#সন্ধি প্রদাহ
গাভীর পায়ের গিরা ও ক্ষুর ফুলে যাওয়া ও প্রদাহকে সন্ধি প্রদাহ বলে। একটি বাণিজ্যিক দুগ্ধ খামারে ৪টি ক্ষতিকর রোগের মধ্যে গিরা ফোলা রোগের অবস্থান তৃতীয়তম।
গিরা ফোলা রোগে হাড়, মাংস ও গিরার অন্যান্য অংশ আক্রান্ত হয়ে থাকে। অর্থনৈতিকভাবে রোগটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ-
দুধ ও মাংস উৎপাদন কমে যায়।
এ রোগে চিকিৎসা খরচ বেশি।
সুস্থ না হলে অল্প বয়সেই গাভীকে বাদ (Pre-mature Culling) দিতে হয় ফলে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।
যে কোনো বয়সে গিরা ফোলা রোগ হতে পারে তবে ৫ বছর বয়সের বেশি বয়সী গাভীতে বেশি হয়। এটি জেনেটিক রোগ নয়।
গিরা ফোলা রোগ দুই প্রকারের যথা-
(ক) অপ্রদাহিক (Noninflamatiory) ডিজেনারেটিভ গিরা ফোলা-এ ক্ষেত্রে ২-৪টি গিরা একসঙ্গে ফুলে যায়। কিন্তু ব্যথা থাকে না।
(খ) জীবাণুঘটিত অস্থি সন্ধি প্রদাহ।
গিরা ফোলা রোগের তথ্য নিম্নরূপ-
৯২% পেছনের পা আক্রান্ত হয়,
৬৫% বাহির পাশের ক্ষুর আক্রান্ত হয়,
১৪% ভেতরের ক্ষুর আক্রান্ত হয়,
২৮% ক্ষেত্রে গাভী খোঁড়াবে,
২২% White line Commonset,বঃ,
কারণগুলো :
সাধারণত দুগ্ধবতী গাভীর শরীরে বিভিন্ন প্রকারের খনিজ পদার্থের ঘাটতি, বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অভাব ও অসমতার (৩:১) কারণে হতে পারে।
Micoplasma, Preumonia, #Mastitis, Arthritism I Neval ill সংক্রমণ হলে হতে পারে।
E Coli, Sfreptococcus, Salmonella, Typhimomim সংক্রমণের ফলে হতে পারে।
গিরা ও টেনডন-এ কোনো আঘাত বা ঘষা খেয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হলে হতে পারে।
বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে হতে পারে।
গাভীর পায়ের ক্ষুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলে এবং দীর্ঘদিনের Necrotic Pododermatitis অথবা Sole ulcer অথবা White line disease হলে হতে পারে।
বেশি করে শুধুমাত্র দানাদার খাদ্য খাওয়ালে হতে পারে।
#ক্ষুরারোগে (FMD) আক্রান্ত হওয়ার পর যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা না হলে, ক্ষুরের উপরের গিরা আক্রান্ত হতে পারে।
এগুলো ছাড়াও কিছু সহযোগী কারণ রয়েছে যেমন-
আরামদায়ক মেঝে না হলে- অর্থাৎ উঁচু নিচু গর্তযুক্ত মেঝে বা বেশি ঢালু মেঝে ইত্যাদি।
যদি গাভীকে খুব কষ্ট করে শুয়ে থাকতে হয়।
গাভীকে বেশিক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখলে বা হাঁটালে হতে পারে।
জায়গার তুলনায় বেশি গরু এক জায়গায় রাখলে (over Crowding) হতে পারে।
বিছানা ভালো না হলে Carpal Joint, Stifle Joint, Pelvis, Brisket, Shoulder-এ ঘষা লেগে ক্ষতের সৃষ্টি করে যা পরে জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হয়ে সন্ধি প্রদাহের সৃষ্টি করে।
ব্যয়াম না করালে; সর্বদা ঘরে বেঁধে রাখলে গিরার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা লোপ পায়।
গিরার যে কোনো সমস্যা দেখা মাত্র যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে।
লক্ষণগুলো :
পায়ের গিরা ফুলে যাবে, উল্লেখযোগ্য ব্যথা থাকবে।
গাভীর কর্মতৎপরতা কমে যাবে।
হাঁটাচলা করতে কষ্ট পাবে, শুতে এবং ওঠার সময় কষ্ট হবে।
গিরা গরম মনে হবে এবং টিপ দিলে পরিবর্তন বুঝা যাবে।
সর্বদা গাভী পা কম নড়াতে চাবে।
রুচি কমে যাবে, জাবর কাটাও কমে যাবে, শ্বাস ও হৃদযন্ত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
গাভীর ওজন কমে যাবে, দুধ উৎপাদন কমে যাবে।
গাভীর উর্বরতা কমে যাবে এবং বাচ্চা দিতে সময় বেশি লাগবে।
ডিজেনারেটিভ টাইপ গিরা ফোলার ক্ষেত্রে ব্যথা থাকবে না।
চিকিৎসা :
Immertion or thorough glushing – ২ সপ্তাহ।
উন্নত মানের Antibiotic যেমন-Inj Tylocin, Inj-Penicillin+ Stneptopen, Inj, Ampicillin, ইত্যাদি গিরার মধ্যে প্রয়োগ করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কারণ অস্থিসন্ধিতে সুষ্ঠু রক্ত চলাচল হয় না, মাত্রামতো ৪-৫ দিন প্রয়োগ করতে হবে।
ব্যথানাশক ওষুধ যেমন- Asprin, Inj- Ketoprofen, Inj Prednisolon, Inj-Phenay 1-Butazon, Inj Tolfamin ইত্যাদি মাত্রা মতো ৩-৪ দিন প্রয়োগ করতে হবে।
প্রতিরোধ :
সঠিক নিয়মে মেঝে তৈরি করতে হবে।
প্রয়োজনে রাবারের তৈরি ম্যাট বা বিছানা ব্যবহার করতে হবে।
প্রতিদিন ১-২ ঘণ্টা করে গাভীকে ব্যায়াম করাতে হবে। সম্ভব হলে মাঠে ছেড়ে দিয়ে ঘাস খাওয়াতে হবে।
পায়ের ক্ষুর বেড়ে গেলে পরিমাণ মতো ছেঁটে (Foot triming) দিতে হবে। মাঝে মধ্যে ব্রাশ করে পায়ের ক্ষুর পরিষ্কার করে দিতে হবে।
গাভীকে Anti xident, I Phytochemicalসমৃদ্ধ সুষম খাদ্য ও কাঁচা ঘাস খেতে দিতে হবে। ফলে গিরা শক্তিশালী হবে ও গিরার ক্ষতিকে মেরামত করবে।
প্রয়োজনে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ডি খেতে দিতে হবে।
গাভী ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হলে যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে হবে।
লিখেছেনঃ
কৃষিবিদ ডা. মনোজিৎ কুমার সরকার
* উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার, ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর