????? ???????? ???
বিশ্ব মশা দিবসের পেছনের কাহিনী
১৮৫৭ সালের কথা। ভারতের উত্তরখণ্ডের পাহাড় বেষ্টিত একটি শান্ত নগরী। সেখানেই জন্মগ্রহণ করেন ?????? ????। তাঁর বাবা তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতীয় আর্মিতে কর্মরত ছিলেন। শৈশবের কিছুকাল কাটে ভারতের মাটিতেই, তবে আট বছর বয়সে ভবিষৎ এঁর কথা ভেবে তাঁকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এতেকরে পড়াশোনার পুরোটাই করতে হয়েছে ইংল্যান্ডে। নিজে যদিও লেখক হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাবা জোরপুর্বক মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন। লেখাপড়াতে তাঁর তেমন মন ছিলনা, বেশিরভাগ সময় কাটত গান-কবিতা লিখে আর খেলাধুলা করে।
ডাক্তারি পাশ করে ১৯৮১ সালে জন্মস্থান ভারতে এসে প্রাকটিস শুরু করেন। ১৮৯৪ সালের কথা, তৎকালীন ভারতে ম্যালেরিয়ার প্রচণ্ড প্রকোপ। ছুটিতে ঘুরতে আসেন লন্ডনে, এসে দেখা হল আরেক লিজেন্ড স্কটিশ গবেষক স্যার প্যাট্রিক ম্যানসন এঁর সাথে। প্যাট্রিক গুরুর ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে, রোস কে ম্যালেরিয়ার গবেষণা সম্পর্কে ধারনা দেন। শিষ্যকে বলেন, ভারতবর্ষই ম্যালেরিয়া গবেষণার উপর্যুক্ত স্থান। এটা নিয়ে কাজ কর।
ওস্তাদের কথা শুনে পরের বছরই ভারতে চলে আসেন রোস। নেমেই সোজা হাঁটা দেন বোম্বে সিভিল হসপিটালের দিকে, খুঁজতে থাকেন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী। কিন্তু বিধিবাম, সরকারি চাকুরী, তাঁকে পোস্টিং দেয়া হল ব্যাঙ্গালুরে “কলেরা” নিয়ে গবেষণা করার জন্যে। সেখানে এত বেশী ম্যালেলিয়ার রোগী নেই। কিন্তু মাথায় যে তাঁর “ম্যালেরিয়া” পোকা ঢুকেছে। একদিন একটি মশার পেটের রক্ত পরীক্ষা করে পেলেন ম্যালেরিয়ায়র জীবাণু। ইন্টারেস্টিং বটে তবে প্রমাণের জন্যে যথেষ্ট নয়।
তাঁকে আটকিয়ে রাখা গেলনা। নিজেই সংগ্রহ করলেন মশার লার্ভা, সেখান থেকে বিশটি তরতাজা মশাকে ফুটিয়ে বের করলেন। হোসেন নামের এক ব্যাক্তির শরীর থেকে সেই মশা গুলোকে রক্ত খাওয়ালেন। উল্লেখ্য, হোসেন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ছিল আর প্রতি মশার কামড় স্বরূপ সে পেয়েছিল এক আনা করে, সর্বমোট বিশটি মশার কামড় ও বিশটি আনা উপার্জন। রোস এই মশার পেটে ম্যালেরিয়ায়র জীবাণু কনফার্ম করলেন, সেটি ছিল অগাস্ট ২০, ১৮৯৭ সাল। মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখতে কি গুরুত্বপুর্ন একটি আবিষ্কার। ২১ তারিখেই তিনি করনফার্ম করেন, এই জীবাণু মশার পেটেই বড় হয়। তাঁর এই আবিষ্কার ১৮৯৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত হয়।
এরপরের বছর অর্থাৎ ১৮৯৮ সালে তাঁকে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি মেডিকেলে বদলি করা হয়। সেখানে গিয়ে তিনি একটি গবেষণা টিম গঠন করেন। রোস দেখতে পেলেন ম্যালেরিয়া ট্রান্সমিশনের জন্যে মধ্যবর্তী একটি হোস্ট প্রয়োজন আর সেটিই হচ্ছে মশা। আবিস্কার করলেন, মশার লালাগ্রন্থ থেকে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। প্রমাণ করলেন, ম্যালেরিয়া জীবাণু বহনকারী মশা সুস্থ পাখিকে কামড়িয়ে দিলে সেটিও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এতে করে ম্যালেরিয়া জীবাণুর জীবনচক্র উন্মোচিত হল।
১৮৯৭ সালের আজকের এই দিনে রোনাল্ড রোস আবিষ্কার করেছিলেন যে, ম্যলেরিয়ার জীবাণু স্ত্রী মশার কামড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তাই আজকের এই দিনটি বিশ্ব মশা দিবস। উল্লেখ্য, তিনিই প্রথম ব্রিটিশ নাগরিক যিনি এই আবিষ্কারের ফলস্বরুপ ১৯০২ সালে নোবেল পুরস্কার পান।
লেখক
Dr. Md Nahidul Islam ভাই
ওডেন্স, ডেনমার্ক
২০ আগস্ট,২০১৯