগ্রোবেজড প্রতিষ্ঠান ইয়ন গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইয়ন বায়ো সায়েন্স লিঃ দীর্ঘ ৫(পাচ) বছর এ বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা, বিশ্বের উন্নত দেশ সমূহ যেমন আমেরিকা, তুরষ্ক সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহ যেমন সৌদি আরব, ইরান, মিশর, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশের খামার পরিদর্শন এর মাধ্যমে লব্ধ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে।
এছাড়া, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড, সুইডেন ও জার্মানি থেকে আগত ডেইরী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে ইয়ন গ্রুপ দেশের দুগ্ধ উৎপাদনে অবদান রাখতে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয় করে হাই-টেক্ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেইরী ফার্ম স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে, এই প্রতিষ্ঠান সফল ভাবে খামার স্থাপনের জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে উন্নত জাতের পিওর ব্রীড গবাদি প্রাণি যেমন, হলস্টিন ফ্রিজিয়ান গর্ভবতী গাভী আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমোদন পেয়ে তদানুযায়ী গাভী আমদানির পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
ইয়ন বায়ো সায়েন্স লিঃ কর্তৃক স্থাপিত হাই-টেক্ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেইরী ফার্মে সুইডেনের ডি লেভেল কর্তৃক তৈরীকৃত নক্শা অনুযায়ী গবাদি প্রাণির বাসস্থান নির্মাণ সম্পন্ন করার পাশাপাশি দুগ্ধ দোহনের জন্য সয়ংক্রিয় মিল্কিং পারলার স্থাপন করেছে।
খামারে উৎপাদিত দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে দুগ্ধ পণ্য উৎপাদন করতঃ বাজারজাতকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গবাদি প্রাণির খাদ্য উৎপাদনের জন্য ২৫০ একর জমিতে ভূট্টা চাষ করতঃ সাইলেজ তৈরীর প্রক্রিয়া চলমান আছে।
সাইলেজ তৈরীর যাবতীয় সরঞ্জাম কানাডা থেকে আমদানি করা হয়েছে যাতে গাভীকে সারা বছর কাঁচা ঘাস দেয়া যায়। পাশাপাশি নিজস্ব ফিড মিলে দানাদার খাদ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। বিদেশ থেকে “আলফা আলফা হে” আমদানি করা হয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত ধানের খড় সংগ্রহ করা হয়েছে। সকল খাদ্য উপাদান মিশ্রিত করে “টি এম আর” প্রস্তুত ও উহা গবাদি প্রাণিকে খাওয়ানোর জন্য “টি এম আর ওয়াগন” সুইডেন থেকে আমদানি করা হয়েছে।
সফল ভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য স্ক্রাপার আমদানি করার মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
গবাদি প্রাণির রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় টীকা বীজ সংগ্রহ করার মাধ্যমে জৈব নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ লক্ষ্যে, খামার ব্যবস্থাপনার জন্য নেদারল্যা- থেকে অভিজ্ঞ ডেইরি খামার বিশেজ্ঞ জনাব ফ্রাঙ্ক বাইজোকে খামার ব্যবস্থাপনার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এই প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে বুঝা যায় যে, এ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এ প্রকল্পে দুধ, মাংস, চামড়া, জৈব সার, বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের আমিষের চাহিদা আংশিক ভাবে মেটানোর পাশাপাশি জাতীয় আয় ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এ প্রকল্পের সফলতা উপলব্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যতে অনেক বিনিয়োগকারি দুগ্ধ শিল্প স্থাপনে আগ্রহী হবেন।
পাশাপাশি এই প্রকল্প গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে উন্নত জাতের গবাদি প্রাণি পালনে আগ্রহী করে তুলবে ফলশ্রুতিতে দুুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে একইসাথে গ্রামাঞ্চলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির অর্থনৈতিক কর্মকা- তরান্বিত হবে এবং দেশ দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পুর্ণ হবে। যার মাধ্যমে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদ পূরণের পাশাপাশি দেশের সামাগ্রিক অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।