Breaking News
টার্কি শিল্পের সমস্যা ও সম্বাবনা
টার্কি শিল্পের সমস্যা ও সম্বাবনা

#বাংলাদেশে টার্কি : সমস্যা ও সম্ভাবনা

#বাংলাদেশে টার্কি : সমস্যা ও সম্ভাবনা

-চাষী মানিক
পরিচালক
শখের খামার এগ্রো প্রজেক্ট
ও এডমিন
Turkey & Poultry Masters Community School
———-++++++++———-
আমরা খুব ছোটবেলা হতেই জেনে এসেছি বাংলাদেশ একটি #কৃষি প্রধান দেশ। শিল্প কারখানা স্থাপন, দ্রুত নগরায়ন ও অত্যাধিক জনবসতির চাপে দিন দিন আবাদি জমি কমে আসলেও দেশে বর্তমানে ১কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার আছে যারা প্রত্যক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত।

স্বাধীনতার পর হতে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন তিন গুনেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ এবং ভূট্টার উৎপাদন বেড়েছে দশ গুণ। প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসছে বাংলাদেশ।
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কৃষি এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন শীর্ষ চার নম্বরে।
কিছুদিন আগেই হয়ে গেল প্রাণী সম্পদ প্রজনন নীতিমালার খসড়া। নীতিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে প্রাণী সম্পদে বাংলাদেশ অচিরেই এক নতুন দিগন্ত স্পর্শ করবে ইনশাআল্লাহ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সবে অংকুরিত হওয়া টার্কি শিল্পে জড়িত আমরা টার্কি খামারীরা সময়ের আবর্তে ব্রীডিং পলিসিতে কতটুকু এগোতে পেরেছি? উৎপাদন খরচ কমিয়ে লাভজনক ফার্মিং করার বিষয়ে কতটুকু সচেতন হতে পেরেছি?

আন্তর্জাতিক ভাবে #টার্কির মার্কেটেবল এজ বা বাজারজাত করণের বয়স ধরা হয় ২০সপ্তাহ বা ৫মাস। আার এসময় টার্কির গড় ওজন হয় পুরুষ ৭-৮কেজি, মহিলা ৪.৫-৫কেজি।
কিন্তু আামাদের দেশের চিত্র সম্পূর্ন ভিন্ন। দেখা যায় আামরা পূর্ণবয়সে অর্থাৎ ৭মাসেও পুরুষ গুলো ৫-৬কেজি এবং মহিলা গুলো ২.৫-৩কেজি এর বেশী ওজন আানতে পারিনা।

আামরা যারা টার্কি খামারী আাছি, তারা একবারও কি ভেবে দেখেছি বিশ্বের সব দেশেই যদি টার্কি ভাল ওয়েট গেইন করে, তবে আামাদের দেশে কেন করছেনা?
বলতে পারেন ভৌগলিক অবস্থানের কারনে উৎপাদনে কিছুটা প্রভাব পরে। মানলাম আাপনার কথা। কিন্তু আামাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জার্নাল গুলো স্টাডি করলেও টার্কির গড় উৎপাদনের হার আান্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডেই পাওয়া যায়।

ঘুরেফিরে আাবারো সেই একই প্রশ্ন তাহলে আামাদের দেশে হচ্ছেনা কেন?

গত কয়েক বছরের ব্যক্তিগত স্টাডি ও পর্যালোচনায় বাংলাদেশে টার্কির আাশানুরূপ উৎপাদন না পাওয়ার পেছনে যে প্রধান দুটি কারন আামি পেয়েছি তা হচ্ছে –
১। ইনব্রীডিং বা আান্তঃ প্রজনন ডিপ্রেশন।
২। খাদ্য ব্যবস্থাপনার ভুল পদ্ধতির ফলে অপুষ্টি।

উপরোক্ত ২টা ফ্যাক্ট সম্পর্কেই আামাদের দেশের ৯৯% কৃষকের স্বচ্ছ ধারণা নাই। আার সেকারণেই আামরা পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করা সত্ত্বেও লাভের মুখ দেখতে পারছিনা। ইনব্রীডিং এবং টার্কির খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ে ফেসবুকে লেখালেখির পাশাপাশি আামার ইউটিউব চ্যানেলে বেশ আাগেই ভিডিও টিউটোরিয়াল দেয়া হয়েছে। যারা আামার নিয়মিত ভিউয়ারস আাছেন তারা অবশ্যই জানেন। যাইহোক আাজকে আাবারও ইনব্রীডিং নিয়ে আালোচনা করছি। পরবর্তী পোষ্ট গুলোতে টার্কির খাদ্য-পুষ্টি সমস্য ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে বিস্তারিত লিখবো ইনশাআল্লাহ।

