কোনো পাখি ডিম পাড়ার পর ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য সেই ডিমে তা দেয় পাখিটি, নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত ডিমে তাপ দিলে সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়।
পাখি বা মুরগী যে ভাবে ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায় সেই নিয়ম গুলো সাঠিক রেখে কৃত্রিম আবহাওয়া তৈরি করে লক্ষ লক্ষ ডিম এক সাথে নির্দিষ্ট দিনে ফুটানো যায়।
ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর মূল কাজ গুলো হচ্ছেঃ
(১) ডিমে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা।
(২)ডিমের বাহিরের আবহাওয়াতে সঠিক পরিমান আর্দ্রতা বজায় রাখা।
(৩)ডিম দ্রত নির্দিষ্ট সময় পর পর সঠিক ভাবে ঘুরিয়ে দেয়া,এবংনির্দিষ্ট দিন পরে ডিম স্থির রাখা।
উক্ত তিনটি পন্থাই হচ্ছে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর মূল পন্থা।
“তাহলে এখন ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে ঐ কাজ গুলো যদি কোনো কৌশল দ্বারা সহজ করা যায় তবে ডিম ফুটানোর সেই কৌশলে বা সেই পদ্ধতীতে ডিম ফুটানোও বলা যাবে।”
তুষ হারিকেন পদ্ধতী ঃ
তুষ পদ্ধতী নিয়ে ভাবতে গেলে প্রথমে ভাবতে হবে ডিম ফুটানোর ক্ষেত্রে তুষের ভুমিকা টা আসলে কি.!
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে গেলে তুষ হচ্ছে শক্তিশালী তাপ কুপরিবাহী একটি পদার্থ, এখন আমরা জানি ডিম ফুটাতে একটি কক্ষে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বাজায় রাখতে হবে, আর তাপের মাত্রাকে ধরে রাখতে হলে তাপকে আটকে রাখতে হবে।
আর তাপমাত্রাকে একটি বেশি সময় আটকে রাখতে হলে তাপ পরিবাহীত হতে পারেনা এমন পদার্থের দেয়াল তৈরি করতে হবে, সেই সূত্রে তুষ হচ্ছে তাপ রোধক বা তাপ কুপরিবাহী একটি পদার্থ, তাই ডিম রাখার ছোট্ট কক্ষের চারপাশে তুষের পুরু আস্তরন দিয়ে রেখে তাপমাত্রা দীর্ঘ ক্ষণ বজায় রাখা যায়। এইটাই হচ্ছে ডিম ফুটানোর ক্ষেত্রে তুষের ভুমিকা।
তুষ পদ্ধতীঃ
একটা বা একাধিক কক্ষে কিছু ডিম কে পুটলি বেঁধে রাখা হয়,
ডিম রাখার কক্ষের চারপাশে পুরু করে তুষের স্তর দেয়া হয় তাপ আটকে রাখার জন্য।
তার পাশে একই রকম একটি কক্ষে একটি হারিকেন রাখা হয়, হারিকেনের আগুন থেকে উৎপন্ন উত্তাপ্ত কার্বনডাইঅক্সাইড তাপকে ছাড়িয়ে দেয় ঐ কক্ষের বাতাসে সেখান থেকে ছোট ছিদ্রের চুঙ্গা দিয়ে পাশে ডিম রাখার কক্ষ গুলোত তাপ সঞ্চার হতে থাকে।
২/৩ঘন্টা পর পর ডিমের পুটলি গুলোকে উল্টিয়ে দিতে হয়, এবং মাঝে মাঝে ডিম ভিজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে।
তাপমাত্রা যদি খুব বেশি হয়ে যায় তবে ডিম গুলোতে বাতাস দিয়ে ডিমকে ঠান্ডা করতে হয়। হেচিং এর আগে পর্যন্ত বা ১৪ দিন এই ভাবে ডিম গুলোকে পুটলি বেঁধে তাপ দিতে হয়, হেচিংএর সময় একটা ঘরে সঠিক তাপমাত্রা রেখে, বাঁশ বা কাঠ দিয়ে বানানো একটা ট্রে তে ডিম গুলো ছড়িয়ে দিয়ে তাপ দিতে হয়,এবং মাঝে মাঝে ডিম গুলোকে ভিজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হয় অথবা ডিমের ট্রের মাঝে মাঝে পানির পাত্র রাখা হয়।
এখন আমরা জানলাম হারিকেন তাপ তৈরি করে, হারিকেনের তেল খরচ যাতে কম হয় অল্প জ্বালানীতে যাতে অনেক বেশি ডিম ফুটানো যায় সেই জন্য তাপমাত্রা আটকে রাখাতে তুষ ব্যবহার করা হয় এই হলো তুষের ভুমিকা।
এরপরে ডিমের পুটলি উলট পালট করার মাধ্যমে ডিম ঘুরানো হয়।
ভিজা কাপড় দিয়ে ডিম মুছা অথবা ডিমের পাশে পানির বাটি রাখা হয় আর্দ্রতা তৈরির জন্য।
তুষ পদ্ধতীকে আমরা দীর্ঘ সময় তাপ আটকানোর পদ্ধতীও বলতে পারি।
এবার বালি হারিকেন পদ্ধতী নিয়ে আলোচনা ঃ
এবারও আমার জানবো বালি ডিম ফুটানোর ক্ষেত্রে কি ভুমিকা রাখতে পারে, ইনকিউবেটরের ভিতর বালি ব্যবহার করলে কোন কাজ গুলো সহজ হয়।
বালি বা বালু মূলত হারিকেন চালিত ইনকিউবেটরে ব্যবহার হয়।
বালি ও তাপমত্রাকে আটকে রাখতে পারে, বালি তাপমাত্রাকে ধীরে ধীরে সমানভাবে ছড়াতে পারে।
আমরা জানি হারিকেন চালিত ইনকিউবেটরে হারিকেনের মাথার উপরে তাপ অনেক বেশি থাকে,
কিন্তু সব ডিমে তাপমাত্রা সমান থাকলেই সব ডিম গুলো ফুটবে, হারিকেন চালিত ইনকিউবেটর সার্ক্লুয়েশন ফ্যন ব্যবহার করলেও সমস্যা হয়, তাই তাপমাত্রাকে সমানভাবে ছড়িয়ে দিয়ে তাপমাত্রাকে ধীরে ধীরে উপরে ওঠার জন্য হারিকেনের মাথার উপর ধাতব পাত দিয়ে তার উপর বালি ছড়িয়ে দিতে হয়।
বালি তাপমাত্রাকে এবং কার্বোড্রাইঅক্সাইডকে সরাসরি উপরে উঠতে দেয়না।
বালি হারিকেনের তাপকে ধীরে ধীরে সমান ভাবে ছড়িয়ে দেয়।
এছাড়াও বালি আর্দ্রতা শোষনের জন্য ব্যবহার করা হয় ইনকিউবেটরে।
হারিকেনের পাশে বা ডিমের ট্রের মাঝে বাটিতে করে বালি রেখে দিলে আর্দ্রতা কিছুটা শোষিত হয়।
তাহলে বুঝা গেলো বালি দ্বারা হারিকেনের তাপ ইনকিউবেটরে ভিতর ছাড়ানো এবং আর্দ্রতা শোষনের জন্য যে ভাবে বালি ব্যবহার করাহয় তাকে বালি পদ্ধতী বলে।
আমরা বুঝলাম যে ভাবেই ডিম ফুটানো হোক না কেনো সঠিক তাপমাত্রা সঠিক আর্দ্রতা সঠিক সময় ডিম ঘুরানো এবং সঠিক সময়ে ডিম স্থীর রাখা, এই মুল নিয়ম গুলো একই থাকে। সেই নিয়ম গুলোকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে অনেক পদ্ধতীতে রুপান্তরিত হয়েছে।
লেখকঃআব্দুল ওহাব (০১৭৪৬-৬০৯২২০)