বিড়াল পর্ব ঃ১
আজকে আলোচনা করবো ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় নিয়ে,,,
বিড়াল কবে থেকে পোষ মানে?? জানেন কি??
পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়ালের কদর আদিকাল থেকেই। কিন্তু কতটা আদিকাল থেকে, তা হলফ করে বলতে পারবেন না কেউই। কারাই বা প্রথম পোষা প্রাণী হিসেবে ‘বাঘের মাসি’খ্যাত বিড়ালকে পুষতে শুরু করল, সেটাও বলা এখন সম্ভব নয়। বিড়ালপ্রেমীরা এসব প্রশ্ন নিয়ে মাথা না ঘামালেও গবেষকদের এ নিয়ে চিন্তার যেন অন্ত নেই।
ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনালের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, পশ্চিম এশিয়া এবং প্রাচীন মিসরে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে থেকেই বিড়াল পোষা শুরু হয়।
বিড়ালের পাঁচটি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ফেলিস সিলভেসটারিস প্রজাতির বিড়ালদের স্বভাবের সঙ্গে বর্তমানে গৃহপালিত বিড়ালদের স্বভাবগত মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বিশাল এলাকাজুড়ে এই বিড়ালদের বিচরণ ছিল। তাই অন্যান্য প্রজাতির বিড়ালের ভিড়ে ফেলিস সিলভেসটারিস প্রজাতির বিড়ালের অস্থিগুলো আলাদা করতে গিয়ে গবেষকদের পড়তে হয়েছে কঠিন ধাঁধায়।
আর এ ধাঁধার সমাধান করতে গিয়ে বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি অব লিউভেনের বিজ্ঞানীরা প্রায় ২০০ বিড়ালের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন। পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকার মাটি খনন করে বিড়ালের ডিএনএ নমুনা উদ্ধার করা হয়। এসব ডিএনএ নমুনার বয়স একশ থেকে নয় হাজার বছরের পুরোনো।
ন্যাচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভাল্যুশন সাময়িকীতে প্রকাশিত, জেনেটিক গবেষণা প্রমাণ করে যে আফ্রিকান বন্য বিড়াল ফেলিস সিলভেসটারসিস থেকেই বর্তমান গৃহপালিত বিড়ালের উৎপত্তি। এ ছাড়া মিসর ও পশ্চিম এশিয়াতেও তখন ফেলিস সিলভেসটারিস গোত্রের বিড়াল ছিল। পশ্চিম এশিয়ার কৃষকরা প্রথমে বন্য এই বিড়ালের উপস্থিতি ভালোমতই গ্রহণ করে নেন। কারণ, এই বিড়াল তাদের ফসলকে ইঁদুর ও ফসলের জন্য ক্ষতিকর অন্যান্য প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা করতে থাকে।
মানুষের সংস্পর্শে এসে বিড়ালদের আচরণ এবং তাদের অভ্যাস পরিবর্তন হতে থাকে। ধীরে ধীরে তারা বন্য বিড়াল থেকে গৃহপালিত প্রাণীতে পরিণত হয়। তখন কৃষকরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হওয়ার সময় তাদের গৃহপালিত বিড়ালকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। নাবিকরা তাদের জাহাজের মালামাল ক্ষতিকর পোকামাকড় ও ইঁদুরের হাত থেকে বাঁচাতে বিড়াল পুষতেন। এভাবেই গৃহপালিত বিড়াল দ্রুত ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। গবেষকরা বাল্টিক সাগরের ভাইকিং সাইটে মিসরীয় বিড়ালদের বসবাসের প্রমাণ পেয়েছেন।
