১০ টি বিষয় জানলে আপনার গর্ববতী গাভীটি থাকবে নিরাপদ !
১ / বাচ্ছা প্রসবের সঠিক সময় জানা।
এটি হচ্ছে গর্ববতী গাভির নিরাপত্তার প্রথম ধাপ। গর্ববতী গাভির সুরক্ষার জন্য আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে প্রাকতিক বা কৃত্রিম উপায়ে প্রজনন (বীজ দেওয়া) করানোর কত দিন পর বাচ্ছা হবে যাকে আমরা গর্বধারন কাল বলি। একটি গাভিকে বীজ দেয়ার পর ২৭০ থেকে ২৯০ দিনের মধ্যে সাধারনত বাছ্চা দেয়।তাই আপনাকে বীজ দেয়ার পরই জেনে নিতে হবে সম্ভাব্য কত দিন পর গাভিটি বাচ্ছা দিবে পারে। সেই হিসেবে আপনাকে প্রস্ততি নিতে হবে। এই ক্ষেত্রে আপনি কৃত্তিম প্রজনন কর্মীর কাছ থেকে লিখে নিতে পারেন সম্ভাব্য কত দিন পর গাভিটি বাচ্ছা দিতে পারে।
২/ আলাদা বাসস্হান।
গর্ব কালের ৭ মাস পর্যন্ত গাভির দেখা শোনা, খাদ্য, পরিচর্যা দুধ দোহন সবই স্বাভাবিক ভাবে চলতে থাকবে। কিন্তু ৭ মাসের পরার সাথে সাথে গাভিটি বিশেষ যত্ন প্রত্যাশা করে। কারণ এই সময় থেকে গর্ভস্হ বাচ্ছাটি বৃদ্ধি খুব দ্রত হয়। এ বাড়তি পরিচর্যার প্রথম কাজ হিসেবে গাভিটি কে অন্যান্য গাভি থেকে আলাদা করতে হবে। এই সময় গাভির পূর্ন বিশ্রাম দরকার হয়। আর দিতে হবে বাড়তি খাবার, বাড়তি পরিচর্যা। থাকার ঘরটি গাভির উপযোগী হতে হবে।
তাছাড়া এক সাথে থাকলে এই গাভির উপর অন্য গাভি বা গরু লাফ দিয়ে উঠতে পারে। ফলে গর্বের বাচ্ছা নষ্ট হতে পারে। তাই সাবধান।
৩/ স্বাস্হ্যকর পরিবেশ।
যে ঘরে আপনি গর্ভবতী গাভিকে রাখবেন সেটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া চাই। যাতে কোন ধরনের জিবানু সংক্রমন না হয়। আর ঘরে অবশ্যই পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্হা থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যাতে গরু নড়া চড়া ও উঠা বসা করার সময় পর্যাপ্ত জায়গা থাকে। কারণ এসময় একটি ধাক্কা খেলেও গর্ভপাত হতে পারে। গর্ববতী গাভির ঘর প্রতিদিন পরিস্কার করতে হবে। প্রয়োজনে হালকা জীবানু নাশক মিশিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। এতে করে ঘরে রোগ জিবানুর পরিমান কমে যাবে।
গাভির থাকার জায়গা খড় বিছিয়ে দিয়ে আরাম দায়ক বিছানা তৈরী করতে হবে। খড়ের সরবরাহ কম হলে প্রতি দিন রোদে শুকিয়ে দিতে পারেন। তবে বিছানার খড় নোংরা হয়ে গেলে তা পরিষ্কার করে নতুন খর দিতে হবে।
৪/ গর্ভাবস্হার ৭-৮ মাসে দুধ দোহন বন্ধ করতে হবে। তবে তা হঠাত করে নয়। দুধের প্রবাহ বন্ধ না হলে দানাদার খাদ্য কিছুটা কমিয়ে দিতে হবে, গাভির স্বাস্হ্য যাতে ভেঙ্গে না যায় সেদিতে খেয়াল রাখতে হবে।
৫/ গাভিকে শান্ত রাখতে হবে।
গর্ভাবস্হা গাভির জন্য শান্ত ঝামেলা মুক্ত পরিবেশ খুব প্রয়োজন। এই অবস্হায় গাভিকে কোন ভাবেই ভয় পাওয়ানো বা উত্তেজিত করা যাবেনা। অস্হির হয়ে হয়ে লম্প ঝম্প হয়ে করতে গিয়ে গর্ভের বাচ্ছার ক্ষতি হতে পারে।
৬/ অতিরিক্ত সুষম খাদ্য।
দুধ উৎপাদন কারী গর্ভবতী গাভির দুধ উৎপাদনের শেষ ভাগে দেহের জমানো ভিটামিন, মিনারেল চর্বি ও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান সমূহ দুধের ম্যাধ্যমে প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায়। গর্ভাবস্হার শেষের দিকে গর্ভাস্হ বাচ্চাটি দ্রত বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই এই সময় গাভির স্বাস্হ্য রক্ষার জন্য ও গর্ভস্হ বাচ্চার স্বাভাবিক বাড়ন অক্ষুন্ন রাখার জন্য২-৩ মাস অতিরিক্ত সুষম খাদ্য ও বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
