আজকে ইনকিউবেটরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রনে রাখার কারণ, এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রন না করে বাহিরের আবহাওয়াতে যে আর্দ্রতা থাকে সেই আদ্রতায় ডিম ফুটানো সম্ভব কিনা সেই সম্পর্কে লেখা।
আমরা আমাদের ইনকিউবেটর গুলোতে ডিম ফুটানোর সময় বাতাসের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে থাকি, কিন্তু একটা পাখি বা মুরগী যখন ডিমে তাপ দিয়ে ডিম ফুটায় তখন সেই মুরগী ডিম ফুটানোর জন্য আদ্রতা নিয়ন্ত্রন করেনা, তাহলে আমরা কি এমন কোনো ইনকিউবেটর বানাতে পারবো যেটাতে আদ্রতা নিয়ন্ত্রন না করলেও চলবে.!!
.
ডিমের ভিতরে ভ্রুন বেড়ে উঠে ডিম থেকে বাচ্চায় রুপান্তরিত হয়ে বেরিয়ে আশার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই ডিমের ভিতরে রয়েছে,
শুধু ভ্রুণ বেড়ে উঠার জন্য যে শক্তির নিদৃষ্ট পরিমান যোগান বাহির থেকে দিতে হয়, সেই শক্তির নামই হচ্ছে “তাপশক্তি”।
।
একটা মুরগী যখন ডিমে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখে তখন সেই তাপে ডিমের তরল স্বাভাবিক ভাবে শুকিয়ে যাবার সাথে সাথে ভ্রুণও বাচ্চায় পরিনিত হয়ে ডিম থেকে বেরিয়ে আসে, কিন্তু যখন ইনকিউবেটরে কৃত্যিমভাবে তাপ দেয়া হয় তখন কৃত্যিমভাবে আদ্রতা তৈরিরও প্রয়োজন হয়,
বাতাসের আদ্রতা হচ্ছে বাতাসে মিশে থাকা জলীয় বাস্পের পরিমান।
বাতাসে আদ্রতা তৈরির জন্য তরলের বাস্পে পরিনিত হওয়াটা অবশ্যকিয়।
তরল বাস্পে পরিণত হয় সাধারণত দুইটা পদ্ধতীতে, এক স্ফুটন এবং আর একটা পদ্ধতীর নাম হচ্ছে বাস্পায়ন।
বাস্পায়ন হচ্ছে সেই পদ্ধতী, যে পদ্ধতীতে তরল বাস্পে রুপান্তরিত হবার সময় তরল থেকে বাস্পে রুপান্তরিত হবার জন্য প্রয়োজনীয় সুপ্ততাপ তরল এবং তরল সংলগ্ন বস্তু থেকে গ্রহন করে, তাই তরলে যখন বাস্পায়ন ঘটে তখন সেই তরল এবং তরলের কাছাকাছি থাকা বস্তুর তাপমাত্রা কমে যায়।
এর একটা উদাহারন হচ্ছে, আমরা যখন ঘরের মধ্যে ডিম সংরক্ষনের জন্য রাখি, লক্ষ করলে দেখাযায় সংরক্ষন করা ডিম একটু বেশি ঠান্ডা হয়েআছে,
এর মূল কারন ডিমের উপরে থাকা অসংখ্য ছোট ছোট মাইক্রোস্কোপিক ছিদ্র, এই ছিদ্র দিয়ে ভিতরের তরল বাহিরের বাতাসের সংস্পর্শে আসে , তখনই সেই তরলের উপরিতলে বাস্পায়নের প্রক্রিয়াটি ঘটে, যার ফলে ডিমের ভিতরে থাকা তরলে সুপ্ততাপ কমে যায় তাই স্বাভাবিক তাপমাত্রাতে ডিম রাখলেও ডিম একটু বেশি ঠান্ডা হয়ে থাকে।
বাস্পায়ন দ্রুত হবার জন্য বাহিরের বাতাসে থাকা আদ্রতা এবং বাতাসের প্রবাহ অনেকটাই নির্ভর করে,
আদ্রতা শূণ্য যায়গাতে দ্রুত বাস্পায়ন হয়,
এর একটা উদাহরন হচ্ছেঃ-
গরমকালে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা যখন বেড়ে যায় তখন আমাদের শীরের লোমকুপ থেকে পানি(ঘাঁম) বেরিয়ে আসতে থাকে, এর পরে আমরা ঘাঁমে ভেজা শরীর নিয়ে বাতাসে দাড়াই তখন ঘাঁম শুকিয়ে যাবার সাথে সাথে আমাদের শরীর ঠান্ডা হতে থাকে। কিন্তু একবার ভাবুন তো..বাহিরে গরম, তাহলে বাহিরের বাতাসও বাহিরের তাপমাত্রার মতই গরম, তাহলে শরীরে শীতলতা তৈরি হয় কিভাবে.! এর কারন হচ্ছে বাস্পায়ন।
ঘাম বাতাসের সংস্পর্শে এসে বাতাসে মিশে যেতে থাকে আর ঘাঁম বাতাসে মিশে যাবার জন্য যে তাপের দরকার হয় সেই তাপ আমাদের শরীর থেকে শোষন করে নিয়ে বাতাসে মিশে যায়, যার কারনে আমাদের শরীরে তাপমাত্রা কমে যেতে থাকে এবং আমরা শীতল বা ঠান্ডা অনুভব করি। কিন্তু বাতাসে যদি আদ্রতা বেশি থাকে তাহলে ঘাঁম শুকানোর হার কম থাকবে, যেমন বর্ষাকালে বাতাসের আদ্রতা বেশি থাকার কারনে ভিজা কাপড় শুকাতে দেরি হয়।
.
আমরা জানি ইনকিউবেটরে তাপ ছড়ানোর জন্য ফ্যন ব্যবহার করা হয়,
অনেক উচ্চ গতিতে বাতাসের প্রবাহ বজায় রাখতে হয়। আর এই বাতাস ডিমের উপরিতলের তরলকে দ্রুত বাস্পে পরিনিত হবার জন্য প্রভাবিত করে।
তাই অতিরিক্ত বাতাসের এই প্রবাহ যাতে ডিমের তরলকে শুকিয়ে ডিম ভিতরের বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাঁধাপ্রপ্ত করতে না পারে বা হ্যচিংয়ের সময় ডিমে তরলের শূণ্যতা দেখা না দেয় ,সেই জন্য বাতাসে একটা নিদৃষ্ট পরিমান জলীয় বাস্প বজায় রাখতে হয়।
।
আদ্রতা নিয়ন্ত্রনের মধ্যমে ডিম শুকিয়ে যাবার হার নিয়ন্ত্রন করা হয় বলেই ইনকিউবেটরে আদর্শ আদ্রতার প্রয়োজনীতা অনেক।
এখন আমরা যদি বাহিরের আদ্রতার উপর নির্ভর করে ডিম ফুটাতে চাই তাহলে আমাদের মুরগী বা পাখি কিভাবে ডিম ফুটায় সেই পদ্ধতী অনুশরন করতে হবে।
.
মুরগী ডিমের তাপ দেবার সময় মুরগীর কোনো তাপ ছড়ানো ফ্যনের প্রয়োজন পড়েনা, তাই দ্রুত ডিম শুকিয়ে যাবার ভয় থাকেনা, সেই জন্য মুরগীর শরীরের নিচে অতিরিক্ত আদ্রতা বজায় রাখারও প্রয়োজন হয়না, মুরগীর পালকের নিচ দিয়ে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে বলে বাহিরের বাতাসে থাকা আদ্রতাই সেই ডিম ফুটানোর জন্য আদর্শ হয়ে যায় ।
তাই যদি এমন ইনকিউবেটর বানানো সম্ভব হয় যেটাতে তাপ ছড়ানো ফ্যনের প্রয়োজন নেই, বাহির বাতাস সহজেই চলাচল করতে পারবে এবং মুরগীর মত করে ডিমে তাপ দিবে, তাহলে সেই ইনকিউবেটরে বাহিরের পরিবেশে থাকা প্রকৃতীক আদ্রতাতেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো সম্ভব।
তবে তাপ ছাড়ানো ফ্যন ছাড়া ইনকিউবেটর তৈরি অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ কারন এতে হিটার যেমন অতিরিক্ত গরম হবে তেমনি হিটারের কাছের ডিম গুলো বেশি গরম হয়ে নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভবনা থাকবে, তাই এটা তৈরিতে থার্মাল প্যড বা ঐ জাতীয় এমন হিটার লাগবে যেটা খুব ধিরে এবং সমানভাবে তাপ উঠাতে পরবে, “যে হিটারের তাপ উঠানোর ক্ষমতা,বাহিরের তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে পরিবর্তন হবে”।