বাছুরের জন্য আঁশ ও দানাদার খাদ্যঃ
বাছুরকে জন্মের ১ মাস পরেই কিছু কিছু কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাদ্যে অভ্যস্ত করে তুলতে হয়।
২ মাস বয়স হতে পরিমিত সহজপাচ্য আঁশ জাতীয় খাদ্য এবং দৈনিক ২৫০ গ্রাম-৫০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
বয়স অনুসারে ক্রমান্বয়ে দানাদার খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪ মাস বয়সে দৈনিক প্রায় ৭৫০ গ্রাম, ৬-৯ মাস বয়স পর্যন্ত ১ কেজি এবং এক বৎসর বয়সে দৈনিক ১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
অনুরূপ কাঁচা ঘাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দৈনিক ৬-৮ কেজি পর্যন্ত দিতে হবে।
বাছুরের জন্য দানাদার খাদ্য
উপাদান নমুনা-১ নমুনা-২
গমের ভূষি ৩.৫ কেজি ৬.৫ কেজি
খেসারী ভাঙ্গা ১.৫ কেজি ২.৫ কেজি
ছোলা ভাঙ্গা ১ কেজি —
গম/ভূট্টা ভাঙ্গা ২.৫ কেজি —
তিলের খৈল ১ কেজি ৫০০ গ্রাম
খনিজ মিশ্রণ ৪০০ গ্রাম ৪০০ গ্রাম
লবণ ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম
সর্বমোট = ১০ কেজি ১০ কেজি
জন্মের পর বাছুরের পরিচর্যাঃ
বাছুর জন্ম নেওয়ার পর কিছু বিষয়ে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে কেননা এ সময়টা বাছুরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন।
বাছুর জন্ম নেওয়ার পর যে সব বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন সেগুলি হলঃ
★বাছুর জন্ম নেওয়ার সাথে সাথে বাছুরের নাক এবং মুখ ভালভাবে পরিষ্কার করে দিতে হবে যাতে বাছুর সহযেই শ্বাস নিতে পারে।
★এরপর বাছুকে তার মায়ের সামনে এনে রেখে দিলে মা তার শরীল চাটবে যার ফলে বাছুরের শরীলের রক্ত চলাচল বাড়বে এবং বাছুর উঠে দাড়াতে সক্ষম হবে এবং মায়ের শরীলে এক ধরনের হরমোন উৎপন্ন হবে ফলে ওলানে দুধ আসবে।
★পরিষ্কার দাড়ালো কোন ব্লেড বা কাচি দিয়ে বাছুরের নাভি গোরা থেকে ২ ইঞ্চি রেখে কেটে দিতে হবে।
★ নাভী কাটার পর ৭% টিনচার আয়োডিন সলুসন বা আরও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সলুসন দিয়ে নাভী পরিষ্কার করে দিতে হবে যাতে কোন জীবানু আক্রমন না করতে পারে।
★বাছুর জন্মের পর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শাল দুধ খাওয়ানো।বাছুর জন্মের ২ ঘন্টার মধ্য কমপক্ষে বাছুরকে ২ লিটার শালদুধ খেতে দিতে হবে।
সাধারনত বাছুরকে তার মোট ওজনের ১০% হারে দুধ খাওয়াতে হয়।
তবে বাছুর জন্মের পর প্রথম ৫-৭ দিন পরিমান মত শাল দুধ খাওয়াতে হবে।
বাছুর জন্মের পর যেভাবে দুধ খাওয়াতে পারেন-
*১ম সপ্তাহ-২ লিটার
*২য় সপ্তাহ-৩ লিটার
