গোশত উৎপাদন ও সম্ভাবনাময় খাত
ভেড়ার মাংস সমাদৃত সকল বিশ্ব জুড়ে। যদিও আমরা সরাসরি ভেড়ার মাংস কম লোকই খাচ্ছি, তবে এ দেশের বাজারে ভেড়ার মাংসকে ছাগলের মাংস হিসাবেই চালিয়ে দেয়া হয়। মোট বিক্রিত ছাগলের মাংসের প্রায় ২০-৩০ শতাংশই প্রকৃতপক্ষে ভেড়ার মাংস।
গ্রামের সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র খামারীগণ স্থানীয় বাজারে পাইকার/বেপারীর নিকট ভেড়া বিক্রি করে। পরবর্তিতে দেশের বড় বড় শহরে কসাইদের কাছে এসব ভেড়া বিক্রি করা হয়। বাজারে গিয়ে খেয়াল করলে দেখবেন ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাজারে, জবাইকৃত ছাগল ছিলে ঝুলানো আছে সারি সারি। আসলে কি সবই ছাগল? দেখবেন কিছু ছাগলের লেজ নেই, একেবারে ভিতর থেকে কেটে ফেলা।আর এগুলোই ভেড়া। বাড়িতে আনলে বা খেলে বুঝবেনই না, অাসলে কি ভেড়া না ছাগল।
কম বেশি আমরা সবাই ভেড়ার মাংস খাচ্ছি। তবে ছাগলের মাংসের দামে। এতে একদিকে খামারীগণ তাদের ভেড়ার উপযুক্ত মূল্য পায় না, অন্যদিকে ক্রেতাদেরকে অধিক দামে মাংস কিনতে হচ্ছে। গরু, মহিষ, ছাগলের ন্যায় দেশের হাটে- বাজারে সাধারণ জনগণের মধ্যে ভেড়া কেনা বেচার প্রচলন খুব একটা চোখে পড়ে না। সেহেতু, ভেড়া পালনকারীরা তাদের ভেড়া বিক্রির জন্য ব্যাপারীর দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া গত্যান্তর নেই। সংগত কারণেই ব্যাপারীরা সস্তায় ভেড়া কিনে নেয়।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে ভেড়ার গোশত হালাল। পুষ্টি বিজ্ঞানিদের মতে ভেড়ার গোশত অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ। তাই ভেড়ার গোশতের গন্ধের দোহাই দিয়ে ভেড়ার গোশত খাওয়া, লালন পালন থেকে বঞ্চিত হওয়া মোটেই সমীচীন নয়। অনেকের মতে ভেড়া কুরবানি করা অধিক ছওয়াবের বিষয় কেননা কুরবানী শুরুই হয়েছিল দুম্বা ও পরে ভেড়া দিয়ে।
আদিকাল থেকেই আমাদের পূর্বপুরুষেরা এ ক্ষুদ্র প্রাণীটির লালন পালন ও সংরক্ষণ করে আসছে। এরা আমাদের গরু, মহিষ, ছাগলের সাথে মিলে মিশে টিকে আছে। এদের লালন পালন, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা সব বিষয়ে আমাদের সমাজের লোকেরা খুবই পরিচিত। আমরা যদি নিয়মিত ভেড়ার পশম ছাঁটাই করি সেইসাথে এর শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি তাহলে ভেড়া দেখতে সুন্দর লাগবে,গন্ধতো প্রশ্নই আসেনা। বরং ছাগলের গায়ে যেমন গন্ধ থাকে এবং মাংসেও গন্ধ পাওয়া যায়। নাজ ফার্ম
কে বা কারা যে পলিটিক্স করে আমাদের মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছিল যে ভেড়ার গোসতে গন্ধ। সারা বিশ্বে যখন ভেড়ার গোসত দামি খাবারের তালিকায়। তাহলে আজ কেনইবা আমরা ভেড়ার গোশত খাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকবো? আমরা কি ভেড়ার গোশত খাচ্ছি না? খাচ্ছি! তবে ভেড়ার গোশতে খাসির লেবেল লাগিয়ে। লেবেল লাগানোর কাজটি কসাইরা করে থাকেন। আচ্ছা, ভেড়ার গোশতে খাসির লেবেল লাগালে স্বাদতো খাসির গোশতের মতন হওয়ার কথা নয়? স্বাদ যেহেতু খাসির গোশতের ন্যায়, তাহলে ভেড়ার গোশত খাসির নামে ও দামে না কিনে যদি সরাসরি ভেড়ার গোশত কিনি তাহলে একটু কম দামেও পাবো সেটাই কি সমীচীন নয়? এতে ভেড়া লালন পালনে জনগণের আগ্রহ বাড়বে। খাসির চড়া দামে কিছুটা হলেও ভাটা পড়বে। খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আমিষের চাহিদা কিছুটা হলেও মিটবে। আর যদি অন্যভাবে চিন্তা করি তাহলে ভেড়ার গোশতের চাহিদা যেহেতু বিদেশে রয়েছে সেহেতু রপ্তানি খাতে নতুন পণ্য হিসাবে ভেড়ার গোশত সংযোজন হতে পারে ।
অতিসম্প্রতি দু’একটি মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং আরও প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রপ্তানিকে সামনে রেখে দেশে বিদ্যমান মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলিকে কেন্দ্র করে ছোট বড় ভেড়া মোটাতাজাকরণের খামার স্থাপন করা যেতে পারে। এতে ভেড়া পালনের মাধ্যমে গরীব জনগোষ্ঠি উপকৃত হবে এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পও তাদের প্রয়োজনীয় পশু সহজে সংগ্রহ করতে পারবেন।
এসব কিছু বিবেচনা করে অধিক বর্ধনশীল গাড়ল ভেড়ার খামার করে ব্যাক্তিভাবে যেমন লাভবান হওয়া যাবে তেমনি দেশের আমিষের যোগানে সহায়তা করা যাবে।