টিকা ও ওষুধের ব্যবহার পদ্ধতি
টিকা ও ওষুধের সঠিক ব্যবহার রোগপ্রতিরোধ ও নিরাময় নিশ্চিত করে এবং টিকা ও ওষুধের অপচয় রোধ করে। টিকার ব্যবহার যথাযথ না হলে গবাদিপশুর সংক্রামক রোগের মহামারীর জন্য খামারিরা লোকসানের সম্মুখীন হবেন। এতে খামারি তথা দেশ এক গুরুতর আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। গাভীর ওষুধ প্রয়োগ সঠিক মাত্রায় হতে হবে। যদি মাত্রা সঠিক না হয় তবে রোগ সারবে না। কম মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগের ফলে আক্রমণকারী জীবাণু ওষুধের বিরুদ্ধে সহনশীলতা (Drug Resistant)অর্জন করবে। পরবর্তীতে ঐ ওষুধ প্রয়োগে ঐ রোগ নিরাময় করা যাবে না।
টিকা ও ওষুধ প্রয়োগ পদ্ধতি
টিকা ও ওষুধ প্রয়োগ পথ যে নিয়মে বা পথে পশুর দেহে টিকা বা ওষুধ প্রয়োগ করা হয় তাকে টিকা বা ওষুধ প্রয়োগ পথ বা রুট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Route of Administration)বলে। আক্রান্ত পশুর রোগের প্রকৃতি,আক্রান্ত অঙ্গ এবং আক্রমণকারী জীবাণুর ধরনের ওপর ওষুধ প্রয়োগ পদ্ধতি নির্ভর করে। সঠিকভাবে ওষুধ প্রয়োগে রোগ দ্রুত নিরাময় হয়। ভুল পদ্ধতিতে প্রয়োগে বিপদের আশঙ্কা আছে।
ওষুধ প্রয়োগের বিভিন্ন পদ্ধতি সাধারণত তিন পদ্ধতিতে গবাদিপশুর দেহে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। যেমন−
ক. উপরি প্রয়োগ Topical application)
১. প্রলেপ ঃ যেমন− লোশন, মলম।
২. ডাস্টিং ঃ যেমন− ড্রেসিং পাউডার।
৩. স্প্রেঃ যেমন− ঘায়ে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল স্প্রে।
৪. ঢেলে বা গোসল করিয়ে ঃ যেমন− কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে ঢালা বা ডিপ (Dip) দেয়া।
খ. দেহাভ্যন্তরে নির্দিষ্ট অঙ্গে প্রয়োগ
সারারণত তিনটি পদ্ধতিতে গবাদিপশুর দেহে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। যেমন−
১. মুখে খাওয়ানো (Oral Administration)− যে কোনো পাউডার, তরল, ট্যাবলেট বা বোলাস ইত্যাদি পানিতে গুলে লম্বা গলাওয়ালা বোতল বা স্টমাক টিউবের দ্বারা খাওয়াতে হয়। এছাড়া বলিংগানের (Balling Gun) মাধ্যমেও খাওয়ানো যায়।
২. ইন্ট্রারেকটাল প্রয়োগ− এ পদ্ধতিতে রাবার টিউবের সাহায্যে ডুস (উড়ঁপযব) দিয়ে ওষুধ প্রবেশ
করানো হয়।
৩. ইন্ট্রাইউটেরাইন− এ পদ্ধতিতে পেসারিজাতীয় ওষুধ যোনিপথে প্রবেশ করানো হয়।
৪. ইন্ট্রামেমারি ইনফিউশন− এ পদ্ধতিতে বাটের ছিদ্রের ভিতর দিয়ে ওলানে অ্যান্টিবায়োটিকজাতীয়
ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
৫. শ্বাসের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগ (Inhalation)− এ পদ্ধতিতে ধুমায়িত (Fumigate) ওষুধ শ্বাসনালি বা
ফুসফুসের ভিতর প্রবেশ করানো হয়।
৬. চোখে ফোটা (Eye Drop)− এ পদ্ধতিতে চোখে তরল ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
৭. কানে ফোটা (Ear Drop)−এটি কানে তরল ওষুধ প্রয়োগ করার পদ্ধতি।
গ. প্যারেনটেরাল ওষুধ প্রয়োগ (Parenteral Administration)
ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগ করাকে প্যারেনটেরাল ওষুধ প্রয়োগ (Parenteral Administration) বলে। প্যারেনটেরাল বিভিনড়ব পথে ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।এগুলোর মধ্যে চারটি পথে প্রধানত পশুতে ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। যেমন− মাংশপেশি, চামড়ার নিচ, শিরা ও পেরিটোনিয়াম পথ। প্যারেনটেরাল ওষুধ সিরিঞ্জে সুচের মাধ্যমে পশুতে পুশ করে প্রদান করা হয়।
১. মাংসে ইনজেকশন (Intramuscular Injection)− সাধারণত পুরু মাংসপেশিতে ইন্ট্রামাসকুলার
ইনজেকশন দিতে হয়। গবাদিপশুর গ্লুটিয়াল মাংসে এ ইনজেকশন দিতে হয়।
২. সাবকিউটেনিয়াস ইনজেকশন (Subcutaneous Injection)− গবাদিপশুর চামড়ার নিচে ফ্যাসার
(Fascia) মধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগকে সাবকিউটেনিয়াস ইনজেকশন বলে।
গবাদিপশুর দেহের ঢিলা চামড়া, যেমন− গলকম্বল এবং নাভির চারপাশে এ ইনজেকশন প্রয়োগ করা
যায়।
৩. ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন (Intravenous Injection)− গবাদিপশুর শিরার মধ্যে ইনজেকশন দ্বারা
সরাসরি রক্তের মধ্যে ওষুধ প্রয়োগকে ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন বলে। গবাদিপশুর ঘাড়ের জুগুলার
শিরা, কানের শিরা এবং ছাগল ভেড়ার টারসাল শিরায় ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন দেয়া যায়।
৪. ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল ইনজেকশন (Intraperitonial Injection)−এ পদ্ধতিতে ফ্লাঙ্কের (Flank) মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে লম্বা মোটা সুচ দিয়ে চামড়া ভেদ করে অভ্যন্তরীণ অঙ্গে ওষুধ প্রবেশ করানো হয়। সাধারণত পেরিটোনাইটিস রোগে আক্রান্ত পশুর ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
টিকা প্রয়োগের বিভিন্ন পদ্ধতি
গবাদিপশুর দেহে নির্দিষ্ট পথে টিকা প্রয়োগের ফলে প্রয়োজনীয় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়। ভুল
পথে প্রয়োগে কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা তো গড়ে উঠেই না বরং খারাপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। টিকা
প্রয়োগের সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা হচ্ছে−
[1]টিকা সঠিকভাবে পরিবহণ ও সংরক্ষণ করা হয়েছে কি−না।
[1]টিকা প্রদানের যন্ত্রপাতি, সিরিঞ্জ, সুচ ইত্যাদি পানিতে ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে কি−না।
[1]পশু সুস্থ কি−না।
[1]পশুকে ছায়াতে রাখা হয়েছে কি−না।
[1]টিকা গুলানোর জন্য পরিস্রুত পানি ব্যবহৃত হচ্ছে কি−না।
[1]তরল ব্যাকটেরিয়াল টিকা হলে তা সিরিঞ্জে ভরার পূর্বে বোতল ঝাঁকিয়ে ভরা হচ্ছে কি−না।
[1]টিকা প্রয়োগের পথ ঠিক হচ্ছে কি−না।
[1]ঠিক মাত্রায় ইনজেকশন করা হচ্ছে কি−না।
[1]টিকা রেজিস্ট্রার ও ভ্যাকসিনেশন কার্ডে ঠিকমতো রেকর্ড করা হচ্ছে কি−না।গবাদিপশুর ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল টিকা সাধারণত ইন্ট্রামাসকুলার ও সাবকিউটেনিয়াস ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ (প্যারেনটেরাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) করা হয়।
পদ্ধতি
ক. ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন (Intramuscular Injection)− সাধারণত পুরু মাংসপেশিতে ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন দিতে হয়। যেমন গবাদিপশুর জলাতঙ্ক রোগের টিকা গুটিয়াল বা উরুরমাংসে ইনজেকশন দিতে হয়।
খ. সাবকিউটেনিয়াস ইনজেকশন (Subcutaneous Injection)− গবাদিপশুর চামড়ার নিচে ফ্যাসার
মধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমে টিকা প্রয়োগ করাই সাবকিউটেনিয়াস টিকা প্রয়োগ পদ্ধতি। গবাদিপশুর
ঢিলা চামড়া, যেমন− গলকম্বল এবং নাভির চারপাশে ইনজেকশন করে এ টিকা প্রয়োগ করা হয়।
গলাফোলা, বাদলা, টিস্যু কালচার রিন্ডারপেস্ট ভ্যাকসিন (টিসিভি) ইত্যাদি এ পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা হয়।
সারমর্ম ঃ প্রতিটি টিকা ও ওষুধ প্রয়োগের নির্দিষ্ট পথ আছে। সঠিক পথে পশুর দেহে টিকা ও ওষুধ প্রয়োগ করলে প্রকৃত ফল লাভ করা যায়। ভুল পথে প্রয়োগে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। চারটি পথে ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়।
ইনজেকশনের মাধ্যমে পশুকে ওষুধ প্রয়োগ
ইনজেকশন (Injection)
পশুর দেহের যে কোনো তন্ত্রে কার্যকরভাবে সরাসরি ওষুধ পৌঁছানোর জন্য সিরিঞ্জ ও সুচের মাধ্যমে
প্যারেনটেরাল পথে ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হয়। ইনজেকশন প্রয়োগ করার একটি সিরিঞ্জের কয়েকটি অংশ থাকে। যথা− নজেল বা সুচ ধারক, ব্যারেল ও পিস্টন। পিস্টন আবার গাস্কেট ও
পাঞ্জার সমম্বয়ে তৈরি। সিরিঞ্জের নজেলে সুচ লাগিয়ে ইনজেকশন পুশ করা হয়।
ইনজেকশনের সুবিধা
[1]ওষুধ পশুর দেহে সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করা যায়।
[1]ওষুধের অপচয় রোধ করা যায়।
[1]নির্দিষ্ট অঙ্গে ওষুধ প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়।
[1]ওষুধের দ্রুততর কার্যকারিতা নিশ্চিত করা যায়।
[1]শরীরের অভ্যন্তরীণ স্পর্শকাতর অঙ্গে ওষুধ প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়।
[1]অন্য যে কোনো পথের চেয়ে কম ওষুধে কার্যকরভাবে রোগ নিরাময় করা যায়।
ইনজেকশন প্রয়োগ পথ
ইনজেকশন প্রধানত তিন পথে প্রদান করা হয়। যথা−
[1] চামড়ার নিচে (Subcutaneously)
[1] মাংসের মধ্যে (Intramuscularly) এবং
[1] শিরার মধ্যে (Intravenously)
এছাড়াও গবাদিপশুতে নির্দিষ্ট প্রয়োজনে ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল (Intraperitonial) ও ইন্ট্রাডুরাল (Intradural) ইনজেকশন দেয়া হয়ে থাকে।
ক. চামড়ার নিচে ইনজেকশন
সাবকিউটেনিয়াস ইনজেকশনে সিরিঞ্জ ও সুচের সাহায্যে তরল ওষুধ চামড়ার নিচে প্রয়োগ করা হয়।
সাধারণত এ পথে অনুত্তেজক বা নন-ইরিটেন্ট ড্রাগ (Non-irritant Drug)প্রয়োগ করা হয়।ওষুধ চামড়ার নিচে ধীরে শোষণ করানোর উদ্দেশ্যে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
ইনজেকশনের স্থান ও ওষুধের মাত্রা ঃ পশুর দেহের যেসব স্থানের চামড়া ঢিলা বা ঝুলে থাকে
সাবকিউটেনিয়াস ইনজেকশন সেসব স্থানের চামড়ার নিচে দেয়া হয়। সাবকিউটেনিয়াস ইনজেকশন
গবাদিপশুর দেহের যেসব স্থানে দেয়া হয় তা হচ্ছে −
১. গলকম্বল
২. গলার আশপাশ
৩. পেটের নিচে
৪. নাভির আশপাশ
৫. লেজের গোড়া
এ পদ্ধতি সাধারণত কম মাত্রার ওষুধ বা টিকা প্রয়োগে ব্যবহার করা হয়। তবে বেশি মাত্রায় ওষুধ
প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সম্পূর্ণ ওষুধ একাধিক স্থানে ইনজেকশন করে দিতে হয়।
সাবকিউটেনিয়াস ইনজেকশনের জন্য সুচ খাটো ও মোটা হতে হয়। বাম হাতে পশুর চামড়া টেনে ধরে রেখে সুচ ঢুকিয়ে সুচসহ চামড়া ওপরে টানলে সুচের আগা মাংসে না আটকিয়ে এদিকসেদিক নড়াচড়া করলে সুচের আগা চামড়ার নিচে ঢুকেছে বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এরপর সিরিঞ্জ সুচে লাগিয়ে ওষুধ পুশ করতে হবে।
খ. মাংসপেশিতে ইনজেকশন (Intramuscular Injection)
সিরিঞ্জ ও সুচের সাহায্যে তরল ওষুধ পুরু মাংসপেশির মধ্যে পুশ করা হয়। সাধারণত এ পদ্ধতিতে
কিছুটা তীব্র প্রকৃতির ওষুধ (Mild-irritant Drug) প্রয়োগ করা হয়। অপেক্ষাকৃত দ্রুত শোষণ ও কার্যকর করার জন্য এ পদ্ধতিতে ওষুধ পুশ করা হয়। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ওষুধ পুশ করতে এ পদ্ধতি ব্যবহার হয়।
ইনজেকশনের স্থান ও ওষুধের মাত্রা ঃ পশুর দেহের যেসব স্থানের মাংস পুর€ সেসব স্থানের মাংসের মধ্যে ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন দেয়া হয়। গবাদিপশুর যেসব স্থানে ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন দেয়া হয় তা হচ্ছে-
১. হিপ জয়েন্ট ও লেজের মধ্যবর্তী গ্লুটিয়াল মাংসে
২. পিছনের পায়ের উরুর মাংসে এ পদ্ধতি সাধারণত মাঝারি মাত্রার ওষুধ বা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ওষুধ প্রয়োগে ব্যবহার করা হয়।
পরপর কয়েকদিন ইনজেকশন দিতে হলে একদিন পশুর দেহের যেপাশে ইকজেকশন দেয়া হবে পরদিন অন্যপাশে দিতে হবে।
ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশনের সুচ তুলনাম লকভাবে একটু লম্বা হতে হয়।এ ইনজেকশনের জন্য পশু
ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে করে দেহে ওষুধ প্রয়োগের সময় নড়তে না পারে। সুচ মাংসে
ঢুকিয়ে একটু টেনে পরে সিরিঞ্জের ওষুধ পুশ করলে ওষুধ সহজে এবং দ্রুত প্রবেশ করে।
গ. শিরায় ইনজেকশন (Intravenous Injection)
ইন্ট্রাভেনাস বা অন্তঃশিরা ইনজেকশন ড্রিপ সিরিঞ্জ ও সুচের সাহায্যে তরল ওষুধ শিরার মাধ্যমে
সরাসরি রক্তে প্রয়োগ করা হয়। এতে করে ওষুধ সঙ্গে সঙ্গে রক্তে মিশে কাজ শুরু করে এবং দ্রুত
ফল দেয়। সাধারণত এ পদ্ধতিতে তীব্র ও দ্রুত কার্যকর ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। যে কোনো রোগে জরুরি অবস্থার প্রেক্ষিতে ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন দেয়া হয়। এ পদ্ধতি সাধারণত বেশি মাত্রার ওষুধ বা ড্রিপ ইনফিউশনের কাজে লাগানো হয়।
ইনজেকশনের স্থান ও ওষুধের মাত্রা ঃ পশুর দেহে যেসব শিরা বাহির থেকে দেখা যায় সেসব শিরার মধ্যে ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন দেয়া হয়। গবাদিপশুর যেসব শিরায় ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন দেয়া হয় তা হচ্ছে −
১. গলার জুগুলার শিরা
২. কানের শিরা
ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশনের জন্য নতুন ধারালো সুচ নিতে হয়। এ ইনজেকশনের জন্য পশু ভালোভাবে
নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে করে কাজের সময় নড়তে না পারে। সুচ ঢুকানোর পূর্বে শিরার রক্ত
চলাচল হাতের চাপে বন্ধ করে দিয়ে শিরা ফুলিয়ে নিতে হবে। অতঃপর সাবধানে প্রয়োজনমতো সুচ
ঢুকিয়ে দিলে শিরার ভিতরে প্রবেশের সাথে সাথে সিরিঞ্জ বা ড্রিপের পাইপে রক্ত দেখা গেলে সুচ
শিরার মধ্যে প্রবেশ করেছে বলে ধরে নিতে হবে। এরপর ওষুধ পুশ বা ড্রিপ সেটের নব ঢিলা করলে যদি সুচের পাশের চামড়া ফুলে না উঠে এবং সহজে ওষুধ প্রবেশ করে তবে শিরায় ওষুধ প্রবেশ করেছে বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। শিরায় ওষুধ সবসময় রক্ত স্রোতের বিপরীতে প্রবেশ করাতে হয়।
এছাড়াও গবাদিপশুতে পেরিটোনাইটিস (Peritonitis) রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশনের মাধ্যমে সরাসরি পেরিটোনিয়ামে প্রবেশের জন্য ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল (Intraperitonial) ইনজেকশন দেয়া হয়। কোমরের ব্যাথার চিকিৎসার জন্য এক্সট্রাডুরাল (Extradural) ইনজেকশন দেয়া হয়ে থাকে।
সারমর্ম ঃ পশুর যে কোনো তন্ত্রে কার্যকরভাবে সরাসরি ওষুধ প্রয়োগ পদ্ধতিকে ইনজেকশন দেয়া
বলে । প্রধানত ইনজেকশন চামড়ার নিচে, মাংসের মধ্যে এবং শিরায় প্রদান করা হয়। চামড়ার নিচের ইনজেকশন গলকম্বল, গলার আশপাশ, পেটের নিচ, নাভির আশপাশ এবং লেজের গোড়ায় দেয়া হয়। ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন হিপজয়েন্ট ও লেজের মধ্যবর্তী গুটিয়াল মাংসে ও পিছনের পায়ের উরুর মাংসে দেয়া হয়। ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন গলার জুগুলার ও কানের শিরায় দেয়া হয়।
গবাদিপশুকে নিজ হাতে ওষুধ খাওয়ানো
সাধারণত গ্যাস্ট্রো-এনটারাইটিস বা অন্তের যে কোনো অসুখের জন্য গবাদিপশুকে মুখ দিয়ে ওষুধ
খাওয়ানো হয়।
সুবিধা
[1]এটি একটি সহজ ওষুধ সেবন পদ্ধতি।
[1]মালিক নিজেই খাওয়াতে পারেন।
[1]ক্ষুধামন্দা বা রেচনতন্তের অসুখে ওষুধ দ্র€ত কাজ করে।
[1]দিনে একাধিকবার প্রয়োগের জন্য এটি সুবিধাজনক পন্থা।
[1]অনেকদিন পর্যন্ত একনাগাড়ে ওষুধ প্রয়োগের জন্য এটি একটি উৎকৃষ্ট পথ।
[1]পানীয় বা খাদ্যের সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যায়।
[1]দীর্ঘস্থায়ী ওষুধের বাহক বা সাস্টেইনেবল বোলাস (ঝঁংঃধরহধনষব ইড়ষঁং) প্রয়োগ করা যায়।
অসুবিধা
[1]শ্বাসনালির ভিতর দিয়ে ওষুধ ফুসফুসে প্রবেশ করে নিউমোনিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
[1]অ্যান্টিবায়োটিক ও সালফোনেমাইড ওষুধ এ পথে ধীরে কাজ করে।
[1]অ্যান্টিবায়েটিক ও সালফোনেমাইড ওষুধ পরিমাণে বেশি লাগে।
[1]অ্যান্টিবায়োটিক ও সালফোনেমাইডের কার্যকারিতা কমে যায়।
[1] অ্যান্টিবায়োটিক ও সালফোনেমাইড ওষুধ পাকস্থলীর উপকারী ব্যাকটেরিয়া (Rumen
Flora) মেরে ফেলে গবাদিপশুর হজমশক্তি হ্রাস করে।
[1]অ্যান্টিবায়োটিক ও সালফোনেমাইড ড্রাগ খাওয়ালে ক্ষুদামন্দা দেখা দেয়।
[1]অ্যান্টিবায়োটিক ও সালফোনেমাইড ওষুধ বেশিদিন খাওয়ালে ব্যাকটেরিয়া ওষুধ সহ্য করার
ক্ষমতা লাভ করে (Drug Resistant)|
পদ্ধতি
যে কোনো ওষুধ মুখের মাধ্যমে খাওয়াতে হলে পানিতে মিশিয়ে নিতে হয়। তাই ওষুধ স্টমাক টিউব
বা লম্বা গলাওয়ালা বোতলে পুরে মুখে ঢেলে খাওয়ানো হয়। বোতলে ওষুধ খাওয়ানোর সময় পশুকে
ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করে গলা ভ‚মি সমান্তরাল রেখে মুখে ওষুধ ঢেলে দিতে হয়।
স্টমাক টিউবের সাহায্যে পশুকে ওষুধ খাওয়ানো
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১. মাত্রামতো তরল ওষুধ− ১ বোতল।
২. স্টমাক টিউব− ১টি।
৩. মাউথ গ্যাগ (বড়)− ১টি।
৪. প্লাস্টিক ফানেল− ১টি।
৫. ১−২ বছর বয়সের ছাগল − ১টি।
কাজের ধারা
[1]প্রমে ছাগলটিকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
[1]ছাগলের মুখের দুচোয়াল ফাক করে মাউথ গ্যাগ পড়িয়ে দিন।
[1]মাউথ গ্যাগের ছিদ্র দিয়ে স্টমাক টিউব ধীরে ধীরে প্রবেশ করিয়ে দিন।
[1]খাদ্যনালির শেষপ্রান্তে পাইলোরাস পর্যন্ত প্রবেশ করলে একটু চাপ দিয়ে পাইলোরাস ভেদ করে টিউব রুমেনে প্রবেশ করিয়ে দিন।
[1]এবার স্টমাক টিউবের বাইরের প্রান্তে ফানেলের নল লাগিয়ে নিন।
[1]সাহায্যকারীকে স্টমাক টিউবসহ মাউথ গ্যাগ ধরে রাখতে বলুন।
[1]ডান হাতে বোতল নিয়ে বাম হাতে টিউবসহ ফানেল ধরে তাতে ওষুধ ঢালুন।
[1]ওষুধ শেষ হলে ধীরে ধীরে টেনে স্টমাক টিউব বের করে আনুন।
[1]এবার সাবধানে মাউথ গ্যাগ খুলে ফেলুন।
[1]এবার পুরো পরীক্ষণটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখুন ও আপনার টিউটরকে দেখিয়ে তাতে সই নিন।
সাবধানতা
[1]তাড়াহুড়ো করে স্টমাক টিউব প্রবেশ করাবেন না বা প্রবেশের সময় জোড় করবেন না এতে
খাদ্যনালিতে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে।
[1]ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ছাগল নড়াচড়া করবে। এতে ফানেলে ওষুধ ঢালার সময় তা পড়ে যেতে পারে।
[1]সম্পূর্ণ ওষুধ রুমেনে প্রবেশের পরই কেবল টিউব ধীরে ধীরে টেনে বের করতে হবে।অন্যথায় শ্বাসনালিতে ওষুধ প্রবেশ করতে পারে।
[1]মাউথ গ্যাগ খুলে গেলে ছাগল টিউব চিবিয়ে ফেলতে চাইবে। তাই যাতে না খুলতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
বোতলের সাহায্যে পশুকে ওষুধ খাওয়ানো
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১. লম্বা গলাওয়ালা আধা লিটারের বোতল− ১টি।
২. ৫০০ মি.লি. পাস্টিক
পাত্র− ১টি।
৩. পানি− ০.৫ লিটার।
৪. প্লাস্টিক ফানেল − ১টি।
৫. ৩−৪ বছর বয়সের গরু− ১টি।
কাজের ধারা
[1]পাস্টিকের পাত্রে মাত্রা অনুযায়ী ওষুধ নিয়ে ২৫০ মি.লি. পানিতে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
[1]এবার ফানেলের সাহায্যে ওষুধ বোতলে ঢেলে নিন।
[1]অবশিষ্ট ২৫০ মি.লি. পানি বোতলে ঢেলে নিন।
[1]বোতল ঝাঁকিয়ে ওষুধ ভালো করে মিশিয়ে নিন।
[1]এবার গরু ট্রাবিসে ঢুকিয়ে সাহায্যকারীর দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করুন।
[1]ভূমি সমান্তরাল করে মুখ উঁচিয়ে ধরে বাম হাতে জিহ্বার আগা আলতোভাবে চেপে রাখুন।
[1]এবার ডান হাতে ওষুধের বোতল ধরে অন্যপাশের চোয়াল দিয়ে বোতলের মুখ গরুর মুখে ঢুকিয়ে দিন।
[1]ধীরে ধীরে বোতলের পিছনের দিক উঁচিয়ে ওষুধ ঢালুন।
[1]বোতলের সব ওষুধ শেষ হলে বের করে আনুন।
[1]ট্রাবিস থেকে গরু বের করুন।
[1]পুরো পরীক্ষণটি এবার ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখুন ও আপনার টিউটরকে
দেখিয়ে তাতে সই নিন।
সাবধানতা
[1]চোয়ালের একপাশ দিয়ে মুখে হাত ঢুকাতে হয় যাতে কামড় দিতে না পারে।
[1]শ্বাসনালিতে যাতে ওষুধ প্রবেশ না করে সেজন্য ভূমি সমান্তরাল করে মুখ উঁচিয়ে ধরতে হয়।
[1]পুরু শক্ত কাঁচের বোতল নিতে হবে যাতে বোতল ভেঙ্গে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।
গরুর বিভিন্ন জায়গায় ইনজেকশন প্রদান
প্রাসঙ্গিক তথ্য ওষুধের কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার জন্য ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। গরুতে সাধারণত ৪টি রুটে বা পথে ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ পুশ করা হয়। যথা− ক. অন্তঃশিরা বা ইন্ট্রাভেনাস (Intravenous),, খ. মাংসপেশি বা ইন্ট্রামাসকুলার (Intramuscular), পেরিটোনিয়ামে বা ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল ও (Intraperitoneal) গ. চামড়ার নিচে বা সাবকিউটেনিয়াস (Subcutaneous)।
ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন
ওষুধ দ্রুত প্রবেশ করিয়ে মূমুর্ষ রোগী বাঁচানোর জন্য এটি অত্যন্ত ভালোপথ।
সুবিধা
[1]ওষুধ সরাসরি রক্তে পৌঁছে।
[1]রক্ত ও টিস্যুতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ওষুধ দ্রুত যায়।
[1]অন্য রুটের তুলনায় ওষুধ দ্রুত কাজ করে।
[1]ওষুধের অপচয় হয় না।
[1]মূমুর্ষ রোগীর চিকিৎসায় দ্রুত কার্যকর।
অসুবিধা
[1]দ্রুত বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে।
[1]বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়।
[1]সাধারণত হাসপাতাল ছাড়া এ রুটে ওষুধ প্রয়োগ নিরাপদ নয়।
[1]মালিকের বাড়িতে চিকিৎসার সময় পশু মারা গেলে মালিক মনে করেন ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে।
পদ্ধতি
গরুর গলার পাশে জুগুলার শিরার ভিতরে রক্তে ওষুধ প্রবেশ করাতে হয়। সুচ দিয়ে জুগুলার শিরা ছিদ্র করলে যদি ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয় তবে বুঝতে হবে সুচ শিরায় প্রবেশ করেছে। দ্রুত সিরিঞ্জে সুচ লাগিয়ে রক্ত স্রোতের বিপরীতে ধীরে ধীরে ওষুধ প্রবেশ করাতে হয়। ড্রিপ বা বেশি মাত্রার ওষুধের ক্ষেত্রে সেলাইন কিট (Saline Kit) ব্যবহার করা হয়। এতে রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে প্রেসার হুইলের নব ঘুরিয়ে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ইন্ট্রাভেনাস রুটে ওষুধ প্রয়োগ
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১. মাত্রামতো তরল ওষুধ− ৫০ মি.লি.।
২. কাস্টিং দড়ি− ১টি।
৩. সিরিঞ্জ (৫০ মি.লি.)− ১টি।
৪. সুচ (১৬ গেজি)− ১টি।
৫. ৩−৪ বছর বয়সের গরু− ১টি।
কাজের ধারা
[1]প্রমে একটি জীবাণুমুক্ত সিরিঞ্জে ৫০ মি.লি. ওষুধ ভরে নিন।
[1]গরুটি খোলা জায়গায় নিয়ে কাস্টিংয়ের মাধ্যমে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করুন।
[1]এবার জুগুলার শিরায় বাম হাতে চাপ দিয়ে রক্ত প্রবাহ বন্ধ করুন।
[1]জুগুলার শিরা ফুলে উঁচু হয়ে উঠলে ডান হাতে দৃঢ়তার সাথে সুচ প্রবেশ করিয়ে দিন।
[1]এবার সুচ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকলে তাতে সিরিঞ্জের নজেল লাগিয়ে রক্ত প্রবাহের বিপরীতে ধীরে ধীরে ওষুধ প্রবেশ করাতে থাকুন।
[1]সিরিঞ্জে একটু ওষুধ রেখেই সুচ খুলে নিন যাতে রক্তের মধ্যে বাতাস প্রবেশ করতে না পারে।
[1]এবার কাস্টিং দড়ি খুলে দিন।
[1]এবার পুরো পরীক্ষণটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখুন ও আপনার টিউটরকে দেখিয়ে তাতে সই নিন।
সাবধানতা
[1]ওষুধ পুশ করার সময় গরুর শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে চলতে দিতে হবে।
[1]ইনজেকশনের সময় গরু যেন নড়াচড়া না করে। তবে নিয়ন্ত্রণকারী যেন বুকের উপর চাপ না দেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
[1]শিরায় যাতে বাতাস প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সিরিঞ্জে একটু ওষুধ থাকতেই সুচ খুলে নিতে হবে।
ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন
ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন গরুর জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক পথ। দেহের যে কোনো পুরু মাংসপেশিতে এ পথে বিভিনড়ব ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত গরুর পিছনের রানের মাংসে বা
গুটিয়াল মাংসে ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন দেয়া হয়। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ওষুধ পুশ করার জন্য এ পথ বেশি ব্যবহার করা হয়।
সুবিধা
[1]এ পথে ওষুধ প্রয়োগে ঝুঁকি কম।
[1]দ্রুত ওষুধ পুশ করা যায়।
[1]দিনে একবার প্রয়োগ করলেই হয়।
[1]মুখে ওষুধ খাওয়ানোর চেয়ে ঝামেলা কম।
[1]গরুকে বারবার উত্তক্ত করতে হয় না।
[1]গরু কাস্টিং করে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় না। ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে না।
[1]ক্ষুধামন্দা বা বদহজমজাতীয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।
অসুবিধা
[1]স্থানিক অ্যালার্জির ফলে মাংসে পচন ধরতে পারে।
[1]মাংসে তীব্র ব্যথার জন্য পা খোঁড়া হতে পারে।
[1]দুধ ও মাংসের জন্য প্রত্যাহার সময় (Withdrawal Time)বেশি হয়।
ইন্টামাসকুলার রুটে ওষুধ প্রয়োগ
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১. ওষুধ− ১০ মি.লি.।
২. সিরিঞ্জ (১০ মি.লি.)− ১টি।
৩. সুচ (১৪ গেজি)− ১টি।
৪. ৩−৪ বছর বয়সের গরু− ১টি।
কাজের ধারা
[1]জীবাণুমুক্ত সিরিঞ্জ ও সুচ নিন।
[1]সিরিঞ্জে সুচ লাগিয়ে নিন।
[1]বাম হাতে ওষুধের ভায়াল উঠিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলের নখ দিয়ে সিলের উপরের অংশ উঠিয়ে ফেলুন।
[1]এবার ডান হাতে সিরিঞ্জ ধরে ভায়ালে সুচ প্রবেশ করিয়ে পিস্টনের সাহায্যে টেনে ওষুধ সিরিঞ্জে ভরে নিন।
[1]সাহায্যকারীকে হাতে ধরে গরু নিয়ন্ত্রণ করতে বলুন।
[1]সুচ খুলে নিয়ে গরুর পিছনে দাঁড়িয়ে একফোঁড়ে বা কিকে রানের মাংসে সুচ ঢুকিয়ে দিন।
[1]এবার সিরিঞ্জ সুচে লাগিয়ে ওষুধ পুশ করুন।
[1]সুচ খুলে পিছন দিকে চলে আসুন।
[1]এবার সাহায্যকারীকে গরু ছেড়ে দিতে বলুন।
সাবধানতা
[1]গরুর সোজা পিছনে দাঁড়িয়ে ইনজেকশন দিতে হয়। পাশে যাবেন না, গরু পাশে লাথি দেয়।
[1]ওষুধ পুশের পূর্বে সিরিঞ্জের নজেল সুচের সাথে ভালোভাবে লাগিয়ে নিবেন যাতে পুশের সময় ওষুধ পড়ে না যায়।
ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল ইনজেকশন
গরুর পেরিটোনিয়ামের প্রদাহে সাধারণত এ পথে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
সুবিধা
[1]সরাসরি ওষুধ প্রয়োগে দ্রুত পেরিটোনাইটিস রোগ নিরাময় হয়।
অসুবিধা
[1]দক্ষ ডাক্তার ছাড়া এ ইনজেকশন পুশ করা সম্ভব নয়।
[1]এতে বিশেষ ধরনের সুচের প্রয়োজন হয়।
পদ্ধতি
বড় (১২ গেজি লম্বা) সুচের সাহায্যে ডান পার্শ্বের পেটের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে চামড়া ভেদ করে
পেরিটোনিয়ামে সরাসরি ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল রুটে ওষুধ প্রয়োগ
উপকরণ
১. ওষুধ− ১০ মি.লি.।
২. সিরিঞ্জ (১০ মি.লি.)− ১টি।
৩. সুচ (১২ গেজি)− ১টি।
৪. ৩−৪ বছর বয়সের গরু− ১টি।
কাজের ধারা
[1]ট্রাবিসে গরু প্রবেশ করিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করুন।
[1]ডান পেটের মধ্যবর্তী স্থান ঠিক করুন।
[1]শেষ বক্ষাস্থি এবং টিউবার কক্সার মধ্যবর্তী স্থান চিহ্নিত করুন।
[1]এবার লাম্বার ভার্টিব্রার লেটারাল প্রসেস থেকে মাঝ লাইন দিয়ে নিচের দিকে ১০
সেন্টিমিটার নেমে আসুন। এটিকে ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল ইনজেকশন পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করুন।
[1]এবার এ পয়েন্টে বা স্থানে চামড়ার ভিতর দিয়ে সুচ প্রবেশ করিয়ে দিন।
[1]এখন সুচে নজেল লাগিয়ে ওষুধ পুশ করুন।
[1]ওষুধ পুশ করা হলে সুচের গোড়ায় চাপ দিয়ে ধরে সুচ টেনে বের করুন।
[1]পুরো পরীক্ষণটি এবার ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখুন ও আপনার টিউটরকে দেখিয়ে তাতে সই নিন।
সাবধানতা
[1]সুচ প্রবেশ করানোর সময় যেন কোনো অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিদ্র না হয় সেদিকে খেয়াল করতে হবে।
সাবকিউটেনিয়াস ইনজেকশন
টিকা ছাড়া সাধারণত অন্য কোনো ওষুধ সাবকিউটেনিয়াস ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয় না। যে কোনো তীব্র প্রকৃতির বা উত্তেজেক ওষুধ এ পথে পুশ করলে বিপদজনক প্রতিক্রিয়ার ফলে পশু মারা যেতে পারে।
সুবিধা
[1]এতে টিকা ধীরে ধীরে শোষিত হয়।
অসুবিধা
[1]তীব্র প্রকৃতির বা উত্তেজক ওষুধ প্রয়োগ করলে বিপদজনক প্রতিক্রিয়ায় পশু মারা যেতে পারে।
পদ্ধতি
দেহের চামড়া ও মাংসের মধ্যবর্তী অংশ অর্থাৎ ফ্যাসার (Fascia) মধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ পুশ করলে তা ধীরে ধীরে শোষিত হয়। দেহের ঢিলা চামড়া, যেমন− গলা, গলকম্বল ও দেহের অন্যান্য ঢিলা চামড়া হাতে মুট করে ধরে এমনভাবে তাতে সুচ প্রবেশ করতে হয় যেন ফ্যাসায় যেয়ে না ঢুকে।
সাবকিউটেনিয়াস রুটে টিকা প্রয়োগ
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১. টিকা− ১ মি.লি. (ধরুন, তড়কা রোগের টিকা)।
২. সিরিঞ্জ (২−৫ মি.লি.)− ১ টি।
৩. সুচ (১৬ গেজি)− ১ টি।
৪. ১−২ বছর বয়সের অসুস্থ গরু− ১ টি।
কাজের ধারা
[1]প্রমে সিরিঞ্জ ও সুচ জীবাণুমুক্ত করে নিন।
[1]সিরিঞ্জে সুচ লাগিয়ে নিন।
[1]বাম হাতে ওষুধের ভায়াল উঠিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলের নখ দিয়ে সিলের উপরের অংশ উঠিয়ে ফেলুন।
[1]এবার ডান হাতে সিরিঞ্জ ধরে ভায়ালে সুচ প্রবেশ করিয়ে পিস্টনের সাহায্যে টেনে ওষুধ
সিরিঞ্জে ভরে নিন।
[1]সাহায্যকারীকে হাতে ধরে গরু নিয়ন্ত্রণ করতে বলুন।
[1]সুচ খুলে নিয়ে গরুর দেহের টিলা চামড়া হাতে মুট করে ধরে এক ফোড়ে তা চামড়ার নিচের
ফ্যাসায় ঢুকিয়ে দিন।
[1]এবার সিরিঞ্জ সুচে লাগিয়ে ওষুধ পুশ করুন।
[1]সুচ খুলে পিছন দিকে চলে আসুন।
[1]এবার সাহায্যকারীকে গরু ছেড়ে দিতে বলুন।
[1]পুরো পরীক্ষণটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখুন ও আপনার টিউটরকে দেখিয়ে
তাতে সই নিন।
সাবধানতা
[1]সঠিকভাবে গরু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
[1]ওষুধ পুশের পূর্বে সিরিঞ্জের নজেল সুচের সাথে ভালোভাবে লাগিয়ে নিবেন যাতে পুশের
সময় ওষুধ পড়ে না যায়।
Please follow and like us: