Breaking News
ইনব্রিডিং
ইনব্রিডিং

ইনব্রিডিং বা অন্তঃপ্রজনন :বিস্তারিত

ইনব্রিডিং বা অন্তঃপ্রজনন ঃ
। ইনব্রিডিং বা অন্তঃপ্রজনন।

আমাদের দেশের ৯০% ডেইরি খামারি (ছাগল খামারী) জানেনা ইনব্রিডিং কি বা কিভাবে হয় এবং এর পরিণতি কি।

না জানারই কথা কারন ইনব্রিডিং  বা অন্তঃপ্রজনন নিয়ে কোথাও আলোচনা হয় না।

আমাদের দেশের খামারিরা নিজে অজান্তেই ইনব্রিডিং সিমেন পুশ করছেন আর জানলেও কিছু করার থাকছে না,

কারন নিজের ভাল মানের ষাঁড় (বা পাঁঠা) না থাকার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে কৃত্রিম প্রজননের জন্য।

ইনব্রিডিং  বা অন্তঃ প্রজনন অর্থাৎ কাছাকাছি জিনের মধ্যে মিলন। রক্তের সম্পর্কের সাথে মিলনের ফলে যে সন্তান জন্ম নিচ্ছে সেটাই ইনব্রিডিং।

ইনব্রিডিং হচ্ছে জেনেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিকট সম্পর্কযুক্ত পিতামাতা হতে প্রজন্মের সৃষ্টি।

যেমন ঃ
ক) ভাই ও বোন = ইনব্রিড
খ) মা ও ছেলে = ইনব্রিড
গ) বাবা ও মেয়ে = ইনব্রিড
এভাবে বংশ পরম্পরায় যদি হতে থাকে সেটা ইনব্রিডিং।

নব্রিডিংয়ের কুফলঃ-

রক্তের সম্পর্কের সাথে মিলনের ফলে যে সন্তান জন্ম নিচ্ছে সেটাই ইনব্রিডিং।

ইনব্রিডিং পদ্ধতিতে অনুন্নত জাতকে বিশুদ্ধ জাতে পরিনত হয় (রক্তের বিশুদ্ধতা)।

তবে এটি এক বারের চেয়ে বেশি না।
আমাদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক বিয়ে ইসলামে নিষিদ্ধ ও নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে বিজ্ঞানসম্মত নয় (দ্য ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন)।

চাচাতো, মামাতো, খালাতো ও ফুফাতো ভাই-বোনদের মধ্যে বিয়ের পরিণামে যে সন্তান হয়, তার মধ্যে জন্মগত ও স্বাস্থ্য ত্রুটি দেখা দেয়ার ঝুঁকি বেশি।

নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের জিনগত অস্বাভাবিকতার হার এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি সাধারণ শিশুদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।

ভাই বোন প্রজননে প্রতি জেনারেশনেই ২৫% জেনেটিক গুনাগুন হ্রাস পায়।

পরিবর্তিত পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতাও কমে যেতে থাকে।

ইনব্রিডিংয়ের ফলে স্পার্ম বা শুক্রাণুর মানের উপরে প্রভাবফেলে।

এদের শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত না করতে পারার অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ শতাংশ হয়েছে।

বংশ গতির সাধারণ সূত্রানুসারে স্বামী ও স্ত্রী দুজনেরই যদি একই জীন লুকায়িত  থাকে তাহলে শতকরা ২৫ ভাগের মতো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সম্ভাবনা থেকে যায় ত্রুটিপূর্ণ জেনেটিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে সন্তান জন্মানোর। এবং ৫০% সম্ভাবনা থাকে এ জীনের বাহক হওয়ার।

ঠিক তেমনি প্রানী জগতের বিষয়টি একই রকম।

প্রাণীতে ইনব্রিডিং হলে কি হয়:

ক) উন্নত জাতকে অনুন্নত জাতে রূপান্তরিত হয়।
খ) শারীরিক বৃদ্ধির হার খুবই কম ও দূর্বল প্রকৃতির হয় এবং খর্বাকৃতি আকারের হয়।
গ) জন্মগত ত্রুটি, শারীরিক বিকলঙ্গতা চলাফেরা অসামঞ্জস্যতা, বাঁকা মুখ মন্ডল বা চোঁখ ডাবানো হয়।
ঘ) শরীরে লোমের আধিক্য।
ঙ) জন্ম অন্ধত্ব।
চ) বিভিন্ন চর্ম রোগ।
ছ) স্নায়ুুকোষের ক্ষয়।
জ) মৃত বাচ্চা প্রসব।
ঝ) নবজাতকের উচ্চ মৃত্যুহার।
ঞ) কম  ওজনে  বাচ্চা  জন্ম নেয়া।

ট) দুধ ও মাংশের উৎপাদন কম হওয়া।
ঠ) শুক্রাণুর উর্বরতা কম।
ড) দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
ঢ) ১বারে গর্ভধারন করতে না পারা, বারবার প্রজনন করানো।
ণ) ষাড়ের (বা পাঁঠার) প্রজনন ক্ষমতা না থাকা অর্থাৎ বন্ধ্যাত্ব।
ত) গাভীর (বা ছাগীর) গর্ভধারন ক্ষমতা না থাকা অর্থাৎ বন্ধ্যাত্ব।
দ) পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পারা।
ধ) প্রতি জেনারেশনেই ২৫% জেনেটিক গুনাগুন হ্রাস পায়।

আউট ব্রিডিং :
অপরদিকে যাদের সাথে রক্তের সম্পর্ক নাই তাদের মিলন হল আউট ব্রিডিং  পদ্ধতি।
এ পদ্ধতিতে চমৎকার, শক্তিশালি, উর্বর, সুস্থ বাচ্চা জন্মায়।

আউটব্রিড প্রাণী হতে সবচেয়ে বেশি (মাংশ/দুধ) উৎপাদন পাওয়া যায়।

তাই আউট ব্রিডিংয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

ইনব্রিডিং থেকে মুক্ত থাকার উপায়:
ক) রক্তের সর্ম্পকের পশুদের মধ্য প্রজনন না করানো।
খ) একই ষাঁড় (বা পাঁঠা) পুনঃপুনঃ প্রজনন কাজে ব্যবহার না করা।

অন্তঃপ্রজননঃ এড়ানোর জন্য ছাগীর বাবা বা দাদা বা ছেলে বা নাতিকে দিয়ে প্রজনন করানো যাবেনা।

From Facebook

পাঠ ২।

ইনব্রিডিং কাহিনী”

ইনব্রিডিং কি, কিভাবে ক্ষতি হয় আর ক্ষতি ঠেকানোর উপায় কি?

১. ইনব্রিডিং কি?
ইনব্রিডিং জেনেটিক্স বা কৌলিতত্ত্বের অত্যন্ত জটিল একটি চ্যাপ্টার। কিন্তু আমরা আজকে জটিলতায় না গিয়ে সহজে বোঝার চেষ্টা করব।

ইনব্রিডিং হল শরীয়তের নিয়মের বাইরে বিয়ে। হ্যা দাদা, নানা, বাবা, ভাই প্রভৃতি নিকট আত্নীয়ের সাথে গাভীর বিয়ে দিলেই ইনব্রিডিং।

২. সমস্যা কি এবং কেন?
প্রত্যেক প্রাণীর সকল বৈশিষ্ট্য তার জীন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যেমন কতটুকু দুধ দিবে, বাটের সাইজ কি হবে, গায়ের রঙ কি হবে, দুগ্ধ শিরা কেমন হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

একটি বাছুর তার নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের জীন অর্ধেক পায় বাপ থেকে আর অর্ধেক পায় মা থেকে এবং এ দুটি জীনের যেটি শক্তিশালী সেটির বৈশিষ্টই প্রকাশ পায়।

প্রত্যেক প্রাণীরই জীন পরিবর্তিত হয় (মিউটেশন)।

পরিবর্তিত হয়ে যেমন ভাল হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে।

ধরুন কোন একটি বংশে দুগ্ধশিরা ভাল হওয়ার জীন পরিবর্তিত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে- এটিকে আমরা ধরে নেই নষ্ট বাতি হিসেবে।

