আমাদের দেশে খামারীরা ৩০-৪০% ফার্মেই ঠিক মত ঠোটকাটা হয় না।ঠিক সম্যে হয় না,কাটার পর বতবস্থাপনা ঠিক থাকে না।
মুরগির অভ্যাস হলো দলের মধ্যে নিজের প্রাধান্য বিস্তার করা।এ কারণে তারা পরস্পর যুদ্ধ করে।যুদ্ধে প্রাধান্য স্থির হয়।তখন অন্যরা তার অধীনস্থতা মেনে নেয়।দলের মধ্যে যারা দুর্বল তাদের সবল মু্রগি ঠোকরায়।
তাছাড়া মুরগির ঠোঁট যখন বড় হয় তখন এক মুরগি আরেক মুরগির ঠোঁট থেকে ভয় পায় এবং ভাবে যদি সে আগে নিজেকে রক্ষা করতে না পারে তাহলে সে আক্রমনের শিকার হবে তাই সে আগে ঠোকর দেয়ার চেষ্টা করে।তারপর ক্যানাবলিজমের সৃষ্টি হয়।
এ সমস্ত ঠোকরা ঠুকরির সময় আহত মুরগির দেহ হতে রক্তক্ষরণ হয়।কোন মুরগির দেহে রক্ত দেখা দিলে দলের অন্যান্য মুরগির রক্তের নেশা পেয়ে বসে।তারা আহত মুরগিকে আরো ঠোকরাতে থাকে এবং অনেক সময় ছিড়ে ফেলে দেয়।
এ অবস্থাকে মুরগির রায়ট বলে।
কোন কোন সময় এক হাজার লেয়ারে দিনে ১-২টা মুরগি মেরে ফেলতে পারে এবং হাজারে দিনে ৩০-৯০টা ডিম খেয়ে ফেলতে পারে।
মানে ফার্মকে লস প্রজেক্ট করে ফেলতে পারে।তাই ঠোটলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আরো যে সব কারণে ঠোকরা ঠুকরি করতে পারে নিচে দেয়া হলো
খাদ্যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে।
ঘরে এমোনিয়া গ্যাস থাকলে।
মুরগি গাদাগাদি অবস্থায় থাকলে।
খাদ্যে লবন কম বা বেশি হলে।
ঘরের মধ্যে সূর্যালোক পড়লে।
ঠোঁটকাটাঃ
মুরগির ঠোটের সূচালো কিছু অংশ কেটে ফেলাকে মুরগির ঠোঁটকাটা বলে.
বিক ট্রিমিংঃ
t
মুরগির বাচ্চার ক্ষেত্রে ঠোট ছ্যাকা দেয়ার পদ্ধতিকে বলা হয় বিক ট্রিমিং (beaktrimming).
ক.কেন ঠোট কাটতে হয়?
১.দিনের বেলায় আলোর তীব্রতাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা.ফলে ঠোকরাঠুকরি বেড়ে যায়।তাই ক্যানাবলিজম রোধ করার জন্য।(পালক ও টো পিকিং রোধ করার জন্য)
২. খাদ্যের অপচয় রোধ করার জন্য
৩.খাদ্যের রুপান্তর হার ভাল হয় (FCR)
৪.মুরগির মধ্যে সমতা আনার জন্য মানে ইউনিফর্মিটি যাতে ভাল হয়।
৫.মুরগির অভ্যাস হল দেখে দেখে ভুট্রা মানে বড় বড় উপাদান গুলো খাওয়া কিন্তু গুড়া উপাদানে প্রোটিন এবং অন্যান্য ভিটামিন মিনারেল থাকে যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে.ঠোটকাটা হলে সব উপাদানই খেতে পারে।
৬।ডিম খাওয়া রোধ করার জন্য
৭।ক্যানাবলিজমের মাধ্যমে মৃত্যু যাতে না হয়।
কখন ঠোঁট কাটা উচিতঃ
কখন কাটা উচিত তা কয়েকটি ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে যেমন
১।ব্রিডার/কমার্শিয়াল লেয়ার।
ব্রিডার ফার্মের লাইটিং সিস্টেম সহ সব ব্যবস্থাপনা অনেক ভাল তাই মুরগি ভাল থাকে বিধায় যে কোন কাটা যায়।কিন্তু কমার্শিয়াল ফার্মের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা থাকে না তাই নিয়ম অনুযায়ী করাস কঠিন।
২। মুরগির গ্রোথ এবং ভ্যাক্সিন সিডিউল
৭-১২ সপ্তাহে মুরগির গ্রোথ বেশি হয় মানে সপ্তাহে ১০০গ্রাম করে বাড়ে তাই এই সময় কাটলে ওজনে সমস্যা হয়।
তাছাড়া ৭ সাপ্তহের আগে অনেক ভ্যাক্সিন থাকে তাছারা বিভিন্ন রোগ ব্যাধি বেশি হয় তাই অনেক টা রিস্ক হয়।
৩।প্রচলিত পদ্ধতি /সঠিক পদ্ধতি
প্রচলিত পদ্ধতি হল আগে ঠোট ছেকা ,পরে কাটা।
সঠিক নিয়ম হল আগে কাটা পরে ছেকা
৪।মুরগির সুস্থতা/স্ট্রেস
বিভিন্ন কারণে মুরগি অসুস্থ থাকার কারণে নির্দিস্ট সময়ে কাটা সম্বব হয় না।তাছাড়া তাপমাত্রা যদি ৩৫ডিগ্রি বা বেশি হয় তাহলে ঠিক সময় কাটা যায় না।.
৫।ব্রিড
একেক ব্রিডের ক্ষেত্রে সময় টা কিছু আগে পরে হতে পারে।
যেমন কাজী হাই লাইন ৭-১০দিনে একবার কাটলেই হয়।
সিপিতে বাচ্চাতে কেটে দেয় তবুও ৯-১২ সপ্তাহে আবার কাটতে হয়।
৬।ফ্লোরে কত সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে
নিচে আলোচনা করা হল কখন দেখা উচিতঃ
বাচ্চা অবস্থায় ৬-১০ দিন বয়সে কাটার নিয়ম।এই সময় না কাটলেও ছেকা দেয়া উচিত।
বাড়ন্ত মুরগিতে ৯-১২ সপ্তাহে কাটা ভাল কারণ এতে স্টেস কম পড়ে।আবার অসুবিধা হল এই সময়ে হাড়,পালক ও অর্গানের গ্রোথ হতে থাকে,তবে দেশে প্রচলিত হলো ১১-১৪ সপ্তাহ,বিদেশে কোম্পানী তাদের বাচ্চায় হ্যাচারীতে লেজারের মাধ্যমে বাচ্চাকে ঠোঁট কেটে দেয় যা ১০-৩০ দিনের মধ্যে ঝড়ে যায়।অনেক দেশে ঠোটাকাটা নিষিদ্ধ।
১২-১৪ সপ্তাহে না কাটার যুক্তি হলো এই সময় মুরগিতে বেশি স্টেস পড়ে এবং প্রডাকশন দেরিতে আসে।
ঠোট কাটার নিয়ম
সঠিকভাবে ঠোট কাটলে ভবি্য্যতে ঠোঁট বৃদ্ধির সম্বাবনা কম থাকে।
কাটার পর কটারাইজ সঠিকভাবে করা হলে রক্ত বন্ধ হয় ও ভবি্য্যতে বৃদ্ধি হওয়ার সম্বাবনা কমে।
অল্প বয়সে কাটলে ধকল কম হয়।
সঠিক ভাবে না কাটলে খেতে অসুবিধা হয়।
কাটার পদ্ধতি
বাচ্চার নাকের ০.2 সেমি সম্মুখ হতে উপরের ঠোট এবং উপরের ঠোঁট হতে নীচের ঠোঁট 0.২-.৩ সেমি বড় রাখতে হয়।
উপর এবং নিচের ঠোট সমান ভাবে কাটা যায় বা নিচের টা একটু বড় রাখা যায়।তবে একেক তা একেক রকম না করাই ভাল।
ঠোটের সামনে সাদা অংশটুকু কেটে দিতে হয়.মেশিনে ২সেকেন্ড ধরে রাখলেই কেটে যায়।
বাড়ন্ত মুরগির উপরেরর ঠোটের ১/২-২/৩ অংশ এবং নিচের ঠোটের ১/৪-১/৩ অংশ কাটতে বলে।
About one half of both the upper and lower beak is removed.
ব্রিডারের ক্ষেত্রে পুরুষ বাচ্চার ঠোট সমান করে কাটতে হয়।
উভয় ঠোঁট পৃথকভাবে কাটতে হয়।
ইলেক্টিক ঠোট কাটার যন্ত্রের সাহায্যে ঠোট কাটলে একই সাথে কাটা ও কটারাইজ হয়।
প্রতি মিনিটে ১৫টির বেশী মুরগির ঠোট কাটা উচিত নয়।
৩০০০ বাচ্চার ঠোট কাটার পর ব্লেড পরিবর্তন করতে হয়।
ঠোঁট কাটার মেশিন
ব্লক চিক ট্রিমিং মেশিন
হাই স্পিড ট্রিমিং মেশিন
কখন ঠোঁট কাটা উচিত নয়ঃ
যে কোন ধকলের সময়।
টিকা প্রদানের ২দিন আগে ও পরে।
আবহাওয়ার পরিবর্তন বেশি হলে।
রোগের প্রাদুভারব দেখা দিলে।
মুরগি ডিম পাড়তে শুরু করলে।
ক্ষতিকর ওষধ সেবনের ২দিন আগে ও পরে।
ঠোটকাটার সময় যা খেয়াল রাখা উচিত
কাটার ২দিন আগে থেকে ভিটামিন কে দেয়া
মেশিন ভালভাবে জীবানূমুক্তকরণ
ব্লেডের ধার পরীক্ষা।
ব্লেড উত্তপ্ত হওয়ার তাপমাত্রা পরীক্ষা।
মুরগির চোখে যাতে কোন ক্ষতি না হয়।
দিনের ঠান্ডা সময়ে ঠোট কা্টা।
অভিজ্ঞ লোক দিয়ে ঠোটকাটা কিন্তু দেশে অভিজ্ঞ লোক খুব কম।
কাটার ৩ ঘন্টা আগে খাবার দেয়া যাবেনা।
একটা ব্লেড দিয়ে ২০০০০ এর বেশি মুরগির ঠোট কাটা যাবেনা এবং ব্লেডের তাপমাত্রা হবে ৮০০-৮৫০ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট যা পায়োমিটার দিয়ে তাপ মাপা যায়(দাম ১৫০০০-৫১০০০টাকা)
কাটার পর বরফের পানিতে ঠোট ছেকা দেয়া উচিত।
পানিতে এস্পিরিন এবং খাবারে হলুদ ১টনে ১কেজি ।
উপরে ঠোট ৪.৫মিমি এবং নিচের ঠোট ৪মিমি কাটা উচিত,নিচের টা .৩সেন্টি মি বেশি লম্বা হবে।
৮-১০দিনে ছেকা দিতে হয়।
১২ সপ্তাহে ঠোট কাটা খুব পেইনফুল তবু কাটতে হয়।
১দিনের বাচচায় ইনফ্রারেড দিয়ে ছেকা দেয়া হয় যা পেইনফুল ফলে ডিহাইড্রেশনে অনেক মর্টালিটি হয়।
তাপ ৩০ডিগ্রির বেশি হলে বা ২০ডিগ্রির কম হলে ঠোটকাটা উচিত না।
ঠোটাকাটা বা ছেকার পর আবার বড় হয় এটা ন্যাচারাল।
ঠোঁটকাটার পরে যত্নঃ
ঘরে ডিপ নিপল ডিংকার থাকলে পাশাপাশি কাপ বা ট্রাফ ডিংকার দেয়া।
৩-৫ দিন ২-৪ ঘন্টা আলো বেশি দেয়া।
পাত্রে খাবার বেশি দেয়া যাতে ব্যাথা কম হয়।
পানির পাত্রের গভীররতা বৃদ্ধি করা
খাবারে আমিষ বাড়িয়ে দেয়া।
প্যারাসিটামল পানিতে দেয়া।
এডি৩ই বা মাল্টিভিটামিন দেয়া যায়।
প্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক দেয়া।
ইমোনোস্টিমোলেটর দেয়া যায়।
৩ দিন পর থেকে
প্রবায়োটিক দেয়া ৫-১০দিন।
ভিটামিন সি
ই সেল
এমানো এসিড
যারা ঠোটকাটে ডিবেকার ম্যান অনেকে প্রায় ই ঠোঁট বেশি কাটে বা কম কাটে।কম কাটলে পরে ঠোট বড় হয়ে যায় এবং ঠোকরা ঠুকরি করে।আবার বেশি কাটলে মুরগি ১মাস খাবার খুব কম খায় ,ওজন কমে যায় এবং প্রডাকশন ১ মাস পিছিয়ে যায়,স্টেস বেশি পড়ার কারণে বিভিন্ন রোগ ব্যধি বেশি হয় যেমন পক্স,মেরেক্স,রানিক্ষেত,মাইকোপ্লাজমা,এন্টারাইটিস।
ঠোটকাটার পর স্টেস হরমোন(ACTH) রিলিজ হয় ফলে খাবার ও পানির রুচি কমে যায় এবং ২-৪দিন খাবার অ পানি তেমন খায় না।