১০ জনে শুরু করে এখন ৬০০ জনের দেশি মুরগির ‘মডেল খামার’
শুরু করেছিলেন ১০ জন। চার বছরে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০০। বগুড়ার শেরপুরে দেশী মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এই তরুণরা। প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, তাদের এই ‘মডেল খামার’ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে এটি নিরাপদ মাংস ও বেকার সমস্যা সমাধানে বড় ভূমিকা রাখবে।
শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে পৌরসভাসহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশী জাতের মুরগির খামারের কার্যক্রম শুরু হয়। ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. রায়হানের নেতৃত্বে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। উপজেলার শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের দেশী মুরগির অর্গানিক খামার গড়তে উদ্বুদ্ধ করা হয়। প্রথমে এগিয়ে আসেন মাত্র ১০ জন যুবক। তাদের সাফল্য দেখে আগ্রহী হয়ে ওঠেন আরো অনেকে। প্রথম দিকের এ উদ্যোক্তাদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় ‘স্বপ্ন ছোঁয়ার সিঁড়ি’ নামের একটি সংগঠন। এ সংগঠনের মাধ্যমে উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া হয় এই খামারের ধারণা, পাশাপাশি আগ্রহীদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়।
প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র আরো জানায়, প্রায় চার বছরের ব্যবধানে শেরপুর উপজেলায় ৩৫০টি খামার গড়ে উঠেছে। এই খামারিদের মধ্যে নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন ১০০ জন। তারা সবাই এখন স্বাবলম্বী। অথচ কয়েক বছর আগেও তারা চাকরি না পাওয়ার হতাশায় ছিলেন।
প্রথম ১০ খামারির একজন জাকারিয়া হোসেন। চাকরি না পাওয়া, প্রতিবেশীদের বাঁকা চোখ তাকে ভয়াবহ হতাশার দিকে ঠেলে দিয়েছিল। অবশেষে দেশী মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ধড়মোকাম গ্রামের এই যুবক। ৫০টি দিয়ে শুরু করে এখন এক হাজার মুরগি নিয়ে তার খামার। এবং তিনিই মুরগির খাবার তৈরি করেন।
দেশী মুরগির খামার
আরেক সফল খামারি সুবর্ণা খাতুন। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করার পর চাকরি খুঁজে ব্যর্থ হয়ে দেশী মুরগি পালনে প্রশিক্ষণ নেন। প্রথমে ১০টি মুরগি নিয়ে খামার শুরু করেছিলেন। এখন তার খামারে আছে ৩০০ মুরগি। খামারের লভ্যাংশ দিয়েই আরো বড় খামার ও একটা ভালো বাড়ি বানানোর স্বপ্ন দেখছেন তিনি। চাকরি খুঁজে ব্যর্থ হলেও খামার করে সফল হওয়া আরেক যুবক আব্দুস সালাম। বর্তমানে খামার থেকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি।
খামারিরা জানান, তাদের অনেকে বাচ্চা ফোটানো, কেউ মাংস, কেউ ডিম উৎপাদনের ব্যবসা করেন। আবার একসঙ্গে একাধিক কার্যক্রমও চলে কিছু খামারে। ২০ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত মুরগির বাচ্চাগুলো উন্মুক্ত পদ্ধতিতে পালন করা হয়। এরপর মোরগ ও মুরগি আলাদা করে মাংস ও ডিমের জন্য আলাদা যত্ন নিতে হয়। ৭০ থেকে ৭৫ দিন বয়সী মুরগি বিক্রির উপযুক্ত হয়। আর চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে ডিম দেয়া শুরু করে। একটি মুরগি মাসে গড়ে ২০টি ডিম দেয়। এবং একটি মুরগী এক কেজি ওজনের করতে খরচ হয় ১১০ থেকে ১২০ টাকা, সেটি বিক্রি হয় ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। আর খামারিরা তৈরি খাবার ব্যবহার করেন না। খাবার হিসেবে ভুট্টা ভাঙা, চালের কুড়া, ঝিনুক পাউডার ও ভিটামিন মিক্স দেয়া হয়। অন্তত ৩০ দিন পর্যন্ত মুরগিগুলো উন্মুক্ত পরিবেশে বড় করা হয়। ফলে খরচ অনেক কমে যায়।
সেড গুলো অল্প পুজিতে করা হয়েছে ১০০০ মুরগির সেড ৫০হাজার টাকায় করা হয়েছে।
কাঠ বাশ ,খাবারে বস্তা,ট্রিপল দিয়ে।
চালার উপর দিকে ত্রিপল,নিচের পলিথিন আর মাঝে খড়।এতে গরম হয় না।
৭০% নিজের বানানো খাবার বাকি ৩০% সিজনাল শাক ও নেপিয়ার ঘাস।
খামারীরা হ্যাচারীর মাধ্যমে নিজেরা বাচ্চা তৈরি করে বিক্রি করে।
এছাড়া বিপণনে বড় ভূমিকা রাখে স্বপ্ন ছোঁয়ার সিঁড়ি সংগঠন। ডিম ও বাচ্চার খবর, মুরগির বাজারদর, ক্রেতার সন্ধান দিতে সহায়তা করেন এ সংগঠনের সদস্যরা।
এ খামার পদ্ধতির প্রধান উদ্যোক্তা শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. রায়হান বলেন, এই সেক্টরটি সম্ভাবনাময়। স্বল্প বিনিয়োগে চাকরির বিকল্প কর্মসংস্থানের নতুন খাত এটি।
এই খামার পদ্ধতিকে মডেল হিসেবে অভিহিত করেন শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. লিয়াকত আলী সেখ ও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার। এ খামার মডেল হিসেবে সারা দেশে চালু করতে পদক্ষেপ নেয়ার কথাও জানান তারা।
প্রতিবেদকঃ মোঃ ফজলে রাব্বি, বগুড়া
পোলট্রি প্রতিবেদন / আধুনিক কৃষি খামার