তাহলে এই বংশের কন্যার যদি একই বংশে বিয়ে হয় তাহলে বাচ্চা বাবা ও মা উভয়ের কাছ থেকে একটি করে নষ্ট বাতি পেল। অর্থাৎ ঘরে আলো জ্বলবে না।

অর্থাৎ দুগ্ধশিরা ভাল হবে না। কিন্তু কন্যাটির যদি অন্য বংশে বিয়ে হত তাহলে বাচ্চা মায়ের কাছ থেকে নষ্ট বাতি পেলেও বাবার কাছ থেকে ভাল বাতি পাচ্ছে। ফলে ঘর আলোকিত থাকছে। অর্থাৎ দুগ্ধশিরা ভাল থাকছে।

অর্থাৎ কোন বংশের জীনগত ত্রুটিসমূহ অন্য বংশের সাথে মেশানোর ফলে এসব ত্রুটিজাত অক্ষমতা এড়ানো যায়।

একই বংশে হলে এসব অক্ষমতা (যাকে রিসেসিভ ট্রেইট বলে) এড়ানো যায় না।

৩. সমাধানের উপায় :
সমাধান তো খুবই সহজ। ইনব্রিডিং না করালেই হল। কিন্তু ভাই সমস্যা হল আমার বাপ বুড়া আর দাদা-নানা তো কবরে।

কিন্তু বকনার বাবা, দাদা, নানা, ভাই সবাই ইয়ং এন্ড হ্যান্ডসাম, কেউ কাউকে চেনে না।

তাই ইনব্রিডিং ঠেকানোর উপায় নেই।

কারণ :
ক) আমাদের দেশে ডেইরি শিল্প এখনো কোন বৃহৎ শিল্প নয়, বরং কুটির শিল্প।

একটি খামারে প্রতিটি গাভীর সঠিক প্রজননের ইতিহাস সংরক্ষন করা বেশিরভাগ খামারীর পক্ষে সম্ভব নয়।
খ) কুমিল্লার গরু ঢাকায়, পাবনার গরু নারায়নগঞ্জে, ময়মনসিংহের গরু যশোরে যাচ্ছে এবং যাবে।

বহু খামারী আছেন বকনা সংগ্রহ করে বীজ দেন- গাভীন হলে বা বাচ্চা দিলে বিক্রয় করে দেন।

অতএব আমি যে গাভীটি কিনে আনছি তার ইতিহাস জানা সম্ভব নয়।

বর্তমানে দেশে যত গাভী আছে তার ৯৯.৯৯% এর প্রজনন ইতিহাস কেউ জানে না।

অতএব সচেতনতা বৃদ্ধি, ইতিহাস সংরক্ষনের উপর গুরুত্ব দেয়া প্রভৃতি সাজেশন দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে কি?

৪. তাহলে শেষ রক্ষার উপায় :
হ্যা ভাই। উপায় একটাই এবং তা খামারীদের হাতে নয়। সরকারের হাতে। একটি ব্রিডিং বুল দামী কিন্তু ডেইরি সেক্টরের তুলনায় নগন্য।

একটি বুল হতে বীজ সংগ্রহ করে তা বকনা বা গাভীকে দিলে যদি বকনা বাচ্চা জন্ম নেয় তবে তা হিটে আসতে মোটামোটি সর্বনিম্ন ২৪ (১০+১৪) মাস (বা ২২ মাসও হতে পারে) সময় লাগে।

যেহেতু সকল ব্রিডিং বুলকে (সব কোম্পানীর) সরকারী রেজিস্ট্রেশন নিতে হয়, অতএব রেজিস্ট্রেশন দিতে হবে ২৪ মাসের জন্য। অর্থাৎ একটি বুল দশ বছর ধরে সিমেন দিয়ে যাবে আর ইনব্রিডিং হবে না- এটা আশা করা যায় না।

অতএব বুল সিমেন দিবে দুই বছর। এরপর সে বাদ। এরপর অন্য বংশের নতুন বুল আসবে। ফলে ইনব্রিডিং এড়ানো যাবে।

অর্থাৎ সরকার উদ্যোগী হলেই ইনব্রিডিং এড়ানো সম্ভব।

সরকারের কৌলিতত্ত্ববিদগণ এসব তথ্য ভাল করেই জানেন।

এখন খামারীদের জোরালো দাবি উপস্হাপন করতে হবে।

ব্র্যাক, মিল্কভিটা, সরকারী সিমেন বহু বছর ধরে যথেচ্ছা ব্যবহার হয়েছে।

এসিআই আর আমেরিকান ডেইরীর সিমেন হয়ত আরো কিছুদিন নিরাপদ থাকবে।

কিন্তু তারপর?

অতএব সমাধান একটাই কোন সিমেন দুই বছরের অধিক মার্কেটে থাকতে পারবে না।

(“নিজের দুটি চরণ ঢাকো, তবে
ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।”
জুতা আবিষ্কার- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

বি: দ্র: তাহলে যতক্ষণ না বিড়ালের গলায় ঘন্টা পড়ানো হচ্ছে- আমরা কি করব?

হ্যা করণীয় দুটি:
১. যেখানেই শুনবেন নতুন বুলের সিমেন আছে সেটা ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে।
২. জিরো থেকে শুরু করতে পারেন। প্রচলিত বীজ গুলোই লোকাল গাভীতে দিয়ে নিজেরা জাত উন্নয়ন করে নিতে পারেন।

******

ভাই, সরকার কবে সচেতন হবে আর নতুন বুল আনবে সে আশায় বসে থাকলে আমাদের সফল খামার করা শিকেয় উঠবে।

এ মুহূর্তে আমাদের সামনে দুটি কাজ করার আছে।

১. যে ক্রস গাভীগুলো আমাদের কাছে আছে আমরা ধরে নেব এগুলো ব্র্যাক বা সরকারী বীজ দিয়ে তৈরী করা।

অতএব ইনব্রিডিং ঠেকাতে হলে কোন ভাবেই এগুলোতে সরকারী বা ব্র্যাকের বীজ দেয়া কতটুকু নিরাপদ তা ভেবে দেখা দরকার

তবে  আমেরিকান ডেইরী ও এসিআই বা সিমেক্সের বীজ তুলনামুলক ভাবে ভাল এবং অবশ্যই রেকর্ড রাখতে হবে।

আগের রেকর্ড নাই কিন্তু হালের রেকর্ড রাখা জরুরী।

২. আমেরিকান ডেইরী ও এসিআই এর বুল সীমিত ও সহজলভ্য নয় কিন্তু সরকারী বুলের বীজ সহজলভ্য।

তাই একে কাজে লাগাতে পারেন শাহীওয়াল গাভীতে।

৩য় বিয়ানের একটু বড় সাইজের শাহীওয়াল গাভীতে ১০০ % সরকারী বীজ দিলে আমরা যে বকনা পাব তা ৫০% আসবে।

এই বকনাতে আবার অন্য কোন ৭৫% দিলে ৬২.৫% বকনা পাওয়া যাবে যা সম্পূর্ণ ইনব্রিডিংমুক্ত।

আর আমাদের আবহাওয়াতে ৬২.৫% এর উপরে যাওয়ার কোন দরকার নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যমান খামারের পাশাপাশি ২/৪/৫ টি বড় সাইজের শাহীওয়াল গাভী দিয়ে ভাল গাভী তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।

বাচ্চা দুধ কম পেলে মিল্ক রিপ্লেসার তো আছেই।

বি:দ্র: নিজেরা ষাড় তৈরী করে ইনব্রিডিং হয়ত ঠেকানো যাবে কিন্তু কতটা ভাল হবে তা প্রশ্নবিদ্ধ কেননা প্রজেনী টেস্ট সম্ভব নয়। আর বাজারে সিমেন তো আছেই- শুধু উপরের ফর্মুলাদুটি মানতে হবে আর রেকর্ড রাখতে হবে।

মনে রাখবেন কেনা গাভীতে ভবিষ্যৎ নেই, ইনব্রিডিংমুক্ত গাভী নিজেরা বানাতে পারলে তবে যদি কিছু হয়।

অতএব পরিকল্পনা হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি।

ফেসবুক থেকে নেয়া

নব্রীডিং : জাত উন্নয়নে অদৃশ্য ঘাতক – ১

আমরা প্রায়ই দেখি এবং বিভিন্ন মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে শুনি, ‘ভাই গরুর সব ঠিক আছে কিন্তু দুধ হয়না’।

ভালো গাভীর বকনা বাছুরের মধ্যে ভালো মানের সিমেন দিয়ে পাওয়া গাভী, পূর্বের সব রেকর্ড ভালো, যত্ন খাতিরের অভাব নাই, ভালো খাবার দেয়া হয়েছে তবুও ভাই দুধ বাড়েনা।

ব্লাড লাইন প্রায় আশির ঘরে, অনেক বড় সাইজ, চেহারা ও চোখ ধাঁধানো কিন্তু গাভীর দুধ ১২ লিটার।

কেন এমন হয় ?

হ্যা এখানে একটা গোপন অদৃশ্য ঘাতক কাজ করে। কিন্তু কিভাবে ?

যখন কোন গাভী এবং তার পেট থেকে বকনা বাছুর একই সিমেন থেকে অথবা বোন গরু ভাই গরুর সিমেন থেকে নতুন বকনা জন্ম দেয় অথবা ঘনিষ্ট রক্তের সম্পর্কের মধ্যে যৌন সম্পর্কের মধ্যে নতুন বাছুর জন্ম নেয়, তখন এই সমস্যাগুলোর উদ্ভব হয়। এখানে গোপনে সমস্যা সৃষ্টি করে জ্বিন নামক প্রাণীর জটিল বংশগতির ধারক ও বাহক।

ইনব্রিডিং কি ?

জেনেটিক্যালি সম্পর্কিত বিপরীত লিংগের প্রাণীর মধ্যে যৌন সম্পর্ক কে ইন ব্রীডিং বলা হয়ে থাকে।

তবে গরুর ক্ষেত্রে ঘনিষ্ট রক্তের সম্পর্কের মধ্যে যৌন সম্পর্কই হচ্ছে ইনব্রিডিং।

যেমন ভাই বোন, মা ছেলে, বাবা মেয়ে। এই সব সম্পর্কের মধ্যে জন্ম নেয়া প্রাণীর মধ্যেই ইব্রীডিং জনিত কুফল সবচে বেশি দৃশ্যমান।

ইনব্রীডিং কিভাবে ক্ষতি করে ?

একটা গরুর সাথে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে যখন নতুন একটা গরুর জন্ম হয় তখন স্বাভাবিক ভাবে নতুন জন্ম নেয়া গরু তার বাবার কাছ থেকে সমগোত্রীয় জ্বিন উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে।

একই সাথে প্রতিটা গরুতে কিছু অনাকাঙ্খিত জ্বিন লুকায়িত এবং নিষ্ক্রিয় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে, যে জ্বিনগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো কাজ করেনা।

কিন্তু সমগোত্রীয় জ্বীন সক্রিয় থাকা কোন গরু যখন আবার নতুনভাবে সমগোত্রীয় জ্বীন পেয়ে থাকে তখন গরুর শরীরে নিষ্ক্রিয় থাকা অনাকাঙ্খিত জ্বিনগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং গরুর চরিত্র এবং বৈশিষ্টের মধ্যে বিভিন্ন অস্বাভাবিকতা প্রকাশ করে যার ফলে গরুর দুধ কমে যায়, বাছুরের মৃত্যু হয়, প্রতিবন্দী বাছুর জন্ম নেয় এবং আকৃতি অস্বাভাবিক ছোট বা বড় হয়।

