দোয়েল
যে পাখির শীষ দেয়া গান, সুরেলা কণ্ঠ আমাদের হূদয় মনকে আন্দোলিত করে সেটি হচ্ছে দোয়েল। দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি।
আকৃতি: দেখতে ছোট ধরনের পাখি এটি। পাঁচ থেকে ছয় ইঞ্চির মত লম্বা হয় এরা। সমস্ত দেহ উজ্জ্বল কালো বর্ণের। তবে এদের গলার নীচ থেকে বুক পর্যন্ত এবং ডানা বরাবর সাদা রেখা দেহের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। লেজে সাদা ও নীলের মিশ্রণ সত্যিই নয়নাভিরাম। শরীরের তুলনায় লেজ লম্বা।
বাসস্থান: বাড়ীর আশেপাশেই এদের দেখতে পাওয়া যায়। এরা ঘন বন জঙ্গল কিংবা খোলা জায়গায় সব সময় থাকতে ভাল বাসেনা। তাইতো বসতবাড়ীর আশে-পাশে ছোট গাছ কিংবা সবজির মাচায় বাসা বাঁধে। গাছের কোটর, দেয়ালের ফাঁক, ঘরের চালের ফাঁকা জায়গা, সবজির মাচা উল্লেখযোগ্য।
স্বভাব : সুরেলা কণ্ঠের সাথে সাথে কখনও কখনও বিচিত্র আওয়াজ ও অঙ্গভঙ্গি করেও আমাদের আনন্দ দিয়ে থাকে দোয়েল। শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় এরা বেশি গান গায়। কখনও কখনও ধ্যানরত ঋষির মত একই স্থানে বসে অনেকক্ষণ বসে গান গায়। লেবুর ডালে কিংবা ঘরের চালে কিংবা সবজি মাচায় বসে লেজ উচিয়ে যখন গান গায় সত্যিই ভাল লাগে।
ডিম ও বাচ্চা : স্ত্রী দোয়েল পাখি এক সাথে দুই থেকে চারটি ডিম পাড়ে। শীতের শেষ থেকে বসন্তের শেষ, এ সময়ের মধ্যেই এরা ডিম পাড়ে। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি পালাক্রমে ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। গভীর মমতায় ও আদরে এরা বাচ্চাকে ওম দিয়ে খাবার দিয়ে বড় করে তোলে।
উপকারিতা : এর গান, সৌন্দর্য আমাদের আনন্দ দেয়। আবার ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সহযোগিতাও করে।
গানের পাখি : দোয়েলকে গানের পাখি বলে। এর মিষ্টি সুরেলা শিষ মনকে ভরিয়ে তোলে। যখন মিষ্টি সুরে শিষ দিয়ে গান গায় আর লেজটি নাচায় সত্যিই সুন্দর দেখায়। এদের মিষ্টি সুরের গান বিশেষ করে ভোরে এবং পড়ন্ত দুপুরে দেহ মনকে আকর্ষিত করে। কখনও কখনও রাত্রেও দোয়েলের শিষ শোনা যায়।
জীবনসীমা : দোয়েল ১৪/১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে ডিম পাড়ে। স্ত্রী দোয়েল ৪/৫টি ডিম দেয়। ডিম লালচে বাদামি আভা ও নীলাভ সবুজ ছাপযুক্ত। স্ত্রী দোয়েল তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়।
খাদ্য : পোকা-মাকড় ও কীট পতঙ্গই সাধারণত এদের প্রধান খাবার।
জাতীয় পাখি হিসেবে দোয়েল : আমাদের সবুজ প্রকৃতি আর মানুষের কাছাকাছি মায়াময় পরিবেশের সঙ্গে একেবারে মিশে থাকে এ পাখি। সর্বত্র এদের দেখাও যায় বেশি। এসব কারণেই দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখির মর্যাদা পেয়েছে।
প্রাপ্তি স্থান : বাংলাদেশের সর্বত্র এ পাখি দেখতে পাওয়া যায়।
দোয়েল পাখি অন্যান্য পাখির মতই শোভা বর্ধন এবং প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। এজন্য দোয়েল পাখি রক্ষা করা কর্তব্য। এছাড়াও এটি আমাদের জাতীয় পাখি।
তথ্যসূত্র ইন্টারনেট।
ডা মহিউদ্দিন তারেক