গবেষক ক্লাউডিও অটটোনি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ‘এটা এখনো অস্পষ্ট, পশ্চিম এশিয়ার পোষা বিড়ালই কি মিসরে এসেছিল, নাকি মিসরের বিড়ালের আশ্রয় জুটেছিল পশ্চিম এশিয়াতে। অধিকতর গবেষণায় হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে এর উত্তর।’
ডিএনএ গবেষণার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুরুর দিকে গৃহপালিত বিড়ালগুলোর শরীরে ছোপ ছোপ দাগ ছিল। ডোরাকাটা দাগসহ বিড়ালের উৎপত্তি ঘটে মধ্যযুগে এসে।
বিড়াল পর্ব ২
আজকে জানবো বিড়ালের কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে
বিড়াল নিশাচর প্রাণী। বিড়ালের চোখের রেটিনা কুইনাইন নামক একটি পদার্থ দ্বারা আবৃত, যার কারণে এদের চোখ আলোক সংবেদনশীল হয়। এ কারণে রাতের বেলায় আমরা বিড়ালের চোখ জ্বলতে দেখি। বিড়ালের চোখের পর্দা তিনস্তর বিশিষ্ট।
এদের ঘ্রাণশক্তি খুবই উন্নত। এরা শুধুমাত্র ঘ্রাণ নিয়ে তারপর খাবার খায়। কোনো বিড়ালের নাকের ভেতরে যদি মাংস বেড়ে যায় অথবা কোন কারণে নাক বন্ধ হয়ে যায়, সেই কয়দিন তারা খাওয়ায় রুচি হারিয়ে ফেলে এবং আস্তে আস্তে রোগা হয়ে যায়।
বিড়ালের শ্রবণশক্তি মানুষের তুলনায় ৬ গুণ বেশি। এজন্য এরা কোনো শব্দ শুনলে খুব দ্রুতই ঘাড় মাথা ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করে এবং খুব সামান্য শব্দেই চমকে যায়।
বিড়াল খুবই আকর্ষণপ্রিয়। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কোনো বাড়িতে যদি একই সাথে একটি ছোট বাচ্চা এবং একটি বিড়াল থাকে, তাহলে বিড়ালটি ওই বাচ্চাটিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। কারণ স্বভাবতই বাচ্চাটির প্রতি সকলের আদর-যত্ন একটু বেশিই থাকে।
আরো একটি মজার বৈশিষ্ট্য হলো, বিড়াল মানুষের কাছে গেলেই বুঝতে পারে সে বিড়াল পছন্দ করে কিনা। বিড়াল পছন্দ করে না এমন মানুষের কাছে এরা খুব একটা ঘেঁষে না।
তাকে যে কষ্ট দেয় সে তাকে খুব ভালো করে মনে রাখতে পারে, এবং এর উল্টোটাও সে করে।
।বিড়াল যদি মেঝেতে খুব গড়াগড়ি খায় তখন আপনাকে বুঝতে হবে সে এই মুহূর্তে কিছুটা সময় চাচ্ছে এবং খেলতে চাচ্ছে। অনেক বিড়াল তার মনিবের বাইরে যাবার সময় এমনটি করে থাকে যাতে তাকেও সাথে নেয়া হয়। এটা দৃষ্টি আকর্ষণ করার এক সুন্দর পদ্ধতি।
।
বিড়াল সবটুকু খাবার শেষ করে না। অনেক সময় ধরে খেয়ে খাবারের কিছু অংশ বাঁচিয়ে রাখে। মজার ব্যাপার হলো এমনটি সে তার মনিব থেকেই শিখে। যে সকল বাড়িতে মনিব তার বেঁচে যাওয়া খাবার থেকে বিড়ালকে খেতে দেয়, সেই সকল বাড়িতেই বিড়ালগুলো নিজের খাবার মনিবের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে শেখেবিড়াল ৬
আমরা মাঝে মঝেই দেখি বিড়াল ঘাস খায়, খেয়াল করেছেন??
বিড়াল সাধারণত মাংসাশী প্রাণী। কিন্তু যখন ঘাস পাতা খেতে শুরু করে তখন খুব অদ্ভুত লাগে তাই না? আসলে বিড়ালের ঘাস খাবার পেছনে কারণ হলো এরা ঘাস থেকে এক ধরণের ভিটামিন পায়। কখনো কখনো নিজের গা চুলকাতে গিয়ে মুখে জড়িয়ে যাওয়া পশম ছাড়াতেও এরা ঘাসের সাহায্য নেয়।
আবার যখন তারা আজে বাজে খাবার খায় তখন তারা মনে করে ঘাস খেলে পেট শান্ত হয়ে যাবে
অনেক সময় দেখা যায় বিড়াল তার পা আরেক বিড়ালের গায়ে অথবা মেঝেতে পিষছে। এর কারণ হলো তারা অন্য বিড়ালের প্রতি যত্ন বা মমতা দেখায় অথবা নিজের পায়ের রক্তসঞ্চালন ঠিক রাখতে এরা এমন করে থাকে। অনেক সময় বাচ্চা বিড়াল তার মায়ের বুকের দুধ ঠিকমত না পেলে তখন মায়ের গায়ে এভাবে পা ঘষতে থাকে।বিড়ালেরা ফোনের প্রতি আসক্ত। যারা বিড়াল পালেন, তারা লক্ষ্য করে থাকবেন ফোনটি বেজে উঠলেই বাড়ির বিড়ালটি সবার আগে দৌড়ে ফোনের কাছে চলে যায়। এর কারণ হলো কৌতুহল। এরা বোঝার চেষ্টা করে আসলে ফোনে কীভাবে কথা বলা যায় অথবা কার সাথে কথা বলা যায় কিংবা কাউকে দেখা যাচ্ছে না তবুও মনিব কার সাথে কথা বলছে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বিড়াল সাধারণত ফোনের কাছে সবার আগে দৌড়ে যায়। তাছাড়া এরা আরও লক্ষ্য করে যে ফোনে কথা বলার সময় তাদের প্রতি মনিবের মনোযোগ কিছুটা কমে যায়। তাই মনোযোগ কেড়ে নেয়া উৎসটি তারা নিজেরাই এত আগ্রহ।
বিড়াল নিয়ে যত গবেষণা করা হবে ততই এর সম্পর্কে আরও নতুন নতুন তথ্য বেরোবে। মানুষের চেয়েও বিড়াল যেন বেশিই রহস্যময় প্রাণী।বিড়ালেরা ফোনের প্রতি আসক্ত। যারা বিড়াল পালেন, তারা লক্ষ্য করে থাকবেন ফোনটি বেজে উঠলেই বাড়ির বিড়ালটি সবার আগে দৌড়ে ফোনের কাছে চলে যায়। এর কারণ হলো কৌতুহল। এরা বোঝার চেষ্টা করে আসলে ফোনে কীভাবে কথা বলা যায় অথবা কার সাথে কথা বলা যায় কিংবা কাউকে দেখা যাচ্ছে না তবুও মনিব কার সাথে কথা বলছে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বিড়াল সাধারণত ফোনের কাছে সবার আগে দৌড়ে যায়। তাছাড়া এরা আরও লক্ষ্য করে যে ফোনে কথা বলার সময় তাদের প্রতি মনিবের মনোযোগ কিছুটা কমে যায়। তাই মনোযোগ কেড়ে নেয়া উৎসটি তারা নিজেরাই এত আগ্রহ।
বিড়াল নিয়ে যত গবেষণা করা হবে ততই এর সম্পর্কে আরও নতুন নতুন তথ্য বেরোবে। মানুষের চেয়েও বিড়াল যেন বেশিই রহস্যময় প্রাণী।
মজার সব ডাক : মানুষের মতো বিড়ালও কিন্তু একেক দেশে একেক ভাষায় কথা বলে, অর্থাৎ বিড়ালের ‘মিঁউ, মিঁউ’ নাকি সবদেশেই একরকম নয়। তাই কাটালুনিয়া বিড়ালরা ডাকলে সেই ডাক শোনায় ‘মিঁউ’-এর মতো, ক্যান্টনের বিড়াল ডাকে ‘মাও, মাও’, ডেনমার্কের ‘মিয়াভ’, নেদারল্যান্ডসের ‘মিয়াউ’, ইংল্যান্ডের ‘মিয়ো’, ফ্রান্সের ‘মিয়াও’, গ্রিসের ‘নাইউ’ এবং জাপানের বিড়ালের ডাক নাকি ‘ন্যায়ান, ন্যায়ান’-এর মতো শোনায়। সূত্র : ডয়েচে ভেলে
mohiuddin tareak