*৩য়-১২ সপ্তাহ-৪ লিটার
*১৩-১৬ সপ্তাহ-৩লিটার
*১৭-২০ সপ্তাহ-২ লিটার
*দুধ ছাড়ার আগ পর্যন্ত -১ লিটার।
৬-৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত বাছুরকে দৈনিক নির্দিষ্ট সময়ে দুধ খাওয়াতে হবে।
এর পর বাছুর ধীরে ধীরে আশ ও দানাদার খাদ্য গ্রহনে অব্যস্থ হয়ে উঠে।
★অনেক ক্ষেত্রে বাছুর জন্মের পর পর্যাপ্ত পরিমানে শাল দুধ খেতে দেওয়া হয় না যার ফলে বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে যায়।বিভিন্ন রোগ থেকে বাছুর কে রক্ষা করার জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত দুধ খেতে দিতে হবে।
★বাছুর জন্মের ৭-১৪ দিনের মধ্যই কৃমি মুক্ত করতে হবে।প্রথম ডোজ দেওয়ার ২ সপ্তাহ পর ২য় ডোজ দিতে হবে।
লেখকঃVet Nayem
বাছুরের খাদ্য ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনা:
জন্মের পর থেকে অন্তত: ৩ মাস বয়স পর্যন্ত বাছুরকে নিয়মিত অন্তত: দুবেলা মায়ের দুধ খেতে দিতে হবে।
বাছুরের ওজনের ন্যূনতম ১০ ভাগের এক ভাগ অর্থ্যাৎ ২০ কেজি ওজনের বাছুরের জন্য দৈনিক অন্তত: ২ লিটার দুধের প্রয়োজন। অন্যথায় বাছুরের স্বাস্থ্য খারাপ হবে এবং কৃমির আক্রমণ হতে পারে। দু সপ্তাহ পর থেকে বাছুরকে নরম সবুজ কাচা ঘাস ও দানাদার খাদ্য দিতে হবে, এতে পাকস্থলীর পরিপক্কতা আসবে এবং হজম শক্তি বাড়বে।
প্রথম সপ্তাহে ২ লিটার, ২য় সপ্তাহে ৩ লিটার, ৩য় সপ্তাহ থেকে ৩ মাস বয়স পর্যন্ত দৈনিক ৪ লিটার, ৪র্থ মাসে ৩ লিটার দুধ এবং একই সময়ে ২য় সপ্তাহ থেকে যথাক্রমে ২৫০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম ও ৭৫০ গ্রাম কাফ স্টার্টার (দানাদার খাদ্য মিশ্রণ) ও পাশাপশি পরিমানমত নরম সবুজ ঘাস খেতে দিতে হবে।
কাফ স্টার্টারে শতকরা ৫০ ভাগ গমের ভুষি বা ভুট্টা ভাঙ্গা, ২৪ ভাগ ডালের ভূষি ও ছোলা ভাঙ্গা মিশ্রণ, ২৫ ভাগ খৈল ও ১ ভাগ খনিজ লবণ থাকতে হবে।
গাভী অনেক সময় বাছুরকে গ্রহণ করে না
যারা খামারে গাভী পালেন তারা হয়তো অনেকেই এই সমস্যাটির মুখোমুখি আগে হয়েছেন এবং যারা নতুন গাভীর খামার পরিচালনা করতে শুরু করেছেন তারা ভবিষ্যতে এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন।
সাধারণত বেশীর ভাগ গাভীই তাদের বাছুরকে জন্মের সাথে সাথে স্বাভাবিক মাতৃসূলভ আচরণের মাধ্যমে গ্রহন করে নেয় কিন্তু অনেক সময় কিছু কিছু গাভী এর ব্যতিক্রম ঘটায়।
বিশেষ করে বক্না বা হেইফার নতুন মা হওয়া গাভীগুলি। আবার অনেক ক্ষেত্রে কিছু গাভী থাকে যারা সহজে তার স্বীয় বাছুরকে গ্রহণ করতে চায় না,কিছুটা সময় নেয়।
এসব ক্ষেত্রে আসলে কিছু কারণ থাকে যেগুলি তাদের এই ধরনের আচরণের জন্য দায়ী!
নীচে কয়েকটা কারণ উল্লেখ করা হলো
১। প্রসবজনিত জটিলতার কারণে অতিরিক্ত প্রসব বেদনার কারণে বাছুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার বাছুরের প্রতি গাভীর মনযোগের স্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
২। অক্সিটোসিন হরমোনের নিঃসরণ গাভীর দুধ উৎপাদন এবং মাতৃত্বসূলভ আচরণ এই দুই জায়গাতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
প্রসবজনিত জটিলতার কারণে অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটলে গাভীর মাতৃত্বসূলভ আচরণ কমে যায় ফলে বাছুরকে সে গ্রহণ করতে চায় না। এটা সাধারণত বক্না থেকে নতুন মায়ে পরিণত হওয়া গাভীর ক্ষেত্রে বেশী ঘটে থাকে।
৩। অনেক সময় নতুন মা হওয়া গাভী বুঝতে পারে না সে তার বাছুরকে নিয়ে কি করবে,আসলে মাতৃত্ববোধ টা সে বোঝে না!
৪। জন্মের সাথে সাথে বাছুরকে গাভীর সামনে থেকে সরিয়ে ফেললে এবং গাভী তার সদ্যপ্রসূত বাছুরকে চাঁটতে না দিলে। সদ্যপ্রসূত বাছুরের গায়ে যে শ্লেষ্মা বা বার্থ ফ্লুইড থাকে সেটা গাভী চেঁটে বাছুরকে পরিষ্কার করার সময় তার বাছুরকে চিহ্নিত করে নেয়।
এটা খুব জরুরী একটা বিষয়!
সাধারণত উপরোল্লিখিত কারণ গুলিই হচ্ছে গাভী তার সদ্যপ্রসূত বাছুরকে প্রত্যাখ্যান করার মূল কারণ সমূহ।
প্রতিকার
১। গর্ভকালীন সময়ে গাভীর যথাযথ যত্ন নেয়া যাতে প্রসবকালে জটিলতা দেখা না দেয়।
২। হরমোনজনিত কারণে সমস্যা হলে অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি চিকিৎসকের সহায়তা বা পরামর্শ নেয়া।
৩। প্রসবকালীন সময়ে গাভীকে একট আলাদা পরিষ্কার এবং কোলাহলমুক্ত জায়গায় রাখা যাতে প্রসবকালে কোন কারণে সে বিরক্তি বা বিব্রত বোধ না করে।
৪। প্রসবের সাথে সাথে গাভীকে তার বাছুরকে চাঁটতে দেয়া। অনেক সময় নতুন মা হওয়া গাভীগুলি বুঝে না কি করতে হবে, সেক্ষেত্রে একটা চালাকি করা যেতে পারে।
গাভী এই সময় অনেক ক্ষুধার্ত থাকে,তাই হাল্কা গমের ভুষি সদ্য প্রসূত বাছুরের গায়ে ছিটিয়ে দিবেন, দেখবেন গাভী তার বাছুরকে চাঁটবে এবং আস্তে আস্তে সে তার বাছুরকে চিনে নিবে।
৫। গাভী যদি তার বাছুরকে দুধ দিতে না চায় তবে বাছুরকে বোতলে ওই গাভীর দুধ খাওয়াবেন এবং বাছুরের পেছনের অংশে একই গাভীর দুধ কিছুটা মেখে গাভীর মুখের সামনে কিছু সময়ের জন্য ধরে রাখবেন।
আস্তে আস্তে সে তার বাছুরকে গ্রুহণ করে নিবে। যদি গাভী তার বাছুরকে দুধ দিতে না চাইলে প্রয়োজনে গাভীর পেছনের দুই পা বেঁধে বাছুরকে সরাসরি দুধ পান করাবেন। আস্তে আস্তে গাভী স্বাভাবিক হয়ে আসবে। একে ডেইরী সায়েন্সের ভাষায় ফোর্স নার্সিং বলে।
মুক্তি মাহমুদ(পি ডি এফ)