খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় । বিষয়টা হচ্ছে গাভীর প্রজননতন্ত্র এবং প্রজননতন্ত্রের হরমোন। টপিকসটি খামারী বা কৃত্রিম প্রজনন কর্মী বা যারা ভবিষ্যতে নিজে নিজেই কৃত্রিম প্রজনন করতে চায় তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারন গাভীর প্রজননতন্ত্র বিষয়ে স্বচ্ছ ধারনা না থাকলে কৃত্রিম প্রজননে সফলতা অর্জন করা যাবেনা। । এই আলোচনার সময় সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় চলে আসব যা নিয়ে অল্প কথায় ব্যাখা দেবো।
গাভী এবং ষাঁড়ের প্রজনন তন্ত্র নিয়ে অনেক এ আই টেকনিশিয়ানদেরও স্পষ্ট ধারনা নেই। দূর্ভাগ্যের বিষয় অনেক এ আই কর্মীদের প্রজননতন্ত্র সম্পর্কে ধারনা শুধু জরায়ু আর সার্ভিক্স এর মাঝে সীমাবদ্ধ। খুবই অস্পষ্ট ধারনা নিয়ে তারা খামারীদের গাভীতে প্রজনন করায়! এমনকি স্বেচ্চাসেবী টেকনিশিয়ানদের ক্লাস নেয়ার সময়ও প্রজননতন্ত্রের খুটিনাটি শেখার চেয়ে চিকিৎসা শিখতে গ্রহ বেশি দেখা যায়।
গাভীর প্রজনন তন্ত্র বা রিপ্রোডাকটিভ সিস্টেমকে ৬ টি ভাগে ভাগ করা যায়
১)ডিম্বাশয় বা ওভারি
২) ডিম্বনালী বা ফ্যালোপিয়ান টিউবস বা ওভিডাক্ট
৩) জরায়ু বা ইউটেরাস
৪) জরায়ু মুখ বা সার্ভিক্স
৫) যোনী বা ভ্যাজাইনা
৬) যোনীদ্বার বা ভালভা
১) ডিম্বাশয় বা ওভারীঃ
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রজনন অঙ্গ। গাভীতে এক জোড়া ডিম্বাশয় থাকে। ডিম্বাশয়ের প্রধান কাজ হচ্ছে ডিম্বানু বা ওভাম তৈরি করা এবং গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসৃত করা। ডিম্বাশয় থেকে নিচের হরমোনগুলি নিঃসৃত হয়ঃ
ক) #ইস্ট্রোজেনঃ
প্রজননের সহায়তাকারী প্রধান হরমোন। এই হরমোন নিঃসৃত হলেই বুঝা যায় গাভী সাবালিকা (!)/প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে। এই হরমোনের বৃদ্ধির ফলে ওভারিয়ান ফলিকলগুলো পরিপক্ক ( Mature) হয়ে ডিম্বানুতে (Ovum) এ পরিণত হয়। এই ডিম্বানু যখন ফ্যালোপিয়ান টিউবে পড়ে তখন তাকে বলা হয় ওভুলেশন। ওভুলেশনের পর ইস্ট্রোজেন লেভেল আবার কমে যায়। অর্থাৎ এই হরমোনেরর কারনেই গাভী হীটে আসে, সার্ভিক্স বা জরায়ুমুখে মিউকাস নিঃসরণ হয় ফলে সিমেন পরিবহনে সুবিধা হয়, তাছাড়া জরায়ু সেন্সিটিভভ হয়ে ফার্টিলাইজেনশনের উপযোগী হয়। এমনকি এই হরমোনের কারনে গাভীর ওজন এবং দৈহিক বৃদ্ধিও বাড়ে।
এই ইস্ট্রোজেন হরমোন জন্মনিয়ন্ত্রন কাজে ব্যবহৃত হয়। ইমার্জেন্সী কন্ট্রাসেপটিপ পিলে এই ইস্ট্রোজেন ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে লজ্জাবতী নামে যে ঘাস দেখা যায় সেটাতে এই হরমোন থাকে। কোন প্রেগন্যান্ট গাভী এই ঘাসটা খেলে তার অকাল গর্ভপাত ঘটতে পারে।
প্রশ্নঃ তাহলে গাভী হিটে না আসলেই কি বুঝে নেব এই হরমোন দায়ী?
উত্তরঃ প্রতিটি গাভী প্রাপ্তবয়স্ক হলেই হিটে আসে। হিটে না আসলে শুধু হরমোনকে দ্বায়ী করা যাবে না। হিটে আসার জন্য কয়েকটা বিষয় খেয়াল রাখা দরকারঃ
প্রথমত, গাভীর বয়স। এইখানে জেনেটিক্স এর ব্যাপার আছে। পিউর ফ্রিজিয়ান প্রথম হিটে আসে ১২ মাসে, পিউর শাহীওয়াল হিটে আসে ২৪ মাসে, আর দেশি হিটে আসে ২৪-৩৬ মাসে। আবার ফ্রিজিয়ান ক্রস দেশি গাভী প্রথম হিটে আসে ১৪ থেকে ১৮ মাসে। এমনকি ১২ মাসেও হিটে আসে । আবার ফ্রিজিয়ান ক্রস শাহীওয়াল গাভী প্রথম হিটে আসে ২৪ মাসে। শাহীওয়াল দেশীও ২৪ মাস বা তার চেয়ে বেশী সময় লাগে। এইখানে শাহীওয়ালের জিনটা ডমিন্যান্ট তাই পিউর শাহীওয়ালের মতই দেরিতে হিটে আসে গাভী। সুতরাং খামারীকে এসব ক্রসব্রিডের প্রথম হীটে আসার সঠিক সময় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকতে হবে।
দ্বিতীয়ত, গাভীর প্রজননতন্ত্রে যদি ঠিকমত ম্যাচুইরিটি না আসে বা অপুষ্টির অভাবে ঠিকমত বাড়তে না পারে তাহলেও গাভী দেরিতে হিটে আসতে পারে। কারন প্রজননতন্ত্র সঠিক বৃদ্ধি না হলে এটা কাজ শুরু করবেনা। তাই খামারীদের উচিত গাভীর জাত দেখে তার হীটে আসার কয়েকমাস আগে থেকেই পুষ্টিকর খাবার এবং ভিটামিন সরবরাহ করা।
তৃতীয়ত, গাভীর প্রজনন তন্ত্রে কোন রোগ বা অস্বাভাবিকতা থাকলেও গাভী হিটে আসবে না।
এবং চতুর্থত, উপরের সব কিছু যদি ঠিক থাকে তাহলে বুঝতে হবে গাভীর ডিম্বাশয় থেকে প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসৃত হচ্ছে না। ফলে গাভী হিটে আসছে না।
খামারীদের এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। হীটে না আসলে অনেকেই ভেট বা এআই কর্মী ডেকে একগাদা এন্টিবায়োটিক, ভিটামিন, হরমোন ইঞ্জেকশন দিয়ে দেয়। অথচ একটু সচেতন থাকলে এইগুলো সহজেই এড়ানো যায়।
প্রশ্নঃ গাভী প্রথমবার হিটে আসলেই কি আমরা প্রজনন করাবো?
উত্তরঃ না! আমাদের উচিত একটা বা দুইটা হিট মিস দিয়ে ৩য় হিটে প্রজনন করা। কারন প্রজনন তন্ত্রের পরিপক্ক বা ম্যচুইরিটি বলে একটা কথা আছে। যেমন, ফল পাকার উদাহরনটাই দেই। একটা ফল তো একেবারেই পরিপক্ক হয়ে যায় না, অল্প অল্প করে পেকে অতঃপর পূর্ণাংগ পরিপক্ক হয়। তেমনি প্রথম হিটে আসাই মানে এটি প্রজননের জন্য প্রস্তুত বলা যায়না। ফুল ফাংশনাল প্রজননতন্ত্রের জন্য একে আরেকটু সময় দিতে হয়। কারন প্রথম হীটেই যদি প্রজনন করা হয় এবং এতে সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ভবিষ্যতে প্রজননেও আরো বেশী সমস্যা দেখা দিবে।
খ) #প্রোজেস্টেরনঃ
আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন। একে প্রেগন্যান্সি হরমোন বলা হয়। গাভীর প্রেগন্যান্সির ২৭০ দিন এই হরমোনটা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। যেমন,
– জরায়ুর লাইনিং তৈরি করে যাতে ভ্রূনটা ঠিকমত প্রতিস্থাপিত হতে পারে।
– ম্যামারি গ্লান্ড বা দুগ্ধ গ্রন্থি ডেভেলপ করে
– গাভীর হিটে আসা বন্ধ করে,
– জরায়ুর নড়াচাড়া বন্ধ করে ।
এই হরমোন তৈরি হয় ওভারির করপাস লুটিয়ামে। ডিম্বানু যখন ওভারি থেকে বের হয়ে ফ্যালোপিয়ান টিউবে পড়ে তখন সেই ডিম্বানুর খোসাকে বলা হয় করপাস লুটিয়াম (Corpus Luteum) । ওভুলেশন বা ডিম্বক্ষরণের পরে ডিম্বানুটা যদি্ স্পার্ম দ্বারা নিষিক্ত বা ফার্টিলাইজড হয় তাহলে করপাস লুটিয়াম থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন তৈরি হয় । আর যদি ওভাম নিষিক্ত না হয় তবে ইস্ট্রোজেন হরমোন করপাস লুটিয়ামকে ধ্বংস করে ফেলে।ফলে গাভী পুনরায় হিটে আসে।
নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, এটা রিলাক্স বা শিথিল করে। এটা বাচ্চা জন্মের সময় সার্ভিক্স আর ভ্যাজাইনাকে প্রসারিত (ডায়ালেট) বাচ্চা বেরোতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় যদি জরায়ুর কন্ট্রাকশন বেড়ে এবরশন হওয়া শুরু হয় তখন রিলাক্সিন হরমোন দিয়ে কন্ট্রাকশন বন্ধ করা হয়।
ঘ) #অক্সিটোসিনঃ
রিলাক্সিন হরমোনের বিপরীত কাজ করে এটি। এটি মস্তিস্কের হাইপোথ্যালামাস এবং ওভারি, দুই জায়গাতেই তৈরি হয়। অক্সিটোসিন জরায়ুর কন্ট্রাকশন (সংকোচন) বাড়িয়ে স্পার্মকে ফ্যালোপিয়ান টিউবে যেতে সাহায্য করে থাকে এবং বাচ্চা প্রসবে সহায়তা করে। এমনকি বাচ্চা প্রসব হবার পরে যদি গর্ভফুল (প্লাসেন্টা) না পড়ে তাহলে এই অক্সিটোসিন হরমোন ইঞ্জেকশন দিয়ে কন্ট্রাকশন বাড়িয়ে প্লাসেন্টা বের করা হয়। গাভীর দুধ দোহনেও এই হরমোনের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
এই হরমোনগুলো ছাড়াও FSH হরমোন ওভারিয়ান ফলিকলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং LH হরমোন ডিম্বানু রিলিজ করে ওভুলেশনে সহায়তা করে।
২) ডিম্বনালী বা ফ্যালোপিয়ান টিউবস:
এটা একটা লম্বা নালী যেখানে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বানু পতিত হয় এবং শুক্রানু দ্বারা ডিম্বানু নিষিক্ত হয়। ফ্যালোপিয়ান টিউববের কয়েকটা পার্ট আছে যেমন, ফানেল এর মত দেখতে ইনফান্ডিবুলাম যা ওভারি থেকে ডিম্বানু গ্রহন করে, এম্পুলা এবং ইসথমাস (Isthmus) । ইসথমাস এর পরের পার্ট হচ্ছে জরায়ু। জরায়ু এবং ইসথমাসের সংযোগস্থলকে Utero-tubal Junction (UTJ) বা ইউটেরো টিউবাল জাংশন বলে। গাভী হিটে আসলে যে সীমেন দেয়া হয় তা এই জাংশনে এসে অপেক্ষা করে ডিম্বানুর জন্য। ডিম্বানু ক্ষরন হলে তা ইনফান্ডিবুলাম হয়ে এম্পুলাতে আসে, শুক্রানুগুলোও এম্পুলাতে যায় এবং ডিম্বানুর সাথে নিষিক্ত হয়ে জাইগোটে পরিণত হয়। অর্থাৎ এম্পুলাই হচ্ছে সাইট অফ ফার্টিলাইজেশন। ৩ থেকে ৪ দিনের মাঝে এই জাইগোট জরায়ুতে চলে আসে। ১০-১২ দিনের মাঝে জাইগোট ভ্রুন বা এমব্রায়োতে পরিণত হয় এবং জরায়ুর হর্ণ অফ দ্যা ইউটেরাসের অস্থায়ীভাবে প্রতিস্থাপিত হয়।
ডেইরি জেনেটিক্সঃ পর্ব ২
প্রশ্নঃ গাভী হীটে আসলে কৃত্রিম প্রজননের উপযুক্ত সময় কখন?
উত্তরঃ মূলত গাভীর হিট বা Estrus গড়ে ৩৬ ঘন্টা স্থায়ী হয়। ডিম্বক্ষরন হয় ২৬ থেকে ৩২ ঘন্টার মাঝে। এই সময়ের মাঝেই কৃত্রিম প্রজনন করালে গাভী গর্ভধারন করে থাকে। তবে কৃত্রিম প্রজননের সবচেয়ে ভাল সময় হচ্ছে হীটের লাস্ট পার্টে অর্থাৎ শেষের দিকে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে হট ক্লাইমেট বা উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলের গাভীগুলোতে হীটের স্তায়িত্ব কম, আর আমাদের টেম্পারেট (নাতিশীতোষ্ণ) ক্লাইমেটে হীটের স্বায়িত্ব বেশি। তাই সায়েন্টিস্টরা হীটে আসার ১২ থেকে ১৮ ঘন্টার মাঝে প্রজনন করাতে বলেন। আমাদের এ আই কর্মীরা খামারীদের বলে থাকেন যে সকালে হিটে আসলে বিকালে প্রজনন করাবেন এবং বিকালে হিটে আসলে সকালে প্রজনন করাবেন। মোট কথা গর্ভধারনের সম্ভাবনা বেশি থাকে হিটে আসার বারো ঘন্টা পরে কৃত্রিম প্রজনন করালে।
গাভীর প্রজনন তন্ত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জরায়ুর দুটি অংশ , যথাঃ
ক) হর্ণ অফ দ্যা ইউটেরাস বা জরায়ু শিংঃ গরুর শিং এর মত দেখতে বলে একে এরুপ নামকরন করা হয়েছে।
খ) বডি অফ দ্যা ইউটেরাস অথবা জরায়ুর দেহঃ মূলত ফিটাস বা বাচ্চাটা এইখানেই ২৭০ দিন বড় হয়।
ক) প্রথম কাজ হচ্ছে বাচ্চা বা ফিটাস কে ধরে রাখা। ফিটাসের জন্য উপযোগী পরিবেশ বজায় রাখা। করপাস লুটিয়াম থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন জরায়ুকে বাচ্চার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করে। প্রোজেস্টেরনের প্রভাবে জরায়ু ভ্রুণের পুষ্টির জন্য “জরায়ু দুধ” নামে একটা উপাদান তৈরি করে। এছাড়া মেটিং এর সময় জরায়ু কন্ট্রাকশন এর ফলে শুক্রাণুগুলোকে ডিম্বনালীতে পৌছতে সহায়তা করে।
খ) বাচ্চা হবার সময় জরায়ু কন্ট্রাকশন অর্থাৎ জরায়ু মাসল কাপাকাপির ফলে বাচ্চা সহজে প্রসব হয়।
একটা গাভীর জেনেটিক মেরিট তার ডিম্বানুতে থাকে । কিন্তু যেসব গাভীর জেনেটিক মেরিট খারাপ কিন্তু জরায়ুর পারফর্মেন্স ভাল হয় যেমন গাভী বছর বছর বাচ্চা দেয়, বাচ্চা প্রসবে কোন সমস্যা হয়না, তাদের ভ্রুণ স্থানান্তর কাজে পালক মা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এইসব গাভীকে ফস্টার প্যারেন্ট বলা হয়। আর যে গাভীর ডিম্বানু নেয়া হবে তাকে বায়োলজিক্যাল প্যারেন্ট বলা হয়।
খ) আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে হরমোন নিঃসৃত করা। জরায়ু থেকে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়। যদি ডিম্বানুকে কোন শুক্রানু নিষিক্ত করতে না পারে তাহলে প্রোস্টাগ্লান্ডিন হরমোন ওভারির করপাস লুটিয়াম ধ্বংস করে দেয়। ফলে গাভী পুনরায় হিটে আসে।
এইখানে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখা দরকার যে, বাচ্চা হবার পরে অনেক গাভী পুনরায় হিটে আসেনা। এর একটা কারন হচ্ছে যে ওভারির করপাস লুটিয়াম । করপাস লুটিয়াম ধ্বংস না হওয়া এটি স্বল্প পরিমান প্রোজেস্টেরন নিঃসরন করে, ফলে গাভী হিটে আসেনা। তাই গাভীকে এই সময় প্রোস্টাগ্ল্যানডিন হরমোন দিলে করপাস লুটিয়াম ধ্বংস হয়ে যায় এবং গাভী হিটে আসে।
প্রশ্নঃ বাচ্চা হবার কতদিন পর গাভীতে বীজ দিব?
উত্তরঃ বাচ্চা প্রসবের সময় গাভীর জরায়ুর আকার আয়তন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুন থাকে। কারন জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম বা মায়োমেট্রিয়ামে সেলের পরিমাণ বেশি থাকে। এইগুলো হ্রাস পেয়ে জরায়ুর স্বাভাবিক সাইজে ফেরত যেতে সময় লাগে। গাভীর ক্ষেত্রে প্রায় ২-৩ মাস সময় লাগে জরায়ুর স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে যেতে। তাই এইময় গাভী হিটে আসলে গাভীকে বীজ না দেয়া উচিত। মিনিমাম ২ টা হিট মিস করা উচিত। নাইলে জরায়ুর অস্বাভাবিক অবস্থায় বীজ দিয়ে গাভীকে গর্ভবতী করলে বাচ্চা এবং মা দুইজনেরই ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
৪) #জরায়ুমুখ_বা_সার্ভিক্স (Cervix)
সার্ভিক্সের একটি কাজ হচ্ছে স্পার্ম বা শুক্রাণু পরিবহনে সহায়তা করা। এ আই কর্মীরে মূলত সার্ভিক্সেই সিমেন ডিপোজিট করে। সার্ভিক্সকে আমরা সুরক্ষা দেয়াল বলতে পারি। কারন এই জায়গাতেই বেশির ভাগ দুর্বল শুক্রানূ মারা পরে, ফলে সবল শক্তিশালী শুক্রাণুগুলোই নিষিক্ত হবার সুযোগ পায়। বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী জীবানুও এই জায়গাতে এসে বাধা পায়।
প্রেগন্যান্সির সময় প্রোজেস্টেরনের প্রভাবে সার্ভিক্স বা জরায়ু মুখে মোটা মিউকাস প্লাগ তৈরি করে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখে যা জরায়ুতে ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাস প্রবেশে বাধা দেয় এবং জরায়ু ইনফেকশন রোধ করে ।
আর বাচ্চা হবার সময় এই সার্ভিক্স খুলে যায় এবং ডায়ালেটেড বা বিস্তৃত হয়ে বাচ্চা প্রসবে সহায়তা করে।
৫)#যোনী_বা _ভ্যাজাইনা
এটা হচ্ছে কপুলেটরি অরগান। প্রাকৃতিক প্রজননের সময় এই যোনীতে ষাঁড় তা সিমেন ইজাকুলেট করে থাকে।
কৃত্রিম প্রজনন বা আর্টিফিসিয়াল ইনসেমিনেশনকে তার সিমেন ডিপোজিটের উপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
১) ভ্যাজাইনাল ইনসেমিনেশন যেখানে ভ্যাজাইনাতে সিমেন ডিপোজিট করা হয়, প্রাকৃত্রিক প্রজননে এটা বেশি দেখা যায়।
২) সার্ভিকাল ইনসেমিনেশন যেখানে সার্ভিক্সে সিমেন ডিপোজিট করা হয়। আমাদের দেশেই এটা করা হয়। গাভীর রেকটাম বা পায়ুপথে হাত ঢুকিয়ে সার্ভিক্স চিহ্নিত করে বীজ দেয়া হয়। এই পদ্ধতিটা বেশি ভালো যেহেতু দুর্বল শুক্রাণু মারা গিয়ে ভাল গুলো গিয়েই ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয়।
৩) ইউটেরাইন ইনসেমিনেশন যেখানে সার্ভিক্স থেকে একটু এগিয়ে ইউটেরাস অর্থাৎ জরায়ুতে সিমেন ডিপোজিট করা হয়।
অনেকে ভাবতে পারেন যে, শুক্রাণুগুলোকে কেন এত দূরে ছেড়ে দিতে হয়? ডিম্বানুর কাছাকাছি শুক্রাণু দিলেই তো হয়, তাহলে খুব দ্রুত, সহজেই তারা নিষিক্ত হতে পারবে ! আসলে ব্যাপারতা ঐভাবে দেখা যাবেনা। কোটি কোটি শুক্রানূতে একটা নিষেক হয়, এবং সর্বোতকৃষ্ট শুক্রানূ দ্বারা নিষেক হলে ভাল বাচ্চা আসবে। এইজন্য যেসব শুক্রাণু নানা রকম বাধা বিপত্তি পেরিয়ে বেশি পথ অতিক্রম করে ডিম্বানুর কাছে দ্রুত পৌছায় সেইগুলো দ্বারাই ভাল বাচ্চা পাওয়া যায়।
এইজন্য সায়েন্টিস্টরা ল্যাবরেটরিতে যখন টেস্টটিউব বেবি বা ভ্রুণ তৈরি করতে যায়, তারাও একটা ডিশে ডিম্বানু আর শুক্রাণুকে নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখে যাতে করে ভাল শুক্রাণুটা গিয়ে ডিম্বানুটা নিষিক্ত করতে পারে। তারা কখনোই ডিম্বানুর উপরে শুক্রাণু ছেড়ে দেয় না কারন এতে করে খারাপ শুক্রাণুটাও নিষেকে অংশগ্রহন করতে পারে।
যারা ভবিষ্যতে এ আই করতে আগ্রহী তাদেরকে প্রজনন তন্ত্রের সব এনাটমি এবং ফিজিওলজী সম্পূর্ণ মুখস্ত করতে হবে, জানতে হবে। বই পড়তে হবে এবং প্র্যাকটিক্যাল ধারনা নিতে হবে ।
ডেইরি জেনেটিক্সঃ ৩
এনিম্যাল জেনেটিক্স এবং ব্রিডিং নিয়ে আলোচনায় অনেক সায়েন্টিফিক টার্ম বা শব্দ আসতে পারে যেগুলোর ব্যাখা না জানা থাকলে অনেকের লেখা বুঝতে কষ্ট হতে পারে। তাই আজকের লেখায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনোলজি নিয়ে আলোচনা করবো।
জিনঃ
খামারী ভায়েরা সাধারণত জিন শব্দটা ব্যবহার না করলেও রক্ত (Blood) শব্দটা প্রায়ই ব্যবহার করে থাকেন। যেমন তার গরুতে ৫০% ফ্রিজিয়ান রক্ত আছে, ৭৫% ফ্রিজিয়ান রক্ত আছে। কথাটা আক্ষরিকভাবে ঠিক না হলেও ভাবানুবাদ হিসেবে ঠিক আছে। আসলে রক্ত তো আর পিতামাতা থেকে বাচ্চাতে পরিবহন হয়না। পরিবহন হয় জিন (Gene) ।
জিন হচ্ছে হেরেডিটারি ইউনিট যেটা পিতামাতা থেকে সন্তানে যায়। প্রতিটি প্রাণীর ক্রোমোসোমে (Chromosome) এই জিন থাকে। এই ক্রোমোজোম গুলো জোড়ায় জোড়ায় থাকে তেমনি জিনগুলোও জোড়ায় জোড়ায় পাওয়া যায়। গরুর ক্রোমোসোম সংখ্যা হচ্ছে ৬০ টি। অর্থাৎ গরুতে ৩০ জোড়া ক্রোমোসোম আছে। যখন একটা ষাঁড় (পিতা) আর গাভীর (মাতা) মেটিং হয় তখন প্রজেনীতে (বাচ্চা) পিতার ৩০ টি ক্রোমোসোম এবং মাতার ৩০ টি ক্রোমোসোম যায়। অর্থাৎ বাবার কাছ থেকে অর্ধেক জিন যায় এবং মায়ের কাছ থেকে অর্ধেক জিন যায়।
এই প্রসংগে সেক্স লিমিটেড জিন’স (Sex Limited Genes) নামে একটা টার্ম বলি। কিছু কিছু জিন আছে যেগুলো দুইটা সেক্স বা লিংগে পাওয়া যায় । কিন্তু জিনটা প্রকাশিত বা Expressed হয় একটি মাত্র সেক্সে। যেমন দুধ উতপাদন জিন। এই জিনটা ষাড়েও আছে কিন্তু যেহেতু এইটা সেক্স লিমিটেড জিন তাই শুধু গাভীতে প্রকাশিত হয় এবং গাভী দুধ দেয়। নাইলে ষাঁড় থেকেও আমরা দুধ পেতাম !
জিনোমঃ
জিনোম হচ্ছে কোন প্রাণীর দেহে সমস্ত জিনের সমষ্টি। ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান গবেষকরা সর্বপ্রথম হারফোর্ড (Hereford) ডেইরি ব্রিডের এক গাভীর জিনোম প্রকাশ করেন। এই জিনোমে ২২ হাজার জিন তারা চিহ্নিত করেন যার মাঝে প্রায় ১৪ হাজার জিনের মানুষ, ইদুর, কুকুর ইত্যাদি স্তন্যপায়ী প্রাণিদের সাথে মিল রয়েছে।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের এনিম্যাল ব্রিডিং ডিপার্টমেন্ট এর প্রফেসর ইয়াহিয়া স্যারের নেতৃত্বে প্রথমবারের মত ছাগলের জিনোম সিকুয়েন্সিং করা হয়। তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, জিনোম সিকুয়েন্সিং করা হয়েছে শুধু, কিন্তু কোন জিনের কি কাজ তা কিন্তু বের করা হয়নি।
বৈশিষ্ট্য বা Trait:
প্রতিটি প্রাণীর কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন গায়ের রঙ, দুধ উৎপাদন ক্ষমতা, বাচ্চা দেয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি। প্রাণীর যেসব বৈশিষ্ট্য জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় সেগুলোকে ইংরেজীতে Trait বলে। ডেইরিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ট্রেইট হচ্ছে , দুধ উৎপাদন, মিল্ক ফ্যাট%, Calving Interval অর্থাৎ এক বাচ্চা হবার পর থেকে পরবর্তী বাচ্চা হবার বিরতি ইত্যাদি। খামারীরা সাধারনত ভাল দুধ দেয়া, সাইজে বড় গাভী কিনেই নিজেদের লাভবান মনে করে। অথচ এইগুলো ছাড়াও আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য বা ট্রেইট আছে যেটাতে বেশি ফোকাস করা উচিত। যেমন, প্রতি বছর বাচ্চা জন্ম দেয়া, বড় বাচ্চা জন্ম দেয়া, নিয়মিত গর্ভবতী হওয়া, রিপিট কম হওয়া, সুস্থ বাচ্চা হওয়া, রোগ বালাই কম হওয়া সবকিছুই এই জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সুতরাং খামারে লাভবান হতে গেলে এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য দেখেই গরু কেনা উচিত। সেইজন্য এনিম্যাল জেনেটিক্স বুঝাটা খুবই জরুরি।
এই প্রসংগে চলে আসে রেকর্ড কিপিং এর কথা। একটা গরুর উপরোক্ত রেকর্ড গুলো যদি কেউ সংরক্ষন করে তাহলে আমরা সহজেই গাভীটির জেনেটিক্স সম্পর্কে একটা আইডিয়া নিতে পারবো। রেকর্ড ছাড়া কখনোই কোন ব্রিডিং প্রোগ্রাম বা ডেইরি খামারে সফলতা আসবেনা। গাভীর দুধের রেকর্ড ছাড়াও উপরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড মেইনটেইন করা উচিত। এতে করে গাভীটির ভ্যালু আরো বেড়ে যায়। যেমন আমার কাছে ২০ লিটার দুধ দেয়া কিন্তু প্রতি বছর বাচ্চা দেয়না বা নিয়মিত গর্ভবতী হয়না এমন গাভীর চেয়ে ১০ লিটার দুধ দেয় কিন্তু নিয়মিত গর্ভবতী হয় এবং প্রতি বছর বাচ্চা দেয় এমন গাভী ভালো মনে হয়।
এবার আসি বোরিং পার্ট টার্মিনলোজিতে ।
সাধারণত কোন জিনগুলি পিতামাতা থেকে প্রজেনীতে ট্রান্সফার হবে সেইটা বুঝার জন্য আমাদের Dominant/ডমিন্যান্ট বা (প্রকট) এবং Recessive/রিসিসিভ (প্রচ্ছন্ন) জিন সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে। এছাড়াও হোমোজাইগোসিটি (Homozygocity) এবং হেটারোজাইগোসিটি (Heterozygocity) এবং এলিল (Allele) সম্পর্কেও একটু জানা প্রয়োজন।
এলিল হচ্ছে একটা জিনের অলটারনেটিভ ফর্ম বা বিকল্প রূপ। যেমন, মানুষের দেহে একটা জিন আছে “স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন” এর জন্য দ্বায়ী। আবার রক্তশূন্যতায় ভোগা কিছু মানুষের দেহে এই জিনেরই একটি অলটারনেটিভ ফর্ম আছে যেটা ডিফেক্টিভ বা অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন এর জন্য দায়ী। সুতরাং এই দুইটা জিন হচ্ছে একে অপরের এলিল। লম্বা মানুষের দেহে যদি A নামক জীন থাকে তেমনি খাটো মানুষের দেহে a জিন থাকবে। এই এলিলগুলোর একটা হবে ডমিন্যান্ট আরেকটা হবে রিসিসিভ।
যে জিনগুলো অন্য জিনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে দেয়না বা বাধা দেয় তাকে ডমিন্যান্ট জিন বলে। আর যে জিনকে বাধা দেয় তাকে রিসিসিভ জিন বলে।
একজোড়া জিন একেকটা বৈশিষ্ট্য ধারন করে। যখন একটা মানুষের দেহে দুইটা একই ধরনেই এলিল থাকে অর্থাৎ AA জিন বা দুইটা aa জিন থাকবে তখন তাকে হোমোজাইগোসিটি বলা হয়, আর যখন দুইটা ভিন্ন এলিল অর্থাৎ Aa থাকবে তখন তাকে হেটারোজাইগোসিটি বলা হয়।
যখন জিনের কম্বিনেশন হেটেরাজাইগাস হয় তখন প্রজেনীর পারফর্মেন্স ভাল হয়। সবচেয়ে খারাপ পারফর্মেন্স হয় হোমাজাইগাস রিসিসিভে। রিসিসিভ জিনগুলো ক্ষতিকর। এর ফলে প্রজেনীর দুধ উৎপাদন কমে যায়, রোগ বালাই বেশি হয়, ওজনেও কমে যায়।
জিনের এই AA বা aa বা Aa কম্বিনেশনকে জেনেটিক্স এর ভাষায় বলা হয় জেনোটাইপ এবং এইগুলো যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে সেগুলোকে বলা হয় তার ফেনোটাইপ অর্থাৎ বাইরে থেকে যা বুঝা যায় সেটাকে বলা হয় ফেনোটাইপ। যেমন ফ্রিজিয়ানের সাদা কালো স্পটেড কালার হচ্ছে এর ফেনোটাইপ আর এই ফেনোটাইপিক বৈশিষ্ট্যের জন্য দ্বায়ী জেনোটাইপ হবে AA বা Aa ।
এবার নিচের থিয়োরিটিক্যাল উদাহরনটা খেয়াল করুনঃ
BB জেনোটাইপ হচ্ছে কালো রঙের গরু
RR জেনোটাইপ হচ্ছে লাল রঙের গরু
BR জেনোটাইপ হচ্ছে লালচে কালো বা মিক্সড রঙের গরু।
একটি কালো রঙের ফ্রিজিয়ান ষাঁড়ের সাথে লাল রঙের শাহিওয়াল গাভীকে মেটিং করালে প্রথম জেনারেশন প্রজেনী (F1) মিক্সড হবে লালচে কালো হবে,এইক্ষেত্রে দুইটা জিনই কো ডমিনেন্সি দেখিয়ে পাশাপাশি অবস্থান করবে। কিন্তু যদি ফ্রিজিয়ানের কালো রঙটা ডমিন্যান্ট হয় তাহলে বাচ্চাটা কালো হবে সেক্ষেত্রে লাল রঙটা হবে রিসিসিভ। এছাড়া বাস্তব একটা উদাহরন হলো শিংওয়ালা প্রাণীর সাথে শিংহীন প্রাণীর মেটিং এ শিংহীন বাচ্চা হওয়াটাও ডমিন্যান্ট এলিলের উদাহরন। ছবি ১ এ সংযুক্ত করা হলো।
কোনটা হোমোজাইগাস ডমিন্যান্ট বা হেটারোজাইগাস ডমিন্যান্ট জেনোটাইপ এইটা জানার জন্য ব্রিডাররা টেস্টক্রস (Test Cross) করে থাকে। টেস্ট ক্রস হচ্ছে ব্যাকক্রসের মতই একটা ব্রিডিং সিস্টেম যেখানে প্রথম জেনারেশনের প্রজেনীকে হোমোজাইগাস রিসিসিভ পিতা অথবা মাতার সাথে ক্রস করানো হয়। সকল টেস্ট ক্রসই ব্যকক্রস কিন্তু সব ব্যাকক্রস টেস্ট ক্রস না।
গতপর্বের লেখায় ব্যাকক্রস কেন করানো হয় এটা নিয়ে এক ভাই প্রশ্ন তুলেছিল যেহেতু এটা ইনব্রিডিং হয়ে যায়। মূলত ব্যাকক্রস করা হয় পিতা মাতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ট্রেইট বা বৈশিষ্ট্যকে অর্থাৎ জেনোটাইপকে প্রজেনীতে ট্রান্সফার করার জন্য। এই কাজটা বেশী হয় প্ল্যান্ট ব্রিডিং এ যেখানে এলিট জেনোটাইপ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পিতা বা মাতাকে সংরক্ষন করা হয়। তাছাড়া পোল্ট্রিতে আমরা যে লেয়ার বা ব্রয়লারের স্ট্রেইন দেখতে পাই এদের পিতা-মাতা বা দাদা-দাদীকে লাইন ব্রিডিং এর মাধ্যমে একটা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ধরে রেখে কয়েক জেনারেশনে তৈরি করা হয়েছে। জিন নকআউট করা যায় এই ব্যাকক্রসের মাধ্যমে।
এবার আসি প্র্যাকটিক্যাল কথায়। ইনব্রিডিং এ আসলে কি হয়! আমরা জানি ইনব্রিডিং হচ্ছে রক্তের সম্পর্ক আছে এমন কারো সাথে ম্যাটিং। শর্ত সাপেক্ষে অল্প পরিমানে ইনব্রিডিং অনুমোদন যোগ্য কিন্তু ঘন ঘন ইনব্রিডিং নিচের সমস্যাগুলো তৈরি করেঃ
১) পিতার সাথে মেয়ের মেটিং করলে পিতার ১০০% জিনের সাথে মেয়ের ৫০% রিলেটেড জিনের শেয়ার হয় । যত বেশি জিনের শেয়ার হয় প্রজেনীর পারফর্মেন্স তত কমে। যেহেতু তিনটাতেই একটা করে রিসিসিভ জিন থাকে ফলে পুনরায় বাবা/মা/ভাই/বোন কারো সাথে মেটিং করালে রিসিসিভ জিনের পরিমান বেড়ে যায় এবং প্রজেনীর পারফর্মেন্স খারাপ হয়। একে ইনব্রিডিং ডিপ্রেসন বলে।
২) এর ফলে নতুন কোন জিনের সাথে কম্বিনেশন হয়না ফলে উৎপাদন বাড়ার কোন সুযোগ থাকেনা।
৩) বিভিন্ন ধরনের জেনেটিক ডিসঅর্ডার দেখা দেয়। ফার্টিলিটি কমে যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া সহ বিভিন্ন অসুবিধা দেখা দেয়।
আমাদের বাংলাদেশে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল ইনব্রিডিং এর প্রভাবে আকারে ছোট হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু একটি এলাকায় পাঠা থাকে নির্দিষ্ট একটি খামারে বা বাড়িতে। বেশিরভাগ মানুষ তাদের ছাগীকে/ছাগীর বাচ্চাকে/ছাগীর বাচ্চার বাচ্চাকে সেই একই পাঠা দিয়ে প্রজনন করায়। ফলে ইনব্রিডিং ডিপ্রেশন ঘটছে এবং বাচ্চার সাইজ , ওজন ধীরে ধীরে কমে আসছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে আসছে ছাগলে। যদিও কমিউনিটি বেজড ব্রিডিং সিস্টেম একটা চমৎকার সিস্টেম কিন্তু এসব জায়গায় পাঠা/ষাড়কে নিয়মিত প্রতিস্থাপন না করলে ইনব্রিডিং বেড়ে যায়।
ইনব্রিডিং রোধে করনীয়ঃ
একমাত্র রেকর্ড মেইন টেইন করেই ইনব্রিডিং রোধ করা যায়। বিদেশে ইনব্রিডিং ক্যালকুলেটর আছে, বিভিন্ন ধরনের সফটওয়ার আছে। যদি দেখা যায় কোন প্রজেনীতে পিতার জিন রয়েছে তাহলে ওয়ার্নিং দেয়া হয় ফলে ইনব্রিডিং করানো হয়না।
আমাদের দেশে যেহেতু এত আপডেট সিস্টেম নাই তাই আমাদের ম্যানুয়েল সিস্টেমেই ভরসা রাখতে হবে। প্রতিটি খামারে প্রজনন রেজিস্টার রাখতে হবে। একটা গাভীর বাবা মা বা দাদা দাদী থেকে প্রজনন সম্পর্কিত সব তথ্য রাখতে হবে। যদি গাভীটি বিক্রি করে দেয়া হয় তাহলে রেজিস্টারের তথ্য নতুন মালিককে সরবরাহ করতে হবে। মোটকথা রেকর্ড ছাড়া ডেইরি গাভী বেচাকেনা বন্ধ করতে হবে। এর ফলেই ইনব্রিডিং অনেকাংশে কমে যাবে আশা করি।
এ এফ এম ফয়জুল ইসলাম
এম এস ইন এনিম্যাল ব্রিডিং এন্ড জেনেটিক্স
বিএস সি ইন এনিম্যাল হাজবেন্ড্রি ।