Breaking News

গবাদিপশুর ভ্যাক্সিন ও কৃমিনাশক ঔষধ ব্যবহারের নিয়মাবলী

গবাদিপশুর ভ্যাক্সিন   ও কৃমিনাশক ঔষধ ব্যবহারের নিয়মাবলী

গবাদিপশুর ভ্যাকসিন ও কৃমিনাশক ঔষধ ব্যবহারের নিয়মাবলী
টিকাবীজ (Vaccine) হলো এমন একটি দ্রবন যা নির্দিষ্ট কোন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। আর এ জন্যই নির্দিষ্ট রোগের জীবাণূ দিয়েই এই টিকাবীজ (Vaccine) তৈরী করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা, প্রতিরোধের মেয়াদকাল, প্রয়োগের স্থান, ও সংরক্ষনের তাপমাত্রা বিভিন্ন হতে পারে।

গরুর উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি রোগের Vaccine এর ব্যবহারবিধি তুলে ধরা হলো।

#তড়কা (Anthrax)= ৪ মাস বয়স উর্ধ্ব সকল গরুকে চামড়ার নিচে ১ সিঃসিঃ করে বৎসরে ১ বার দিতে হবে। গর্ভবতী গাভী ৮ মাসের উপড়ে হলে দেওয়া যাবে না।
#বাদলা (Black Quarter B/Q)= ৪ মাস বয়স থেকে শুরু করে ২.৫ বছরের মধ্যকার সকল গরুকে চামড়ার নিচে ৫ সিঃসিঃ করে ৬ মাস পরপর দিতে হবে।

#গলাফুলা (Haemorrhagic Septicemia)= ৬ মাস বয়স উর্ধ্ব সকল গরুকে ২ সিঃসিঃ করে চামড়ার নিচে (Booster Dose/ Nex Within 15 Days) বছরে ১ বার দিতে হবে। গর্ভবতী গাভীকে দেয়া যাবে না।

#ক্ষুরারোগ (FMD)= ৪ মাস বয়স উর্ধ্ব সকল গরুকে ৬ মাস পরপর (Booster Dose/ Nex Within 30 Days) ২ সিসি করে চামড়ার নিচে দিতে হবে। গর্ভাবস্থায় নিরাপদ।

#জলতাঙ্ক (Rabies)= ৬ মাস বয়স উর্ধ্ব সকল গরুকে ৩ সিসি করে মাংশে বছরে ১ বার দিতে হবে। এই Vaccine (0 ডিগ্রী) তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। গর্ভাবস্থায় নিরাপদ।

#নিয়মাবলীঃ

সর্বপ্রথম Vaccine এর মেয়াদ উত্তীর্নের তারিখ ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে।
ব্যবহারের পুর্বে ভায়াল ভালো ভাবে ঝাকিয়ে নিন যাতে সমভাবে মিশে যায়।
টিকাবীজ (Vaccine) দেওয়ার উত্তম সময় হলো ভোর বেলা।
কোন ভাবেই ভায়াল সুর্যের আলোতে বের করা যাবে না।
উৎপাদন থেকে ব্যবহার পর্যন্ত Vaccine ভায়াল সর্বদা Cool box অথবা ফ্লাস্কে সংরক্ষণ করতে হবে।
জলাতাঙ্ক ব্যতিত প্রায় সব Vaccine -ই চামড়ার নিচে দিতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে কোন ভাবেই যেন চামড়ার নিচে দেওয়া Vaccine মাংশ পেশীতে না ঢুকে।

অসুস্থ গরুকে Vaccine দেয়া যাবে না।

Vaccine ভায়াল খোলার এক ঘন্টার মধ্যেই ব্যবহার সম্পন্ন করতে হবে।
ব্যবহার শেষে ভ্যাকসিনের ভায়াল ভেংগে ফেলা যাবে না। মাটির নিচে পুতে রাখতে হবে।
৪ মাস বয়সের নিচে কোন গরুর বাচ্চাকে Vaccine দেয়া যাবে না।

#সতর্কতাঃ– টিকাবীজ Vaccine দেয়ার পর যদি কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তাহলে দ্রুত এন্টিহিস্টামিন যেমন inj: ASTAVET 100kg/5ml হিসাবে মাংশে দিতে হবে।

#কৃমিনাশক (Anthelmintics)

বাংলাদেশের আবহাওয়া কৃমির জন্য যথেষ্ট উপযোগী। যার জন্য গৃহপালিত পশু কমবেশি কোন না কোন কৃমি দ্বারা আক্রান্ত আছে। পরজীবি/বহিঃপরজীবি দ্বারা এ কৃমিরোগ হয়ে থাকে। নিয়মিত ও সঠিক পদ্ধতির মাধ্যমে কৃমিনাশক ঔষধ প্রয়োগ করে এই কৃমিরোগ দমন করা যায়।

সবচেয়ে ভালো হয় গরুর মল (গোবর) ল্যাবঃ এ পরীক্ষা করে, কোন কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে তা নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা দেয়া।

পাতাকৃমি
কলিজার পাতাকৃমি
রক্তের পাতাকৃমি
রুমেন কৃমি

যে কোন গ্রুপ দেয়া যাবে তবে ট্রাইক্লাবেন্ডাজল গ্রুপ উত্তম। যেমন Tab:RENADEX ,Endex, Trilevvet,LT vet.

গোলকৃমি
কেঁচো বা বড় গোলকৃমি
পাকস্থলীর গোলকৃমি
অন্ত্রনালীর গোলকৃমি
ফুসফুসেরর গোলকৃমি
সাধারনত গোলকৃমির ক্ষেত্রে লেভামিসল গ্রুপের ঔষধ উত্তম। যেমনঃ Tab: Ralnex 600mg.

ফিতাকৃমি
যেকোন গ্রুপের ঔষধ ব্যবহার করলেই হয়।

উকুন, আঠালী, মাইট

inj: Ivermectin গ্রুপ উত্তম।

#নিয়মাবলীঃ-

গরু কৃমিতে আক্রান্ত না থাকলেও নিশ্চিন্তে নিয়মিত কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানো যাবে। এতে কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ভাল ফলাফল পাওয়ার জন্য গরুকে সকালে খালি পেটে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।
দানাদার খাবারের পানির সাথে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ালে কোন কাজ ভাল করবে না।
ট্যাবলেট গুড়া করে চিটাগুড় বা কলার পাতার সাথে মুড়িয়ে খালি পেটে খাওয়াতে হবে।
কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানোর পর কমপক্ষে ১ ঘন্টা কোন ধরনের খাবার দেয়া যাবে না।
কৃমিনাশক ঔষধ নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমান খাওয়ালেও কোন ক্ষতি হবে না।
মাত্রার চেয়ে কম খাওয়ালে কৃমিতো মরবেই না বরং আরও সক্রিয় হবে।
গাভীর বাচ্চা দেয়ার কমপক্ষে ৪৫ দিন পর কৃমিনাশক ব্যবহার করুন কিন্তু এর আগে না।
প্রজনন করানোর ৪৫ দিনের মধ্যেও কৃমিনাশক ব্যবহার উচিত নয়। তবে তীব্র রোগের ক্ষেতে প্রজনন করানোর ৩০ দিন পর কৃমিনাশক ব্যবহার করা হয়।

অত্যন্ত গরম আবহাওয়ায় কৃমিনাশক খাওয়ানো যাবে না। যদি খাওয়াতেই হয় তাহলে খাওয়ানোর সাথে সাথে গরুকে ১০/১৫ মিনিটের মত সময় ধরে গোসল করাতে হবে ও ফ্যানের নিচে রাখতে হবে।
৮ মাসের উপর গর্ভবতী গাভীকে কৃমিনাশক খাওয়া উচিত নয় তবে তীব্র রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে
নিয়মিত ৩ মাস পর পর সকল গরুকে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।
সদ্য ভুমিষ্ঠ গরুর বাচ্চাকে জন্মের ৫/৭ দিনের মধ্যে পাইপারজিন গ্রুপের কৃমিনাশক পাউডার খাওয়াতে হবে এবং ৬ মাস বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে ১টি করে অ্যালবেন্ডাজল গ্রুপের ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে।

প্রতিবার কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানোর পর অবশ্যই মাত্রানুযায়ী লিভার টনিক খাওয়াতে হবে। কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানোর পর যদি খাওয়ার রুচি কম হয় তাহলে রুচিবর্ধক পাউডার/ট্যাবলেট খাওয়ালে দ্রুত রুচি ফিরে আসবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন ভিটামিন জাতীয় ইনজেকশন ব্যবহার করুন।

আমাদের দেশে ভ্যাকসিন অকার্যকর হওয়ার কারণ

১# বাঁচ্চা মায়ের কাছ থেকে পাওয়া এন্টি বডির পরিমাণ নির্ধারণ না করে এবং বাচ্চা সার্বিক শারীরিক অবস্থার না জেনে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে না,,,
২# পূর্বে থেকে গবাদি পশু  ঐ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে
৩# ভ্যাকসিন সংরক্ষণ ব্যর্থতা সর্বক্ষেত্রে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করলে লাইভ ভ্যাকসিন এর জীবাণু মারা যাবে এবং মৃত বা জীবিত জীবাণুর এন্টিজেন গুনাগুন নষ্ট হয়ে যাবে ফলে ভ্যাকসিন কার্যকর হবে না
৪# মুরগির খাবার পানিতে ভ্যাকসিন ব্যাবহারের ক্ষেত্রে পানিতে ব্লিচিং পাউডার বা যে কোন রাসায়নিক পদার্থ যেমন জীবানু নাশক ওষুধ ব্যবহার করা
৫# নির্ধারিত মাত্রায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ না করা
৬#নির্ধারিত সময় সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা এবং গরমকালে 1 ঘন্টা ভ্যাকসিন খুলে রাখা যাবে তার অধিক সময় হয়ে গেলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে
৭# আবহাওয়াজনিত যেকোনো ধরনের ধকল যেমন অতিরিক্ত গরম অথবা অতিরিক্ত ঠান্ডায় ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে যায়
৮# ভ্যাকসিন করার যন্ত্রপাতি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত না করা
৯# ভ্যাকসিন করার যন্ত্রপাতি বা পানি বিতরণ ব্যবস্থা রাসায়নিক জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করা
১০# বিভিন্ন প্রকার রোগ দমনে নিম্নমানের ওষুধ ব্যবহার করা
১১# খাদ্য ও মাইকোটক্সিন এর উপস্থিতি
১২# সঠিক পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন এর প্রয়োগ ব্যর্থতা
১৩#সর্বোপরি গবাদিপশুর খাবারে আদর্শ পুষ্টিমানের অভাব শরীরে প্রোটিন ভিটামিন মিনারেল প্রভৃতির অভাব থাকলে ভালো এন্টিবডি তৈরি হবে না।

PS SUZON

Please follow and like us:

About admin

Check Also

নবজাতক বাছুরের যত্ন ও করণীয় :

নবজাতক বাছুরের যত্ন ও করণীয় : স্তন্যপায়ী প্রায় সকল প্রাণীর জন্মপ্রক্রিয়া প্রায় একই হলেও কিছু …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »