গিরোলান্ডো” কাহিনীঃ-
ভারতবর্ষের গির ব্রাজিলে গিয়ে সঠিক পালন পদ্ধতি ও বিজ্ঞানসম্মত ব্রীডিং এর কারণে আরও উন্নত একটি জাতে পরিণত হয়। এই উন্নততর গিরের কারনেই হলস্টিনের সাথে গিরের ক্রসব্রীডিং এর ফলে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ট্রপিকাল হাইব্রীড ‘গিরোলান্ডো’ সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের গির ব্রাজিলের গির হয়ে উঠার কাহিনীটি এক ত্যাগ-তিতিক্ষা, উন্মাদনা আর বীরত্বগাথার ইতিহাস। যেকোন এ্যাডভেঞ্চার উপন্যাসের কাহিনীর চেয়েও এটি বেশী রোমাঞ্চকর।
ব্রাজিলে জেবু আগমনঃ-
১৫০০ সালে ব্রাজিল আবিষ্কৃত হয় এবং সেখানে কোন ধরনের গরু-মহিষ ছিল না। জেবু জাতের গরু মাত্র ১৪০ বছর আগে ব্রাজিলে আসে এবং বর্তমানে জেবু জাতের সবচেয়ে বড় ও উন্নত সংগ্রহ ব্রাজিলে। ব্রাজিলে লেমগ্রুবার (Lemgruber) সাহেব জেবুজাতের বন্য গরু বিদেশ ভ্রমণের সময় জার্মানীর হ্যামবার্গ চিড়িয়াখানায় দেখতে পান এবং দেশে ফিরে চিন্তা করতে থাকেন কিভাবে এই ধরণের গরু ব্রাজিলে আনা যায়। লেমগ্রুবার সাহেব তখন খুঁজে বের করেন জার্মানীর কার্ল হেগেনব্যাককে যিনি সার্কাস ও চিড়িয়াখানাতে পশুপাখি সরবরাহ করতেন। লেমগ্রুবারের অনুরোধে কার্ল হেগেনব্যাক ১৮৭৮ সালে জার্মানির হ্যামবার্গ চিড়িয়াখানা থেকে ‘পিরন’ নামের একটি নেলোর (অঙ্গোল) ষাড় ও দুটি গাই ব্রাজিলে পাঠান। এই তিনটি গরুই ব্রাজিলের সর্বপ্রথম গরু।
কার্ল হেগেনবার্গ তখন ব্রাজিলের এনিমেল ব্রীডারদের জেবু গরুর প্রতি উৎসাহিত করে তোলেন এবং ১৯০০ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু জেবু গরু ব্রাজিলে সরবরাহ করেন।
১৮৭৯ সালে ভারতে ব্রাজিলীয় রাজদূত ব্রাজিলের সম্রাটকে একটি ষাড় উপহার দেন যার নাম রাখা হয় ‘লন্ট্রা’। ব্রাজিলের ‘জোসে সিটানো বর্জেস’ সাহেব এই ‘লন্ট্রা’কে কিনে নেন।
১৮৯৮ থেকে ব্রাজিলের ব্রীডাররা সরাসরি ভারতবর্ষ থেকে জেবু গরু কেনা শুরু করেন। ১৮৯৮ সালে ‘টফিলো ডি গোডয়’ সাহেব আরাগুয়ারী অঞ্চল থেকে জেবু গরু সংগ্রহের নেশায় ২০ দিন ঘোড়া দৌড়ে পৌছেন ‘রিবেরাও প্রিটো’ শহরে। সেখান থেকে ট্রেনে করে চলে যান রাজধানী ‘রিও ডি জেনেরো’তে। দু’মাস বন্দরে পড়ে থেকে পেয়ে যান প্যারিসগামী জাহাজ। প্যারিস থেকে অন্য জাহাজে করে পৌছে যান স্বপ্নের ইন্ডিয়াতে। ১ বছর ইন্ডিয়া ঘুরে ফিরে যাবার সময় ১৫ টি জেবু সাথে করে নিয়ে যান। ১৯০৩ সালে তিনি আবার আসেন ৮ টি ষাড় নিতে।
১৯১৮ সালে ‘ফ্রান্সিকো জোসে ডি কারভালহো’, ‘জোয়া মার্টিনস বোর্জেস’, তার ভাই ‘ভির্মন্ডেস’ ও ‘অক্টিভিয়ানো’ ইন্ডিয়া থেকে অনেকগুলো জেবু গরু ব্রাজিলে নিয়ে যান। মার্টিনস অবশ্য ফিরে যেতে পারেনি। কলকাতাতেই তার জীবনাবসান ঘটে। এবার ব্রাজিলে শুরু হয় জেবু জাতের গরুর প্রচলন। প্রথমে এগুলো শুধু গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হত।
ব্রাজিলই সর্বপ্রথম দেশ যারা প্রমাণ করতে পেরেছিল যে ভারতবর্ষের জেবু গরু পৃথিবীর যেকোন আর্দ্র উষ্ণ জায়গায় ভালভাবে টিকে থাকে। ১৯৩০ সালে ‘ম্যানুয়েল ডি অলিভিয়েরা’ ও ‘রেভিসিও ল্যামোস’ ভারতে আসেন এবং অনেকগুলো জেবু গরু সংগ্রহ করে নিয়ে যান।
১৯৩৪ সালে সকল জেবু গরুর রেকর্ড সংরক্ষণের জন্য একটি সোসাইটি গঠন করা হয়।
এরপর ১৯৫২ সালে ‘ফ্যালিসবার্তো ডি ক্যামারগো’ পাকিস্তানে আসেন ও রেডসিন্ধি নিয়ে যান।
১৯৫২ এর পরে ব্রাজিল সরকার রোগবিস্তারের ভয়ে ভারতবর্ষ থেকে জেবু গরু আমদানি নিষিদ্ধ করে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ‘পাওলো রবার্তো’ তার মালিক ‘জ্যাকুইম বোর্জেস’ এর জন্য ১৯৫৬ সালে জেবু গরু সংগ্রহে ভারতে আসেন এবং বেশ কিছু গরু সংগ্রহ করেন। সরকার এই আমদানির খবর পেলে সবগুলো গরু হত্যা করবে- এটা তিনি জানতেন। তাই গরুগুলোকে বাঁচাতে তিনি প্রথমে প্যারাগুয়ে হয়ে বলিভিয়াতে পৌছান এবং সেখানে অপেক্ষা করতে থাকেন। ‘জ্যাকুইম বোর্জেস’ এবার তার নিজস্ব বিমানে করে চোরাই পথে ধাপে ধাপে গরুগুলোকে ব্রাজিলে নিয়ে যান। এর পর থেকে বিভিন্ন মেলায় ব্রীডাররা যেসব গরু বিক্রি করে দিতেন ট্রেডাররা তা কিনে সারা ব্রাজিলের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে দেন।
ধনাঢ্য ব্রীডার ‘সেলসো গার্সিয়া সিড’ (Celso Garsia Cid) ১৯৪০ সাল থেকেই জেবু গরু পালনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি ব্রীডগুলোর মধ্যে গিরকে সবচেয়ে পছন্দ করতেন এবং এর মধ্যে তিনি অবারিত সম্ভাবনা দেখতে পান। কিন্তু তখন ব্রাজিলে পিওর গিরের সংখ্যা খুব বেশী ছিল না। গিরগুলো বিভিন্ন জাতের সাথে মিশে গিয়েছিল। তাই তিনি নজর দেন ইন্ডিয়ার দিকে। তিনি ‘স্যান্টোস’ সাহেবকে এ ব্যাপারে ইন্ডিয়ায় পাঠান। স্যান্টোস সাহেব সমগ্র ভারত চষে ফেলেন ভাল গিরের সন্ধানে। খুজতে খুজতে গুজরাটের ভাবনগর মহারাজার গো-শালায় সবচেয়ে ভাল গিরের সন্ধান পান।
ভাবনগর স্টেট (Princely State of Bhavnagar):-
গুজরাটের সৌরাষ্ট্র অঞ্চল ও আশেপাশের গির জংগলই হল গির গরুর আদি বাসস্থান। সেখানকার তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। এই অধিক তাপমাত্রা সহ্য করার জন্য গিরের কপাল অনেক চওড়া ও উত্তল হয় যা অনেকটা রেডিয়েটরের মত কাজ করে। এদের তাপ-আর্দ্রতা সহ্য করা ও রোগব্যাধির প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই ভাল। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে গির গরু পালার চেয়ে মহিষ পালার দিকে ওই এলাকার মানুষ বেশি ঝুকে পড়ে। আর গির গরুগুলোকে ব্রাজিল থেকে আসা সওদাগরদের কাছে ভাল দামে বেচে দেওয়াটাকে নগদ লাভের উপায় হিসেবে বেছে নেয়। একই সাথে ইউরোপীয় ব্রীডের সাথে গিরের যথেচ্ছা ক্রস করানোর ফলে পিওর গিরের সংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে।
সৌরাষ্ট্রের ভাবনগর স্টেটের মহারাজা শ্রী কৃষ্ণকুমার সিংজী নিলামবাগ প্রাসাদ চত্বরে শুধুমাত্র বিশুদ্ধ গির রক্ষায় একটি গো-শালা প্রতিষ্ঠা করেন। এই রাজ গো-শালায় অবশিষ্ট পিওরব্রীড গীরগুলো সংগ্রহ করে পালনের ব্যবস্থা করা হয়।
‘সান্টোস’ সাহেব ‘সেলসো গার্সিয়া সিড’কে ভাবনগর মহারাজার গো-শালায় গিরের চমৎকার সংগ্রহের কথা জানালে তিনি আনন্দে আত্নহারা হয়ে পড়েন। একথা শুনে ভাবনগর মহারাজাও সিড সাহেবকে তার প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানান। সিড সাহেব তখন রোগ পর্যবেক্ষণের (Quarantine) শর্তে জেবু গরু আমদানির বিশেষ অনুমতি ব্রাজিল সরকারের কাছ থেকে আদায় করেন। মহারাজার আমন্ত্রনে সিড সাহেব ২১ নভেম্বর ১৯৫৮ সালে ভারতে আসেন। এ যেন দুই গিরপ্রেমীর এক মহামিলন মেলা। মহারাজা তাকে ‘কৃষ্ণ’ নামে যে বিশাল গীর ষাড়টি উপহার দিয়েছিলেন সেটিই আধুনিক ব্রাজিলিয়ান গিরের ফাউন্ডেশন সায়ার।
দুই বছর পর ১৯৬০ সালের জানুয়ারিতে সিড সাহেব ১১৯ টি গরু নিয়ে মাদ্রাস থেকে ‘কোরা’ জাহাজে ওঠেন। ৪৪ দিন সমুদ্র ভ্রমনের পর তিনি ‘ফ্রেঞ্চ গায়ানা’তে পৌছেন। ‘লা মেরে’ দ্বীপে গরুগুলো পাঁচ মাস পর্যবেক্ষণ করা হয় (Quarantine)। এর মধ্যে খাদ্যাভাবে ১৭ টি গরু মারা যায়। ফলে ৭০টি গির, ২০ টি নেলোর (অঙ্গোল), ১২ টি গুজরাটি ‘লা মেরে’ দ্বীপ থেকে ব্রাজিলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। অবশেষে প্যারাগুয়ের ‘কোবরা’ দ্বীপে আরও ৫ মাস পর্যবেক্ষণের পর ১৯৬০ সালের ক্রিসমাসের দিন গরুগুলো ব্রাজিলে সিড সাহেবের ‘কাচোরা’তে অবস্থিত ফার্মে পৌছায়।
১৯৬২ সালে সিড সাহেব আবার ভারতে আসেন ভাবনগর মহারাজার কাছে। মহারাজা তাকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং চমৎকার একটি গির ষাড় উপহার দেন যার নাম ‘পুষ্পানো’। বেশ কিছু গির সংগ্রহ করে ৬০ দিন পর্যবেক্ষণে (Quarantine) রাখার পর বোম্বে থেকে জাহাজে করে ‘ফার্নান্ডো ডি নরনহা’ দ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ১৯৬২ সালের নভেম্বরে ৪৬ দিন সমুদ্রভ্রমণের পর ৫৯ টি গীর, ২৯টি গুজরাটি, ১৬ টি মহিষ, ১৬ টি ভোজপুরী ছাগলসহ মোট ১২০ টি প্রাণী ব্রাজিলের ফার্নান্ডো দ্বীপে পৌছে। সেখানে ৮ মাস প্রাণীগুলোকে পর্যবেক্ষণে (Quarantine) রাখা হয়। ভেটেরিনারিয়ান ও সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ৮ মাসের পর্যবেক্ষণের পর ১৯৬৩ সালের জুলাইতে প্রাণীগুলো ব্রাজিলে প্রবেশ করে।
ব্রাজিলে আসার সময় সিড সাহেব ভাবনগর রাজবংশের সন্তান প্রদীপ রাউলকে নিয়ে আসেন তার ফার্ম দেখাশোনার জন্য। প্রদীপ রাউল ব্রাজিলে এসে বুঝতে পারেন সিড সাহেব তাকে কর্মচারী হিসেবে নয়- বরং নিজ সন্তানের মতই পরিবারে স্থান দিয়েছেন। প্রদীপ রাউল সেখানে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গরুপালন ও ব্রীডিং বিষয়ে হাতে কলমে জ্ঞানার্জন করেন। সেখানে এক বছর কাটানোর পর প্রদীপ রাউল মাতৃভূমি ও স্ত্রী-কন্যার টানে ১৯৬৪ সালে ভারতে ফিরে আসেন।
১৯৬৫ সালে মহারাজা শ্রী কৃষ্ণকুমার সিংজী দেহত্যাগ করেন। তার ছেলে বীরভদ্র সিংজী ১৯৬৫ সালে পর্তুগীজ ভাষায় লেখা একটি চিঠিতে সিড সাহেবকে জানান যে—
“তার পিতা দেহত্যাগ করেছেন এবং উনার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী রাজ গো-শালার পুরো গির সংগ্রহটি সিড সাহেবকে দান করেছেন।” কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞারর কারনে এই সংগ্রহটি কখনোই ব্রাজিলে পৌঁছায়নি।
শ্রী প্রদীপ সিংজী রাউল– একজন ব্যক্তি, একটি প্রতিষ্ঠানঃ-
১৯৬৪ সালে ব্রাজিল থেকে গির পালনের দীক্ষা নিয়ে ফিরে আসার পর প্রদীপ রাউল গরু ব্রিডিং শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে মহারাজা দেহত্যাগের পর রাজ গো-শালার গীর সংগ্রহটি ব্রাজিলে যায়নি। প্রদীপ রাউল একদিকে যেমন রাজবংশের সন্তান তেমনি সিড সাহেবের মানসপুত্র। অতএব প্রদীপ রাউল হয়ে গেলেন রাজপরিবার ও সিড পরিবারের অভীন্ন সন্তান (A son of two families). বীরভদ্র সিংজীর পৃষ্ঠপোষকতায় রাজ গো-শালার গির সংগ্রহটি চলে আসে প্রদীপ রাউলের নিজ গো-শালায়, যার নাম সাগোয়াদি গো-শালা। ১৯৬৫ সাল থেকে প্রদীপ রাউল বিজ্ঞানভিত্তিক গির ব্রিডিং করে আসছেন। ভারতে একমাত্র তার গো-শালাতেই পিউর পেডিগ্রি গির রয়েছে। বাধা বিপত্তি এসেছে অনেক। টাকার অভাবে অনেক গির তিনি পালতে না পেরে দান করে দিয়েছেন। তবে দান করার আগে তিনি এটা নিশ্চিত হয়ে নিয়েছেন যারা নিচ্ছে তারা যেন এর সঠিক যত্ন নেয় আর জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষা করে। বেশিরভাগ দান করা গিরগুলো তিনি দিয়েছেন মন্দির আর দরবারে। বর্তমানে ভারতে পিওর গির আছে প্রায় ৩০০০, আর ব্রাজিলে আছে ৫০ লক্ষ।
১৯৯৯ সালে ব্রাজিলিয়ান এসোসিয়েশন অব জেবু ক্যাটেল ব্রীডার (ABCZ) প্রদীপ রাউলকে ‘বেস্ট ক্যাটেল ব্রিডার’ সম্মানে ভূষিত করে। ভারত সরকারও তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বিশুদ্ধ গিরের ফ্রোজেন এমব্রায়ো রপ্তানী করার অনুমতি দিয়েছে। সারা ভারতে শুধুমাত্র তারই এ অনুমতি রয়েছে। এপর্যন্ত তিনি শুধুমাত্র ABCZ কে এই এমব্রায়ো দিয়েছেন- অন্য কাউকে নয়। ব্রাজিলের গিরগুলো যেহেতু সীমিত সংখ্যক ইন্ডিয়ান গির থেকে এসেছে তাই এদের মধ্যে ইনব্রীডিং কো-ইফিসিয়েন্ট নিয়ন্ত্রিত রাখতে নিয়মিত ইন্ডিয়ান গিরের এমব্রায়ো দরকার হয়।
ভারত, ব্রাজিল ও সারা বিশ্বের জন্য বিশুদ্ধ গিরের উন্নয়নে তিনি আজও কাজ করে যাচ্ছেন। এই জীবন্ত কিংবদন্তী প্রবাদ পুরুষের বর্তমান বয়স ৮০ বছর।
১৯৬৫ সালের পর থেকে সারা ব্রাজিলে অসংখ্য ব্রীডার সিড সাহেবের পদাঙ্ক অনুসরণ করে গির কে ভালবেসেছেন, বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্রীডিং করে এর উন্নয়ন করেছেন। আজকে ব্রাজিলের গির ইন্ডিয়ান গিরের চেয়ে অনেক বেশী দুধ দেয়। গড় দুধ ১৮-২০ লিঃ। সর্বোচ্চ রেকর্ডধারী গির গাভী হল ‘বন্দিরা’ (৮৫.১৬ লিঃ দৈনিক) ও শেরা (৬২.৩ লিঃ দৈনিক)। সারা বিশ্বে গির রপ্তানী করে ব্রাজিল প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। অনেক ট্রপিকাল বা গরমের দেশে গিরের সাথে হলস্টিন, জার্সির ক্রস করা হচ্ছে।
গরুকে ভারতীয়রা দেবতা মনে করলেও গির গরুকে প্রকৃত ভালবাসা ও সম্মান দিয়েছে ব্রাজিলিয়ানরা। ব্রাজিলে মহারাজা কৃষ্ণকুমার সিংজীর স্ট্যাচু আছে। তারা তাদের একটি ধাতব মুদ্রায় গীরের মাথার ছবি অংকিত করেছে। অসংখ্য রাস্তা আছে গিরের নামে। গিরের অস্থিত্ব রক্ষা এবং একে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জেবু জাতে পরিণত করতে মহারাজা কৃষ্ণকুমার সিংজী, প্রদীপ সিংজী রাউল ও সেলসো গার্সিয়া সিড- এই তিনটি নাম পৃথিবীর গো-সম্পদের ইতিহাসে স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে।
তাদের এই ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংগ্রামের কারনেই পৃথিবীবাসি পেয়েছে উন্নত গির যার সাথে হলস্টিনের ক্রসের ফলে তৈরী হয়েছে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ট্রপিকাল ক্রসব্রীড “গিরোলান্ডো”।
Khalid K Robin( আমরা ডেইরী ফারমারস )গ্রূপ
###
বুলটির নাম Troy (ট্রয়)
জাতঃ ৫০% গির-হলস্টিন (গিরোলান্ডো)
Troy এর মা (Dam) পিউর গির যার দুধের পরিমাণ ল্যাকেশন প্রতি ৫৮০০ লিটার (৩০৫ দিনে) ।
অর্থাৎ দৈনিক সর্বোচ্চ দুধের পরিমাণ ৩৩.২৬ লিটার। (দৈনিক গড়ের ১.৭৫ গুনকে সর্বোচ্চ দুধ ধরা হয়েছে)
Troy এর বাবা (Sire) পিউর হলস্টিন, নাম Snap Shot। দাদীর (Sire’s Dam) নাম GG Patron Satin যার দুধের রেকর্ড ল্যাকেশন প্রতি ১৮৮৫০ লিটার। অর্থাৎ দৈনিক সর্বোচ্চ দুধের পরিমাণ ১০৮.১৫ লিটার।
বুঝতেই পারছেন যার মা জেবু হয়েও ৩৩ লিটার দুধ দিয়েছে আর দাদী দিয়েছে ১০৮ লিটার তার কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করাটা অন্যায় নয়।
(এই যে মায়ের আর দাদীর দুধের পরিমানটা অন্তত জানানো আর কে কোন জাত এটা বলা- এটা একেবারে বেসিক পেডিগ্রি ইনফরমেশন। এটুকু জানতেই হবে।)
কেবল মা আর দাদীর দুধ ভাল – এটি দেখেই কিন্তু একে বাজারে ছেড়ে দেয়া হয় নি।
জেনমিক্স টেস্টিং থেকে এর গুনাগুন প্রেডিক্ট করে তবেই একে বাজারে ছাড়া হয়েছে।
যেমন- এর কন্যাদের দুধ হতে পারে ১২৩২৫ লিটার (USA এর জেনমিক্স ইনফরমেশন অনুযায়ী), দুধের ফ্যাট ৬.২%, প্রোটিন ৩.০৭%, A2 দুধ ইত্যাদি।
ভারতে এর প্রজেনী টেস্টিং চলছে। ABS India র দেয়া তথ্য অনুযায়ী এই বুলের কন্যাদের ১ম ল্যাক্টেশনে (বিয়ানে) দুধ পাওয়া গেছে প্রায় ৫০০০ লিটার। অর্থাৎ গড়ে দৈনিক সর্বোচ্চ ২৮.৬৮ লিটার।
২য় বিয়ানের পুরো তথ্য এখনো আসে নি। ৩য় বিয়ানে গিয়ে সবচেয়ে বেশী দুধ পাওয়া যায় এটা আমরা সবাই জানি।
বুলটির মালিক ভারতের মহারাষ্ট্রের চিতাল ডেইরী। সিমেন বাজারজাত করে ABS India.
সূত্র কপি খালিদ রবিন