ইন ব্রিডিং খামারে নাটকীয় প্রভাব বিস্তার করে। উদাহরণ স্বরূপ ‘মেঘনা’ নামের উন্নত বৈশিষ্টের ষাঁড়ের সিমেন ‘পদ্মা’ নামক গাভীতে দিয়ে অথবা যৌন সম্পর্ক থেকে জন্ম নিলো ‘যমুনা’ নামক বকনা বাছুর।

এর ফলে ‘যমুনা’ এবং ‘মেঘনা’ সমগোত্রীয় জ্বিনের বৈশিষ্ট ধারণ করে এবং যমুনা থেকে আরো বেশি দুধ পাওয়া গেলো এবং বকনা ‘যমুনা’ ষাঁড় ‘মেঘনার’ ভালো বৈশিষ্ট গুলো ধারণ করে।

দ্বিতীয়বার আবার ‘পদ্মা’ নামক গাভীতে ‘মেঘনার’ সিমেন দিয়ে জন্ম নেয়া ‘মধুমতি’ নামের ষাঁড় বাছুরও ‘মেঘনার’ ভালো বৈশিষ্ঠ্য গুলো পেয়ে বড় এবং উন্নত মানের ষাঁড় হয়ে উঠলো। কারণ ‘যমুনা’ এবং ‘মধুমতি’ সমগোত্রীয় জ্বিন ধারণ করে।

কিন্তু যখন পরবর্তীতে আবার ‘যমুনার’ সাথে মধুমতি অথবা মেঘনার সাথে যৌন সম্পর্ক হবে অথবা মধুমতি বা ‘মেঘনার’ সিমেন দেয়া হবে এবং নতুন বাছুরের জন্ম নেবে তখন সেই বাছুর অস্বাভাবিক চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করবে কারণ যমুনার মধ্যে থাকা মেঘনার সমগোত্রীয় জ্বিন নতুন করে ‘মেঘনা’ অথবা ‘মধুমতি’ থেকে পুনরায় পাওয়া সমগোত্রীয় জ্বিনের সংস্পর্শে ‘যমুনার’ মধ্যে নিষ্ক্রিয় থাকা অনাকাঙ্খিত জ্বিন সক্রিয় হয়ে উঠবে।

গরুর এই অবস্থাকে বলা হয় ‘ইনব্রিডিং ডিপ্রেশন’।

ইনব্রীডিং : জাত উন্নয়নে অদৃশ্য ঘাতক -২

ইনব্রীডিং এর ক্ষতিকর প্রভাব :

ইনব্রীডিং একটা খামারে নাটকীয় ক্ষতিকর প্রভাবে ডেকে নিয়ে আসতে পারে।

নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল গোন্ডা বলেন ‘ ইনব্রীডিং এর প্রধান দুইটা ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে অবশ্যই আমাদের ইনব্রীডিং থেকে খামার রক্ষা করতে হবে, যার একটা হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিকলাঙ্গ বাছুরের জন্ম নেয়া রোধ করা আরেকটা হচ্ছে ‘ইনব্রীডিং ডিপ্রেশন’ থেকে রক্ষা পাওয়া।”

কাজেই ইনব্রীডিং এর ফলে জন্ম নেয়া গরুতে ক্ষতিকর প্রভাবকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি।
১. গঠনগত ক্ষতিকর প্রভাব।
২. বৈশিষ্ঠ্য বা আচরণগত ক্ষতিকর প্রভাব অথবা ইনব্রীডিং ডিপ্রেশন ।

১. গঠনগত ক্ষতিকর প্রভাব :

ক) ইনব্রীডিং এর ফলে বিকলাঙ্গ বাছুরের জন্ম হয়। নতুন জন্ম নেয়া বাছুরে বিভিন্ন ধরণের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়,

যেমন : হাত পা বাঁকা, শরীরের কোনো অঙ্গ না থাকা, কোনো অঙ্গের অস্বাবিকতা।
খ) ইনব্রীডিং এর ফলে নতুন জন্ম নেয়া বাছুরের গঠনগত অস্বাভাবিকতা দেখা যেতে পারে।

স্বাভাবিক হাড়ের বা পেশির আকৃতি বিকৃতি হতে পারে।
গ) গঠনগত অথবা মানসিক বৈকল্যের কারণে বাছুর মৃত্যুর হার বেড়ে যায়।

২) ইনব্রীডিং ডিপ্রেশন বা বৈশিষ্ট্যগত ক্ষতিকর প্রভাব :

ক) ইনব্রীডিং এর ফলে নতুন জন্ম নেয়া বাছুরের ওজন কম হয়ে থাকে।

নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে ৫০% ইনব্রীডিং থেকে জন্ম নেয়া বাছুরের ওজন গড়ে ৩ কেজি কম হয়ে থাকে।
খ) বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে থাকে। একই গবেষণায় দেখা গেছে ইনব্রীডিং এর ফলে জন্ম নেয়া গরুতে প্রতি ১% ইনব্রীডিং এর প্রভাবে ০.৪৪ কেজি ওজন কম বৃদ্ধি হয়।

৫০% ইনব্রীডিং থেকে জন্ম নেয়া গরুর ওজন গড়ে ২২ কেজি পর্যন্ত কম হয়ে থাকে।
গ) দুধ উৎপাদন কমে যায়। ১৯৯০ সালে হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান গরুতে করা ‘ডেইরি ক্যাটেল রিপ্রোডাকশন কাউন্সিল’ এর এক গবেষণায় দেখা যায় ৫০% ইনব্রীডিং এর গাভীতে গড়ে জীবদ্দশায় ৮৮৪০ কেজি কম দুধ উৎপাদন হয়।

এছাড়া দুধ উৎপাদন কাল গড়ে ৩০ দিন কমে যায়। আয়ারল্যান্ডে করা অপর এক গবেষণায় প্রায় একই ফলাফল দেখা যায়।
ঘ) দুধের মান কমে যায়। ‘ডেইরি ক্যাটেল রিপ্রোডাকশন কাউন্সিল’ এর করা একই গবেষণায় দেখা যায় ৫০% ইনব্রীডিং এর গাভীতে গড়ে জীবদ্দশায় দুধে ৩০০ কেজি ফ্যাট এবং ২৭৫ কেজি প্রোটিন কম উৎপাদন হয় যার ফলে দুধে ফ্যাট ও প্রোটিন এর পরিমান গড়ে প্রায় ০.৫% কমে যায়।
ঙ) প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। একই গবেষণায় দেখা যায় ইনব্রীডিং এর ফলে জন্ম নেয়া বকনা হিটে আসতে এবং ষাঁড় প্রজননক্ষম হতে গড়ে ৫৫ দিন বেশি সময় দরকার হয়।

নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর এক গবেষণায় দেখা গেছে ৫০% ইনব্রীডিং থেকে জন্ম নেয়া ষাঁড়ের সেমেনে শুক্রাণুর সংখ্যা ২৫-৩০% কম হয় এবং বকণার কনসিভ রেট কমে যায়।

উপরোক্ত তথ্য বিশ্লেষণ এবং আলোচনায় দেখা যায় ইনব্রীডিং খামারের উৎপাদন ও বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

যেহেতু আমাদের দেশে ব্যাপক সংখ্যায় গরু বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই ইনব্রীডিং নিয়ে সচেতন হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

 

তথ্যসূত্র :

১. প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, নর্থ ডাকোটা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউ এস এ।
২. প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া।
৩. ডেইরি ক্যাটেল রিপ্রোডাকশন কাউন্সিল।

ইনব্রীডিং : জাত উন্নয়নে অদৃশ্য ঘাতক -৩

ইনব্রীডিং হতে রক্ষা পেতে করণীয় :

যেহেতু ইনব্রীডিং খামারে ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে, তাই খামারকে ইনব্রীডিং থেকে সুরক্ষা দেয়া জরুরি।

খামারকে ইনব্রীডিং থেকে রক্ষা করতে না পারলে একদিনে যেমন দুধের উৎপাদন কমে যায়, অন্যদিকে দুধের মান ও কমে যায়। একই সাথে প্রতিবন্দ্বী বিকলাঙ্গ বাছুর জন্ম নেয় এবং গরুর সাইজ ছোট হয়ে যায়। সর্বোপরি খামারে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। তাই উক্ত সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে নিন্ম লিখিত নিয়ম মেনে চলা জরুরি :

সকলের বুঝার সুবিদার্থে এখানে, সিমেন দাতা ষাঁড়ের নাম : এক্স,

সিমেন গ্রহীতা গাভী : ওয়াই,

এক্স এবং ওয়াই এর মিলনে জন্ম নেয়া বকনা : জেড এবং

এক্স এবং ওয়াই এর মিলনে জন্ম নেয়া ষাঁড় বাছুর : এ।

১) সচেতন হওয়া এবং রেকর্ড রাখা। কোন গাভী কোন ষাঁড়ের সিমেন দ্বারা প্রজনন করানো হয়েছে এটার রেকর্ড রাখা খুব জরুরি।

এই জন্য প্রতিটা গরুর পেডিগ্রি সংরক্ষণ করতে হবে। এক মাত্র সচেতনতা এবং রেকর্ড ই পারে খামারকে ইনব্রীডিং থেকে রক্ষা করতে।

২) যে ষাঁড়ের সিমেন দ্বারা মা গাভীকে প্রজনন করে বকনা পাওয়া গেছে, ওই বকনা কে ওই একই ষাঁড়ের সিমেন দ্বারা প্রজনন করানো যাবেনা।

যেমন : ‘এক্স’ এবং ‘ওয়াই’ এর মিলনে জন্ম নেয়া বকনা ‘জেড’ কে ‘এক্স’ দ্বারা প্রজনন করানো যাবেনা।

৩) একই গভীর ষাঁড় বাছুর দ্বারা ওই গভীর বকনা বাছুরকে প্রজনন করানো যাবেনা।

যেমন : ‘ওয়াই’ থেকে জন্ম নেয়া ‘জেড’ কে ‘এ ‘ দ্বারা প্রজন করানো যাবেনা।

৪) ছেলে ষাঁড়কে দ্বারা মা গাভীকে প্রজনন করানো যাবেনা। যেমন ‘এ’ দ্বারা ‘ওয়াই’ কে প্রজনন করানো যাবেনা।

৫) সিমেন দেয়ার পূর্বে অবশ্যই ষাঁড়ের বংশ পরিচয় জেনে নিশ্চিত হতে হবে ওই একই ষাঁড় দ্বারা ওই গভীর মা’কে বা নানীকে প্রজনন করায় তার জন্ম হয় নাই।

৬) প্রয়োজনে ২ বছর পরপর খামারে অন্য কোম্পানির সিমেন ব্যবহার করা যেতে পারে। অর্থাৎ দুই বছর পরপর সিমেন কোম্পানি পরিবর্তন করতে হবে।

৭) কৃত্তিম প্রজনন কর্মীদের সচেতন হতে হবে এবং সিমেন কোম্পানি থেকে তাদের সচেতন করতে হবে যেন ইনব্রিডিং না হয়।
৮) সিমেন উৎপাদকদের সচেতন হতে হবে এবং একই ষাঁড়ের সিমেন ২ বছরের বেশি সময় বাজারে বিক্রি করা যাবেনা ।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় একমাত্র সচেতনতা এবং রেকর্ড রাখার মাধ্যমেই খামারকে ইনব্রীডিং থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।

 

তথ্যসূত্র :

১. প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া।
২. ডেইরি ক্যাটেল রিপ্রোডাকশন কাউন্সিল।

লেখকঃজাহিদুল ইসলাম(পি ডি এফ এডমিন)

Please follow and like us:

About admin

Check Also

ডেইরি_ব্রীড_টেস্টিং_রিসার্চ_প্রজেক্ট

#ডেইরি_ব্রীড_টেস্টিং_রিসার্চ_প্রজেক্ট দেশে ডেইরি শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ডেইরি ব্রীড টেস্টিং রিসার্চ প্রজেক্টের মাঠ পর্যায়ের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »