গো খাদ্যে (ব্যালেন্স প্যাকেট ফিড):
ইস্ট (Yeast) এর ব্যবহার ও ইস্ট এর কার্যাবলীঃ
#ব্রান্ড কোম্পানি গুলোর প্যাকেট ফিড (যেমন নারিশ ক্যাটল ও ডেইরী ফিড সহ অন্যান্য) সাধারনত উচ্চ মানের নিউট্রিয়েন্ট সংযুক্ত (উন্নত কাঁচামাল, উচ্চ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও অন্যান্য) থাকে, বিধায় তা সহজে হজম করার নিমিত্তে প্রোবায়োটিক তথা ইস্ট ব্যবহার করে থাকে। এটা নতুন কোন বিষয় নয়! নন ব্রান্ড ও ব্রান্ড কোম্পানি গুলোর খাদ্যের অন্যতম একটি পার্থক্য এখানেই!
প্রোবায়োটিক অর্থ কি?
প্রোবায়োটিক কথাটির সহজ বাংলা হলো উপকারী জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া (যেমন- Lactobacillus) বা ছত্রাক (Yeast- Saccharomyces cerevisiae, S. boulardii etc)
তাহলে উপকারী ইস্ট (Yeast) হলো এক প্রকারের প্রোবায়োটিক (সব ইস্ট নয়!)।
ইস্ট (Yeast) এর প্রকারভেদ-
চার ধরনের (Baker’s Yeast, Nutritional Yeast, Brewer’s Yeast & Distiller’s and wine Yeast)
গো-খাদ্যে ব্যবহার করা হয় Baker’s Yeast (Saccharomycrs cerevisiae)। যত আর্টিকেল পড়েছি সব গুলোতেই শুধু এই ইস্ট এর কথাই উল্ল্যেখ করা রয়েছে।
ইস্ট (Saccharomyces cerevisiae) কি ভাবে কাজ করে?
– এটি উচ্চ রেশন ব্যালেন্স কে হজমে সহায়তা করে।
– রুমেন এর পিএইচ (Ph) আদর্শ অবস্থানে রাখতে সহায়তা করে। (আদর্শ মাত্রা ৬.৫ থেকে ৭)
– ফলে রুমেন এসিডোসিস হওয়ার ঝুকিঁ কমে যায়।
– আশঁ জাতীয় খাদ্য, শর্করা জাতীয় খাদ্য ও অন্যান্য সর্বোচ্চ হজমে সহায়তা করে ফলে গাভীর দুধ বৃদ্ধি ও এড়ে গরুর মাংস বৃদ্ধি পর্যাপ্ত খাবারেই দ্রুত হয়।
– রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
#গো-খাদ্যে Baker’s Yeast (Saccharomycrs cerevisiae) ব্যবহার অনেক খামারিই করে থাকেন।
কর্ন ঈস্ট বা ফার্মেন্টেট কর্ন তৈরির প্রক্রিয়া, খাওয়ানোর নিয়ম ও নিউট্রিশনাল ভ্যালু নিয়ে আজ আলোচনা করবো।
কর্ন/মেইজ এর বাংলা হলো ভুট্টা। মার্কেটে বিভিন্ন মূল্যে Baker’s Yeast কিনতে পাওয়া যায়। নরমালি ভুট্টা হলো কার্বোহাইড্রেট (শর্করা) জাতীয় খাবার এখানে প্রোটিনের মাত্রা তুলনামূলক ভাবে কম ও কারন ভুট্টায় এসেনশিয়াল এমাইনো এসিড লাইসিন ও ট্রিপ্টোফ্যান খুবই কম পরিমানে পাওয়া যায়।
ফার্মেন্টেট কর্ন তৈরির প্রক্রিয়া:
পাউডার লাইভ ঈস্ট কে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার জন্য দরকার কুসুম গরম পানি সাথে তাকে কর্মক্ষম করার জন্য চাই একটু খাবার, যেমন চিনি/গুড়। শুধু ভুট্টার মিহি গুড়োতে দিলেও হবে তবে সময় লাগবে।
পদ্ধতি-
ভুট্টার মিহি গুড়ো= ১ কেজি, চিনি/গুড় সামান্য পরিমানে (৩-৫গ্রাম), পানি ২০-২৫ মিলি ও ঈস্ট= ৪-৫ গ্রাম।
প্রথমে একটি গ্লাসে ২০-২৫ মিলি কুসুম কুসুম গরম পানি নিয়ে সেখানে চিনি/গুড় মিশিয়ে নিয়ে ৫ গ্রাম ঈস্ট মিশিয়ে নেই। এতে ঈস্ট তার স্বাচ্ছন্দ্য পরিবেশ ও খাবার পেয়ে দ্রুত জেগে ও কর্মক্ষম হয়ে উঠবে। এজন্য ১০ মিনিট সময় আমরা অপেক্ষা করতে পারি।
শুরুতে এক কেজি মিহি ভুট্টাকে পরিমানমত পানি দিয়ে পেস্ট এর মত করে নিতে হবে। এর পর এই পেস্ট ভুট্টার সাথে ঈস্ট মিশ্রনটি ভালভাবে মিশিয়ে নেই। এবার ঐ ঈস্ট সহ ভুট্টার মিশ্রনকে যে কোন পাত্রের মধ্যে রেখে কমপক্ষে ১২ ঘন্টা এয়ারটাইট (বায়ু/অক্সিজেন নিরোধক) করি। এর পর তৈরি হয়ে গেলো ফার্মেন্টেট কর্ন।
ফার্মেন্টেশন কর্ন খাওয়ানোর উপকারীতাঃ
১। গুড়ো ভুট্টায় উচ্চ পরিমানে আফলাটক্সিন (Aflatoxins) এর উপস্থিতি থাকে। ভুট্টা ফারমেন্টেশন করলে আফলাটক্সিন এর কার্যকারিতা থাকে না।
২। ভুট্টা ফার্মেন্টেশন করা হলে এর পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি হয় ও সহজে হজমযোগ্য করা যায়।
৩। এসিডোসিস হওয়ার ঝুকিঁ কমে যায়।
বেশি পরিমানে খাওয়ানোর অপকারীতাঃ
১। রেশনে বেশি পরিমানে ব্যবহার করলে গরুতে অতিরিক্ত Fat জমা হতে পারে ফলে অন্যান্য জটিলতা হতে পারে।
২। যেহেতু শুধু ভুট্টায় প্রোটিন এর মাত্রা কম তাই রেশনে বেশি পরিমানে ব্যবহার করলে মোট রেশনে প্রোটিনের মাত্রা কমে যাবে ফলে মাংস বৃদ্ধির থেকে চর্বী জমা বেশি হবে।
কি পরিমানে খাওয়ানো যায়?
ভুট্টা Energy এর পরিমান ৩৮৪০kcl এবং প্রোটিন ১০-১১%। ফলে বেশি পরিমানে খাওয়ালে Fat(চর্বি) এর পরিমান বেশি হবে। এটি মোট দানাদার এর পাচঁ ভাগের এক ভাগ হিসেবে খাওয়ানো যেতে পারে।
শেষ কথা, ঈস্ট এক ধরনের প্রোবায়োটিক; ফলে নিয়ম মেনে গরুর যে কোন খাবারের সাথেই আমরা ঈস্ট কে ব্যবহার করতে পারি। নারিশ কোম্পানি ক্যাটল/ডেইরী ফিডে সবসময় ঈস্ট ব্যবহার করে থাকে।
ধন্যবাদন্তে
ডাঃমোঃ শাহ্-আজম খান
ডিভিএম, এমএস ইন এনিমেল সায়েন্স (হাবিপ্রবি)
সিনিয়র সিএসও (ক্যাটল বিভাগ)
নারিশ পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী লিমিটেড