Mastitis/ওলানপ্রদাহ
ওলানের রোগ বিভিন্ন প্রকারের
১। একুট ম্যাষ্টাইটিসঃ ভয়াবহ ইনফ্লামেশন
শুধু পানির মত সেক্রেশন আসে আবার রক্তও আসতে পারে। রক্ত আসলে তার চিকিৎসা জটিল।তবে আমার বন্দ্ধু জামাল পুর, ডি এল ও আমাকে বলেছিল এ্যাম সি কলি– ডি ইনজেকশন ব্যাবহারে ভাল ফল পাওয়া যায়।
২। গ্যাংগ্রিনাস ম্যাসটাইটিসঃ হঠাৎ বাট লাল ও ঠান্ডা হয়ে যায়।এর ফেট ভালনা। ভাল হয়না ওলানের আক্রান্ত কোয়ার্টার খসে যায় । পরে ফেলে দিতে হয়। তাই অপারেশন না করে যখন ওলানের কোয়ার্টার খসে যাবার মত হয় তখন হাত দিয়ে কোয়ার্টার ফেলে দিতে হয়।তবে অপারেশন করার চেয়ে যখন নিজের থেকে খসে যায়,তখন ফেলে দিয়ে শুকনা পটাসিয়াম পারমাঙ্গানেট কয়েকদিন লাগায়ে দিলে ক্ষত ভাল হয়। অপারেশন করতে গেলে শিরা কাটা পড়লে শিরার মুখ পেটের ভিতরে ঢুকে যায়,তখন রক্ত বন্দ্ধ করা কঠিন হয়ে যায়।
৩। ক্রোনিক ম্যাষ্টাইটিসঃ এক্ষেত্রে ফোলা কম থাকে কিন্তু অনেক সময় রক্ত বা শেষ পর্যায়ে দুধ দোহন শেষ করার পর্যায়ে অল্প লাল দুধ বের হয়।
চিকিৎসায় ইনজেকশন ট্রাসিড ভেট ১০ মিলি করে প্রথম ৪/৫ ঘন্টা অন্তর পরে ১২ ঘন্টা অন্তর ও এন্টিবায়োটিক সাথে দিলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।
দুধে রক্ত থাকলে দুধ দোহনের সময় টেনে টেনে দুধ না দোহন করে মুট করে চাপ দিয়ে দিয়ে দুধ বের করতে হবে।কারন কোন শিরা ছিড়ে যাওয়ার কারনে এমন হতে পারে, তাই টেনে দুধ দোয়ালে ক্ষত স্হান ছিড়ে আবার রক্তপাত হয়। তবে এক্ষেত্রে শিরায় কিছু ক্যালসিয়াম ইনজেকশন দেয়া যায়। কারন ক্যালসিয়াম অক্সালেট রক্ত বন্দ্ধ করতে সাহায্য করে।
ম্যাষ্টাইটিস চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন হলো থয়িং ও অক্সিটোসিন ইনজেকশন ও ডেক্সাভেট ইনজেকশন।অক্সিটোসিন কনটিনিউয়াস কন্ট্রাকশন করে যা জমাট ভাঙতে সাহায্য করে,ডেক্সাভেট এন্টি ইনফিলামেশনে সাহায্য করে। থয়িং হলো অল্টারনেট গরম ও বরফ শেক। যাহা ম্যাষ্টাইটিসে সবচেয়ে উপকারী। গরমের সময় প্রথম বরফ শেক দিতে হবে। আর শীতের সময় গরম শেক উপকারী।
বরফ শেক দিলে গ্লান্ডের কোষ ও এ্যালভিওলীতে জমা জমাট দুধ শেক দিলে সংকুচিত হয়। ২ ঘন্টা পর গরম শেক দিলে কোষগুলো সম্প্রসারন হয়, তখন ভিতরের জমা দুধ ঢিলা হয়ে বের হয়ে আসে ঐ সময় একটু ম্যাসেজ করলে ওলান নরম হয়ে যায়।ফলে এন্টিবায়োটিক ওলানের ভিতর ঢুকে কাজ করতে পারে।
বিদেশে জোক বাটে লাগায়ে দেয়।অর্থাৎ ওলান থেকে রক্ত বের হলে ওলান নরম হয় এবং নতুন করে এন্টিবায়োটিক মিশ্রিত রক্ত ওলানের মধ্যে প্রবেশ করে ফলে ম্যাষ্টাইটিস ভাল হয়।
চিকিৎসাঃ
১। ইনঃ অক্সিন
১০ মিলি করে দিনে একবার প্রয়োজন মত।
২। ডেক্সাভেট ইনঃ
২০-২৫ মিলি মাংসে দিনে একবার সর্বোচ্চ ৩ দিন।
গর্ভবতী হলে, ডেক্সাভেটের পরিবর্তে হিস্টাভেট ইনঃ ১০–১৫ মিলি মাংসে দিনে একবার।
এন্টিবায়োটিক ব্যাবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যে কোন এক জাতের এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার করতে হবে, যেমন হয় ব্যাক্টেরিওষ্ট্যাটিক অথবা ব্যাক্টেরিওসাইডাল তাহলে সিনারজেষ্টিক এ্যাকশনে এন্টিবায়োটিকের কার্যকারীতা বৃদ্ধি পাবে।দুইজাতের ঔষধ হলে এ্যান্টাগোনিষ্টিক এ্যাকশনে কার্যকারিতা হ্রাস পাবে।
৩। ইনঃ অক্সিটেট্রা ( ১০০ মিগ্রা/ মিলি)
২৫–৩০ মিলি প্রতিবারে দিনে ২বার উন্নতি হলে পরেরদিন থেকে মাত্রা কমানো যাবে।
৪। ইনঃ সালফা ডিমিডিন—৪০–৫০ মিলি শিরায় দিনে একবার(।২ টাই ব্যাক্টেরিওষ্ট্যাটিক)
অথবা
ইণঃ এস পি ভেট —৫ গ্রাম প্রতিবারে দিনে ২বার করে চলবে উন্নতি হলে মাত্রা কমবে।
অথবা
১। প্রোনাপেন ইনঃ ৪০–৮০ প্রতিবারে দিনে ২ বার চলবে
২। ইনঃ জেন্টামাইসিন( প্লেন) ৩০ সিসি করে প্রতিবারে দিনে ২বার( সাধারনত গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে।)
মালিক যদি সচেতন হয় এবং সময়মত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয় তাহলে রোগী অধিকাংশ ভাল হয়। থয়িং ম্যাষ্টাইটিস চিকিৎসার অন্যতম হাতিয়ার।
গর্ভবতী হলে অক্সিন ব্যাবহার করা যাবেনা।
গাভীর ওলান প্রদাহকে #ম্যাস্টাইটিস বা #ওলান ফোলা বা ওলান পাকা রোগ বলে, ডেইরি শিল্পের প্রধান ৪টি মারাত্মক সমস্যার মধ্যে (১) ম্যাস্টাইটিস (২) অনুর্বতা (৩) গিরা ফোলা (৪) ক্ষুরা রোগ। ম্যাস্টাইটিস একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। ম্যাস্টাইটিস রোগ অর্থনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এ রোগে-
দুধ উৎপাদন কমে যায়।
চিকিৎসা খরচ খুব বেশি।
অনেক সময় গাভী সুস্থ হয় না, ফলে বাদ দিতে (Culling) হয় বা গাভী মারা যায়।
অসুস্থ গাভীকে সেবা দেয়ার জন্য অতিরিক্ত লেবার খরচ হয়।
ম্যাস্টাইটিস রোগে আক্রান্ত গাভীর দুধের উপাদান পরিবর্তন হয়ে যায়, যেমন- দুধে ল্যাকটোজ, চর্বি, ক্যাসিন ও ক্যালসিয়াম কমে যায়, বিপরীতে সোডিয়াম, ক্লোরাইড ও রক্তের আমিষ বৃদ্ধি পায়। এ রোগ একটি গাভীর যে কোনো সময় হতে পারে তবে বাছুর প্রসবের পরেই বেশি আক্রান্ত হয়।
কারণ : বিভিন্ন প্রকারের ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস, মাইকোপ্লাজমা ও ভাইরাস।
সংক্রমণ : যদি শেডের মেঝে দীর্ঘ সময় স্যাঁতসেঁতে ও ভিজা থাকে ওলানের বাঁট কলুষিত মেঝে, দুধ দোহনকারীর হাত, দুধ দোহনের যন্ত্রের মাধ্যমে জীবাণু সরাসরি ওলানে সংক্রামিত করতে পারে। ওলানে বা বাটে আঘাতজনিত কারণে ক্ষত, ক্ষুরারোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষত বা দীর্ঘ সময় ওলানে দুধ জমা থাকলেও এ রোগ হতে পারে। বাঁটের মধ্যে কোনো শলা বা কাঠি প্রবেশ করালেও গাভী এ রোগে আক্রান্ত হবে।
লক্ষণগুলো : অতি তীব্র রোগে ওলান হঠাৎ করে লাল হবে, শক্ত হবে ও ফুলে যাবে। হাত দ্বারা স্পর্শ করলে গরম অনুভূত হবে। ওলানে প্রচ- ব্যথা থাকে, গায়ে জ¦র থাকে। পানির মতো দুধ, পুঁজ বা রক্তযুক্ত দুধ বের হবে। ওলানে পচন ধরতে পারে। দুধ কালো কাপড়ে ছাঁকলে জমাট বাঁধা দুধ ধরা পড়বে। গাভী খাদ্য গ্রহণ করবে না। অনেক সময় আক্রান্ত ওলানে গ্যাংগ্রিন হয়ে (ফুলে) যায়। গাভীর মৃত্যুও হতে পারে। সেপটিসেমিয়া ও টাক্সিমিয়ার কারণে গাভী মারা যায়।
সুপ্ত সংক্রমণ এমন ক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো দুধে ও ওলানে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না। তবে দুধ উৎপাদন কমে যায়। দুধে ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান থাকে এবং দুধের উপাদান পরিবর্তিত হয়ে যায়।
পুরাতন ওলান প্রদাহ এমন ক্ষেত্রে দুধ উৎপাদন কমে যাবে, ছানা বা জমাট বাঁধা দুধ দেখা যায়। ওলান ক্রমে শক্ত হয়ে যায়। গাভীর খাদ্য গ্রহণ কমে যায়। ২-১টি বাঁট চিরতরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দুধে চোখে পড়ার মতো তেমন পরিবর্তন ঘটে না। দীর্ঘদিন পর পর অথবা একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর ওলানে প্রদাহের লক্ষণ প্রকাশ পায়। দুধে শ্বেত কনিকা ও সোসাইটিক কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। পুরাতন ওলান প্রদাহযুক্ত গাভী খামারের জন্য খুবই ক্ষতিকর কারণ, ওই গাভী সুস্থ গাভীকে রোগ ছড়াতে সাহায্য করে।
চিকিৎসা : খুব দ্রুত রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। বিলম্বে এ রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ নিয়ে –
