ইনকিউবেটর ডিম ফুটাতে একটা কাজ আমরা প্রায়ই করে থাকি, সেটা হচ্ছে ডিম ভেঙ্গে বাচ্চা বের করে দিই।
কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা ঠিক কখন কি পরিস্থিতিতে ডিম টা ভেঙ্গে ডিমের ভিতর থেকে বাচ্চা বের করতে হয়,
সেই বিষয়টা সম্পর্কেই আজকে জানবো।
ডিম ভেঙ্গে বাচ্চা বের করে দেবার সিদ্ধান্তটা সর্বশেষে নিতে হবে এর আগে প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে হবে যাতে বাচ্চা নিজেই ডিমে ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে,
কারন ডিম ভেঙ্গে দিলে বাচ্চা মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
ইনকিউবেটরে স্বাভাবিক ভাবে বাচ্চা নিজেই ডিম ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে, কিন্তু ইনকিউবেটর চালানোর সময় ছোট ছোট কিছু ভুলের কারনে ডিমের ভিতরে বাচ্চা জীবিত অবস্থায়ও আটকে যেতে পারে।
*যে সকল কারনে ডিমের ভিতরে বাচ্চা আটকে যায়।
* ইনকিউবেটরে ডিম হেচিংএর সময় যদি আদ্রতা কম থাকে, তাহলে বাচ্চার শরীরে পিচ্ছিল পদার্থ শুকিয়ে গিয়ে বাচ্চার শরীরের পালক ডিমের সাথে আটকে যায় এর ফলে ভিতর থেকে বাচ্চা বের হতে পারেনা।
*এই সমস্যা সমাধান করার উপায়*
স্বাভাবিক ভাবে হেচিংএর সময় আদ্রতা ৭৫%থেকে ৮৫%পর্যন্ত রাখা ভালো,এর ফলে ডিমের ভিতরে
বাচ্চার শরীর ভিজে থাকবে এবং ডিম থেকে অনায়াসে বাচ্চা বেরিয়ে আসবে।
আর্দ্রতা বেশি রাখাটা যদি কঠিন হয়ে পড়ে তাহলে ইনকিউবেটরের ভিতরে হালকা গরম পানি স্প্রে করতে হবে,
অথবা ভিজা কাপড় দিয়ে ডিম মুছে দিতে হবে এতে ডিমের কাছে ১০০% আর্দ্রতা থাকবে এবং বাচ্চা আটকে যাবার সম্ভবনা কমবে।
ডিমের ভিতরে জীবিত বাচ্চা আটকে যাবার আরো একটি কারন হচ্ছে বাচ্চার ঠোঁট যদি সঠিক স্থানে না থাকে,
এবং ডিমের যে স্থানে কুসুম থাকে সেই স্থানে যদি বাচ্চা ডিম ফুটো করে তাহলে কুসুমের আঠালো পদার্থ বেরিয়ে এসে বাচ্চার ঠোট এবং পুরু শরীর আটকে যায়,
এতে ডিমে ভিতর থেকে আর সহজ বাচ্চাটি বের হতে পারেনা।
বাচ্চার ঠোঁট আটকে গেলে সেই সমস্যা সমাধানের কার্যকরী তেমন কোনো উপায় না থাকলেও একটু সতর্ক থাকলে সমস্যাটি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
এই সমস্যটা সাধারনত তখন হবে যখন ডিম হেচিংএর সময় হবার পরেও যদি ডিম ঘুরানো হয়, অথবা প্রথম থেকে সঠিক কোনো ডিম না ঘুরালেও এটা হতে পারে।
তাই হেচিংএর সময় বা ডিম ফুটার তিন দিন আগে অবশ্যই ডিম ঘুরানো বন্ধ করতে হবে।
এবং হেচিংএর সময় আদ্রতা বাড়িয়ে ডিম গুলো হেচার ট্রেতে শুয়ায়ে রাখতে হবে।
শীতের সিজনে এই ধরনের সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে, কারন শীতকালে বাহিরে আর্দ্রতা কম থাকার ফলে হেচিংএর সময় বাচ্চার শরীর ডিমের সাথে আটকে গিয়ে ডিমের ভিতর বাচ্চার শরীর আটকে যায়।
