গরুর শীতকালীন পরিচর্যা নিয়ে কিছু আলোচনা:
——————————————————
শীত আসছে,সাথে নিয়ে আসছে গবাদিপশুর নানান রোগ. আসছে শীতে তাই খামারী ভাই বা যারা গরু লালন পালন করেন তাদের কিছু শীত মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ শীতের শুরুতে গবাদিপশুর আবহাওয়াজনিত কারণে নানান রোগ দেখা দিতে পারে এবং এর জন্য প্রতিরোধ মুলক ব্যবস্থা না দিলে গবাদিপশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি হতে পারে। শীতে গবাদিপশুর যে রোগ গুলি সাধারণত দেখা দেয় সেগুলি হল ক্ষুরারোগ,গলাফুলা,তড়কা,বাদলা,
ফ্যসিওলিওসিস,নিউমোনিয়া ইত্যাদি। তাই এসব রোগ থেকে গবাদিপশুকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নিচে এই ব্যপারে কিছু দিক নির্দেশনা দেয়া হল।
১। শীতে গবাদিপশুকে সবসময় পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন এবং তাদের গা শুষ্ক রাখতে হবে। যদি আপনি আপনার গবাদিপশু গুলিকে গোছল করান তাহলে তাদের কিছুক্ষণ রোদে বেঁধে রাখবেন। গা শুকানোর পর গোয়ালঘরে ঢুকাবেন। বেশী শীতে প্রতিদিন গোছল না করালেও চলবে, শুধু গা টা ভালো করে পরিষ্কার করবেন।
২। শীতের আগেই কুয়াশা পরে, তাই খেয়াল রাখবেন যাতে কোনভাবেই গবাদিপশু কুয়াশায় না ভিজে। এতে করে ঠান্ডা লেগে জ্বর বা নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে।
৩। শীত আসার আগেই ক্ষুরা,বাদলা,তড়কা,গলাফোলা ইত্যাদি রোগের প্রতিষেধক বা টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে খামারের গবাদিপশু গুলিকে।
৪। শীতে গবাদিপশুতে পাতা কৃমির আক্রমণ দেখা যায় এবং এ কারণে গবাদিপশুর ফ্যাসিওলিওসিস রোগ হয়ে থাকে, তাই গবাদিপশুকে কৃমিনাশক ওষুধপাতি দিতে হবে।
৫। এই সময় গাভী বাছুর প্রসব করলে বাছুরের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। বাছুরের যাতে কোন ভাবেই ঠান্ডা না লাগে।
৬। গবাদিপশুর থাকার জায়গা বা গোয়ালঘর সব সময় শুষ্ক,পরিষ্কার এবং উষ্ণ রাখতে হবে। গোয়ালঘরে যাতে বিশেষ করে শৈত্য প্রবাহের সময় শীতল বাতাস প্রবেশ করতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। গোয়ালঘরের দেয়ালে ফাঁক ফোকর থাকলে সেগুলি পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
৭। গবাদিপশুকে যদি পানি মিশ্রিত খাদ্য দেয়া হয় তবে সেক্ষেত্রে বিশেষ করে বিকালবেলা যে খাদ্য দেয়া হয় তা হাল্কা গরম পানির সাথে মিশিয়ে দেয়া উত্তম। শীতে গবাদিপশুর শরীরে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশী তাপমাত্রা তৈরী করার প্রয়োজন হয় বিধায় তাদের শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ হয়, তাই তাদের অন্যান্য সময়ের চেয়ে খাদ্য কিছুটা বেশী দিতে হয়।
Mukti
এখন দেশের অনেক জায়গায় প্রচন্ড শীত ও ঠান্ডা,
এই শীতকালে গরুর যত্ন নিয়ে আলোচনা।
যত্ন নিন সুস্থ থাকবে আপনার খামারের গরুগুলো।
শীতে গরুর নানা রোগ দেখা দেয়, এতে গরুর ওজন ও দুধ কিছুটা ও কমে যায়।
এই শীতে আপনার করণীরঃ———————-
১।খামারের চারদিকে দেওয়াল না থাকলে বা ফাঁকা থাকলে চট দিয়ে নয়তো মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যাতে বাহিরের ঠান্ডা হাওয়া ভিতরে প্রবেশ না করে।
২।বাহিরে ঠান্ডা হাওয়া বা বাতাস থাকলে খামারের গরুগুলো কে বাহির করবেন না, খামারের ভিতরে রেখেই খাদ্য দিতে হবে।
৩।শীত বা ঠান্ডা বেশি থাকলে গরুকে কুসুম গরম পানির সাথে খাদ্য খেতে দিতে হবে।
৪।শীতে গরুর যাতে করে ঠান্ডা না লাগে সে দিকে খেয়াল করতে হবে তাই রাবার মেট ব্যবহার করতে হবে গরু রাবার মেটে শুইলে কিছুটা ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাবে।
অথবা নিচে খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
৫।শীত অতিরক্ত বেশি হলে খামারে তাপমাত্রা বাড়াতে হবে বৈদ্যুতিক বাল্ব ব্যবহারের মাধ্যমে।
৬।খামারের প্রতিটি গরুকে ভ্যাকসিনের কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে কারণ শীতে রোগব্যাধি বেশি দেখা দেয়।
৭।খামারে কোন দূবল’ গাভী থাকলে ঐ গাভীর দিকে শীতে সু নজর রাখেন এবং প্রাণীসম্পদ হাসপাতালে ভেটেরিনারি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিবেন।
৮।খামার সবসময় পরিস্কার রাখুন, যাতে করে প্রসাব পায়খানা গরুর শরীলে মিশে শরীল না মাখে, কারণ ঠান্ডা বেশি থাকলে প্রতিদিন গরুকে গোসল করানো ঠিক হবে না।তাই শরীল পরিস্কার থাকলে সপ্তাহে ২/৩ দিন গোসল করালেই চলে। তবে অতিরিক্ত শীতে নয়।
৯।প্রতিদিন সকাল বিকালে আপনার খামারের প্রতিটি গরুর ৪ পা ও পায়ের তলদেশে এবং খামারের আশেপাশে জীবনুনাশক স্প্রে ব্যবহার করুন।
জীবাণু নাশকঃ GPC 8 অথবা FAM 30
ব্যবহারঃ ১ মুখ ঔষধ ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করবেন।
মোঃ জুলমত আলী