বাণিজ্যিকভাবে ছাগল পালন
বাণিজ্যিক ভাবে ছাগল-পালন করার সময় বিষয়গুলো মেনে চলুন ।
খামার এলাকার বেড়া বা নিরাপত্তা বেস্টনীগুলো এমনভাবে নির্মান করুন যাতে সেখানে অনাকাংখিত ব্যক্তি, শেয়াল-কুকুর ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী প্রবেশ করতে না পারে ।
প্রবেশপথে ফুটবাথ বা পা ধোয়ার জন্য ছোট চৌবাচ্চায় জীবাণুনাশক মেশানো পানি রাখতে হবে ।
খামারে প্রবেশের আগে খামারে গমনকারী তার জুতা/পা ডুবিয়ে জীবাণুমুক্ত করবেন।
খামারের জন্য সংগৃহীত নতুন ছাগল সরাসরি খামারে পূর্বে বিদ্যমান ছাগলের সাথে রাখা যাবে না ।
নতুন আনীত ছাগলদেরকে স্বতন্ত্র ঘরে সাময়িকভাবে পালনের ব্যবস্থা করতে হবে । এ ধরনের ঘরকে পৃথকীকরণ ঘর বা আইসোলেশন সেড বলে ।
অন্ততপক্ষে ১২-১৪দিন এই সেডে রাখা বিশেষ জরুরি । এসব ছাগলের জন্য প্রাথমিক কিছু চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে । প্রথমে এদেরকে কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে ।
এজন্য বহিঃপরজীবী এবং আন্তঃ পরজীবীর জন্য কার্যকর কৃমিনাশক প্রয়োগ করতে হবে । চর্মরোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি ছাগলকে (০.৫%) শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ ম্যালাথিয়ন দ্রবণে গোসল করাতে হবে ।
আইসোলেশন শেডে ছাগল রাখার পর ১৪ দিনের মধ্যে যদি কোনো রোগ না দেখা দেয় তাহলে প্রথমে পিপিআর রোগের ভ্যাকসিন এবং সাত দিন পর গোটপক্সের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে ।
শেষ টিকা প্রদানের সাত দিন পর এসব ছাগলকে মূল খামারে নেয়া যেতে পারে । প্রতিদিন সকাল এবং বিকালে ছাগলের ঘর বা সেড পরিষ্কার করতে হবে ।
কোনো ছাগল যদি অসুস্থ হয় তাহলে তাকে আলাদা করে আইসোলেশন শেডে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে ।
যদি কোনো ছাগল মারা যায় তবে অবশ্যই তার কারণ সনাক্ত করতে হবে ।
ল্যাবরেটরিতে রোগ নির্ণয়ের পর তদনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বিশেষ করে অন্যান্য ছাগলের অন্য নিতে হবে ।
মৃত ছাগলকে খামার থেকে দূরে নিয়ে মাটির গভীরে পুতে বা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে ।
রোগাক্রান্ত ছাগলের ব্যবহার্য সকল সরঞ্জামাদি ও দ্রব্যাদি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে ।
ছাগলের ঘর, সেড বা বাসগৃহঃ
ছাগলের ঘর শুষ্ক, উচুঁ, পানি জমেনা এমন স্থানে স্থাপন করতে হবে ।
পূর্ব পশ্চিমে লম্বালম্বি, দক্ষিণ দিক খোলা এমন হলে ভাল হয় । এক্ষেত্রে কাঠাঁল, ইপিল ইপিল, কাসাভা ইত্যাদি গাছ লাগানো যেতে পারে ।
এছাড়া পানি নিষ্কাশনের জন্য উত্তম ব্যবস্থা আছে এমন স্থানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে । ছাগল ঠাসাঠাসি অবস্থায় বাস করতে পছন্দ করে না । এরা মুক্ত আলো বাতাস এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে থাকতে পছন্দ করে ।
এক জোড়া ছাগলের জন্য ৫-৬ ফুট লম্বা, ১.৫-২ ফুট চওড়া এবং ৬-৭ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট খোয়াঁড় প্রয়োজন ।
প্রতিটি পূর্ণ বয়স্ক ছাগলের জন্য গড়ে ১২-১৪ বর্গ ফুট এবং বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য ৪-৮ বর্ঘ ফুট জায়গা প্রয়োজন ।
ছাগলের ঘর ছন, গোলপাতা, খড়, টিন বা ইট নির্মিত হতে পারে । তবে ঘরের ভিতর কাঠের মাচা প্রস্তুত করে তার উপর ছাগল রাখা উচিত । মাচার উচ্চতা মাটি থেকে ১ মিটার বা (৩.৩৩ ফুট) এবং মাচা থেকে ছাদের উচ্চতা ৮-১০ ফুট হবে ।
মল-মূত্র নিষ্কাষনের গোবর ও চনা সুবিধার্থে কাঠের মাঝে ১সেঃ মিঃ ফাক লাখতে হবে ।
মল-মুএ গুলো যেন মাচা থেকে পড়ার সাথে সাথে ড্রেনে চলে যায় সেভাবে সেড তৈরী করতে হবে । বৃষ্টি যেন সরাসরি ঘরের ভিতর প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য ছাগলের ঘরের চালা (৩-৩.৫ ফুট) ঝুলিয়ে দিতে হবে ।
শীতকাল ছাড়াও সেডের চারপাশে তৃপাল বা পর্দার ব্যবস্থা রাখতে হবে ।
পাঠাঁর জন্য অনুরূপভাবে পর্যাপ্ত আলো বাতাস ও মল-মূত্র নিষ্কাষনের উত্তম সুবিধাযুক্ত পৃথক খোয়াড় তৈরি করতে হবে ।
শীতকালে মাচার উপর ১.৫ ইঞ্চি পুরু খড় বিছিয়ে তার উপর ছাগল রাখতে হবে । প্রতিদিন ভালোভাবে পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকিয়ে পুনরায় বিছাতে হবে ।
ছাগলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাঃ
একথা মনে রাখা প্রয়োজন যে মুক্তভাবে ছাগল প্রতিপালনের তুলনায় আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন অনেক বেশি ঝুকিপূর্ণ ।
এ ব্যবস্থায় বৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনা ও প্রযুক্তির সমন্নয় না ঘটালে খামারীকে বিস্তর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । এটা একটি বাস্তব উপলদ্ধি । এজন্য ছাগলের সুখ-সাচ্ছন্দ্য ও স্বাস্থ্যর প্রতি খামারীকে স্বতন্ত্র ভাবে দৃষ্টি দিতে হবে ।
ছাগলের খামারে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে ।
তাই বিভিন্ন রোগ দমনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া অত্যন্ত জরুরি । তা না হলে খামার থেকে লাভের আশা করা যাবে না ।
খামারে ছাগল-আনার পর থেকে প্রতিদিনই প্রতিটা ছাগলের স্বাস্থ্যের দিকে থেয়ল করতে হবে । প্রথম পাঁচ দিন সকাল ও বিকালে দুবার থার্মোমিটার দিয়ে ছাগলের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে ।
হঠাৎ কোনো রোগ দেখা মাত্রই পশু চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে ।
তীব্র শীতের সময় ছাগী বা বাচ্চাদের গায়ে চট পেঁচিয়ে দেয়া যেতে পারে । মাচার নিচ এবং ঘর প্রতিদিন সকালে পরিষ্কার করতে হবে এবং কর্মসূচি অনুযায়ী জীবাণুনাশের ব্যবস্থা নিতে হবে ।
সুস্থ ছাগলের বৈশিষ্ট্যঃ
সুস্থ ছাগলের নাড়ীর স্পন্দন প্রতি মিনিটে ৭০-৯০ বার, শ্বাস-প্রশ্বাস প্রতি মিনিটে ২৫-৪০ বার এবং তাপমাত্রা ৩৯.৫ সেঃ হওয়া উচিত ।
সুস্থ ছাগল দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করে, মাথা সবসময় উঁচু থাকে, নাসারন্ধ থাকবে পরিষ্কার, চামড়া নরম, পশম মসৃন ও চকচকে দেখাবে এবং পায়ু অঞ্চল থাকবে পরিচ্ছন্ন ।
ছাগল সুস্থ রাখতে যেসব ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা আবশ্যক সেগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
কর্মসূচি অনুযায়ী টিকা প্রদানঃ
ভাইরাসজনিত রোগ যেমন পিপিআর, গোটপক্স, ক্ষুরারোগ ইত্যাদি এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ
যেমন এনথ্রাক্স, ব্রুসেলোসিস ইত্যাদি খুবই মারাত্মক বলে এগুলোর বিরুদ্ধে যথারীতি টিকা প্রদান করতে হবে ।
যেসব ছাগীকে পূর্বে পিপিআর, গোটপক্স, একথাইমা, ব্রুসেলোসিস ইত্যাদি টিকা দেয়া হয়নি তাদেরকে গর্ভের ৫ম মাসে উক্ত ভ্যাকসিনগুলি দিতে হবে ।
বাচ্চার বয়স যখন ৫ মাস তখন তাকে পিপিআর ভ্যাকসিন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দিতে হবে ।
ছাগলের টিকা প্রদান কর্মসূচিঃ
পিপিআর ১ মিঃ চামড়ার নীচে ইন্জেকশন
ক্ষুরা রোগ ১ মিঃ চামড়ার নীচে ইন্জেকশন
এ্যানথ্র্যাক্স ১ মিঃ চামড়ার নীচে ইন্জেকশন
কৃমিনাশক ঔষধ প্রয়োগঃ
সকল ছাগলকে নির্ধারিত মাত্রায় বছরে তিনবার কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান করতে হবে ।
কৃমিনাশক কর্মসূচি অনুসরণের জন্য পশু চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
ব্ল্যাক বেঙ্গল বা বেঙ্গল ছাগলের কিছু তথ্য
ব্ল্যাক বেঙ্গল বা বেঙ্গল ছাগলের কিছু বৈশিষ্ট্যঃ
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বক্ষস্থল চওড়া, কান কিছুটা উপরের দিকে ও শিং ছোট থেকে মাঝারী আকৃতির হয়ে থাকে ।
দেহের গড়ন আটসাট পা অপেক্ষাকৃত খাটো ও এবং লোম মসৃন হয়।
ব্ল্যাক বেঙ্গল বা বেঙ্গল পালনের সুবিধাঃ
সাধারণতঃ ১২-১৫ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয় ।
একটি ছাগী বছরে দুইবার বাচ্চা প্রসব করলেও উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় ছাগী ২-৮ টি পর্যন্ত বাচ্চা পাওয়া যেতে পারে ।
২০ কেজি দৈহিক ওজন সম্পন্ন একটি ছাসী থেকে কমপক্ষে ১১ কেজি খাওয়ার যোগ্য মাংস এবং ১.-১.৪ কেজি ওজনের অতি উন্নতমানের চামড়া পাওয়া যায়।
ব্ল্যাক বেঙ্গল বা বেঙ্গল ছাগলের চামড়া একটি অতি মূল্যবান উপজাত ।
পাঠাঁর ক্ষেত্রেঃ
* পাঠাঁর বয়স ১২ মাসের মধ্যে হতে হবে, অন্ডকোষের আকার বড় এবং সুগঠিত হতে হবে ।
* পিছনের পা সুঠাম ও শক্তিশালী হতে হবে ।
* পাঠাঁর মা, দাদী বা নানীর বিস্তারিত তথ্যাদি (অর্থাৎ তারা বছরে ২ বার বাচ্চা দিত কীনা, প্রতিবারে একটির বেশি বাচ্চা হতো কীনা, দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ইত্যাদি গুণাবলী) সন্তোষজনক বিবেচিত হলেই ক্রয়ের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে ।
ছাগীর ক্ষেত্রেঃ
* নির্বাচিত ছাগী হবে অধিক উৎপাদনশীল বংশের ও আকারে বড় ।
* নয় বা বার মাস বয়সের ছাগী (গর্ভবতী হলেও কোনো সমস্যা নেই) কিনতে হবে ।
* ছাগীর পেট তুলনামূলকভাবে বড়, পাজরের হাড়, চওড়া, প্রসারিত ও দুই হাড়ের মাঝখানে কমপক্ষে এক আঙ্গুল ফাঁকা জায়গা থাকতে হবে ।
* নির্বাচিত ছাগীর ওলান সুগঠিত ও বাঁট সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে ।
বয়স নির্ণয়ঃ
ছাগলের দাঁত দেখে বয়স নির্ধারণ করতে হয় । বয়স ১২ মাসের নিচে হলে দুধের সবগুলোর দাঁত থাকবে, ১২-১৫ মাসের নিচে বয়স হলে স্থায়ী দাঁত এবং ৩৭ মাসের ঊর্ধ্বে বয়স হলে ৪ জোড়া স্থায়ী দাঁত থাকবে ।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়াদিঃ
গ্রহণযোগ্য ছাগল অবশ্যই সকল ধরনের সংক্রামক ব্যাধি, চর্মরোগ, চক্ষুরোগ, যৌনরোগ ও বংশগত রোগমুক্ত হতে হবে ।
পিপিআর খুবই মারাত্মক রোগ বিধায় কোনো এলাকা থেকে ছাগল সংগ্রহ করার আগে উক্ত এলাকায় পিপিআর রোগ ছিল কীনা তা জানতে হবে ।
উক্ত এলাকা কমপক্ষে ৪ মাস আগে থেকে পিপিআর মুক্ত থাকলে তবেই সেখান থেকে ছাগল সংগ্রহ করা যেতে পারে ।
মহান আল্লার দরবারে “শিপ এন্ড গট ফার্মিং বাংলাদেশ”সহ আপনাদের সকলের ব্যবসায়িক জীবনের সাফল্য কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি, আল্লাহ হাফেজ ।
Courtesy to Rofaka Agro Plant
ছাগল (Goat):—
‘ ‘গরীবের গাভী’ বলে পরিচিত ছাগল এদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের অন্যতম বাহন।
বাংলাদেশের যে নিজস্ব ছাগলের জাত রয়েছে তা’হল ‘ব্ল্যাক বেংগল’ জাতের ছাগল ।
দ্রুত প্রজননশীলতা উন্নত মাংস ও চামড়ার জন্য ‘ব্ল্যাক বেংগল’ ছাগল পৃথিবীর সেরা ।
বর্তমানে অনেক বেকার যুবক এমনকি যারা বেশি বিনিয়োগ করতে পারবেন তারাও ছাগল পালনের ক্ষেত্রে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে ।
ছাগল পালনে শুধু যে প্রোটিনের চাহিদা পুরণ হবে তাই নয়; এতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব হবে ।
ছাগল সংগ্রহ:
ছাগল সংগ্রহ করা একটি বড় সমস্যা ।যদিও বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আমাদের এই বিশ্বখ্যাত ‘ব্ল্যাক বেংগল ‘জাতের ছাগল ।
সরাসরি গ্রাম থেকে সংগ্রহ করতে পারলে অতি উত্তম ।তবে বড় আকারের খামার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ছাগল সংগ্রহ করা একটি বড় সমস্যা ।
অনেকেই হাট- বাজার থেকে এক সাথে অনেক ছাগল সংগ্রহ করে থাকেন যা মোটেই কাম্য নয় ।
এক সাথে অনেক ছাগল সংগ্রহ করলে যে সমস্যা হয় তা’ অনেকাংশেই মোকাবিলা করতে হিমশিম খেতে হয় ।
বিশেষ করে আমাদের দেশের হাট- বাজার গুলো রোগ জীবাণুর ডিপো হিসেবে কাজ করে; যার ফলশ্রুতিতে হাট-বাজার থেকে সংগ্রহকৃত ছাগল সমূহ অতি সহজেই রোগে আক্রান্ত হয়।বিশেষ করে ‘পি পি আর ‘রোগ ।
এই ‘পি পি আর ‘ রোগ হলো ভাইরাস জনিত ছোঁয়াচে রোগ ।
এই রোগ ছাগলের প্রতি অতি সংবেদনশীল ।মৃত্যুর হার অনেক বেশি ।
এক কথায় বলা যায় এই রোগ খামারে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরে ।চিকিৎসায় তেমন কোন ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না ।
এই রোগের কবল থেকে রক্ষা পেতে হলে ছাগলকে অবশ্যই ‘পি পি আর ‘ রোগের টিকাবীজ প্রয়োগ করতে হবে ।
এই টিকাবীজ একবার প্রয়োগ করলে তিন বছর পর্যন্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে ।
তবে আমাদের দেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব যেহেতু বেশি তাই বছরে অন্তত একবার টিকাবীজ প্রয়োগ করা দরকার ।
মা-বাবা ছাগলকে ঠিকমতো টিকাবীজ প্রয়োগ করা থাকলে নতুন প্রজন্মের বাচ্চা ছাগলকে তিন মাস বয়সী হলে এই টিকাবীজ প্রয়োগ করতে হবে ।
তাই টিকাবীজ প্রয়োগের ইতিহাস সঠিকভাবে জেনে ছাগল সংগ্রহ করতে পারলে অতি উত্তম ।
যেহেতু আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাট বাজার থেকে ছাগল সংগ্রহ করা হয় সে ক্ষেত্রে ছাগলকে ঠিকমতো টিকাবীজ প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা তা জানা খুবই দুষ্কর ।
তাই হাট বাজার থেকে ছাগল সংগ্রহ করা ছাগল খামারের ভেতরে থাকা ছাগলের সংস্পর্শে আসতে দেওয়া কোন ভাবেই কাম্য নয় ।হাট বাজার থেকে সংগ্রহকৃত ছাগল সমূহ কমপক্ষে দুই সপ্তাহ অন্যত্র রেখে পর্যবেক্খণ করতে হবে শারীরিক অবস্থার ।
এই সময় ছাগল অসুস্থ হলে অবশ্যই চিকিৎসা করতে হবে ।চিকিৎসা শেষে ছাগল সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হলেই কেবল তাদেরকে খামার প্রবেশ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।নচেৎ নয়।
অসুস্থ ছাগল কোন অবস্থাতেই সুস্থ ছাগলের সাথে মিশতে দেয়া যাবে না ।
এমনকি বহিরাগত কোন সুস্থ ছাগলও কমপক্ষে দুই সপ্তাহ পর্যবেক্খণ না করে সুস্থ ছাগলের সংস্পর্শে আসতে দেওয়া কোন ভাবেই কাম্য হবে না ।
নতুন ছাগল খামারি:
যারা নতুন ছাগল খামারি তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পরে।
কারণ তারা কোন কিছু না বুঝেই এক সাথে অনেক গুলো ছাগল হাট বাজার থেকে সংগ্রহ করে খামারে তোলে ।এতে করে নতুন ছাগল খামারিকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয় ।
যা মোটেও কাম্য নয় ।এমতাবস্থায় ছাগল ‘পি পি আর’ রোগে আক্রান্ত হলে বেশিরভাগ ছাগল মারা যেতে পারে ।
তাই নতুন ছাগল খামারিকে খামারে নতুন ছাগল তোলার পূর্বে একজন দক্ষ ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ অবশ্যই গ্রহণ করা দরকার ।
তা’নাহলে অনাকাঙিক্ষত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে ।তাই ছাগল পালনের ক্ষেত্রে খামারিকে একটু সজাগ থাকতে হবে।
নতুন ছাগল খামারি ছাগল সংগ্রহ করার পর ছাগলগুলোকে প্রথমতঃ সরবতের পানি পান করাতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ নতুন ছাগলগুলোকে যে কোনো ভালো ব্যান্ডের এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন পুশ করাতে হবে।
প্রয়োজনে ছাগলের শরীরের তাপমাত্রা মেপে এনালজেসিক ইনজেকশন পুশ করা যেতে পারে ।
এ ব্যাপারে আগেই একজন দক্ষ ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে ।
নতুন ছাগল সংগ্রহ করার পর ছাগলগুলোকে অবশ্যই পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে ।
তার পেটের অবস্থা, শারীরিক সুস্থতা, শারীরিক তাপমাত্রা, খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা, সরবতের পানি পান করার ইচ্ছা ইত্যাদি ।
নতুন ছাগলকে অনেক ছাগলের মালিক হাটে তোলার আগে পেট ভরে খাইয়ে হাটে নিয়ে আসেন যা কোন ভাবেই কাম্য নয় ।
এতে ছাগলের পেটে সমস্যা দেখা দিতে পারে ।আবার নতুন ছাগল ক্রয় করে নিয়ে আসার পরে বেশি মাত্রায় খেতেও দেওয়া উচিত নয় ।
কারণ এমতাবস্থায় ছাগল বেশি মাত্রায় খুধার্ত থাকলে বেশি মাত্রায় খেয়ে বদহজম রোগে আক্রান্ত হতে পারে ।তাই এ বিষয়ে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ।
ছাগলের খাবার তালিকা: —–
বাণিজ্যিক ছাগলের দানাদার খাদ্যের সাধারণ মিশ্রণ (%)—–
খাদ্য উপাদান- ———”——————–শতকরা হার(%)
চাল/গম/ভূট্টা ভাংগা ——–”———–35.00
গমের ভূষি/রাইচ পলিশ- ———-””—-24.oo
খেসারী/মাসকলাই/ডালের
ভূষি———-””—————————— 16.oo
সয়াবিন/ তিল/সরিষার খৈল- ———-20.00
শুঁটকি মাছের গুড়ো- ———————-01.50
ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট- ————–02.00
খাদ্য লবণ- —————-‘——————-02.00
ভিটামিন- মিনারেল প্রি-মিক্স
লুমিভিট ডি বি —————–‘———”’—00.50
————‘-‘—””———————————-‘——‘———
মোট= 100.00
বিঃদ্রঃ– এই ধরনের মিশ্রণে প্রতি কেজিতে 10 মেগাজুল বিপাকীয় শক্তি এবং 62 গ্রাম বিপাকীয় প্রোটিন থাকতে পারে ।