উন্নতমানের Antibiotic ইনজেকশন দিতে হবে মাত্রা মতো ৪-৫ দিন।
উন্নতমানের প্রদাহনাশক বা স্টেরওয়েড জাতীয় ইনজেকশন দিতে হবে।
উন্নতমানের Teat infusion আক্রান্ত বাঁটে প্রয়োগ করতে হবে। ২৪ ঘণ্টা পর পর ৩-৪ দিন।
Povidon Iodin / ভালো মানের জীবাণুনাশক মাত্রামতো পানিতে মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার ওলান ধুয়ে দিতে হবে।
অন্যান্য চিকিৎসা প্রটোকল প্রদান করতে হবে।
ওলান প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ : চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম পন্থা, একটি ডেইরি ফার্মে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা অনুসরণ করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বাঁটের স্বাস্থ্যসম্মত বিধিব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। ভালো স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান হতে হবে। জীবাণুমুক্ত দুধ দোহনব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। ওলান ও বাঁটের স্বাস্থ্য ও যেকোনো রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
খুব দ্রুত এ রোগ শনাক্ত করতে হবে এবং দ্রুত উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হবে। অসুস্থ গাভীকে আলাদা জায়গায় রাখতে হবে।
শুষ্ক ও গর্ভবর্তী গাভীকে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও সেবা দিতে হবে। গাভীর ক্ষেত্রে (বকনা বাদে) দুধ দোহনের শেষ দিনে বাঁট সিল করে দিতে হবে।
বার বার এ রোগে আক্রান্ত (২-৩ বার) গাভী, (Chronically ofteted) যেগুলোকে সম্পূর্ণ ভালো করা সম্ভব হচ্ছে না সেগুলোকে বাতিল (Culling) করতে হবে। এ জাতীয় অসুস্থ গাভী রোগের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে ফলে খামারের সুস্থ গাভীতে ছড়াতে সাহায্য করবে। সফল জনকভাবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণের এটাই একমাত্র পন্থা।
দৈনিক দুধ দোহনের মেশিন পরীক্ষা করতে হবে ও খামারের ওলান প্রদাহ রোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।
একটি দুগ্ধ খামারে ওলান প্রদাহ রোগ প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত স্বাস্থবিধি মেনে চলতে হবে-
গাভীকে কাঁচা ঘাসসহ পুষ্টিকর সুষম খাদ্য দিতে হবে;
শেডের মেঝে পরিষ্কার করে ২-৩ দিন পর পর Disinpectant দিয়ে Sprey করতে হবে। মেঝেতে কোনো প্রকার গর্ত থাকা যাবে না।
বিজ্ঞান সম্মতভাবে গাভীর শেড বা ঘর তৈরি করতে হবে।
দুধ দোহনের আগে ওলান ধুয়ে নিয়ে হবে এবং প্রতিটি গাভী দোহনের আগে দোহনকারীর হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। অসুস্থ গাভীকে সবার শেষে দোহন করতে হবে।
দোহনকারীর শরীর, হাত পরিষ্কার করতে হবে, হাতের নখ অবশ্যই ছোট রাখতে হবে।
দুধ দোহনের পর ওলান ধুয়ে তারপর জীবাণুনাশক ওষুধে বাঁট চুবাতে হবে।
Povidon iodin (Povin/Povisep) = 0.5-1.00%
Hypochlorid = 4.0%
Chlorite aceted = 0.5%
দুধ দোহনের পর গাভীর পেঁছন অংশ ধুয়ে দেয়া (Back glash)।
দোহনের পর কাঁচা ঘাস খেতে দিতে হবে যাতে করে গাভী ১-২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। তাহলে বাঁটের দুধ নালী সংকুচিত হয়ে যাবে, ফলে জীবাণু প্রবেশ করতে পারবে না।
গাভীকে দৈনিক ১-২ ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে।
(১০) কিছু দিন পর পর দুধ পরীক্ষা করে এ রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসা দিতে হবে।
(১১) বাটের ভেতরে শক্ত কাঠি বা Teat Syphon) না ঢুকানোই ভাল।