স্বাভাবিক ভাবেই ডিম যতদিনে ফুটে ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এবং ইনকিউবেটরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন এবং ডিমে অক্সিজেন প্রবাহের ব্যবস্থা রাখতে এভাবে নিদৃষ্ট দিন অতিক্রম হবার পরেও যদি বাচ্চা ফুটে বের না হয় তখন হাত দিয়ে ডিম ভেঙ্গে বাচ্চা বের করে দিতে হবে।
অনেকেই ধৈর্য্যহারা হয়ে একটি ভুল বার বার করে বসেন সেটা হচ্ছে নিদৃষ্ট দিন পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই ডিম ভেঙ্গে দিয়ে নিজেই হাত দিয়ে ডিম থেকে বাচ্চা বের করে দেন এতে রক্তক্ষরন হয় এবং বাচ্চা দুর্বল হয় এবং পরবর্তীতে সেই বাচ্চা পুঙ্গ হয়, এতে সেই বাচ্চার বেঁচে থাকার সম্ভবনা খুব কম থাকে,
তাই হাত দিয়ে ডিম ভেঙ্গে বাচ্চা বের করে দেবার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে,
এবং সঠিক নিয়ম মেন এই কাজ করলে সমস্যা কিছুটা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
*হাত দিয়ে ডিম ভেঙ্গে বাচ্চা বের করে দেয়ার নিয়ম।
* সাধারণত সঠিক তাপমাত্রায় ডিম ফুটার জন্য একটা নিদৃষ্ট সময় রয়েছে, যেমন মুরগীর ডিম ২১দিন ফুটে, নিদৃষ্ট দিন পরে স্বাভাবিক ভাবে বাচ্চা নিজেই ডিম ভেঙ্গে বেরিয়ে আসবে,
কিন্তু তাপমাত্রা যদি কম থাকে তাহলে আরো দুই দিন বেশি লাগতে পারে অর্থাৎ মুরগীর ডিম হাত দিয়ে ভেঙ্গে বাচ্চা বের করার সঠিক সময় ২৩দিন,
টার্কি অথবা হাঁসের ডিমের ক্ষেত্রে ৩০দিন, ৩০তম দিনে ডিম ভেঙ্গ বাচ্চা বের করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ডিম ভেঙ্গে দেবার ১৫ মিনিট আগে হালকা ভিজা কাপড় দিয়ে ডিম টি মুছে দিয়ে ইনকিউবেটরের ভিতর ডিমটি ১৫মিনিট রাখার পরে ডিমে যদি বাচ্চা ফুটো করে তাহলে সেখান থেকে গোল করে ডিম টি আস্তে আস্তে ডিমে ভেঙ্গে দিন,
তবে ডিম ফুটো না করে তাহলে ডিমেরর ফাঁকা স্থান আগে ভেঙ্গে বাচ্চা ঠোট যেখানে রয়েছে সেখানে ভেঙ্গে বাচ্চার মাথাটা আলগা করে দিবেন, এবং ধীরে ধীরে পুরো ডিমের খোসা ভেঙ্গে বাচ্চাটাকে ইনকিউবেটরের ভিতরে ৮০%আদ্রতা এবং ৩৭.৩-৩৭.৫ডিঃ সেঃ তাপে রেখে দিন এতে কিছু সময়ের মধ্যে বাচ্চা শরীরের পালক গুলো নরম হবে।
একটি বিষয় মনে রাখবেন যখন দেখবেন ডিম ভাংতে গিয়ে রক্ত বের হয়েছে তখন বুঝবেন ডিম ভাঙ্গার সময় হবার আগেই ভেঙ্গে দিয়েছে অর্থাৎ ভুল করেছেন, ডিম ফুটার সময় বাচ্চার রক্ত ক্ষরণ হলে সেই বাচ্চার সুস্থ হবার সম্ভবনা খুবই কম থাকবে।
সেই কারনে ডিম ভেঙ্গে বাচ্চা বের করে দেবার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
লেখকঃআব্দুল ওহাব(০১৭৪৬৬০৯২২০)