মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন পর্ব-০১
।
ছাগলকে গরিবের গাভী বলা হয়। গরিব-অসহায় মানুষ ছাগল পালন করে বাড়তি আয় করে থাকেন। ছাগল গরিবের আপদ-বিপদের বন্ধু। ছাগল পালন করতে তেমন খাদ্য খরচ নেই।
দেশে দুধ, ডিম ও পোলট্রির উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবে ছাগলের উৎপাদন তেমন বৃদ্ধি পায়নি। মাচার ওপর ছাগল পালন বিষয়ে চাষিদের যথেষ্ট জ্ঞান থাকা দরকার। ছাগল পালনের বিশেষ দিকগুলো হচ্ছে- উপযুক্ত বাসস্থান, উপযুক্ত খাদ্য, প্রজনন, স্বাস্থ্য ও বাজার ব্যবস্থাপনা।
বাসস্থান :
ছাগল সাধারণত পরিষ্কার শুষ্ক, দুর্গন্ধমুক্ত উষ্ণ, পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু চলাচলকারী পরিবেশ বেশি পছন্দ করে। অপরিষ্কার, স্যাঁতস্যঁতে, বদ্ধ, অন্ধকার ও পুঁতিগন্ধময় পরিবেশে ছাগল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। যেমন- নিউমোনিয়া, একথিওমা, পিপিআর, ডায়রিয়া, চর্মরোগ, উকুন ইত্যাদি, অপর দিকে ছাগলের উৎপাদন কমে যায়।
পূর্ব-পশ্চিম লম্বালম্বী দক্ষিণ দিকে খোলা স্থানে ঘর তৈরি করতে হবে। খামারের তিন দিকে ঘেরা পরিবেশ বিশেষ করে উত্তর দিকে গাছপালা লাগাতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাঁঠাল, ইপিল ইপিল, কসভা, ডেউয়া ইত্যাদি গাছ লাগানো যেতে পারে, যার পাতা ছাগল খায়।
সেমি-ইন্টেনসিভ পদ্ধতিতে ছাগলকে সাধারণত ১৪-১৬ ঘণ্টা সময় ঘরে আবদ্ধ রাখা হয়। এ জন্য প্রতিটি ছাগলের জন্য গড়ে প্রায় ৮-৯ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন, অর্থাৎ ১৬ ফুটত্র১২ ফুট ঘরে ২০টি ছাগল পালন করা যায়।
মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন পর্ব-০২
!
মাচায় ছাগল পালনের সুবিধাসমূহ :
১. সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া রোগ হবে না, ২. কৃমি, উকুন, চর্মরোগ কম হবে। ৩. প্রস্রাব, গোবর সাথে সাথে নিচে পড়ে যায়। ফলে শরীর পরিষ্কার থাকে। ৪. শীতকালে ঠাণ্ডা কম লাগে, ৫. মাচার ওপর ও নিচ দিয়ে বাতাস চলাচল করে বিধায় মাচা শুকনো থাকে,যা ছাগলের জন্য আরামদায়ক। ৬. সর্বোপরি ছাগলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
খাবারঃ
খাদ্য তালিকায় দু ধরণের খাবার থাকা জরুরি। দানাদার খাবার এবং ঘাস জাতীয় খাবার। দানাদার খাবার দিনে ২ বার নির্দিষ্ট পরিমাণ করে খাওয়াতে হবে আর ঘাসের চাহিদা পুরণের জন্য চারণভুমি খুবই জরুরি অথবা চাষ করা ঘাস কেটে কেটে খাওয়াতে হবে।
রোগ বালাইঃ
ছাগলের রোগ বালাই তেমন বেশি নয়। পিপিআর রোগটি ছাগরের জন্য মারাত্মক রোগ। এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে আপনার নিকটস্থ প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে পিপিআর রোগের টিকা সংগ্রহ করুন এবং ব্যবহার করুন। এছাড়াও পেট ফাপা বা বদহজম, জ্বর-সর্দি, ফোড়া, সিস্ট, এনিমিয়া এবং কৃমি এ ধরনের সমস্যা দেখা যায়।
।
চিকিৎসাঃ
যখনই কোন সমস্যা দেখা দিবে তখনই যত দ্রুত সম্ভব আপনার নিকটস্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ করে রেজিস্ট্রার ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
প্রতিরোধঃ
ছাগলকে পরিমাণ মতো দানাদার খাদ্য ও ঘাস, লতা-পাতা দিতে হবে। উকুন, মেঞ্জ নিধন করতে হবে। ৪ মাস পরপর কৃমিনাশক সেবন করাতে হবে। ৬ মাস পরপর PPR রোগের টিকা প্রয়োগ করতে হবে। ওলান পাকা রোগ প্রতিরোধ করতে হবে (ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিয়ে)। প্রজনন করানোর জন্য একটি পাঠা এক এলাকায় ২ বছরের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।
।