Breaking News
গরুর ফার্মের ব্যবস্থপনা
গরুর ফার্মের ব্যবস্থপনা

গরুর খামারের ব্যবস্থাপনা

গরুর খামারের ব্যবস্থাপনা

যথাযত ভাবে খামার ব্যবস্থাপনা করা লাভজনক গবাদি পশু পালনের মুল চাবি কাঠি ।

একটি খামার মানসম্মত ভাবে ,সঠিক উপায়ে , লাভজনক ভাবে এবং সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করার নামই খামার ব্যাবস্থাপনা ।
খামার ব্যবস্থাপনায় নিম্ন বর্নিত বিষয় সমুহের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়ঃ

ক) খামারের স্থান নির্বাচনঃ

আমরা পরিবার ভিত্তিক ক্ষুদ্র খামার স্থাপনের জন্য আমাদের বাড়ির অ-ব্যবহারিত স্থান বেছে নিতে পারি ।

এ স্থানটি সাধারনতঃ বাড়ীর পুর্ব অথ বা পশ্চিম দিকে হলে ভাল হয়। সর্ব মোট ১০ টি গরুর জন্য ৩০০ বর্গ ফুট জায়গার প্রয়োজন। গরুর ঘর থেকে ২০/২৫ ফুট দূরে একটি ছোট ডোবা থাকবে যাতে সেখানে গরুর মল-মূত্র ফেলা যায় ।

এ ছাড়া মল মুত্র থেকে জৈব সার ও বায়ো গ্যাস উৎপাদনের জন্য বায়ো গ্যাস প্লান্ট স্থাপন করে লাভজনক ভাবে খামারের বর্জ ব্যবস্থাপনা করা যায়।

খ) গাভীর শেড নির্মানঃ

একটি পুর্ন বয়স্ক গাভির জন্য সর্ব সাকুল্যে ২৮ থকে ৩০ বর্গ ফুট জায়গার প্রয়োজন হয় ।

এ হিসেবেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাভীর জন্য শেড নির্মান করতে হবে। গাভীর শেড পূর্ব – পশ্চিমে লম্বা হলে ভাল হয়। শেডের ফ্লোর, খাবার পাত্র, পানিরপাত্র ইত্যাদি পাকা হওয়া প্রয়োজন। উপরে টিন অথবা ছনের ছাউনি দেওয়া যেতে পারে ।

শেডের নিকটস্থ গাছ ও ডালপালা কেটে ফেলে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে ।

শেডে পানীয় জলের সরবরাহ ও পয়ঃ নিস্কাশনের ব্যাবস্থা থাকতে হবে। খামারের চারিপাশে উচু মজবুত বেষ্টনী তৈ্রী করতে হবে যাতে চোরের হাত থেকে খামারের গরু ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিষ-পত্র রক্ষা করা যায় ।

গ) গাভীর জাত নির্বাচনঃ

একটি লাভজনক খামার প্রতিষ্ঠা করতে হলে গাভীর জাত নির্বাচন অত্যন্ত জরুরী ।

খামার স্থাপনে অধিক উৎ পাদন শীল জাতের গাভী প্রধান ভুমিকা পালন করে ।

আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের গাভী খামারে লালন পালন করতে দেখা যায়।

উল্লেখ যোগ্য জাত গুলো হলো হলস্টিন ফ্রিজিয়ান ক্রস, শাহীওয়াল ক্রস, জার্সি ক্রস, রেড চিটাগং , মুন্সিগঞ্জ ভ্যারাইটি, পাবনা ভ্যারাইটি ইত্যাদি। এ গুলোর মধ্যে হলস্টিন ফ্রিজিয়ান ক্রস, শাহীওয়াল ক্রস ও জার্সি ক্রস জাতের গাভী দ্বারা খামার স্থাপন করা লাভজন ।

কারন, এ সকল গাভী অধিক দুধ উৎপাদন করে থাকে। এ ছাড়া, এ সব জাতের গবাদি পশুর দেহের আকার বড় বিধায় মাংস উৎপাদনও বেশী হয়।

