Breaking News

গরুর খাদ্য হিসাবে কলাগাছ : গুরুত্ব পর্যালোচনা

গরুর খাদ্য হিসাবে কলাগাছ : গুরুত্ব পর্যালোচনা

আমাদের দেশে গরুর আপদকালীন খাবার হিসাবে পরিচিত কলাগাছ (মুসা প্যারাডিসিকা) একটি ফলজ একবর্ষজীবি বৃক্ষ, যেটা ১ বার ফল দেয়ার পরে মারা যায়। আমাদের দেশের মতো ট্রপিকাল আবহাওয়ার দেশে প্রচুর কলাগাছ চাষ করা হয় এবং কলা সংগ্রহ করার পরে যেটার কান্ড ফেলে দেয়া হয়। অথচ একটু শ্রম দিলেই এটা হতে পারে একটা ভালো গরুর খাবার। আমাদের বাড়িতে পুকুর পাড়ে অনেক কলা গাছ ছিলো। ছোট বেলায় আব্বাকে দেখেছি পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে গেলে অথবা গরুর খাবার সংকট দেখা দিলে কলা কাটার পর গাছ এবং ভিতরের শাঁস কুচি কুচি করে গরুকে খাওয়াতো খড়ের সাথে মিশিয়ে। গরুর খাদ্য হিসাবে সেই স্মৃতিবহুল কলা গাছ নিয়েই আমাদের আলোচনা।

গরুর খাদ্য হিসাবে কলাগাছ : প্রাকৃতিক মিনারেল এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ কলাগাছের কান্ড এবং পাতা থেকে শুরু করে সব কিছুই খাদ্য হিসাবে গরুর জন্য নিরাপদ এবং পুষ্টিকর। কলাগাছের পাতা তো গরুর এমনিতেই প্রিয়। সুযোগ পাইলেই রাস্তার পাশের কলাগাছের পাতা চুরি করে খাওয়া গরুর পুরানো অভ্যাস। কান্ড কেটে কুচি করে দিলেও গরু বেশ মজা করেই খায়। আর কলা তো মানুষের চেয়ে গরুর কাছে মনে হয় বেশি প্রিয়। আমার গরুর সামনে কলা খাইলে সবাই এক সাথে মুখের দিকে তাকিয়ে জিহবা নাড়ায়। ১৯৮৭, ৮৮ এবং ৯৮র বন্যার সময় নিজে দেখেছি প্রচন্ড গরুর খাদ্য অভাবের কারণে কলাগাছ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ১৯৮৭ এবং ৮৮ সালের বন্যায় আমাদের প্রায় সব কলাগাছ গরুকে কেটে খাওয়ানো হয়েছিলো। অন্যদিকে কলাগাছের আরেকটি ব্যবহার হতে পারে সাইলেজ। ইন্দোনেশিয়া, ইন্ডিয়া, ব্রাজিল সহ অনেক দেশেই কলাগাছ সাইলেজ করে গরুকে খাওয়ানো হয়। তবে কলাগাছ খাওয়ানোর বা সাইলেজ করার একটা বড় সমস্যা হলো মাত্রাতিরিক্ত জলীয় অংশ। এই জন্য কুচি করে কাঁচা কলাগাছ হোক বা সাইলেজ হোক, সাথে কিছু শুকনা খড় মিশিয়ে দেয়া জরুরি। এতে কলাগাছের খাদ্যমান ও পুষ্টি বৃদ্ধি পায় এবং জলীয় অংশ খড় টেনে নেয়।

কলাগাছের পুষ্টিগুণ : যদিও কলাগাছ গরুর জন্য প্রয়োজনীয় মিনারেল প্রচুর পরিমান ধারণ করে, এরপরেও গোখাদ্য হিসাবে কলাগাছের প্রধান সমস্যা হচ্ছে অতিরিক্ত জলীয় অংশ এবং কম ড্রাই ম্যাটার। ইন্দোনেশিয়ার পারজাদজড়ান বিশ্ববিদ্যালয় এর এনিমেল হাসবেন্ডারী বিভাগ পরিচালিত এক গবেষণায় ফ্রেশ কলা গাছে যে সকল পুষ্টি উপাদান পাওয়া গেছে সেগুলো হলো : জলীয় অংশ : ৭৫-৮২%, ড্রাই ম্যাটার : ৬-৯.৮০% (জাত ভেদে আরো বেশি হয়ে থাকে), ক্রুড প্রোটিন : ২.৪০-৮.৩০%, ক্রুড ফ্যাট : ৩.২০-৮.১০%, ক্রুড ফাইবার : ১৩.৪০-৩১.৩০% । ওপর এক পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রতি ১০০ গ্রাম কলাগাছে ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমান হচ্ছে : ক্যালসিয়াম : ৩ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম : ৪৯৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম : ৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম : ৩৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস : ৩৪ মিলিগ্রাম, আয়রন : ৬০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি : ০.০৫৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি : ১৮.৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই : ০.১৪ মিলিগ্রাম এবং অন্যান্য আরো বিভিন্ন খনিজ উপাদান।

সাইলেজ হিসাবে কলাগাছ : অনেক ট্রপিক্যাল দেশেই গরুর খাদ্য হিসাবে কলাগাছ থেকে সাইলেজ তৈরী করা হয়। বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকা এবং পূর্ব ও মধ্যে এশিয়ার দেশগুলো অন্যতম। সাইলেজ তৈরির জন্য কলাগাছের কান্ড ২-৩ ইঞ্চি করে কুচি কুচি কেটে এর সাথে কিছু শুকনা খড়, চিটাগুড়, ইউরিয়া মিশায়ে কোন বায়ু প্রতিরোধী বদ্ধ জায়গা কম পক্ষে ২১ দিন রাখার পরে সাইলেজ খাওয়ানোর উপজোগী হয়। সাইলেজ তৈরির সময় কিছু সোডিয়াম সালফেট মিশালে উত্তম ফল পাওয়া সম্ভব। ইন্দোনেশিয়ার পারজাদজড়ান বিশ্ববিদ্যালয় এর এনিমেল হাসবেন্ডারী বিভাগ পরিচালিত এক গবেষণায় উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় তৈরী করে পাওয়া সাইলেজ এর পুষ্টি উপাদান হচ্ছে : ড্রাই ম্যাটার : ৯.১৩ – ৯.৭৫%, অর্গানিক ম্যাটার : ৮১-৮৭%, ক্রুড প্রোটিন : ৬.২৯-৮.৯৮%, ক্রুড ফ্যাট : ১.২১-১.৩২%, ক্রুড ফাইবার : ২১-২৩%।

উপরোক্ত তথ্য বিশ্লেষণ এবং আলোচনায় দেখা যায় কোলা গাছ গরুর খাদ্য হিসাবে অখাদ্য নয়। শুধু মিনারেলের উৎস হিসাবে নয়, অন্যান্য পুষ্টি বিবেচনায় ও কলাগাছ হতে পারে গরুর জন্য ভালো বিকল্প খাবার।

Note : বাংলাদেশ লাইভ স্টক রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর মাননীয় মহাপরিচালক জনাব Nathu Sarker জানিয়েছেন কলাগাছের কুচির সাথে কিছু চিটাগুড় এবং খড় মিশিয়ে দিলে গরু পাতলা পায়খানা করবেনা। ধন্যবাদ স্যারকে তার মূল্যবান মতামতের জন্য।

তথ্যসূত্র : এনিম্যাল হাসবেন্ডারী বিভাগ, পারজাদজড়ান বিশ্ববিদ্যালয়, জাভা, ইন্দোনেশিয়া

 

Please follow and like us:

About admin

Check Also

সহজভাবে গরুর খাবার উৎপাদন /ব্যবস্থা করার সিস্টেম

লিখেছেন মিজানোর রহমান (পিডিএফ গ্রুপ) কিছু কদু গাছ লাগাইছি, বুড়ো পাতা গরুরে খাওয়াব… কিছু কলাগাছ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »