★#দেশী #মুরগি #পালনে #নতুনরা #সাবধান★
আমাদের দেশের তরুন উদ্যোক্তারা যখন দেশী মুরগি নিয়ে বানিজ্যিক খামার গড়ে তুলছেন। চারিদিকে যখন দেশী মুরগির জয়জয়কার। ঠিক তখনই এক শ্রেণীর অসাধু হ্যাচারী মালিক, কিছু স্বার্থলোভী প্রতারক খামারী এবং হ্যাচারী মালিকদের এজেন্টরা দেশী মুরগির বাজার ধ্বংসের পায়তারায় নেমেছে। তারা দেশী মুরগির সাথে বিভিন্ন জাতের মুরগির সংকারয়নে বাচ্চা উৎপাদন করে পিউর দেশী বলে বিক্রয় করছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই এ ধরনের প্রতারনার শিকার হচ্ছে নতুন খামারীরা।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রতারনার নতুন ফাঁদ হিসাবে তারা বেছে নিয়েছে দেশী গলাছিলা মুরগিটাকে। কারন সাধারন খামারী ও ভোক্তাদের একটা ধারনা আছে দেশী ছাড়া অন্যকোন মুরগি গলাছিলা হয়না। আর অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে। বিশেষ করে প্রবাসী এবং তরুন উদ্যোক্তারাই এইসব অসাধু ব্যবসায়ীদের মুল টার্গেট।
ইউটিউবে বিভিন্ন কাল্পনিক লাভের হিসাব দেখে এবং কৃষির প্রতি দূর্বলতা থাকায় অধিকাংশ তরুন ও প্রবাসীরা দেশী মুরগির খামার করতে অতি উৎসাহী হয়ে উঠছেন। কিন্তু তারা নিজেরাও জানেননা তাদের এই অতি উৎসাহই তাদের জন্য কাল হয়ে দাড়াচ্ছে। তারা নিজেদের অজান্তেই অসাধু ব্যবসায়ীদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
ইতোমধ্যেই আমি এসব বিষয় নিয়ে #ইউটিউবে বেশকিছু ভিডিও প্রচার করেছি। নতুন আগ্রহী #উদ্যোক্তারা যাতে ঝড়ে না পরে সেজন্য বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে বিস্তারিত লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
☞ক্রস গলাছিলা মুরগি এবং দেশী গলাছিলা মুরগির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য গুলোঃ
Ø ক্রস গালাছিলা মুরগি আকারে বড় হয়। অপরদিকে দেশী গলাছিলা মুরগি তুলনামুলক আকারে ছোট হয়।
Ø ক্রস গালাছিলা মুরগির ওজন খুব দ্রুত বাড়ে। ৭৫দিনে প্রায় ১.৫কেজি+ হয়ে যায়। অপরদিকে দেশী গলাছিলা মুরগি সাধারণত ভালো ব্যবস্থাপনায় ৭৫দিনে ৭০০গ্রাম হতে ০১কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
Ø ক্রস গালাছিলা মুরগির পা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লম্বা ও হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। অপরদিকে দেশী গলাছিলা মুরগির পা সাধারনত খাটো ও কালচে বা সাদাটে হয়ে থাকে।
Ø ক্রস গালাছিলা মুরগির ঝুঁটি অনেক বড় হয়ে থাকে। অপরদিকে দেশী গলাছিলা মুরগির ঝুঁটি তুলনামূলক ছোট হয়ে থাকে।
Ø ক্রস গালাছিলা মুরগির লেজ লম্বা এবং আকাশের দিকে খারা থাকে। অপরদিকে দেশী গলাছিলা মুরগির লেজ তুলনামুলক খাটো এবং সোজা আকাশের দিকে খারা নাহয়ে নিচের দিকে হেলানো থাকে।
Ø ক্রস গালাছিলা মুরগির গায়ের রং অধিকাংশই বাদামী, লালচে বাদামী এবং সোনালী জাতের মুরগির মত হয়ে থাকে। অপরদিকে দেশী গলাছিলা মুরগির গায়ের রং দেশীর মতই বিভিন্ন রংয়ের হবে।
Ø ক্রস গালাছিলা মুরগির চলাফেরায় ও আচরণে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। অপরদিকে দেশী গলাছিলা মুরগি খুবই চঞ্চল এবং চনমনে হয়ে থাকে।
Ø ক্রস গালাছিলা মুরগি গুলো অনেক বেশী ডিম দিয়ে থাকে এবং ডিম পারা শেষে সাধারনত কুঁচে বসেনা। অপরদিকে দেশী গলাছিলা মুরগি এক সেশনে ১০-১৫টি ডিম দেওয়ার পরই কুঁচে বসে পরে।
Ø ক্রস গলাছিলা বাচ্চা আপনি যদি ১০০০কিনতে চান এজেন্ট ঠিক তাই দিতে পারবে। অপরদিকে ১০০০ তো দূরে থাক, আপনি যদি সবগুলো পিউর দেশী গলাছিলা ২০০বাচ্চাও কারো কাছে চান, তাও আপনাকে কেউ দিতে চাইবেনা বা পারবেনা।
☞ক্রস #গলাছিলা মুরগি এবং দেশী গলাছিলা মুরগির মধ্যে কিছু কমন বৈশিষ্ট্যঃ
ü ক্রস এবং পিউর দেশী গলাছিলা উভয় মুরগির বাচ্চাই ছোট অবস্থায় দেখতে প্রায় একই রকম থাকে। অতি অভিজ্ঞ নাহলে পার্থক্য বুঝার উপায় নাই।
ü ক্রস এবং পিউর দেশী গলাছিলা উভয় মুরগির ডিমের রং ও আকার প্রায় একই রকম হয়ে থাকে।
ü ক্রস এবং পিউর দেশী গলাছিলা উভয় মুরগিই একই রকম গলাছিলা হয়ে থাকে।
☞#আমার বিশ্লেষনঃ
অনেকের পিউর দেশী শতভাগ গলাছিলা বাচ্চা বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখে নিজের মধ্যে কনফিউশন তৈরি হয়। সেজন্য অল্প কয়েকটি বাচ্চা কোন এক মাধ্যমে সংগ্রহ করে কিছুদিন পালন করে দেখি আসলে এগুলো কি ?
আমার ধারনা এই বাচ্চাগুলো কমপক্ষে ০৩টি জাতের মিশ্রনে তৈরি করা। আমার জানামতে বাংলাদেশে ০৩টা হ্যাচারী তাদের নিজস্ব এজেন্টদের মাধ্যমে এই ক্রস গলাছিলা বাচ্চা গুলো সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর এইসব অসাধু এজেন্টরা নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে এই ক্রস বাচ্চা গুলো পিউর দেশী গলাছিলা বলে অতি উচ্চ মূল্যে বিক্রয় করছে। নতুনরা যখন দেশী মুরগির ফার্ম করতে মনস্থ করে পিউর দেশী বাচ্চা খুঁজতে হয়রান। ঠিক তখনই এইসব ১০০% গলাছিলা বাচ্চার প্রলুদ্ধকর বিজ্ঞাপন দেখে হুমরি খেয়ে পরে।
যখন তারা শুরু করে তখনও ঠিক বুঝতে পারেনা অল্পদিনের মধ্যেই তাদের স্বপ্ন ভংগ হবে। বাচ্চাগুলো বড় করে যখন তারা বিক্রয় করতে যায় ঠিক তখনই তারা শক খায়। পাইকারী মুরগি ক্রেতা কিন্তু ঠিকই চিনে এই মুরগিগুলো পিউর দেশী নাকি অন্যকিছু। নতুন উদ্যোক্তা অবশেষে সোনালী মুরগির দামে তার অতি উচ্চমূল্যে বাচ্চা কেনা দেশী মুরগিগুলো বিক্রয় করতে বাধ্য হয়। ফলাফল-একরাশ হতাশা নতুন উদ্যোক্তাকে গ্রাস করে।
☞#হ্যাচারী মালিকদের উদ্দেশ্যে বলছি-
এভাবে সর্ব সাধারনদের প্রতারিত করবেননা। আপনারা এত সুন্দর একটা জাত তৈরি করেছেন যার গ্রোথ ভালো, দেখতেও ভালো। তবে কেন আপনারা এটাকে দেশী বলে চালাচ্ছেন। খুব সহজেই নতুন একটা নামে এটাকে বাজারে ছাড়তে পারতেন। এতেকরে নতুন উদ্যোক্তা এবং সাধারন ভোক্তা সবাই উপকৃত হতো।
আর এজেন্টরা আপনাদের বৈধ ব্যবসায়কে অবৈধ করার কি দরকার ?
যেটা যা তাই বলেই বিক্রি করেন। এমন করলে সাময়িক লাভের বিপরীতে দির্ঘমেয়াদী ক্ষতির মধ্যে পরে যাবেন।
☞#পরিশেষেঃ
নতুনদেরকে আমি বলবো আপনারা যেকোন ফার্ম করার আগে আপনার নিকটস্থ কোন খামারীর সাথে যোগাযোগ করুন। পুরাতনদের সাথে আপনার আইডিয়া শেয়ার করুন। বিশেষ করে দেশী মুরগির বাচ্চা ক্রয়ের ক্ষেত্রে একটু বেশী সতর্ক হোন। বিশ্বস্ত হ্যাচারী বা খামারী হতে বাচ্চা সংগ্রহ করুন। ফার্ম হতে দ্রুত আউটপুট পেতে তারাহুরা করবেননা। একটা টেকসই দির্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করুন। অল্প দিয়ে শুরু করুন। আস্তে আস্তে আগে বাড়ুন।
-চাষী মানিক
পরিচালক
শখের খামার এগ্রো প্রজেক্ট
ও এডমিন
Turkey & Poultry Masters Community School