ঘ) গাভীর খাদ্যঃ

কাঁচা ঘাস গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য।

এ ছাড়া, সাধারনতঃ কৃ্ষি জাত পণ্যের উপ পণ্য যেমন, চালের কুড়া, গমের ভুষি, খেসারি ভুষি, ভুট্টা ভাঙ্গা, মুশুর, মুগ,ছোলা, ও মটরের ভুষি, তিলের খৈল, তিষির খৈল, ধানের খড়, ভুট্টার খড় ইত্যাদি গো খাদ্য হিসাবে ব্যাবহার করা হয়।

উপরে বর্নিত গবাদি পশুর খাদ্যগুলিকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি , যথা –
(১) দানাদার খাদ্য যেমনঃ-
চালের কুড়া, গমের ভুষি, খেসারি ভুষি, ভুট্টা ভাঙ্গা, মুশুর, মুগ,ছোলা, ও মটরের ভুষি, তিলের খৈল, তিষির খৈল ইত্যাদি দানাদার খাদ্যের অনন্তর্ভুক্ত।

এ সকল খাদ্য উপাদান নির্দিস্ট অনুপাতে মিশিয়ে সুষম দানাদার খাদ্য তৈ্রী করা হয় । সুষম দানাদার খাদ্য খামারীগণ নিজে খামারে তৈ্রি করতে পারেন ।

তা ছাড়া খাদ্য কারখানায় উৎপাদিত সুষম দানাদার খাদ্য বাজারে বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। এ গুলি প্রয়োজনীয় মাত্রায় গবাদি পশুকে খাওয়ানো হয় ।
(২) আঁশ জাতীয় খাদ্য যেমনঃ-
কাঁচা ঘাস, ধানের খড়, ভুট্টার খড় ইত্যাদি গবাদি পশুর আঁশ জাতীয় খাদ্য হিসাবে ব্যাবহার করা হয়। আঁশ জাতীয় খাদ্য দুই ভাগে বিভক্ত যেমনঃ

(ক) কাঁচা ঘাস (খ) শুকনো খড় ইত্যাদি ।
আমাদের দেশে গো- চারন ভূমি নেই বললেই চলে। তাই কাঁচা ঘাসের ভীষন অভাব ।

সাধারনতঃ ফসলের জমিতে যে সব আগাছা জন্মায় ঐগুলিই ঘাস হিসাবে গবাদি পশুকে খাওয়ানো হয়। কিন্তু, এ ঘাস খামারে গাভী পালনের জন্য যথেষ্ঠ নয় ।

তাই, খামারের গাভির জন্য ফসলের জমিতে ঘাস চাষ করা প্রয়োজন । আমাদের দেশ বর্তমানে উন্নত জাতের ঘাসের বীজ পাওয়া যায়। যেমন- নেপিয়ার, পারা, হাইব্রীড সরগম( জাম্বো ) , জার্মান গ্রাস,আলফা আলাফা , লুসার্ন ইত্যাদি ।

নেপিয়ার, জাম্বু ইত্যাদি ঘাস ১ বিঘা জমিতে বছরে প্রায় ১৮ মেঃ টন পর্যন্ত উৎপাদিত হয় ।

১ বিঘা জমির উৎপাদিত ঘাস দিয়ে ৩টি গাভীকে সারা বছর কাঁচা ঘাস খাওয়ানো যায় ।
ধানের খড় আমাদের দেশে সারা বছর জুড়েই পাওয়া যায়।

গবাদি পশুর খাদ্যের চাহিদা মিটাতে ধানের খড় উল্ল্যেখ যোগ্য ভুমিকা পালন করে ।

বর্তমানে ভুট্টার চাষ আমাদের দেশে ব্যপক ভাবে হয়ে থাকে । শুকনো ভুট্টার গাছ ও পাতা গবাদি পশুর জন্য একটি উপাদেয় আশ জাতীয় খাদ্য ।

দুগ্ধবতী গাভীর সুষম দানাদার খাদ্য তৈ্রির তালিকাঃ

ক্রমিক নং    ঊপাদান পরিমান (%)
১ গমের ভুষি     ৩৫
২ চালের কুড়া    ৩০
৪ খেসারি /ডাল /ছোলা / মটর ভুষি ১২
৫ তিলের খৈল/ সয়াবিন মিল ২০
৬ চিটা গুড়                        ২
৭ লবন                       .৭৫০
৮ ডি সি পি                      ২
৯ ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স .২৫০
মোটঃ     ১০০
• ঊপরে উল্লেখিত তালিকা অনুযায়ী তৈ্রী খাদ্য গাভীর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ১.৫ কেজি এবং প্রতি কেজি দুধের জন্য ০.৫ হারে খাওয়াতে হবে ।

এ ছাড়া দুগ্ধবতী গাভীকে প্রতিদিন ১-২ কেজি চাউলের খুদ আথবা ভুট্টা ভাঙ্গা সিদ্ধ করে খাওয়াতে হবে ।

কাঁচা ঘাস ও খড় খাওয়ানোঃ
একটি শংকর জাতের দুগ্ধবতী গাভী যার দৈনিক দুধ উৎপাদন ১০ লিটার তাকে ৩০ কেজি কাঁচা ঘাস ও ৪ কেজি শুকনো খড় খাওয়াতে হবে ।

দুধ উৎপাদন বেশী হলে আনুপাতিক হারে ঘাস ও খড়ের পরিমান বাড়াতে হবে। শুস্ক , বকনা, গর্ভবতী গাভী ও ষাঁড় –কে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ কেজি ঘাস ও ২ থেকে ৪ কেজি খড় খাওয়াতে হবে ।

ঙ) বাছুর লালন পালনঃ

দুগ্ধ খামারের বড় সম্পদ তার বাছুর । তাই খামারে বাছুরের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরী ।

বাছুর জন্মাবার পর থেকেই এর যথাযত যত্ন নিতে হবে। জন্মের সাথে সাথে এর নাক মুখ পরিস্কার করে শুস্ক স্থানে রাখতে হবে এবং গাভীকে দিয়ে গা চাটাতে হবে ।

নিয়মিত শাল দুধ পরিমান মত দিনে ৫/৬ বার খাওয়াতে হবে ।

শাল দুধ শেষ হলে নিম্ন বর্নিত ভাবে প্রতি দিন পরিমান মত দুধ খাওয়াতে হবে ।
ক) ১ম মাসঃ দৈনিক ২ থেকে ৩ লিটার খ) ২য় মাসঃ দৈনিক ৩ থেকে ৪ লিটার
গ) ৩য় মাসঃ দৈনিক ৩ থেকে ৪ লিটার ঘ) ৪র্থ মাসঃ দৈনিক ৪ লিটার
ঊল্লেখিত ভাবে বাছুরকে দুধ খাওলে বাছুরে দৈহিক বৃ্দ্ধি তরান্বিত হবে এবং ১৫-১৬ মাস বয়সে বকনা বাছুর গর্ভ ধারনের ক্ষমতা অর্জন করবে ।

চ) দুধ বিক্রয়ঃ

খামারে উৎপাদিত দুধ স্বাস্থ্য সম্মত , পুস্টিকর ও সু পানীয় ।

অধিক পুস্টিমান সম্পন্ন বিধায় দুধ দ্রুত পচনশীল ।

এ কারণে গাভী দোহনের পর চার ঘন্টার মধ্যে দুধ প্রক্রিয়াজাত করন ( ফুটিনো, শীতলী করণ করা,পাস্তুরিত করা ইত্যাদি) সম্পন্ন করতে হয়। তাই খামার স্থাপনের পূর্বে খামারে উৎপাদিত দুধ বিক্রয়ের সম্ভাবনা যাচাই করতে হবে ।

কেবল মাত্র উপযুক্ত মুল্যে প্রতিদিন দুধ বিক্রয়ের ব্যবস্থা থাকলেই খামার স্থাপন করতে হবে ।
উল্লেখ্য, ইয়োন বায়ো সায়েন্স লিঃ এর কর্ম এলাকায় দগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনায় প্রনয়ন করা হয়েছে ।

ইয়োন বায়ো সায়েন্স লিঃ অচিরেই রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার সন্তোষ্ পুর গ্রামে একটি দগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কারখানা স্থাপন করা হবে ।

এ কারখানায় প্রতিষ্ঠানের অন্তর্গত গবাদি পশু ঊন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গঠিত দুগ্ধ উৎপাদনকারী সদস্যদের নিকট থেকে দৈনিক দুইবেলা দুধ ন্যায্য মূল্যে সংগ্রহ করা হবে ।

ছ) গোবর/ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ

গোবর গবাদি পশু থেকে পাওয়া একটি অর্থকরী সম্পদ ।

গোবর থেকে আমরা বায়ো গ্যাস ও জৈব সার উৎপাদন করতে পারি যা থেকে জ্বালানী ও ফসলি জমির উৎকৃ্ষ্ট সারের চাহিদা পুরন করা সম্ভব।

এ ছাড়া , মাছের জলজ খাদ্য উৎপাদনে পুকুরে গোবর ব্যবহার করা হয় ।

জ ) পশু রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঃ

গবাদি পশুর রোগ বালাই দমন ও চিকিৎসা খামার ব্যবস্থাপনার অপরিহার্য অংগ ।

আমাদের দেশে প্রতি বছর বিভিন্ন সংক্রামক ও ছোয়াঁচে রোগে গবাদি পশু মারা যায় ।

ফলে , খামারিগন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন ।

গবাদি পশুর রোগ বালাই দমনের জন্য সকল গবাদি পশুকে প্রতি ৪ মাস পর পর নিয়মিত কৃ্মি নাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে ।

ঊকুন ও আঠালি দমন করতা হবে । সংক্রামক ও ছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধের জন্য নিচের ছক অনুযায়ি সকল বয়সের গবাদি পশুকে টীকা প্রদান করতে হবেঃ

টীকা প্রদান ছকঃ
ক্রমিক নং রোগের নাম রোগের কারণ টীকার নাম ডোজ প্রয়োগের রুট মন্তব্য
১ ক্ষুরা রোগ ভাইরাস F&MD Vaccine
6 ml
চামড়ার নীচে বছরে ২ থেকে ৩ বার।
বাছুরের বয়স ১৪ দিন হতে হবে।
Aftovaxpur 2 ml

২ তড়কা বা এন্থ্রাক্স ব্যাক্টেরিয়া Anthrax Vaccine 1 ml

৩ গলা ফুলা ব্যাক্টেরিয়া H.S. Vaccine 2 ml

৪ বাদলা , ব্লাক কোয়াটার ব্যাক্টেরিয়া BQ Vaccine 5 ml

ঝ ) জনবল :
খামার সফল ভাবে পরিচালনার জন্য খামারের কাজ করতে আগ্রহী দক্ষ ,উদ্দ্যোগি, কর্মঠ , উদ্যোমি , সৎ ও ত্যাগী জনবলের বিকল্প নেই।

খামারের কর্ম কর্তা ও কর্ম চারিদের সময় জ্ঞান, নিয়মানুবর্তিতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হতে হবে ।

তাই খামারের কর্ম কর্তা ও কর্ম চারি নিয়োগের সময় উল্লেখিত সৎ গুনাবলী সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ করতে হবে ।
ঞ) হিসাব সংরক্ষনঃ
খামার পরিচালনায় হিসাব সংরক্ষনের গুরুত্ব অপরিসীম ।

খামারের প্রতিটি খরচ ভাউচার সহ সংরক্ষন ও তা নথিভুক্ত করা প্রোয়জন ।

খামারে উৎপাদিত পণ্য সমুহ বিক্রয়ের রেজিষ্টার সংরক্ষন ও বিক্রয় রশিদের মাধ্যমে সকল বিক্রয় সম্পাদন করতে হবে ।

প্রতিদিন ক্যাশ বই , লেজার বহি , ক্রয় বহি, বিক্রয় বহি ও স্টক বহি ইত্যাদি যথাযত ভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে ।

প্রতি সপ্তাহে আয় ও ব্যয় হিসাব তৈ্রী করে পরীক্ষা- নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা ,করে যথা সময়ে যথাযত সিদ্ধান্ত গ্রহন ও তা কার্যকর করতে হবে ।

ট) কৃত্রিম প্রজনন ও জাত উন্নয়নঃ
খামার স্থাপন কালে আমরা যে সব গাভী ক্রয় করি তা সধারনতঃ উৎপাদনশীলতার দিক থেকে নিম্ন মানের হয়ে থাকে ।

অতএব , খামার গড়ার জন্য আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের উপর নজর দিতে হবে যাতে খামারে উৎপাদিত বাছুরের জাতগত মান উচ্চতর হয় ।

অধিক উৎপাদনশীল জাতের বাছুর পেতে কৃ্ত্রিম প্রজননের সহায়তা নিয়ে আমরা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে পারি।

কৃ্ত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে অধিক উৎপাদনশীল জাতের মান সম্মত বীজ ব্যবহার করে গাভীকে প্রজনন করালে ভাল জাতের বকনা / ষাঁড বাছুর পাওয়া যাবে । বকনা বাছুর বড় হয়ে মা হলে অধিক দুধ পাওয়া যাবে ।

এভাবে কৃ্ত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ভাল জাতের গাভী দিয়ে একটি আদর্শ খামার গড়তে পারি।

ঠ ) খামারের সুস্থ্য পরিবেশ বজায় রাখাঃ
খামারের অভ্যন্তরে ও চারিপাশে স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী ।

স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিদিন নিয়মিত গাভীর শেড পরিস্কার করতে হবে ।

শেডের গোবর যথাস্থানে সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে ফেলতে হবে । ড্রেনের মাধ্যমে শেডের পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং প্রতিদিন ড্রেন পরিস্কার করতে হবে ।

মশা, মাছি ও অন্যান্য কীট পতঙ্গের হাত থেকে গবাদি পশু রক্ষা করতে মশা মাছি ধংষের প্রয়জনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে । মশা থেকে রক্ষার জন্য মশারির ব্যবস্থা রাখতে হবে ।

খামারের চারিপাশের আগাছা, জংলা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে ।

ড ) জীব নিরাপত্তা নিশ্চিত করাঃ
খামারকে বিভিন্ন রোগের আক্রমন থেকে রক্ষা করার জন্য খামারের জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে।

খামারে মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রন এবং অন্যান্য প্রাণী যেমন গরু , ছাগল, ভেড়া , কুকুর , বিড়াল ও ইঁদুর ইত্যাদির প্রবেশ সম্পুর্ন ভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে ।

কারণ উল্লেখিত জীবজন্তু রোগজীবাণুর বাহক হিসাবে কাজ করে এবং ছোয়াচে রোগ বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।

পরিশেষে আমাদের দেশে মাণ সম্মত বিশুদ্ধ গরুর দুধের চাহিদা যে অনেক তা’ বলার অপেক্ষা রাখে না ।

আমরা অনেক মূল্যের বিনিময়ে খাটি দুধ পেতে সদা সচেষ্ট থাকি ।

তাই, ভাল জাতের কয়েকটি (৪-৫ টি ) গাভী লালন পালন করে সারা বৎসর দুধ উৎপাবন করতঃ নিজের চাহিদা পুরন ও অতিরিক্ত দুধ বিক্রি করে আমরা আর্থিক ভাবে লাভবান হতে পারি

রুর খামার ব্যবস্থাপনা

খামার ব্যবস্থাপনা খামারের প্রাণ। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা খামারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের প্রধান সহায়ক।

ব্যবস্থাপনা যত নিখুঁত ও প্রাণীর স্বাস্থ্য সহায়ক হবে, খামারের উদ্দেশ্য অর্জন তত সহজ ও বরকতময় হবে।

ব্যবস্থাপনা আসলে এক ধরনের কলা কৌশল যার মাধ্যমে খামারকে সম্পদ, সুযোগ ও সময়ের সমন্বয় ঘটিয়ে লাভজনক করা যায়।

সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার উপকারিতা অনেক,

তবে প্রধান সুবিধাগুলো হলো —

১. সম্পদের মিতব্যয়িতা।
২. অল্প সময়ে অধিক উৎপাদন।
৩. স্বল্প সময়ে অধিক লাভ।
৪. শক্তি ও শ্রমের অপচয় রোধ।
৫. উৎপাদনে গুণগত মান ও উৎকর্ষতা লাভ।
৬. সর্বাধিক পরিতৃপ্তি।

খামার ব্যবস্থাপনার বিবেচ্য মূল বিষয়গুলো নিচে আলোচনা করা হল।

খামারের নাম ও মালিকানাঃ
প্রথমেই বিবেচনায় আনতে হবে খামারের নাম কি হবে এবং মালিকানা ব্যক্তিভিত্তিক নাকি যৌথ হবে।

খামারের ধরনঃ
এরপর বিবেচনায় আনতে হবে আমরা দুধের, মাংসের নাকি বাচ্চা উৎপাদনের জন্য খামার স্থাপন করবো।

উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে আমাদের প্রাণী নির্বাচন করতে হবে। যেমনঃ দুধের খামার হলে দুধাল জাতের গাভী নিতে হবে।

ঠিক এই ভাবে খামারের ধরন অনুযায়ী ছাগলের, ভেড়ার, গাভীর, মহিষের খামার ইত্যাদি হতে হবে।

মূলধন সংগ্রহঃ
মূলধনের উৎস্য ও বিনিয়োগের পরিমাণ, আবর্তক খরচের উৎস্য পরিমাণ বিবেচনায় আনতে হবে।

আর্থিক উৎস্য ব্যক্তিগত হওয়াই সব দিক থেকে উত্তম।

এছাড়া সমিতি, ব্যাংক, বেসরকারি সংস্থা, অনুদান এসব থেকেও হতে পারে, তবে লোনের ক্ষেত্রে সুদের বিষয়টি থাকায় এড়িয়ে চলা ভাল।

খামাররের আকারঃ
পারিবারিক পর্যায়ে ২-৫ টি প্রাণী সমন্বয়ে ক্ষুদ্র খামার, নাকি ৫টির বেশী প্রাণী নিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খামার স্থাপন করা হবে, তা বিবেচনায় আনতে হবে।

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খামার স্থাপনে প্রথমে প্রথমে অল্প কিছু প্রাণী নিয়ে খামার আরম্ভ করা উত্তম।

এতে খামার স্থাপনে ব্যয় অর্থাৎ মূলধন কম লাগবে এবং অর্জিত আয়কে মূলধন করে আস্তে আস্তে খামার বড় করা যেতে পারে।

খামারের অবকাঠামো নির্মাণঃ
প্রাণীর সংখ্যা, খাদ্যের উৎস্য ও উৎপাদন পদ্ধতি (আবদ্ধ ঘরে নাকি উন্মুক্ত চারণভূমি) বিবেচনা করে খামারের জন্যে বিভিন্ন ঘর ও ঘাস চাষের জন্যে নির্দিষ্ট জায়গা রাখতে হবে।

ঘর তৈরীতে বিভিন্ন বয়সের প্রাণীর জন্যে আলাদা আলাদা ঘর তৈরী করতে পারলে ভালো।

এছাড়া বাণিজ্যিক খামারের ক্ষেত্রে খাদ্য গুদাম ঘর, যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম রাখার ঘর, উৎপন্ন দ্রব্য সংরক্ষণ ঘর, অফিস ও বিক্রয় কেন্দ্র, কর্মচারী থাকার ঘর, জেনারেটর ঘর ইত্যাদি তৈরী করতে হবে।

গাভীর ড্রাই পিরিওড ব্যবস্থাপনা 

গাভীর উত্তম দুধ উৎপাদন গাভীর আদর্শ ড্রাই পিরিওড ব্যবস্থাপনার উপর অনেকটাই নির্ভর করে!
গাভী গর্ভবতী হয়ে যখন থেকে দুধ দেয়া বন্ধ করে তখন থেকে বাছুর প্রসব করার আগ পর্যন্ত সময়কে বলা হয় ড্রাই পিরিওড।

এই ড্রাই পিরিওডের ব্যাপ্তিকাল হচ্ছে ৪৫-৯০ দিন। যদি ড্রাই পিরিওডের ব্যাপ্তিকাল ৪০ দিনের নীচে হয় তাহলে পরবর্তী ল্যাক্টেশনে গাভী আশানুরূপ দুধ দিবে না! তো, এই ড্রাই পিরিওডের সময়টুকুতে কিছু ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি দিলে গাভী বাছুর প্রসব করার পর আশানুরূপ দুধ দিবে বা গাভীর দুধ উৎপাদন ভালো হবে।

 নিচের পয়েন্ট গুলো মেনে চলা উচিত।
১। ড্রাই পিরিওডে গর্ভবতী গাভী যাতে খাদ্য হিসাবে ড্রাই মেটার অতিরিক্ত গ্রহন না করে ।
২। গর্ভবতী গাভী যাতে খাদ্য হিসাবে অতিরিক্ত ক্যালরি যুক্ত খাদ্য গ্রহন না করে। অর্থাৎ, যে সব খাদ্য অতিরিক্ত শক্তি উৎপাদন করে এমন খাদ্য।
৩। গর্ভবতী গাভী যাতে তার খাদ্যে যথাযথ ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং অন্যান্য ক্ষনিজ উপাদানের যোগান পায়।
৪। গর্ভবতী গাভীর দৈহিক ওজন যাতে অতিরিক্ত বেড়ে না যায়।
৫। গর্ভবতী গাভীর ক্ষুরের স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজড় যাতে রাখা হয়। এর মানে এর ক্ষুরের যত্ন নিতে হবে। একে হুফ ম্যানেজমেন্ট বলে।
৬। গর্ভবতী গাভীর বাসস্থান যাতে আরামদায়ক এবং পরিচ্ছন্ন হয়।
৭। গর্ভবতী গাভী যাতে পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ পায় এবং এটা খুব জরুরী।

ডেইরী ক্যাটলের জন্য একটি নিয়ম মেনে চলা উচিতঃ

24hrs(8E+ 8R+ 8S)(Eating,Rumination and Sleeping)

১ ৮ ঘন্টা খাবে

২.৮ ঘন্টা জাবর কাটবে( ৪ ঘ ন্ট   দাড়িয়ে থাকবে এবং ৪ ঘন্টা রেস্ট নিবে)

৩.৮ ঘন্টা ঘুমাবে(তবে ৪ ঘ ন্টা ঘুমাবে +৪ ঘ ন্টা জাবর কাটাবে)

১২ ঘ ন্টা রেস্ট নিলে গাভী বেশি দুধ দেয় আর ৮ ঘ ন্টা জাবর কাটলে লালা তৈরি হয় যা বাফার হিসেবে কাজ করে ফলে এসিডোসিই হয় না।

##গাভীর ১লিটার দুধের জন্য ৪লিটার পানি দরকার।

 

Please follow and like us:

About admin

Check Also

নবজাতক বাছুরের যত্ন ও করণীয় :

নবজাতক বাছুরের যত্ন ও করণীয় : স্তন্যপায়ী প্রায় সকল প্রাণীর জন্মপ্রক্রিয়া প্রায় একই হলেও কিছু …

Translate »