বিশ্ব ডিম দিবসের গুরুত্ব”-
১১ই অক্টোবর, শুক্রবার ২০১৯ ইং সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও নানান কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে বিশ্ব ডিম দিবস।
বিশ্ব ডিম দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল-
একটি বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া
#ডিম একটি পরিপূর্ণ বা ব্যালেন্স ফুড
ভেবে দেখুন; ডিমের ভিতর যে কুসুম অথবা সাদা অংশ থাকে তার পুরোটাই সুপাচ্য প্রোটিন- যা সহজে হজম হয়, প্রতিদিন দেহের জন্য যে পরিমান এমাইনো এসিড (দেহের কোষ গঠনের জন্য প্রাথমিক উপাদান) লাগে, এনাইনো এসিড আবার বিভিন্ন রকমের কোনটাকে নন এসেন্সিয়াল এমাইনো এসিড বলে, এই ধরনের এমাইনো এসিড আবার দেহের অভ্যন্তরে আপনা আপনি নানান রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে অটোমেটিক্যালি উৎপাদন হয়। তাই নন এসেন্সিয়াল এমাইনো এসিড বাইরের থেকে খাদ্যের সাপ্লিমেন্ট হিসাবে খাদের মাধ্যমে গ্রহন করার দরকার পড়ে না।
অন্যদিকে যে সকল অতি দরকারি এমাইনো যাকে এসেন্সিয়াল এমাইনো এসিড বলে, যা কিছু পরিমানে দেহের অভ্যন্তরে তৈরি হয় কিন্তু দেহ গঠন এবং দেহ সচল রাখার জন্য পর্যাপ্ত নয় সেগুলো অবশ্যই খাদ্যের মাধ্যমে প্রতিদিন গ্রহন করতে হয়।
প্রোটিনের উৎস কি কি যা আমরা প্রতিদিন খাই?
মাছ মাংস ডালই প্রধান- কিন্তু এ সকল প্রোটিনের উৎস থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন বা পেপটাইড শতভাগ হজম যোগ্য নয়- অর্থাৎ ডাইজেস্টিবিলিটি হার অনেক কম- যে গুলো হজম হয় না তা মল মুত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে বেরিয়ে যায়।
আবার এ সকল খাদ্য উপাদানের কিছু কিছু দুর্বলতা আছে, যেমন এখানে উচ্চমাত্রায় চর্বিও থাকে( চর্বির হার এবং ধরন ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে) যা কোন কোন ভোক্তার জন্য( বয়স, রোগব্যাধি ইত্যাদি কারনে) প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা মুস্কিলই বটে।
অথচ প্রতিদিন প্রোটিন তথা এমাইনো এসিড যে কোন জীবন্ত প্রানীর জন্য অতি দরকারি কারন একটি দেহে প্রতিদিন পুরাতন কোষ মরে যায় তার স্থলে নতুন কোষ গঠন হয়- যাকে উপচিতি ও অপচিতি বলে। দেহের গঠন ঠিক রাখার জন্য তাই এসেন্সিয়াল এবং নন এসেন্সিয়াল এমাইনো এসিড পর্যাপ্ত পরিমানে দেহে থাকা জরুরি অন্যথায় দেহ দুর্বল হয়ে ক্রমাগত নানান প্রকার শারীরিক সমস্যা দেখা দিবে।
একজন মানুষের দেহ বৃদ্ধি পায় মুলত জন্ম থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যেই এ সময় উঠতি বয়সী শিশু এবং কিশোরদের জন্য বয়স্ক লোকের তুলনায় অধিক পরিমানে সুপাচ্য প্রোটিনের দরকার পড়ে।
মাছ মাংসের তুলনায় ডিম হচ্ছে অধিক সুপাচ্য- সহজে হজম যোগ্য এবং রান্না করা অতি সহজ।পাশাপাশি সকল বয়সের মানুষের কাছে একটি আকর্ষণীয় প্রতিদিনের খাদ্য।
এবার আসি ডিমের কুসুম নিয়ে-
ডিমের কুসুমের মধ্যে সর্বাধিক প্রোটিন এবং চর্বি থাকে
কেন থাকে?
একটি মুরগী ডিম পাড়ার পরে সেই ডিম থেকে যে বাচ্চা ফুটবে তাকে ফুটে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত খাদ্য খাওয়ানোর দায় নেই- কারন বাচ্চার জন্য ভ্রুন থেকে পরিপুর্ন বাচ্চা হয়ে ফুটে বেরিয়ে আসা এবং ফুটার পরে আরো তিন দিন (৭২ ঘন্টা) বেঁচে থাকার জন্য সকল দরকারি পুষ্টি উপাদান ডিমের কুসুমের মাধ্যমে দিয়ে দিয়েছে।
এবার আসুন অন্য কথায়-
একটি ডিমের ভিতর ভ্রুন বা সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চার জন্য দরকারী পুষ্টি উপদানের গঠন এমন থাকে তা যেন ভ্রুন বা সদ্যজাত বাচ্চা সহজে তার কোষের কাজে লাগিয়ে বেঁচে থাকে, দরকারী তাপ উৎপাদন করতে পারে এবং কোন বাঁধা ছাড়াই বড় হতে পারে।
ডিমের কুসুমে থাকা চর্বি শর্ট চেইন ফ্যাটি এসিড এবং প্রোটিন- পেপটাইড এবং সরাসরি এমাইনো এসিড ফর্মে থাকে, তা না হলে লং চেইন ফ্যাটি এসিড এবং উচ্চ মাত্রার প্রোটিন একটি ভ্রুন বা সদ্যজাত বাচ্চা কোন ভাবেই তার কোষের কাজে লাগাতে পারবে না- এটা প্রকৃতিই তার আপন নিয়মে স্থির করে দিয়েছে।
যেখানে একটি ভ্রুন বা সদ্যজাত বাচ্চা ফিডে থাকা পুষ্টি দিয়ে বাইরের খাবার ছাড়াই বৃদ্ধি পায় এবং বেঁচে থাকে – তাহলে আমাদের মত মানব দেহের জন্য কোন ভাবেই ঝুঁকি পুর্ণ হতে পারে না।
তাই ডিম নিয়ে অনাহুত ভীতি থাকা উচিৎ নয় আর উন্নত দেশে গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে প্রতিদিন ডিম খেলে দেহের ওজন কমে এবং হৃদ রোগের ঝুঁকি কমে।
কারন ডিমেই আছে দেহের ক্ষয়রোধে এবং গঠনে প্রতিদিনের দরকারী এমাইনো এসিড এবং দেহের তাপ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ট চেইন ফ্যাটি এসিড ও রোগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকার জন্য বিভিন্ন অর্গানিক খনিজ উপাদান ও ভিটামিন।
বেশি বেশি ডিম বিক্রি নয়- ভোক্তাকে ডিমের অপরিসীম এবং ডিম যা আমাদের জন্য মহান পুষ্টিদাতা তার সাথে পরিচিত করে দেওয়া।বিশ্ব ডিম দিবস পালনের উদ্দেডিম- পুষ্টিদাতা, জানা দরকার ভিতরের অজানা কথা।
একটি ডিমে থাকে- একটি ভ্রুনের বেড়ে উঠতে এবং পরিপূর্ণ বাচ্চায় রূপান্তর হওয়া পর্যন্ত দরকারী সকল পুষ্টি উপাদান যেমন পানি,শর্করা, প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ উপাদান, তাৎক্ষণিকভাবে শক্তির যোগান দেওয়ার জন্য অত্যন্ত সরল গঠনের চর্বি ( শর্ট চেইন ফ্যাটি এসিড) যা ভ্রুনের এবং সদ্যোজাত বাচ্চার টিকে থাকার জন্য তাপ উৎপাদন করে।
এভাবে সযত্নে, জীবনের জন্য অতি দরকারি সকল পুষ্টি উপাদান প্রকৃতিগত ভাবে একটি ডিম নতুন জীবনের জন্য নিজের মধ্যে ধারন করে রাখে। যে কোন ডিম যদি নিষিক্ত( উর্বর বা ফার্টাইল) হয় এবং পরিবেশের সকল সাপোর্ট যদি ভ্রুনের বৃদ্ধির জন্য অনুকূলে থাকে তাহলে ডিমের ভিতরে থাকা পুষ্টিই একটি বাচ্চাতে রূপান্তর হয়।
ডিমের চর্বি বা প্রোটিন, আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা সচারাচর যে সকল খাদ্য খাই তার থেকে খুবই উন্নত আকারে থাকে, যা যে কোন বয়সের মানুষের দেহে দ্রত শোষিত হয় এবং কোষের প্রতি মুহুর্তের বিপাকীয় কাজে লাগে।
মাছ মাংস এবং ডালের মধ্যে থাকা প্রোটিন এবং চর্বি অনেক বিপাকীয় প্রক্রিয়া অতিক্রম করে ডিমে যে গঠনে প্রোটিন বা চর্বি থাকে সে রূপ সরল গঠনে আসে।
প্রোটিন বা চর্বি সরল গঠনে না আসা পর্যন্ত দেহের কোষ কোন জটিল গঠনের প্রোটিন অথবা চর্বি থেকে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি বা তাপ উৎপাদন করতে পারে না।
জটিল গঠন থেকে কোষের ব্যবহার উপযোগী সরল গঠনে আসতে দেহের অভ্যন্তরে অনেক রকমের জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার দরকার হয়- আবার এ সকল জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য ও অতিরিক্ত এনার্জির বা শক্তির দরকার হয় অথচ চুড়ান্ত ভাবে মাছ মাংসের প্রোটিন অথবা চর্বি শতভাগ রূপান্তর করে সরল গঠনে আনা যায় না,যা মল মূত্র রূপে আমাদের দেহ থেকে বেরিয়ে যায় অথচ ডিমের ক্ষেত্রে উল্টো টা ঘটে- ডিমের প্রায় শতভাগ প্রোটিন এবং চর্বি কোষের কাজে লেগে যায়- যা দেশে দেশে গবেষনায় প্রমানিত।
বিশ্ব ডিম দিবসের লক্ষ্য বেশি বেশি ডিম বিক্রি করায় নয়- ডিমের ভিতরে থাকা অপার গুনের কথা সবার কাছে তুলে ধরা এবং ডিম সম্পর্কে নানান বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার থেকে ভোক্তাকে সচেতন করা।
লেখক
সমন্বয়ক
পোল্ট্রি প্রফেশনাল’স বাংলাদেশ (পিপিবি)