Breaking News
ভেড়া বা গাড়ল পালন
ভেড়া বা গাড়ল পালন

#গাড়ল পালনঃ বিস্তারিত

গাড়ল”
বাংলাদেশে অনেক নতুন নতুন উদ্যোক্তাগন
বাণিজ্যিক ভাবে গাড়ল পালন করতে
আগ্রহী এবং এই পশুটি সম্পর্কে সঠিক
ধারনা পাবার জন্য চেষ্টা করছে  ।
বানিজ্যিক ভাবে দেশে বেশি
গাড়লের খামার হলে আমাদের দেশের
মাংসের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে
রফতানির করা সম্ভব হবে ।
গরু, মহিষ, ছাগল এই প্রাণীগুলোর মাংসের
তুলনাই ভেড়া এবং গাড়লের মাংস বেশি
স্বাস্হ্যসম্মত যাহা বৈজ্ঞানিক
গবেষণাতে প্রমানিত ।

প্রাথমিক পরিচিতি:-

বাংলাদেশের দেশি ভেড়া যাকে বলে ঐ ভেড়া আর গাড়ল
দেখতে প্রায় একই রকমের তবে ভেড়ার লেজ
ছোট ছাগলের লেজের মত আর গাড়লের লেজ
লম্বা হয় গরুর লেজের মত । গাড়লকে আবার
অনেকে কাশ্মিরী ভেড়া বলেও ডাকে ।

গাড়ল ২-৩ জাতের আছে । পিওর গাড়ল, ভেড়
আর গাড়লের ক্রস এবং ক্রস গাড়লের ক্রস ইত্যাদি ।

পিওর গাড়লের লেজ প্রায়মাটিতে লেগে থাকে এবং সাইজ বড় হবে ।
শুধু লেজ দিয়ে অরিজিনিয়াল গাড়ল যাচাই
করে না গাড়ল যাচাই করতে হলে লেজ+কান
+লোমের মসৃণতা+ মুখের গঠন+ বডির সাইজ
এই গুলো দিয়ে যাচাই করা হয় ।

তবে লেজিটি কমন তাই বল্লাম । ভাল যত্ন পেলে পিওর গাড়ল ৭ – ৮ মাস পর পর ১টি
করে বাচ্চা দেয় ।

বানিজ্যিক ভাবে শুধু মাত্র পিওর গাড়ল পালন করা কোন সময়
লাভজনক হবেনা । অল্প কিছু পিওর গাড়ল
আর বেশি সংখ্যক ভাল মানের ক্রস গাড়ল
দিয়ে খামার করলে লাভবান হওয়া যাবে ।
কিছু ভাল মানের ক্রস গাড়লের ক্রস আছে
৬-৭ মাস পর পর ২ থেকে ৪ টি করে বাচ্চা
দেয় এবং পিওর আর ক্রস গাড়লের ক্রস
বাচ্চার দাম অল্প পার্থক্য থাকে । পিওর
হলে ২-৩ মাসের বাচ্চার ওজন হবে ১০-১৫
কেজি+ ৮-১০ হাজারের মধ্যে দাম হবে ।
ভাল ক্রস ২-৩ মাসে ওজন হবে ৮-১০ কেজি+
এবং দাম হবে ৬-৭ হাজারের মধ্যে ।
চাহিদা এবং যোগানের উপরে নির্ভর করে
দাম কমবেশি হয়ে থাকে ।

বাংলাদেশে পাবনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, সহ কিছু জায়গাতে গাড়ল বেশি পাওয়া যায় । তাছাড়া বানিজ্যিক ভাবে দেশের
বিভিন্ন জেলাতে ছোট বড় কিছু কিছু গাড়লের খামার গড়ে উঠছে ।
দৈহিক বৃদ্ধি :- ১০০% পিওর গাড়ল ভাল যত্ন এবং খাবার পেলে তিন বছরে পুরুষ গাড়ল ৮০ কেজি+ আর মেয়ে গাড়ল ৬০ কেজি+ হতে পারে ।

এবং ভাল কোয়ালিটির ক্রস গাড়লের ক্রস ভাল যত্ন এবং খাবার পেলে তিন বছরে পুরুষ গাড়ল ৭৫ কেজি+ আর মেয়ে ৫০ কেজি +হতে পারে ।
আমার খামারে কিছু গাড়ল আছে ১ টি করে
বাচ্চা দিয়েছিল যে বাচ্চা গুলো ৩.৫
মাসেই ১৮ কেজি+ হয়েছে আর একটি গাড়ল
২ টি বাচ্চা দিয়েছিল একসাথে ঐ গুলো ৩.৫
মাসে ১০ কেজি + করে হয়েছে ।
জন্মের পরে ৪-৫ মাস পর্যন্ত খুব দ্রত দৈহিক বৃদ্ধি হয় এদের যা প্রায় ২-৩ বছর পর্যন্ত বাড়ে ।

খাদ্য :-

গাড়ল সাধারণত কাঁচা ঘাস ,খড়,
দানাদার খাবার , চিটাগুর, পানি সহ সকল
প্রকার খাদ্য খেয়ে থাকে ।
অন্যান্য গৃহপালিত পশুর থেকে গাড়ল খাদ্য খুব কম নষ্ট করে । আপনাদের সুবিধা অনুযায়ী যে খাবার দিতে পারবেন ঐ খাবার দিয়ে আস্তে আস্তে ২০-৩০ দিনের মধ্যে অভ্যস্ত করতে পারবেন । আমার
খামারে যে ভাবে অভ্যস্ত করা আছে আমি
নিচে শেয়ার করলাম :-
আমার গাড়ল গুলো প্রতিদিন ২-৪ ঘন্টা খামারের বাহিরে থাকে তখন সেডটি পরিস্কার করা হয় এবং
সকাল ৮ টা থেকে কাঁচা ঘাস দেই ।

দুপুর ১ টার সময় দানাদার খাবার দেই খাবার গুলো বাজার থেকে বিভিন্ন প্রকার গোখাদ্য
কিনে এক সাথে মিশ্রণ করে তৈরি করি ।
প্রতি কেজি গড়ে ২০-২৪ টাকার নীচে পড়ে ১ কেজি শুকনা খাবারের সাথে ২ কেজি পানি ভাল করে মিশ্রণ করে দিলে তারা
খেতে খুব পছন্দ করে আর ভাল হজম হয় ।
বড় গাড়ল গুলো গড়ে ২০০-৩০০ গ্রাম শুকনা দানাদার খাবার যা পানির মিশ্রণে প্রায় ৯০০-১২০০ গ্রাম দানাদার খাবার হবে আমি
খেতে দেই ।
২.৫-৩ টার সময় ১ কেজি চিটাগুড় ১৫-২০ লিটার পানির সাথে মিশ্রিত করে দেই
যতক্ষন পেট খালি থাকে ততক্ষন পানি পান করতে থাকে ।
বেশি রোদ বা বৃষ্টি না থাকলে ৪ টার সময় বাহিরে ছেড়ে দেই এবং খামারের দরজা খোলা রাখলে ঠিক সন্ধ্যার সময় সবগুলো এক
সাথে ঘড়ে চলে আসে তখন খাবারের পাত্র
গুলোতে কাঁচা ঘাস দেওয়া থাকে এবং ঐ
গুলো রাত ৮-৯ পর্যন্ত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ।
এই রকম অভ্যেস করাতে অবশ্য কিছু দিন সময়
লেগেছে । নতুন যে বাচ্চা গুলো জ্ন্ম হয় অন্যান্য গাড়লের দেখাদেখি যে খাবার
দেওয়া হয় ঐ খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যায় ।
আমি দানাদার খাবার শুধু ১ বেলা দেই কারন কয়েক বার দানাদার খাবার দিয়েছি আগে সকালে বা রাতে দানাদার খাবার
দিলে কিছু খাই আবার কিছু খাইনা এবং
বাকি খাবার গুলো পরে খেলে দেখাযায়
পাতলা পায়খানা, পেটফাঁপা, বদহজম হয়
বেশি ।

যখন শুধু দুপুর বেলা ১ বার দানাদার খাবার দিয়ে অভ্যস্ত করালাম দেখলাম ৩০ মিনিটের ভিতরের খাবার পাত্র একেবারে
পরিস্কার করে ফেলে ।
গাড়লকে কোন সময়ই অতিরিক্ত বেশি দানাদার খাবার দেওয়া উচিৎ না কারন বদহজম , পাতলাখানা, হতে পারে আর
খামারের মুনাফা কমে যাবে আপনি
আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন ।
চাহিদা এবং বাজেট অনুযায়ী মাঝে মাঝে
কিছু ভিটামিন, মিনারেল,ক্যালসিয়াম,
জিংক ইত্যাদি খাদ্যর সাথে মিশিয়ে
দিতে পারেন তাহলে দৈহিক বৃদ্ধি, প্রজনন
ক্ষমতা, সুস্হ্য সবল বাচ্চা প্রসব সহ , অনেক
উপকার পাবেন ।

বাসস্থান :

– গাড়লকে সম্পূর্ন ছেড়ে অথবা
ছেড়ে এবং আবদ্ধ অথবা সম্পূর্ন আবদ্ধ
অবস্হায় পালন করতে পারবেন তবে ৬-৮ ইস্কয়ারফিট জায়গা লাগবে প্রতিটি বড় সাইজের গাড়লের জন্য । আধুনিক সেডটি
তৈরি করতে হলে ৫-৬ টি ভাল ছাগলের সেড পরিদর্শন করলে ভালো ধারনা পাবেন এবং
খরচ অনেক কম হবে ।

আর যদি অল্প কয়েকটি পালন করতে চান এবং যদি ফ্লোরে পালন করেন তবে কিছু কাঁঠের মাঁচা দিয়ে রাখতে
হবে আর প্রতি দিন পরিস্কার করতে হবে
এবং প্রতি ৩-৪ দিন পর পর ব্লিসিং
পাউডার, পটাস,অথবা ভাল জীবানু নাশক
দিয়ে ঘরটি ভাল করে জীবানু মুক্ত করতে
হবে ।
প্রজনন ক্ষমতা :

– গাড়ল সাধারণত যদি ভাল পরিবেশ এবং খাদ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে তবে মেয়ে গাড়ল জন্মের পরে ৫-৬ মাসেই প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে আর ১০-১১ মাস বয়সেই জীবনে প্রথম বাচ্চা প্রসব করে থাকে ।
আর পুরুষ গাড়ল ৬-১০ মাস বয়সেই প্রজনন সক্ষম হয়ে থাকে ।
গাড়ল সাধারণত কমপক্ষে ১৩-১৪ মাসে ২
বার বাচ্চা দেয় যদি ভাল যত্ন + খাবার
পায় আর না হলে ১৫-২০ মাসেও ২ বার বাচ্চা
দিতে চাই না ।

গাড়ল দলবেদে থাকতে পচন্দ করে এবং ১০-১৫ টি মেয়ে গাড়লের প্রজননের জন্য একটি পুরুষ গাড়ল যথেষ্ট তবে
পুরুষ গাড়লটিকে প্রতি ১৫ দিন পর পর সুপার
এমাইনো এবং ভিটামিন এডিই ইন্জেকশন
মাংসে প্রয়োগ করলে পুরুষ গাড়লটির
প্রজনন ক্ষমতা বাড়ে এবং পাশাপাশি
সিমেন বা বীর্যের কোয়ালিটি ভাল
থাকে যা থেকে ভাল মানের বাচ্চা
উৎপাদনে সাহায্য করে ।

গাড়লের পাঠা সাধারণত অন্যান্য মেয়ে গাড়লের সাথে ছাড়া থাকে বলে কখন হিটে আসে এই সব
খেয়াল না রাখলেও চলে কারন পাঠা
নিজেই খোঁজে বের করে প্রজনন করে থাকে
। গাড়লে গর্ভধারণ কাল ১৪৫-১৫০ দিন ।

যদি খামারে কোনটির প্রজনন করছে দেখতে পারেন তবে ঐ গাড়লটিকে চিহ্নিত করে
তারিখ লিখে রাখবেন তাহলে বাচ্চা প্রসবের আগে আলাদা করতে সুবিধা হবে ।
আর বাচ্চা প্রসব করার পরে অবশ্যই তারিখ
সব কতটি বাচ্চা জন্ম হয়েছে লিখে রাখতে হবে নিজের সুবিধা এবং বিক্রি করার সময় ক্রেতার এই তথ্য জানা থাকলে তার জন্যও
সুবিধা হবে । আর প্রজনন কাজে ব্যবহার
করা মেয়ে গাড়ল গুলোকে প্রতি মাসে এক বার ভিটামিন এডিই ইন্জেকশন দিলে ভাল
হয় । এবং বাচ্চা জন্মে দেবার পরে মা গাড়ল গুলোকে ৩ সপ্তাহে ৩ বার ভিটামিন
এডিই এবং সুপার এমাইনো ইন্জেকশনন
দিলে দেখাযায় প্রসব পরবর্তী দুর্বলতা দ্রুত
কেটে যায় এবং তাড়াতাড়ি হিটে চলে
আসে ।
রোগবালাই :

– গাড়লের সাধারণত তেমন
কোন রোগ বালাই হয় না তাই বলতে গেলে
ঔষুধ লাগেনা তবে প্রাণঘাতী যে রোগ গুলো আছে পিপিআর,তরকা, বাদলা, খোড়া, ইত্যাদি ছাগলকে যে মাত্রায় দেওয়া হবে
গাড়লকে ঠিক ঐ মাত্রাতেই টীকা দিতে হবে. গরু ছাগলের চাইতে কয়েক গুন বেশি
গাড়লের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা । তবে গাড়লকে অবশ্যই ২-৩ মাস পর পর কৃমি নাষক ঔষুধ দিতে হবে । কিছু কৃমি নাষক আছে
গাভীন অবস্হায় নির্ধারিত মাত্রায় ১০০%
নিরাপদ আবার কিছু আছে বিপদজনক এই
গুলো বাচাই করে দিতে হবে ।
Courtesy by………
Atiqur Rahman, Director.
Nation’s Green Farm
Sreefoltola, Jhenaidah.
cell: 01811-44480

#গাড়ল পালন!

আমাদের দেশে চারণভূমি , খামারির সামর্থ্য, খামারের ধরন ও অন্যন্য সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন ভাবে গাড়ল পালন করা যায়। যেমন –

১. অধানিবিড় (সেমি ইনসেনটিভ ) খামার :
এ ধরনের খামারে, খামারিগণ এককভাবে বা গরু-ছাগলের সাথে মিশ্রভাবে অল্প সখ্যক গাড়ল পালন করেন। রাতে আলাদা ঘরে বা গরুর সঙ্গে রাখা হয়। দিনে ফসলের খালি মাঠ, রাস্তা বা বাধের ধারে, গাছের বাগানের মধ্যে ছেড়ে বা বেধে পালন করা হয়। সকালে বা সন্ধ্যায় কখনো কখনো সামান্য কুড়া, ভুসি ও ভাতের মাড় দেয়া হয়।

২. সম্পুর্ন ছেড়ে পালা ক্ষুদ্র বানিজ্যিক খামার :
এ ধরনের খামার অধা-নিবিড় খামারের মতোই। তবে এ রকমের খামারে গাড়লের সংখ্যা বেশি থাকে। খামারি মূলত বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে গাড়ল পালন করে থাকেন। এ ধরনের খামারে সাধারনত সুনির্দিস্ট কোনো খাদ্য ব্যবস্থাপনা নেই। সাধারনত মাঠে চরানোর মাধ্যমেই গাড়লের খাদ্য চাহিদা মেটানো হয়।

৩.অধানিবিড় বানিজ্যিক খামার:
অপেক্ষাকৃত সচ্ছল খামারিগণ অধানিবিড় বানিজ্যিক খামারে ১০০ থেকে ১৫০ গাড়ল পালন করেন এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করা হয় আবার মাঠেও চরানো হয়।

৪. নিবিড় পালন ব্যবস্থা :
এ ধরনের খামার ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ বদ্ধভাবে গাড়ল পালন করা হয়। এক্ষেত্রে খামারিদের ঘাস চাষ করতে হয়, ঘাস কেটে আনতে হয় ও অন্যান্য খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হয়।এ ধরনের খামারে যথাযথ আবাসন ব্যবস্থা , পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ,সুষ্ঠ খাদ্য ব্যবস্থাপনা একান্ত জরুরি।

গাড়ল পালনের জন্য সঠিক বাসস্থান একটি অতীব গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। এটার উপর লাভক্ষতি , উৎপাদন , গাড়লের পরিচর্যা , রোগাক্রান্ত হওয়ার হার ইত্যাদি নির্ভর করে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় গাড়লের বাসস্থানের জন্য খোলামেলা ও উচু স্থান নির্বাচন করা উচিত ।

রোদ-বৃষ্টি – ঝড় ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা করা , বিশ্রাম , খাদ্য প্রদান , সঠিক প্রজনন নিশ্চিতকরণ , মলমূত্রের সুষ্ঠ নিস্কাসনের ব্যবস্থা। ইত্যাদি বন্দোবস্ত করে গাড়লের জন্য ঘর তৈরী করতে হবে।

ঘরে মাচার উপর গাড়ল থাকার ব্যবস্থা করতে হবে মাচা তৈরী সম্ভব না হলে , মেঝেতে শুকনো খড়ের বিছানা দিতে হবে। শীতকালে মাচাতেও খড়ের বিছানা দিতে হবে। বিশেষকরে বাচ্চা কে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে হবে,ভেজা খর শুকিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যায়।

গাড়লের জন্য আদর্শ বাসস্থানের বৈশিষ্ট্য :

গাড়লের ঘর উচু ও খোলামেলা জায়গায় হতে হবে।
পানি নিস্কাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
আরামদায়ক হতে হবে।
ঘরের দক্ষিণ ও পূর্ব দিক হতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
বর্জ্য নিস্কাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকবে।
সহজলভ্য ও সস্তা নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।
ঘরের মাঝে বেড়া বা পার্টিশন দিয়ে গর্ভবতী গাড়ল বা ছোট বাচ্চা কে আলাদা রাখার ব্যবস্থা থাকবে। যাতে করে প্রসব পূর্ব ও প্রসব পরবর্তী যত্ন ও সেবা দেয়া যায়।

গাড়লের খাদ্য :

গাড়ল চরে খেতে পছন্দ করে। তবে আবদ্ধ অবস্থায়ও বাহির থেকে (ঘাস/দানাদার) খাদ্য সরবরাহ করে পালন করা যায়।
ছাগলের মতোই লতা ও গুল্ম জাতীয় গাছের পাতা এরা খুব পছন্দ করে।
শুকনো ও সংরক্ষিত ঘাস এবং দানাদার খাদ্য এরা খেয়ে থাকে।
এমনকি খাদ্যের অভাব দেখা দিলে গাড়ল খড় ও নাড়া খেয়ে থাকতে পারে।

পাঠা গাড়লের খাদ্য :

পাঠা গাড়ল কে পর্যাপ্ত পরিমান কাচা ঘাস দিতে হবে।
একটি প্রাপ্ত বয়স্ক পাঠাকে দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম আমিষ সমৃদ্ধ দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
প্রজননের জন্য ব্যবহৃত পাঠাকে দৈনিক ১০ গ্রাম অঙ্কুরিত ছোলা দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
কাচা ঘাসের পরিমান কম হলে বছরে অন্তত ২ বার ভিটামিন এ.ডি.ই. ইনজেকশন ২ থেকে ৩ মি.লি. করে দিতে হবে।
পাঠাকে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য দেয়া যাবে না।

বাড়ন্ত গাড়লের জন্য একটি আদর্শ খাদ্য তালিকাঃ
গাড়লের ওজন (কেজি)    দানাদার খাদ্য (গ্রাম) ঘাস সরবরাহ (কেজি)
৪ কেজি ওজনের জন্য      ১০০ গ্রাম           ০৫ কেজি
৬ কেজি ওজনের জন্য    ১৫০ গ্রাম          ০.৮ কেজি
৮ কেজি ওজনের জন্য    ২০০ গ্রাম          ১.০ কেজি
১০ কেজি ওজনের জন্য   ২৫০ গ্রাম       ১.৫ থেকে ২.০ কেজি
১২ কেজি ওজনের জন্য   ৩০০ গ্রাম     ২.০ থেকে ২.৫ কেজি
১৪ কেজি ওজনের জন্য   ৩৫০ গ্রাম      ২.৫ থেকে ৩.০ কেজি
১৬ কেজি ওজনের জন্য  ৪০০ গ্রাম       ৩.০ থেকে ৩.৫ কেজি
১৮ কেজি বা তার উপরে ৪৫০ গ্রাম      ৩.৫ থেকে ৪.০ কেজি।

গাড়লের প্রজনন ব্যবস্থাপনা :

গাড়ল সাধারনত ১৮০ দিন বয়সের মধ্যে প্রথম বাচ্চা ধারণ করে।
গাড়লের হৃতুচক্র ১৩ থেকে ১৯ দিন বা গড়ে ১৭ দিনে সম্পন্ন হয়।
গাড়লের গরমকাল বা হিট পিরিয়ড ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
গরম হওয়ার ১২ থেকে ১৮ ঘন্টার মধ্যে প্রজনন করাতে হবে।
গর্ভধারণ কাল ১৪৫ থেকে ১৫০ দিন।
গর্ভবতী গাড়লের পরিচর্যা :

গর্ভাবস্থার প্রথম পর্যায়ে গাড়ল কে কোনো কৃমিনাশক খাওয়ানো যাবেনা।
গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে গাড়ল কে নরম বিছানা দিতে হবে।
গর্ভবতী গাড়লকে আলাদা রাখতে হবে।
গর্ভবতী গাড়লকে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করতে হবে। গমের ভুষি, কাচা ঘাস , তিলের খৈল , ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন প্রিমিক্স।
বাচ্চার পরিচর্যা ও যত্ন :

বাচ্চা প্রসবের সময় গাড়ল কে শুকনো , পরিচ্ছন্ন ও আলো বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখতে হবে। বাচ্চার শরীর যাতে মা – গাড়ল চেটে পরিস্কার করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এতে বাচ্চার শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত চালুর জন্য সহায়ক হয়।
মা যদি দুর্বলতা বা অন্য কোনো কারণে বাচ্চার শরীর চাটতে না পারে, তাহলে পরিস্কার নরম সুতি কাপড় দিয়ে বাচ্চার নাক-মুখ মুছিয়ে দিতে হবে। না হলে শ্বাস রুদ্ধ হবার ঝুকি থাকে। আর যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েই যায় , সেক্ষেত্রে বাচ্চার বুকের পাজরে আস্তে আস্তে কিছুক্ষণ পর পর চাপ প্রয়োগ করলে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসবে। প্রয়োজনে নাকে-মুখে ফু দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাচ্চার জন্মের পর গোসল করানো যাবেনা , এতে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হতে পারে।

অবশ্যই বাচ্চার নাক, মুখ, পায়খানা-প্রস্রাবের রাস্তা ও নাভির স্থানে ফোলা আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এগুলোর কোনো একটিতে ত্রুটি দেখা গেলে, অতিসত্তর নিকটস্থ ভেটেরিনারি হাপাতালে / ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শ মতো চিকিৎসা দিতে হবে।
জন্মের পর থেকে শুরু করে নাভি না শুকানো পর্যন্তু ( ৭ থেকে ১৪ দিন ) বাচ্চার নাভিতে তুলা দিয়ে টিংচার আয়োডিন বা জেনসণ ভায়োলেট লাগাতে হবে। যদি নাভি ফুলে পুজ জমে তাহলে অবশ্যই জীবানুনাশক ( যেমন – পটাশিয়াম ম্যাঙ্গানেট , স্যাভলন ২.৫% ইত্যাদি ) নির্দেশিত মাত্রায় ফুটানো ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে নাভি পরিস্কার করতে হবে।এছাড়া ক্ষত স্থানে দিনে ২ -৩ বার নেবানল পাউডার লাগাতে হবে।

প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অথবা ওষুধের নির্দেশিকা অনুসারে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন ( যেমন- প্রোনাপেন , পেনিসিলিন , পেনবাসিলিন , প্রোনাসিলিন ইত্যাদির যেকোনো একটি ) ৩ থেকে ৫ দিন মাংসে প্রয়োগ করতে হবে। জন্মের ৪ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চাকে মায়ের বাটে মুখ লাগিয়ে অবশ্যই শাল দুধ পান করাতে হবে।
কমপক্ষে ৩ দিন পর্যন্ত শালদুধ পান করানো আবশ্যক। শালদুধে পর্যাপ্ত পরিমানে রোগ প্রতিরোধী উপাদান থাকে। ঠিকমত শালদুধ না খাওয়ালে বাচ্চা বিভিন্ন রোগে সহজেই আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া বাচ্চা দুধ টেনে খেলে মা – গাড়লের গর্ভফুল ৮-১২ ঘন্টার মাঝে পরে যায়।
গাড়লের প্রজনন কালীন ও পরবর্তী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাঃ

গর্ভধারণের কিছু সমস্যার কারণে অনেক সময় গাড়লের বাচ্চা উত্পাদনের প্রত্যাশিত লক্ষ্য ব্যাহত হয়। সময়মতো গর্ভধারণ ও বাচ্চা উৎপাদনের সাথে লাভ – ক্ষতির সম্পর্ক রয়েছে।
প্রসবের পর যেন পুনরায় সময়মতো গর্ভধারণ করে তা নিশ্চিত করতে হবে। দেখা যায় বাচ্চা প্রসবের দু-তিন মাস পরেও কিছু গাড়ল গর্ভধারণ করে না।
অপুষ্টি, কৃমির আক্রমণ ও প্রজনন ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, প্রসবের আগে ও পরে সুষম খাদ্য না খাওয়ানো, জননাঙ্গে সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া, ইত্যাদি কারণে এমনটা হতে পারে। গাড়ল ডাকে আসলে সঠিক সময়ে প্রজনন করানো উচিত।
প্রসবের পর সমস্যা :

খুব সামান্য ক্ষেত্রে বাচ্চা প্রসবের পর কোনো কোনো গাড়লের জরায়ু বাইরে বেরিয়ে আসে। এ সমস্যা বাচ্চা প্রসবের ৪ – ৬ ঘন্টার মধ্যে দেখা যায়। প্রসবের সময় হ্যাচকা টান দিয়ে বাচ্চা বের করা হলে এমনটি হতে পারে। বয়স্ক গাড়লের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে বেশি। গর্ভের সময় ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলেও এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়।
পরবর্তিতে মা – গাড়লের জরায়ুতে প্রদাহ দেখা দেয় এবং গর্ভধারণ বিলম্বিত হয়। এ ক্ষেত্রে , শরীরের তাপ পরীক্ষা করে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলে খুব ধীরে , সতর্কতার সাথে ৩০-৫০ মি.লি. ক্যালসিয়াম বরেগ্লুকনেট ,ক্যালডিম্যাক , কোপাক্যালসিয়াম , ক্যাজেসন , ক্যালসিনেট অথবা ক্যালসির যেকোনো একটি ইনজেকশন শিরায় প্রয়োগ করতে হবে। এর সাথে ১-২ আই .ইউ. অক্সিটোসিন (যেমন – অক্সিন, ইন্টাটোসিন-এস ,পিটন-এস অথবা হিন্টোসিনিনের যেকোনো একটি) ইনজেকশন মাংসে প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভবতী গাড়লকে প্রতি কেজি খাবারের সাথে নির্দেশিত পরিমানে এমবাভিট ডিবি, ক্যালফসটনিক পাউডার , মিনোভিট সুপার ,বায়োমিক্স ডিবি, ভিটামিক্স ডিবি, রেনাভিট ডিবি, ডিবি ভিটামিন পাউডার , ইত্যাদির যেকোনো একটি মিশিয়ে খাওয়ানো হলে প্রসবকালীন বা প্রসবোত্তর জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ডি খাবারের সাথে নির্দেশিত মাত্রায় খাওয়ানো যায়।গাড়ল পালন

কালেক্টেড

Please follow and like us:

About admin

Check Also

বগুড়ার শেরপুরে এক ছাগল থেকে সফল খামারি মজিদা

বগুড়ার শেরপুরে এক ছাগল থেকে সফল খামারি মজিদা দিবস টিভি নিউজ ডেক্স: সংসার বুঝে উঠার …

Translate »