Breaking News

ইনকিউবেটর তৈরি

আমরা জানি কোনো কক্ষের ভিতরে সঠিক তাপমাত্রা সঠিক আদ্রতা রেখে ডিম ফুটানো হয়।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তাপমাত্রার অনুপস্থিতিকে অপেক্ষাকৃত শীতল বা ঠান্ডা বলা হয়।
সেই দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে গেলে ইনকিউবেটরের তাপমাত্রা নেমে যাওয়া বা ঠান্ডা হয়ে যাবার মূলকারন সেই স্থানে তাপশক্তির উপস্থিতি কমে যাচ্ছে বা তাপশক্তি অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়ে যাচ্ছে।
আর এই তাপ পরিবহন রোধ করতে হলে কোনো স্থানকে যতটা সম্ভব তাপরোধক পদার্থ দিয়ে আবদ্ধ করে সেইখানে তাপশক্তি তৈরি করতে হবে,
তাহলে খুব সহজে সেই বদ্ধ স্থানের ভিতরে তাপমাত্রা সমান থাকবে।
তাহলে আমরা বুঝলাম কোনো কক্ষের ভিতরে সঠিক তাপমাত্রা রাখার জন্য সর্বপ্রথম সেই কক্ষের দেয়ালকে তাপ রোধক করতে হবে তাহলে তাপের উৎস থেকে ঐ কক্ষের সব খানে সহজেই তাপ ছড়িয়ে পড়বে।
.
ইনকিউবেটর তৈরির প্রথম শর্ত হচ্ছে ডিমের ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সব ডিমে সমান তাপমাত্রা রাখতে হবে।
কোনো স্থানে তাপমাত্রা সমান রাখার সবচেয়ে কার্যকারি উপায় হচ্ছে সেই স্থানে তাপমাত্রাকে আটকে রাখা, আর তাপমত্রা আটকে রাখার সবচেয়ে কার্যকারি উপায় হচ্ছে তাপরোধক দেয়াল বা বডি তৈরি করা।
ইনকিউবেটরের বডি তৈরির জন্য কর্কশীট এবং ইনসুলেটর হচ্ছে সঠিক সমাধান।
ইনকিউবেটরে কর্কশীট ব্যবহারের নিয়ম হচ্ছে
হাফ ইঞ্চি বা ১ইঞ্চি বা দেড় ইঞ্চি বা ২ইঞ্চি পুরু কর্কশীট এবং কর্কশীটের দুই পাশে ষ্টিলের শীট, বা পিভিসি শীট, বা প্লাইউড শীট,বা প্লাস্টিকের শীট ব্যবহার করা যায়।
.
কর্কশীট হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম তাপরোধক একটি পদার্থ।
কর্কশীট অনেক টা ভঙ্গুর এবং হালকা তাই এই কর্কশীটকে মজবুত করার জন্য কর্কশীটের দুইপাশে যে কোনো ধরনের মজবুত শীট ব্যবহার করা হয়,
কর্কশীটের দুইপাশে যেকোনো শীট ব্যবহারের প্রধান শর্ত হচ্ছে বডির ভিতরটা বায়ূনিরোধক হতে হবে, নিদৃষ্ট প্রয়োজন ছাড়া কোথাও ফাঁকা রাখা যাবেনা,
বডির ভিতরে যতটা সম্ভব বদ্ধ করতে হবে এরপরে ভ্যন্টিলেশন এবং ওভার ট্যম্পারেচার কন্ট্রোল এর জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী ফুটো করতে হবে।

ইনকিউবেটরে বডির ভিতরে এবং বাহিরে শীট দিয়ে মাঝাখানে কর্কশীট দিতে হবে।
ষ্টিলের বা হলকা লোহার অথবা এ্যলোমুনিয়ামের চ্যনেল দিয়ে ফ্রেম বানিয়ে ফ্রেমের মাঝখানে কর্কশীট দিয়ে ভরাট করে কর্কশীটের দুইপাশে শীট দিয়ে রিপিট করে দিতে হবে।
(আপনাদের সহজে বুঝানোর জন্য আমি 3D এ্যনিমেশন ডিজাইন করেছি,১/২ নম্বার ছবিতে দেখুন।)

ইনকিউবেটরের বডিতে পানি জমে যাওয়া একটা বড় সমস্যা,
প্লাইউড বোর্ড বা হার্ডবোর্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে তাহচ্ছে যেহেতু ইনকিউবেটরের ভিতরে বাতাসের আদ্রতা বেশি রাখা হয়,
আর আদ্র বাতাসে প্লাইউড বোর্ড বেশি দিন টিকেনা।
স্টীল অথবা অন্য প্লাস্টিক শীট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরো একটি বিষয় মনে রাখতে ইনকিউবেটরের ভিতরের আদ্র বাতাস স্টীল এবং কর্কশীটের ফাঁকে ঢুকে আদ্রতা ঝরে গিয়ে সেখানে পানি জমতে পারে , আর ইনকিউবেটরের বডির ভিতরে পানি জুমলে সেখানে ব্যক্টেরিয়া জন্ম নেবে যেটা ডিম থেকে অসুস্থ বাচ্চা ফুটার অন্যতম কারন হতেপারে।
যদি কোনো ইনকিউবেটরের বডির ভিতরে ঘেঁমে যায় বা পানি জুমে যায় তাহলে সেই পানি বের করার উপায় হচ্ছে.. ইনকিউবেটর থেকে ডিম এবং পানি সরিয়ে রেখে খালি ইনকিউবেটর টি চালু করে ৩৭/ ৩৮ ডিঃ সেঃ তাপামাত্রা উঠান, এই তাপে ইনকিউবেটরের বডির ভিতের ঘাঁম/বা পানি বাস্প হতে শুরু করবে, ১ঘন্টা পরে ইনকিউবেটর এই তাপে থাকাকালীন ওভার ট্যম্পারেচার ফ্যন অথবা একটা অতিরিক্ত ফ্যনের সাহায্যে ইনকিউবেটরের ভিতরের বাতাস বের করে দিন এতে বডির আদ্র বাতাস বেরিয়ে আসবে এবং বডির ভিতরের পানি শুকিয়ে যাবে, (মনে রাখবেন ইনকিউবেটরের দরজা খুলে বাতাসে বের করলে ভলো কাজ হবেনা,ওভার ট্যম্পারেচার ফ্যনের ফুটো দিয়ে বাতাস বের করতে হবে এতে ধিরে ধিরে বাতাস বের হবে এবং এই পদ্ধতী কাজ করবে )।

যাইহোক ইনকিউবেটরের দেয়াল তৈরি শেষ হলে সেগুলো একত্রে জোড়া লগিয়ে ইনকিউবেটরের বাক্সো তৈরি করতে হবে বাক্সো কাজ শেষ হলে, ভিতরে যন্ত্রংশ লাগাতে হবে ।
হিটার লাগানোঃ-
সঠিকভাবে ইনকিউবেটরের বাক্সো তৈরির পরবর্তী কাজ হচ্ছে ইনিউবেটরের ভিতরে হিটার বা তাপের উৎস স্থাপন করা।
হিটার অথবা বাল্ব লাগোর জন্য ইনকিউবেটরের ভিতরে এমন জায়গা বাছাই করতে হবে যেখান থেকে সহজেই সব স্থানে তাপ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সাধরনত হিটার লাগানোর স্থান হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রচলীত স্থান হচ্ছে ইনকিউবেটরের পিছনের দেয়ালে এবং সাইডের দেয়ালে।
বেশি ধারন ক্ষমতার ইনকিউবেটর গুলোতে পিছনে হিটার লাগানো হয় এবং হিটারের সামানে বড় সাইজের ফ্যন লাগানো হয়, কম ধারন ক্ষমতার অটো ইনকিউবেটর গুলোত সাইডের দেয়ালে হিটার লাগানো হয়ে থাকে।
হিটার/বাল্ব যেখানেই লাগানো হোকনা কেনো হিটার /বাল্বের তাপ ছড়িয়ে দেবার জন্য হিটারের সামনের দিকে একটা ফ্যন লাগানো হয়, এই ফ্যনটা সারাক্ষন চালুও রাখা হয়, আবার হিটারের সাথে সাথে বন্ধ/চালু হবার সিষ্টেমও রাখা হয়, তবে হিটারের ওয়ার্ট কম হলে সেটা ফ্যনের সাথে অন/অফ করার ব্যবস্থ রাখা হয়।
কিন্তু হিটারের ওয়ার্ট খুব বেশি হলে ফ্যনটা সারাক্ষন চালু রাখতে হয়, কারন যদি হিটার এবং ফ্যন একই সাথে বন্ধ হয়, তাহলে ফ্যন বন্ধ হবার পরেও হিটার টা অনেক গরম থাকে এবং সেই তাপে হিটারের কাছাকাছি ডিমগুলোর ক্ষতি হতে পারে , তাই বড় ইনকিউবেটর গুলোতে সব সময় সার্ক্লুয়েশন ফ্যন চালু রাখা হয়।
.
হিটার থেকে ডিমের দুরুত্বঃ- হিটারের ওয়ার্ট যত বেশি হবে তত হিটার থেকে ডিমের দুরুত্ব বাড়বে,
ইনকিউবেটরের বডি থেকে ডিমের ট্রের /টার্নার ট্রলির মাঝে ৮”/ ১২” অথবা ১৫ ইঞ্চি দুরুত্ব রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকি, কারন দুরুত্ব বেশি হলে সমস্যা হয়না কিন্তু হিটার থেকে ডিমের দুরুত্ব কম হলে ডিম নষ্ট হবার সম্ভবনা থাকে।

