মুরগি কিভাবে পালা হচ্ছে,কিভাবে পালা উচিত,লাভ লসের কারণ কি।খামারীর হাতে দাম নির্ধারণের ক্ষমতা নাই কিন্তু কি আছে।
কিভাবে মুরগি পালা হচ্ছেঃ
আমাদের দেশে প্রায় ৫০% এর বেশি খামারী নিয়ম/সিস্টেম অনুযায়ী মুরগি পালন করছে না।
যেমন সেড নির্মাণ,ব্যবস্থাপনা,বায়োসিকিউরিটি ভ্যাক্সিন শিডিউল,রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা,প্রোগ্নোসিস সব কিছুতে কোন না কোন জায়গায় ভুল আছে।
তাহলে কিভাবে চলছে আমাদের খামারীরাঃ
প্রতিবছর ১০-২০% খামারী ঝরে পড়ছে আবার আবার নতুন ১০-২০% খামারী যোগ হচ্ছে।
যারা ১০ বছর ধরে লেয়ার পালন করছেন তারা১০ বছরে ৫টি ব্যাচ পালন করলে ১ম ২ টি ব্যাচে লাভ করেছে,২টিতে সমান সমান ১টিতে ৬-৮লাখ শেষ মানে আগের যা লাভ করেছে তার বেশির ভাগ শেষ।এভাবেই চলে ৫০% ফার্ম।
এই খামারী আবার নিজেকে দক্ষ মনে করে।কেন এমন হল বলবে ভাগ্যে ছিল।ভাগ্য কাকে বলে?
নিজে সর্বোচ্চ সঠিক পদ্ধতিতে চেস্টা করে যা থাকবে তা ই ভাগ্য কিন্তু খামারী কি সঠিক সিস্টেমে সব করেছে? উত্তর আসবে না।খামারী নিজেও জানেনা কেন এমন হচ্ছে।
তাহলে এখানে অনেক কিছু ঘাটতি আছে সেই জায়গায় কাজ করতে হবে।
নিজের ভুলের/ঘাটতির কারণে যাতে ক্ষতি/লস না হয় সেই জায়গায় খামারী ও ডাক্তারকে কাজ করতে হবে।
ব্রয়লারের ক্ষেত্রে দেখা যায় বছরে ৮টা ব্যাচ পালন করলে ৩টাতে লাভ ৩টাতে লস হয়,বাকি ২টাতে সমান সমান।
৫০% এর ক্ষেত্রে তাই হয়।
কেন এমন হচ্ছে,ফার্ম পরিচালনায় খামারী কি সিস্টেম অনুযায়ী সব করতে পারছে। উত্তর না।
এখানেও কাজ করার সুযোগ আছে।
খাবাররের দাম,রেডি মুরগি ও ডিমের দামের ব্যাপারে খামারীর করার কিছু নাই কিন্তু ব্যবস্থাপনা,রোগ নির্ণয়,চিকিৎসা ও প্রোগ্নোসিসের ক্ষেত্রে অনেক কিছু করার আছে।সেই জায়গায় কাজ করতে হবে।
ফার্মে লাভ এবং লসের পরিধিটা অনেক বেশি,অনেক গুলো কারণেই লাভ লস হচ্ছে,তাছাড়া সাথে সাথেই কোন সমস্যা/ভুলের ফল পাওয়া যায় না তাই সমস্যা টা বুঝতেছে না বা বুঝা যায় না।
১০০০ ব্রয়লার এবং সোনালীর লস ৭০হাজার থেকে লাভ ৭০হাজার টাকা হতে পারে।তাই গ্যাপ টা হল ১৪০০০০টাকা।এই গ্যাপটা অনেক কারণে হয়ে থাকে।
এমন কি বিভিন্ন রোগের কারণে সব মুরগি মারা যাতে পারে বা ডিম কমে যেতে পারে। পরে মুরগি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হতে হয়।
মানে এক হাজার লেয়ারে ৩-৫লাখ টাকা লস মাস খানেকের মধ্যে।
খামারীর হাতে মুরগির দাম নির্ধারণের সুযোগ নাই কিন্তু অনেক কিছু আছে।
৫০% বেশি ফার্মে যে ঘাটতি আছে সেটা যদি পুরণ করতে পারি তাহলে বিনা কারণে লস হবার সম্বাবনা থাকবে না
প্রায় সময় ব্যবস্থাপনাগত ভুল,সঠিক ডায়াগনোসিস,ভুল চিকিৎসার কারণে মুরগি হয়না,ডিম কমে যায়,মুরগি মারা যায়।
সব কিছু করলেও সমস্যা হতে পারে কিন্তু সঠিক ডায়াগ্নোসিস,চিকিৎসা ও প্রোগ্নোসিস করতে পারলে অযথা লস হবে না।এটা একজন দক্ষ ডাক্তারের দ্বারাই সম্বব।
যদি ১০০০লেয়ারে ২০০০০ টাকা লাভ হয় তাহলে বুঝতে হবে ৩০০০০টাকা লাভ হয়েছে।আবার যদি লাভ না হয় তাহলে বুঝতে হবে ১০০০০টা লাভ হয়েছে।
অনেক দেখা যায় ভুল ডায়াগনোসিস এবং চিকিৎসায় হাজারে ১০০০০-১৫০০০টা খরচ হয়।লেয়ারের ক্ষেত্রে হাজারে ৩০০০০টাকাও খরচ করে অথচ এসব ক্ষেত্রে ৫০০০টাকা খরচ করলেও একই ফল পাওয়া যেত।
এমন কি যে পরিমাণ মর্টালিটি হবার হয় ভাল চিকিৎসা করলে হয়ত আরো কম মারা যেত।
অনেক সময় প্রোগ্নোসিস করতে হয় মানে মুরগির ভবিষ্যত কি তা বলতে হয়।
মুরগি সুস্থ হতে কত সময় লাগবে,কত ডিম কমবে,ডিম আসতে কত সময় লাগবে,মেডিসিন খরচ কেমন হবে।
মুরগি বিক্রি করলে লাভ হবে নাকি রেখে দিলে লাভ হবে,সেই বিষয়ে ক্লিয়ার ধারণা দিতে হয় নাহলে অনেক লস হয়।
পোল্ট্রির লাভ লসে কে রাবারের সাথে তুলনা কতা যেয়ে পারে
যে যেভাবে টানবে সেই অনুয়ায়ী লাভ লস হবে।ক্লাশের ছাত্রদের জন্য মধ্যে পরীক্ষা হলে কেউ ৯৯পায়,কেউ ৩৩ পায়,কেউ ৮০পায়।যে যেমন পড়াশুনা করবে তেমন রিজাল্ট পাবে।পোল্ট্রির ক্ষেত্রে তাই হয়।
মুরগির জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণে ওজন/ডিম কম বেশি হয়।
জেনেটিক কারণে কিছু ওজন/ডিম আমরা পেয়ে থাকি।পরিবেশ যদি ভাল হয় তাহলে জেনেটিক ও পরিবেশ ২টা সুবিধাই পাওয়া যাবে মানে বেশি ওজন/প্রডাকশন পাব।
কেউ কেউ এত কিছু করেনা তবু ভাল হয়।এসব মাঝে মাঝে হতে পারে যা ভাগ্যের ব্যাপার।আল্লাহ ধিলন সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন।কিন্তু তা সবার জন্য সব সময় হয় না।এটা লটারীর মত।
এত টাকা বিনিয়োগ করে আমরা লটারীরতে যাব কেন।
নতুন ফার্ম করলে দেখা যায় ভাল ওজন/প্রডাকশন আসে কিন্তু পুরান হবার সাথে সাথে ওজন/প্রডাকশন কম হয়,জীবানূর লোড বেড়ে যায়,রোগ ব্যাধি বেশি হয়।তখন খামারী ব্যবসা ছেড়ে দেয়।
টেকসই/আজীবন এই সেক্টরে টিকে থাকতে হলে সিস্টেম অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
কিছু কিছু ফ্যাক্টর ওজন/প্রডাকশনের উপর প্রভাব ফেলে যেমন বাচ্চা,খাবার,ব্যবস্থাপনা,সেড,বায়োসিকিউরিটি,রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ।
খামারী একেক সময় একেক টা ফ্যাক্টর দিয়ে লাভ বা লস করে কিন্তু বুঝে না কোন টা দিয়ে হচ্ছে।
খামারীর হাতে যা আছে তাই কাজে লাগাতে হবে টিকে থাকতে হলে।যেভাবে খাবার,মেডিসিন,বাচ্চার দাম বাড়ে আবার ডিম/মাংসের দাম কমে তাতে টিকে থাকা যাবে না।
একজন দক্ষ ভেটকে দিয়ে ফার্ম পরিচালনা করতে হবে।
সেটা কিভাবে?
আমাদের দেশে যেভাবে ডাক্তার দেখায় মুরগি মারা গেলে বা অসুস্থ হলে সেটা দিয়ে তেমন কোন কাজ হবে না।
ফার্মের শুরু থেকে বা যে কোন সময় থেকে যতদিন ফার্ম থাকবে ততদিন সব কাজ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হবে।অবশ্য তা একজন ডাক্তারের অধীনে করতে হবে।একেক দিন একেক ডাক্তার দিয়ে করলে হবে না।
ডিলার,কোয়াক,এম এর কাজে যাওয়া যাবে না বা তাদের পরামর্শ নেয়া যাবে না।
আজকে এই ডাক্তার কালকে আরেক ডাক্তার এভাবেও সম্বব না।
খামারী এখন সিদ্ধান্ত নিবে কিভাবে আগাবে।