গাভীর জরায়ু সধারনত জীবানুমুক্ত থাকে। আর ভ্রূণ এই জীবানুমুক্ত পরিবেশে বাড়তে থাকে।
তাই জন্মের পূর্বে বাছুরের ত্বক, মুখগহ্বর, ফুসফুস,পাকস্থলী, অন্ত্র ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জীবানু মুক্ত থাকে। জন্ম গ্রহনকালে বাছুরের প্রথম অনুজীবের সাথে সাক্ষাৎ ঘটে মায়ের প্রজনন নালী বা যোনী, যোনী দ্বারে।
এছাড়াও অনুজীবের সন্ধান মিলে প্রসবকালে গাভীর মলদ্বারে লেগে থাকা ময়লা ও গোবর থেকে। বাছুর ভূৃমিষ্ঠ হলে পরিবেশ থেকে যেমন ভূমি, বিছানা, মা ও অন্যান্য গাভীর গোবর থেকে।
মা এবং অন্যান্য গাভী যখন নবজাত বাছুরের গা ও মুখ চাটে তখন তাদের লালা থেকেও অনুজীব বাছুরের শরীরে প্রবেশ করে।
আমরা জানি গরুর দেহে অনুজীব প্রধানত ৩ ধরনের কাজ করে।
যেমন – উপকারী অনুজীব পরিপাকতন্ত্রে অপাচ্য খাদ্য উপাদানকে ভেঙে হজমে সাহায্য করে। মানুষের হজম অযোগ্য স্টার্চ ও কার্বোহাইড্রেট ভেঙে রোমন্থক প্রানির দেহে শরকরা বা শক্তি উৎপাদনের জন্য ভোলাটাইল ফ্যাটি এসিড উৎপন্ন করে এই অনুজীব গোষ্ঠী ।
আমিষ জাতীয় খাদ্য নিজেদের এনজাইম দ্বারা হজম করে দৈহিক বৃদ্ধি ও বংশ বৃদ্ধি ঘটায়।
পরবর্তীতে এবোমেজাম ও অন্ত্রে গিয়ে উক্ত অনুজীবগুলি হজম হয়ে এমাইনো এসিড ও গ্লুকোজ মুক্ত করে। যা অন্ত্রে শোষিত হয়ে রোমন্থক প্রানির পুষ্টি যোগায়।
মাতৃদেহ, পরিবেশ, মা ও অন্যান্য গাভীর চাটার সময়ে নিঃসরিত মুখের লালা, মা/ দাতা গাভীর কলস্ট্রাম থেকে যে উপকারী অনুজীব নবজাত বাছুরের দেহে প্রবেশ করে তা পরবর্তীতে রুমেনে হজম সহায়ক উপকারী অনুজীব গোষ্ঠী গঠনে মূল ভূমিকা পালন করে।
উপকারী অনুজীব ছাড়াও জন্ম পরিবেশ, মায়ের শরীর, মা ও অন্যান্য গাভী থেকে রোগ সৃষ্টিকারী জীবানুর সংক্রমনও ঘটে থাকে।
এই রোগ সৃষ্টকারী জীবানুর প্রধান উৎস অস্বাস্থ্যকর জন্মভূমি, অসুস্থ গাভীর সান্নিধ্য এবং জন্মস্থলে গোবর ময়লার আধিক্য।
অল্প পরিমান রোগ সৃষ্টিকারী জীবানুর সংস্পর্শে বাছুরের শরীরে রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম সচল হয় এবং কার্যকর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মে।
কিন্ত রোগ সৃষ্টিকারী জীবানুর আধিক্য প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টির পরিবর্তে বা মায়ের কলস্ট্রাম থেকে প্রাপ্ত প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অতিক্রম করে বাছুরের শরীরে রোগ সৃষ্টি করে।
তাই বাছুর জন্মের সময় স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বাছুরের সুস্থ্য থাকা, সঠিকভাবে বেড়ে ওঠা সর্বোপরি খামারে একটি উৎপাদনশীল সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে মূল্যবান ভূমিকা রাখে।
তাই কাভিংপেন বা আঁতুড়ঘর থেকে অসুস্থ্য গাভী অবশ্যই আলাদা রাখতে হবে।
আসন্নপ্রসবা গাভীকে অন্যান্য উৎপাদন স্তরের গরু থেকে আলাদা রেখে বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
জন্মস্থানের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর যেন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জন্মস্থান গোবর ও মময়লা মুক্ত রাখতে হবে।(মনে রাখতে হবে বেশিরভাগ রোগ সৃষ্টকারী জীবানু গোবরের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়।)
ছোট খামারে গোবর কোঁদাল বা ব্যালচা দ্বারা বালতি বা ট্রলিতে করে দিনে ৪/৫ বার সার উৎদান কেন্দ্রে স্থানান্তর করতে হবে।
বড় খামারে যান্ত্রিক উপায়ে দিনে কমপক্ষে ৩ বার গোবর সরিয়ে নিতে হবে।
ডা নন্দ দুলাল টিকাদার