ডিমের ট্রে অথবা টার্নার ট্রলি স্থাপনঃ- হিটারের পাশে ৮”/ ১২”অথবা ১৫ইঞ্চি দুরে টার্নার ট্রে সেট করুন ট্রেটা সামনে পিছনে ঘোরার পরেও যেনো হিটারের দিক ছাড়া বাকি ৫ দিকে যেনো কমপক্ষে ৪” /৫”অথবা ৬ ইঞ্চি ফাঁকা থাকে সেদিক লক্ষ রাখা জরুরী।

ওভার ট্যম্পারেচার ফ্যন সেট করার স্থান নির্ণয়ঃ- অতিরিক্ত তাপ বের করে দেবার জন্য ইনকিউবেটরের ভিতর থেকে বাতাস বের করে দেবার জন্য একটা বা একাধিক ফ্যন ব্যবহার করা হয়।
ইনকিউবেটরের উপরের ছাঁদে অথবা পিছনের দেয়ালের উপরের দিকে অল্প একটু কেটে নিয়ে এই ফ্যন সেট করতে হয়, এবং ইনকিউবেটরের সাইডের দেয়ালে নিচের দিকে ড্রীল মেশিন দিয়ে কয়েক টা ফুটো করে দিতে হয়। যাতে ওভার ট্যম্পারেচার ফ্যন ভিতরের বাতাস বের করে দেবার সময় এই দিক দিয়ে বাহিরের বাতাস ঢুকতে পারে।

*সেন্সর স্থাপন করার স্থানঃ- ডিজিটাল ট্যম্পারেচার সেন্সর গুলো মূলত তাপ শক্তিকে বৈদুতিক সিগনালে রুপান্তরিত করে, এবং সেন্সর শুধুমাত্র তার কাছের তাপমাত্রাকেই শনাক্ত করার জন্য কাজ করে , তাই সেন্সরকে এমন স্থানে রাখতে হবে যেখান থেকে সেন্সর ইনকিউবেটরে অন্য দিকের তপমাত্রাকে শনাক্ত করতে পারে।
আমরা জানি ইনকিউবেটরের ভিতরে তাপমাত্রাকে দ্রুত ছড়ানোর জন্য সর্বদা বাতাস সাক্লুয়েশন করা হয়।
.
ফ্যন থেকে দুরে যেখানে বাতাসের প্রবাহ রয়েছে সেখানে সেন্সর সেট করলে সেন্সর চলমান বাতাসের তাপমাত্রা শনাক্ত করতে পারবে, এবং সেই তাপমাত্রা যুক্ত বাতাস ইনকিউবেটরের ভিতরে সর্বত্র ঘুর্ণায়ন হবার ফলে তাপমাত্রা খুব সহজেই সবস্থানে ছড়িয়ে পড়বে এবং সমান থাকবে ।

কিন্তু অধিকাংশ ইনকিউবেটরে সর্বদা এ্যয়ার সার্ক্লুয়েশন সিষ্টেম থাকেনা।
সেই সকল ইনকিউবেটরে সেন্সর স্থাপনের স্থান নির্ণয়ের জন্য ইনকিউবেটরের হিটার এবং ডিম থেকে দুরে সেন্সর সেট করতে হয়।
সেন্সর ইনকিউবেটরের মাঝখান থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে ডিম থেকে একটু দুরে রাখতে হয়।
.
ডিম থেকে সেন্সর দুরে রাখার মূল কারন হচ্ছে ডিমের ভিতরে ভ্রুন বড় হলে সেই ভ্রুনের শরীরের একটা নিজেস্ব তাপ তৈরি হয়, তাই ডিমের ভিতরে বাচ্চার শরীরের তাপ যেনো সেন্সরের কাছের তাপমাত্রাতে প্রভাব ফেলতে না পারে সেই কারনে সেন্সর ডিম থেকে একটু দুরে রাখতে হয়।
.
হিটারের ওয়ার্টের উপর ভিত্তকরে সেন্সর থেকে হিটারের দুরত্ব নির্ণয় করতে হয়।
হিটার যদি ইনকিউবেটরের সাইডের দেয়ালে লাগানো হয়, তাহলে হিটার থেকে বিপরীত পাশে দেয়ালের দুরত্ব মাপুন,
ধরুন দুরুত্ব ৩০ ইঞ্চি তাহলে বিপরিত পাশের দেয়াল থেকে ১০ইঞ্চি দুরে সেন্সর সেট করুন, অর্থাৎ হিটার থেকে বিপরিত পাশের দুরুত্বকে ৩দিয়ে ভাগ করুন, সেন্সর থেকে দুইতৃতীয় অংশ দুরে হিটার থাকবে, এবং সেন্সর থেকে এক তৃতীয় অংশ দুরে বিপরীত পাশের দেয়াল থাকবে।
(হিটারের ওয়ার্ট বেশি হলে ইনকিউবেটরের ভিতরে অবশ্যই বাতাসের প্রবাহ থাকতে হবে, তা নাহলে সেন্সের কাছে তাপ পৌঁছাতে পৌঁছাতে হিটারের কাছের ডিম সিদ্ধ হয়ে যাবে, এই জন্য একটা ফ্যন সর্বদা চালু রাখতে হয় যেটার হিটার বন্ধ হলেও তাপমাত্রা সমান ভাবে ছড়িয়ে রাখার জন্য কাজ করবে এই সার্ক্লুয়েশন ফ্যনটা হিটারের ফ্যন থেকে একটু উপরে সেট করতে হয়।)

*হিমিডিটিফায়ার স্থাপন করার স্থান নির্ণয়ঃ-
ইনকিউবেটরে আদ্রতা নিয়ন্ত্রন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়,
আদ্রতা তৈরির জন্য হিমিউডিটিফায়ার (ফগ) ব্যবহার করা হয় ইনকিউবেটরে।
হিমিউডিটিফায়ার লগানো সঠিক স্থান হচ্ছে সার্ক্লুয়েশন ফ্যনের কাছে এবং যতটা সম্ভব উপরের দিকে, কারন আদ্রতা বা জ্বলীয় বাস্প হচ্ছে ভারি বাতাস যেটা সবসময় নিচের দিকে আসতে চায়, তাই ফগ উপরে সেট করলে সেখান থেকে তৈরিকৃত আদ্রতা নিচের দিকে আসবে যার ফলে উপরে নিচে সমান আদ্রতা থাকবে।
তবে কোনো ইনকিউবেটরের নিচে যদি হ্যচার থাকে তাহলে ফগ নিচে ব্যবহার করা ভালো।
ইনকিউবেটরের বডির সাইজ এবং ধারনক্ষমতা পরিবর্তনের উপরে ভিত্তি করে, হিটার, সেন্সর, টার্নার, ওভার ট্যম্পরেচার ফ্যন, সার্ক্লুয়েশন ফ্যন, হিমিডিটিফায়ারের স্থানের মাপের পরিবর্তন হতে পারে তাই নিদৃষ্টকরে সঠিক মাপ উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি।
এই পোস্টটিতে সকল ডিজাইনের ইনকিউবেটর তৈরি উপর ধারনা দেবার চেষ্টা করেছি ।
এই পোস্টে চেষ্টা করেছি ইনকিউবেটরের যন্ত্রাংশ স্থাপন করার মৌলিক বিষয় গুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করতে।

 

 

Please follow and like us:

About admin

Check Also

ইনকিউবেটর চালানোর নিয়ম

ইনকিউবেটর চালানোর ব্যাপারে লক্ষণীয় বিষয়গুলো

ইনকিউবেটর বানানো অথবা কেনার পরে প্রধান কাজ হলো ইনকিউবেটর টি সঠিকভাবে চালানো। এটি চালানো সহজ, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »