রাফেজ কি? গবাদিপশুর খাদ্যে রাফেজ বলতে আমরা আসলে কি বুঝি?
—————————————————-
গবাদিপশুর খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত ঘাস,সাইলেজ,ফডার,বিভিন্ন শস্যকণার আবরণ যা গবাদিপশু খেতে পারে এবং যাতে রুমেন ডাইজেস্টেবল ফাইবার বা আঁশ থাকে সেগুলিকেই রাফেজ বলে। আদর্শমানের রাফেজে কমপক্ষে ১৮% রুমেন ডাইজেস্টেবল ফাইবার বা হজমযোগ্য আঁশ থাকতে হবে। এছাড়াও আদর্শমানের রাফেজে আমিষ,কার্বোহাইড্রেট, বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগ্নেসিয়াম,পটাশিয়াম, ফস্ফরাস ইত্যাদি সবকিছুই থাকবে। শুধু আপনাকে রাফেজ ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধিত এবং বিভিন্ন প্রকার রাফেজের পুষ্টিমান সম্পর্কিত কিছুটা ধারণা থাকতে হবে ভালো মানের রাফেজ কি তা বোঝার জন্য ! ভালো মানের রাফেজ যদি আপনি গবাদিপশুদের সরবরাহ করতে পারেন তাহলে তাদের জন্য আর কন্সেন্ট্রেটেড ফিড বা দানাদার খাদ্যের প্রয়োজন তেমন পরবে না এবং আপনি সাশ্রয়ী ভাবে গবাদিপশু পালন করতে পারবেন। এবার আসুন,আমরা রাফেজের শ্রেণী বিভাগ নিয়ে একটু আলোচনা করি। রাফেজে দুটি শ্রেণী বিভাগ রয়েছে। এগুলি হচ্ছে,
১। ড্রাই রাফেজ।
২। গ্রীন রাফেজ।
এখন ড্রাই রাফেজ নিয়ে একটু আলোচনা করি।
ড্রাই রাফেজঃ
——————-
ড্রাই রাফেজকে আমরা পাঁচটি ভাগে ভাগ করতে পারি,
১। হে :
ক) লিগিউমিনাস হেঃ বারশিম, ছোলা, সয়াবিন,খেসারী ইত্যাদি লিগিউম জাতীয় গাছ দিয়ে যে ‘হে’ করা হয়ে থাকে সেগুলিকে লিগিউমিনাস হে বলা হয়ে থাকে।
খ) নন লিগিউমিনাস হেঃ ওট,বার্লি,ঘাস ইত্যাদি দিয়ে যে হে করা হয় সেগুলিকে নন লিগিউমিনাস ‘হে’ বলা হয়ে থাকে।
গ) মিক্সড হেঃ লিগিউমিনাস এবং নন লিগিউমিনাস গাছ বা ঘাস দিয়ে একত্রে যে ‘হে’ করা হয় সেগুলিকে মিক্সড ‘হে’ বলা হয়ে থাকে।
২। শস্যদানার আবরণ বা হাস্ক : সাধারণত চাল,ভুট্টা,বাদাম, ছোলা ইত্যাদি শস্যদানার আবরণকে হাস্ক বলা হয়।
৩। মোচা বা স্টোভার : ভুট্টা, সরগাম ইত্যাদির মোচা।
৪। খড় বা স্ট্র : সাধারণত ধান,গম বিভিন্ন ঘাসের খর বা স্ট্র।
৫। সাইলেজ : কাঁচা ঘাস,ভুট্টা গাছ,গাছের পাতা ইত্যাদি গাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশেষ ভাবে সংরক্ষিত রূপ।
গ্রীন রাফেজঃ
——————–
গ্রীন রাফেজের তিনটি শ্রেণী বিভাগ আছে।
১। কাল্টিভেটেড বা চাষকরা ফডার : যেমন সজনে,ইপিল ইপিল, ধইঞ্চা ইত্যাদি গাছের পাতা, মিষ্টি আলু গাছ, ভুট্টা গাছ ইত্যাদি হচ্ছে কাল্টিভেটেড ফডার। বিভিন্ন ঋতূ অনুযায়ী এগুলি চাষ করা হয়ে থাকে এবং তা কাঁচা গবাদিপশুদের সরাসরি খাদ্য হিসাবে দেয়া হয়।
২। ঘাস : বিভিন্ন জাতের কাঁচা ঘাস যেমন পাকচং,ন্যাপিয়ার,জার্মান, সিগনাল ইত্যাদি।
৩। লিগিউমসঃ বারশিম,খেসারী, মাষ্কলাই ইত্যাদি লিগিউম জাতীয় গাছ বা উদ্ভিদ।
উপরের আলোচনাটুকু পড়লে অন্তত কিছুটা হলেও আপনারা রাফেজ কি সে সম্বন্ধে ধারণা করতে পারবেন। আপনি যদি রাফেজের মাধ্যমেই আপনার খামারের গবাদিপশুর খাদ্যে যথাযথ প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট,ট্রেস মিনেরালস,ভিটামিনস ইত্যাদি নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে সংমিশ্রিত দানাদার খাদ্য বা কন্সেন্ট্রেটেড ফিডের আর প্রয়োজন পরবে না। আপনাকে রাফেজে থাকা উপাদানের পুষ্টিগুণ এবং রাফেজ ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে কিছুটা সম্যক জ্ঞান থাকলেই হবে। আরেকটা ব্যাপার, রাফেজ সরবরাহ এমন ভাবে করতে হবে গবাদিপশুকে যাদে তাদের আকার ০.৫ ইঞ্চি থেকে ২ ইঞ্চির উপর না হয়! তবে সেটা,ড্রাই রাফেজের ক্ষেত্রে বেশী নজড় রাখতে হবে।গ্রীন রাফেজ কিছুটা বড় হলেও কোন সমস্যা নাই! আর গবাদিপশুকে ড্রাই বা গ্রীন দুই ধরনের রাফেজই সরবরাহ করতে হবে। আকারটা এখানে উল্লেখ করার কারণ হলো,এই আকারের রাফেজ গবাদিপশু গ্রহন করলে তা পাকস্থলীর চারপাশে ম্যাটের মতো আবরণ সৃষ্টি করে যা মাইক্রোবায়ালদের খাদ্য যথাযথ ভাবে হজম করা সহজ করে দেয়। এখানে আরেকটা জরুরী কথা বলে রাখছি ড্রাই রাফেজে ময়েশ্চার থাকবে ১০%-১৫% এবং গ্রীন রাফেজে ময়েশ্চার থাকবে ৬০%-৭০%, আর সাইলেজে ময়েশ্চার থাকবে ৬৫%-৭০%।
আসলে আমি তো প্রাণী পুষ্টিবিদ না তাই আপনাদের কতটুকু বোধগম্য হয়েছে পোস্টটি সেটা বুঝতে পারছি না আপনাদের মন্তব্য দেখা ছাড়া। সবাইকে অগ্রিম ধন্যবাদ জানিয়ে রাখছি পোস্টটি কষ্ট করে পড়ার জন্য।
mukhi mahmud(PDF)