ইনকিউবেটরের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে তাপমাত্রা তৈরির জন্য অনেক বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়, আমাদের দেশে গ্রামঅঞ্চলে বিদ্যুতের লোড শেডিং বেশি হবার কারনে গ্রাম অঞ্চলে ইনকিউবেটরে নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ সাপ্লাই রাখা কঠিন হয়ে পড়ে
আর গ্রামে অবস্থিত ছোট খামারী ভাইদের পক্ষে আইপিএস বা জেনারেটর কেনার সামর্থ থাকেনা, তাই গ্রামের খামারী ভাইয়েরা সোলার এবং হারিকেন চালিত ইনকিউবেটরের দিকে বেশি ঝুকে পড়ে।
কিন্তু বিদ্যুৎ চালিত ইনকিউবেটর গুলোতে যে সুবিধা গুলো থাকে, হারিকেন চালিত ইনকিউবেটর গুলোতে সেই সুবিধা যুক্ত করা যায়না।
বিদ্যুৎ চালিত ইনকিউবেটরে তাপের উৎস বাল্ব বা হিটার কিন্তু হারিকেন চালিত ইনকিউবেটরে তাপ তৈরির উৎস হচ্ছে সরাসরি আগুন, আর হারিকেনে জ্বালানী হিসেবে দেয়া হয় কেরোসিন তেল, যার ফলে আগুন থেকে তাপ এবং উত্তাপ্ত কার্বনডাইঅক্সাইড তৈরি হয় এবং জ্বালানী পুড়ে কার্বনও তৈরি হয়।
উত্তাপ্ত কার্বনডাইঅক্সাইড বাতাসের সাথে মিশে বাতাসকেও উত্তপ্ত করে তোলে সেই বাতাস ইনকিউবেটরের ভিতরে সব স্থানের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে তোলে।
তাহলে আমরা বুঝলাম হারিকেন চালিত ইনকিউবেটরের তাপ দ্রুত ছড়ানোর মাধ্যম হচ্ছে উত্তাপ্ত কার্বনড্রাইঅক্সাইড বাতাসে মিশে বাতাস এবং ইনকিউবেটরর ভিতর কে উত্তপ্ত করে।
কিন্তু কার্বনাডাইঅক্সাইডের সাথে মিশে যায় কর্বন, কর্বনের অনু গুলে বাতাসের সাথে উড়ে গিয়ে ইনকিউবেটরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে,যার ফলে ইনকিউবেটরের ভিতর ডিম কলি যুক্ত হয়ে যায়,এতে ডিমের উপরে থাকা ছিদ্র গুলোবন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে ডিমের ভিতরের ভ্রুন মারা যায়।
হারিকেন চালিত ইনকিউবেটরে হেচিংরে খারাপ আসার প্রধান দুইটা কারণঃ
প্রথম কারন, হারিকেন চালিত ইনকিউবেটরে তাপ সব জায়গায় সমান থাকেনা।
দ্বিতীয় কারন, হারিকেনের জ্বালানী থেকে উৎপন্ন কার্বন বা কালি ডিমের উপরের ছিদ্র বন্ধ করে দেয় যার ফলে হেচিংরেট খারাপ আসে, এই কালি কমালে ডিম ফুটার ভাগও বাড়বে।
আজকে আমর সেই সমস্যা গুলোর কিছু সমাধানের উপায় বের করবো।
হারিকেন থেকে কার্বন মিশ্রিত যে কার্বনাডাইঅক্সাইড বের হয় সেই কার্বনড্রাইঅক্সাইডকে যদি কোনো কিছু বা বক্সের মধ্য দিয়ে ধিরে ধিরে বের করা হয় তাহলে কার্বন গুলো সেই বক্সের গায়ে লেগে যাবে, এতে করে ইনকিউবেটরের ভিতরে কালি বা কর্বন জমা হবার সম্ভবনা একে বারেই কমে আসবে।
প্রথমে একটা চারকোনা কাঠ বা পার্টেক্সের ফ্রেম বানান, ফ্রেমের উচ্চোতা হারিকেনের চিমনী থেকে হারিকেনের মাথা পর্যন্ত। (হারিকেন বিভিন্ন সাইজের হতে পারে তাই ফ্রেমের নির্দিষ্ট করে উচ্চতা উল্লেখ কার সম্ভব হলো না)
ফ্রেমের প্রশস্ততা আপনার ইনকিউবেটরের ডিম রাখার ট্রের প্রশস্ততার সমান বা ট্রে চেয়ে চতুর পাশে ১/২ইঞ্চি ছোট রাখা ভালো যাতে ইনকিউবেটরের ভিতর ফ্রেম টা সহজেই ঢুকানো যায়। (ডিম রাখার ট্রে অথবা ইনকিউবেটর বিভিন্ন সাইজের হতে পারে তাই ফ্রেমের নিদৃষ্ট প্রসস্ত মাপ উল্লেখ কার সম্ভব হলো না)
এবার ফ্রেমের উপরের অংশে টিন বা স্টীল পেরেক দিয়ে লাগিয়ে নিন এবং টিন বা স্টিলের দুই পশে ছোট ছোট কিছু ফুটো করুন যে সেখান দিয়ে ধীরে ধীরে কার্বনাডাইঅক্সাইড বের হতে পারে।
এবার ফ্রেমের নিচ পৃষ্ঠে একটা কাঠ বা পর্টেক্স বোর্ড লাগিয়ে নিন এবং কাঠ বা পারর্টেক্সের মাঝখানে হারিকেনের মাথার মাপে কেটে নিন।
এবার হারিকেনের মাথা বক্সের ভিতর ঢুকান দেখবেন হারিকেনের কাঁচের চিমনী পর্যন্ত বক্সের ভিতর ঢুকে গেছে।
লক্ষ করুন হারিকেনের সব ধোয়া কালি বক্সের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে এবং বক্সের উপরের টিন কে সমানভাবে গরম করছে এবং বক্সের ভিতরের ধোঁয়া ধীরে ধীরে টিনের উপরের ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, এবং বক্সের ভিতর কালি জুমছে, অর্থাৎ যে কালি টা ইনকিউবেটরের ভিতর এবং ডিমের উপর জমা হতো সেই কালি হারিকেনের মাথায় রাখা বক্সের ভিতর জুমছে এতে ইনকিউবেটরের কালি বা কার্বনের পরিমান অনেক কমে আসবে।
এখন বক্সের উপরের টিনের যেখনে গরম বেশি থাকবে সেখানে বালি ছড়িয়ে দিতে পারেন অথবা একটা বাটিতে করে বালি রেখে বেশি গরম স্থানে দিতে পারেন,তাহলে দেখবেন সেখানে আর বেশি গরম থাকবে না। এর ফলে সব জায়গা থেকে সমান ভাবে তাপ উপর দিকে উঠবে।
১০/১৫দিন পর পর হারিকেনের মাথা বক্স থেকে বের করে বক্সের সেই ফুটোর মধ্যে হাত দিয়ে কালি গুলো পুরাতন কাপড় দিয়ে মুছ দিবেন।