পোল্ট্রি শিল্পে করোনার প্রভাব :
মহামারী করোনার প্রভাবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গোটা দুনিয়া প্রায় স্থবির। লক্ষ লক্ষ মানুষ এ পেন্ডেমিক ডিজিজের প্রভাবে আক্রান্ত, কয়েক হাজার মানুষ ইতোমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন |
বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো আজ হিমশিম খাচ্ছে এ মহামারী নিয়ন্ত্রণে,
আশাবাদী হয়তো অতি দ্রুতই এ রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার হবে ইনশাআল্লাহ।
বৈশ্বিক এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এত সহজ হবে না বা দ্রুতই এর সমাধান দেখার সম্ভাবনা ক্ষীন !
আন্তর্জাতিক ব্যবসা বানিজ্য একেবারেই স্থবির, ফ্লাইটগুলো প্রায় বন্ধ!!!
মানুষের চলাচল নাই বললেই চলে …
বাংলাদেশও এর বাইরে নয় ইতোমধ্যেই সরকার দশ দিনের ছুটি (সাপ্তাহিক ও সাধারন) ঘোষণা করেছে, আর্মি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সমগ্র দেশ, মানুষ কার্যত গৃহবন্দী|
সকল ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ, তবে সবচেয়ে বিপদের সম্মুখীন পোল্ট্রি ও ডেইরী শিল্প।
পোল্ট্রি শিল্পের উৎপাদিত পন্য একাধারে জীবন্ত ও পচনশীল যা একদিন ও স্টক করার সুযোগ নেই এবং এ বাচ্চা উৎপাদন হটাৎ করে বন্ধ করারও সুযোগ নেই!
যার কারণে বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ মহা ক্রান্তিকালের সম্মুখীন !
একটা গড় হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন সারা দেশে ২৩০০০০০(তেইশ লক্ষ) ব্রয়লার ও লেয়ার বাচ্চা উৎপাদন ও প্রায় ১০০০০০০ (দশ লক্ষ) সোনালী বাচ্চা উৎপাদিত হচ্ছে !!!!
দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে উৎপাদিত বিপুল পরিমান চিকস এর ৮০-৯০%
বাচ্চা অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে ,তাই ব্রিডারস কোম্পানীগুলো কোটি কোটি টাকা প্রতিদিন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে!
রেডি ব্রয়লার ৬০-৮৫ টাকা কেজি,১০০০ ব্রয়লারের ৭০-৮০ হাজার টাকা লস হচ্ছে।
করোনার হাত থেকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর জন্য মাংস এবং ডিম খাওয়া উচিত কিন্তু ভুল ধারণার কারণে খাচ্ছে না। এতে ক্ষতি তিন পক্ষেরই হচ্ছে(ক্রেতা , বিক্রেতার এবং সরকারের)
লাখ লাখ লোক বেকার হবে।
জন গণ পুস্টি হীনতায় ভুগবে
সমাজে বিশৃংখলা বেড়ে যাবে।
ডিমের দাম ও কমে যাচ্ছে ৬-৬.৩০ টাকা।
এ বিশাল পোল্ট্রি ইন্ড্রাস্টিতে পোল্ট্রি খাদ্যের বিপুল যোগান দিতে হয় প্রায় প্রতিদিনেই হাজার হাজার মেট্রিক টন খাদ্যের প্রয়োজন , আর এসব পোল্ট্রি খাদ্যের কাচামাল বিশেষত ভুট্টা এ সময়টাতে (নভেম্বর থেকে মার্চ)অনেক টাই আমদানীর উপর নির্ভর করতে হয়, ভুট্টার বাইরেও অন্যান্য কাচামাল সয়াবিন ,প্রোটিন বা ফিড এডিটিভস প্রায় সিংহ ভাগই আমদানি নির্ভর কিন্তু বৈশিক সাপ্লাই চেইন মোটামুটিভাবে স্থবির হওয়ায় ফিড উৎপাদনও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার উপক্রম!
যার ফলে পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদনকারী বড় কোম্পানী সমূহ একটা বড় ধাক্কার সম্মুখীন হবে এবং ছোট ও মাঝারী ফিড মিল বা উদ্যোক্তারা পুজি হারিয়ে নিঃস্ব হতে সময়ের অপেক্ষা মাত্র!
খামারীরা তাদের রেডি ব্রয়লার/সোনালী মুরগী বিক্রি করতে পারছে না বা বিক্রি করলেও বাজার মূল্য একেবারেই কম হওয়ায় উৎপাদন খরচ তো উঠছেই না উপরন্তু তারা তাদের পুজি হারিয়ে পথে বসার উপক্রম। তাই তারা নতুন করে বাচ্চা নিয়ে লালন-পালন করতে ভয় পাচ্ছে!
গার্মেন্টস শিল্পের পরেই এ পোল্ট্রি শিল্পে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোটি মানুষ জড়িত যাদের জীবিকা এ মুরগীর উপরই নির্ভরশীল তাদের বাঁচানোর জন্য ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখার প্রয়োজনে হলেও সরকার এ শিল্পের প্রতি অতিসত্ত্বর নজর দেয়া প্রয়োজন!
ব্যবসার দিকটা বাদ দিলেও এ বিপুল জনগোষ্ঠীর আমিষের ঘাটতি পূরনে বা
মানুষকে সুস্থ্য ও সবলভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য হলেও পোল্ট্রি শিল্পের দিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি!
ডা: আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ডিভিএম
কাজী ফার্মস
করোনা ভাইরাসঃ প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প।
বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি জনবহুল উন্নয়নশীল দেশ যদিও কাগজ- কলম বা সরকারি ভাবে মধ্যম আয়ের দেশের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা উঠে গেছে। যাহোক আসল কথায় আসি দেশের সকল সচেতন নাগরিক অবগত আছেন পোশাক শিল্পের পরেই পোল্ট্রি শিল্পের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো যতোটুকু অগ্রগতি তার সিংহভাগ কৃতিত্ব বেক্তি মালিকানা।
বর্তমানে এ শিল্পের বিনিয়োগের পরিমান প্রায় ৩৫ হাজার কোরি টাকা ও কর্মসংস্থান প্রায় ২৫ লক্ষ জনগোষ্ঠী ও নির্ভরশীল জনসংখ্যা প্রায় ৬৫ লক্ষেরও অধিক যেটা আরো উল্লেখ্য কর্মসংস্থানের প্রায় ৪০% নারী এ শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, এই বিপুল সম্ভবনাময়ী খাত আজ খাদের কিনারে শুধু মাত্র বিভিন্ন গুজব ও সরকারি-বেসরকারি ভাবে প্রচার ও প্রসার এর অভাবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপি মরণঘাতী করোনা ভাইরাস এর প্রভাবে বাংলাদেশ সহ পুরো দুনিয়া থমকে গেছে, স্থবির হয়ে পড়েছে দেশে অর্থনীতি , বাংলাদেশের অর্থনীতির চলক সমুহ আজ নিম্নমুখী আর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে পোল্ট্রি শিল্পের উপরে যদিও গুজবের দেশ বাংলাদেশ আমরা সব সময় গুজবের পিছনে দৌড়াতে পছন্দ করি ও অনেক ক্ষতি করে ফেলি জাতীয় পর্যায়ে। একদল লোক গুজব প্রচার করে সংবাদের টাইম লাইনে থাকতে থাকতে পছন্দ করে, এই গুজবের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্হ খাত পোল্ট্রি শিল্প, এখানে প্রচার করা হয় ব্রয়লার মুরগী ও ডিম থেকে নাকি করোনা ভাইরাস ছড়ায় যেটার কোন তথ্য প্রমান নাই ও সাম্প্রতিক সময়ে গবেষনায় বলছে ব্রয়লার মুরগী ও ডিম খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃ্দ্ধি পায়, ফলে এই নেতিবাচক প্রভাবের ফলে খামারীরা তাদের ফার্মের ডিম ও মুরগী বিক্রি করতে পারছে না ফলে তারা পারছে না মুরগী কে খাদ্য দিয়ে বাচিয়ে রাখতে আবার বাজার মুল্য ও নাই, এমতাবস্থায় খামারী ও ডিলারাগন একেবারে সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়োছে যার প্রভাব মুরগীর বাচ্চা ও খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এর উপরে পড়ছে কোম্পানি গুলি প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ একদিনের মুরগীর বাচ্চা নষ্ট করে ফেলছে,কারন মুরগীতে করোনা এই গুজবে খামারীরা ফার্মে বাচ্চা না উঠিয়ে ফার্ম গুলি বন্ধ করে ফেলছে, ফলে পোল্ট্রি শিল্প আজ ধ্বংসের দ্বারাপ্রান্তে।
দেশের GDP তে প্রাণীসম্পদের অবদান প্রায় ২.৫% যেখানে পোল্ট্রির অবদান প্রায় ১.৫%-১.৬%। দেশের GDP তে এতো বড়ো অবদান সেই খাতের অবস্থা আজ সত্যিই নাজুক,সেভ দ্য চিল্ড্রেন ২০১৫ সালের মার্চ মাসে এক রিপোর্ট এ বলছিলো ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের শিশু অপুষ্টিতে ভুগতো প্রায় ৬০% আর ২০১৯ সালে সেটা কমে দাড়িয়েছে প্রায় ৪১ শতাংশে এর অবদান পোল্ট্রি খাতের যদিও এই খাতটি অবিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সমস্ত চালকগুলি যখন নিম্নমুখী তখন বেসরকারি উদ্যগে গড়ে উঠা এতো বড়ো শিল্প ধ্বংসের মুখে, বর্তমানে কোভিড -১৯ এর প্রভাবে পোল্ট্রি শিল্পের যে ক্ষতি হচ্ছে বা হবে সেখান থেকে উত্তরণের উপয় খুজে বের করা বেসরকারি উদ্যাক্তাদের একার পক্ষে সম্ভব না এখানে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে,অগ্রণী ভুমিকা রাখতে হবে প্রানীসম্পদ অধিদপ্তর কে, তা না হলে পাট, চিনি, চামড়া, তৈরী পোশাক শিল্পের মতো অবস্থা হতে পারে পোল্ট্রি শিল্পের চলে হাতছাড়া হতে পারে এ খাত চলে যেতে পারে ভিনদেশিদের হাতে বেকার হতে পারে লক্ষ লক্ষ জনগন।
( তথ্য সুত্র, দৈনিক কালের কন্ঠ ও ইন্টারনেট )।
লেখক- ওহিদুজ্জামান, সাবেক শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ। কর্মরত- কাজী ফার্মস।