গাভির স্বাস্হের অস্হার উপর ভিত্তি করে এ সময় কাঁচা ঘাসের সাথে এসময় ২-৩ কেজি দানাদার খাদ্য খাওয়ালে ভাল হয়। গর্ভাবস্হার শেষ দিকে গাভির সুষ্টু যত্ন ও সুষম খাদ্যের অভাব হলে গাভি ও গাভির বাচ্চার স্বাস্হ্যহানি ঘটে। অপর দিকে দুধ উৎপাদন কমে যায়। এমন কি গাভি মারাত্নক দুধ জ্বর বা (Milk Fevr আক্রান্ত হতে পারে।
আর খেয়াল রাখতে হবে গাভির জন্য যাতে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধপানি পানের ব্যবস্হা থাকে। শীতের সময় কুসুম গরম পানি খাওয়াতে পারলে খুব ভাল হয়। আর গরমের দিনে হলে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। এতে করে পেট ফাঁপা,ঠান্ডা লাগা, সর্দি কাশি, নিওমোিনয়া ইত্যদি বিভিন্ন ঝামেলা থেকে গাভিটি এবং তার সাথে সাথে তার অনাগত বাচ্চাটি মুক্ত থাকবে।
৭/ বাচ্চা প্রসবের পূর্ববর্তী সপ্তাহে গাভিকে (বাচ্চা প্রসব ঘরে) স্হানান্তর ।
বাচ্চা প্রসবের ২-৩ দিন পূর্বে গাভির ওলান ও
যোনিমুখ স্ফিত হয়। এসময় গাভিকে বাচ্চা বাচ্চা প্রসবের ঘরে নিয়ে আসতে হবে। তা যদি সম্ভব না হয় তা হলে অন্তত পক্ষে এমন একটি ঘরে রাখতে হবে যে ঘর নিরাপদ ও সব সময় চোখে চোখে রাখা যায়।
৮/ গাভির যোনি মুখ বের হওয়া ঠেকানো।
এই সমস্যার কারনে বিপদে পরেছে এই রকম অনেকেই আছে। যদি তাই হয়ে থাকে তা হলে আপনার আর বিড়ম্বনার শেষ নেই। আর এই সমস্যা হয় যখন বাচ্চা দেয়ার সময় ঘনিয়ে আসে। আর এই সমস্যার মুল কারণ কোঠ্ষ্য কাঠিন্য অথবা হতে পারে তার মধ্যে কোন নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিন মিনারেলের অভাব রয়েছে। যদি তাও না হয় তা হলে বুঝতে হবে গাভিটি খুবিই দুর্বল।
এই ঘটনা না হওয়ার জন্য আপনাকে আগে থেকেই প্রস্ত্তত থাকতে হবে। সেটা কি?? সেটা হলো বাচ্চা দেয়ার ২-৩ সপ্তাহ আগে থেকে গাভিকে সহজে হজম হয় এবং শরীর ঠান্ডা থাকে এমন খাবার দিতে হবে। আর খাবার যদি রসালো এবং আশঁ যুক্ত হয় তা হলে ভাল হয়।
৯/ ওলান ফোলা প্রতিরোধ।
এই রোগটা অনেক সময় আপনার কষ্টের কারন হতে পারে। সাধারনত বাচ্চা দেয়ার সময় যখন সন্নিকটে হয় তখন এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যদি এ সমস্যা থেকে গাভিকে মুক্ত রাখতে চান তা হলে গরুকে প্রতিদিন ব্যায়াম মানে হাটানোর অভ্যাস করুন। সেটা হতে পারে প্রতিদিন আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা দেখবেন খুব ভাল ফল দিচ্ছে, আর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন অবশ্যই।
১০/ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পুরন।
গর্ভ কালের শেষের দিকে বাচ্চার বৃদ্ধি যখন খুব দ্রত হতে থাকে তখন আপনাকে খাদ্য তালিকায় অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম যুক্ত করতে হবে। কিন্তু কতটুকু? তা নির্ভর করবে গাভির শারীরিক অবস্হার উপর। তবে কোন অবস্হাতেই গাভিকে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিতে ফেলা যাবেনা। কারন এই সময় ক্যালসিয়ামের অভাবে বাচ্চার বৃদ্ধি মারাত্নক ভাবে ক্ষতি গ্রস্হ হবে। তা ছাড়া সব চেয়ে বড় সমস্যা হবে প্রসব কালীন সমস্যা, প্রসবের পর গর্ভফুল না পড়া। প্রসবের পর গাভি শুয়ে পড়া সহ নানাবিধ সমস্যা আপনাকে অস্হির করে তুলবে।
collected