>>প্রতিটি প্রাণী তার বংশ পরম্পরায় পূর্ব পুরুষ হতে কিছু বৈশিষ্ট্য পেয়ে থাকে। হোক সেটা ভালো বৈশিষ্ট্য কিংবা মন্দ। আর এই বৈশিষ্ট্যগুলো একটা প্রজন্ম হতে আরেকটা প্রজন্মে স্থানান্তরের জন্য দায়ী হচ্ছে #জীন এবং #ডিএনএ। বিজ্ঞানের ভাষায় এই তত্ত্বকে বলা হয় জেনেটিকস। বিজ্ঞানী গ্রেগর ইউহান মেনডেলকে জেনেটিকস এর জনক বলা হয়। প্রাণী সম্পদ নিয়ে কাজ করতে হলে আমাদের অবশ্যই জেনেটিকস সম্পর্কে সম্যক ধারনা রাখতে হবে। এই #জেনেটিকস এর একটা ফ্যাক্ট বা টার্ম হচ্ছে “ইনব্রীডিং”।

ইনব্রীডিং কি?
————-
#ইনব্রিডিং (Inbreeding) বা অন্তঃপ্রজনন হচ্ছে রক্ত সম্পর্কের নিকটাত্মীয়ের মধ্যে প্রজনন প্রক্রিয়া। অর্থাৎ কাছাকাছি জিনের মধ্যে মিলনের ফলে যে সন্তান জন্ম নিচ্ছে সেটাই ইনব্রিডিং।
জেনেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিকট সম্পর্কযুক্ত পিতামাতা হতে প্রজন্মের সৃষ্টি। যেমন: ক) ভাই + বোন = ইনব্রিড, খ) মা + ছেলে = ইনব্রিড, গ) বাবা + মেয়ে = ইনব্রিড। এভাবে বংশ পরম্পরায় যদি হতে থাকে সেটা ইনব্রিডিং।

পাঠক এবার মস্তবড় খটকায় পরে গেলেন হয়তো !
ছোটবেলা হতে দেখে এসেছেন গ্রামের গৃহস্থ তার পালের সবচেয়ে বড় মোরগটিকে রেখে দেয় পরবর্তী বংশবৃদ্ধির জন্য। আবার ছাগলের বেলায় দেখেছেন একই পাঠা দিয়ে বছরের পর বছর মা, মেয়ে, নাতনী সবাইকে প্রজনন করানো হচ্ছে। তাহলেতো সারা দেশ জুড়েই ইনব্রীডিং রয়েছে।

আার টার্কির ক্ষেত্রেতো এটা হওয়া অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। দেখা যায় কেউ একজন কোথাও হতে কিছু টার্কি সংগ্রহ করেছে সেটা হতেই বছরের পর বছর তার বংশ রক্ষা হচ্ছে। আাবার তার কাছ হতে যারা কিনে নিচ্ছে তারাও সেই একই নিয়মে পালন করছে৷ ব্লাড লাইন চেঞ্জ করা বা আাউট ব্রীডিং করানোর বিষয়ে কোন ধারনাই তাদের নাই।

শুধু টার্কি না আমাদের দেশের দেশী, হাঁস, মুরগি, ছাগল, ভেড়া, দেশী গরু কোন প্রানীতে নাই ইনব্রিডিং?
আসুন এবার জেনে নেই ইনব্রীডিং এর কুফলটা কি??

ইনব্রিডিং এর কুফল:
মানুষের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক বিয়ে ইসলামে নিষিদ্ধ। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ হতেও নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে বিজ্ঞানসম্মত নয়। এমনকি চাচাতো, মামাতো, খালাতো ও ফুফাতো ভাই-বোনদের মধ্যে বিয়ের ফলে যে সন্তান হয়, তার মধ্যে জন্মগত ও স্বাস্থ্য ত্রুটি দেখা দেয়ার ঝুঁকি বেশি। নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের জিনগত অস্বাভাবিকতার হার এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি সাধারণ শিশুদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।

প্রাণীদের ক্ষেত্রে ভাইবোন প্রজননে প্রতি জেনারেশনেই ২৫% জেনেটিক গুনাগুন হ্রাস পায়। পরিবর্তিত পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতাও কমে যেতে থাকে। ইনব্রিডিংয়ের ফলে স্পার্ম বা শুক্রাণুর মানের উপরে প্রভাব ফেলে। এদের শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত না করতে পারার অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ শতাংশ হয়েছে। বংশগতির সাধারণ সূত্রানুসারে পুরুষ ও স্ত্রী দুজনেরই যদি একই জীন লুকায়িত (Recessive) থাকে তাহলে শতকরা ২৫ ভাগের মতো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সম্ভাবনা থেকে যায় ত্রুটিপূর্ণ জেনেটিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে সন্তান জন্মানোর এবং ৫০% সম্ভাবনা থাকে এ জীনের বাহক হওয়ার। সমস্ত প্রানীজগতের বিষয়টি একই রকম।

প্রাণীতে ইনব্রিডিং হলে যা ঘটে:
১) উন্নত জাত আস্তে অনুন্নত জাতে রূপান্তরিত হয়।
২) শারীরিক বৃদ্ধির হার খুবই কম ও দূর্বল প্রকৃতির হয় এবং খর্বাকৃতি আকারের হয়।
৩) জন্মগত ত্রুটি, শাররীক বিকলাঙ্গতা চলাফেরা অসামঞ্জস্যতা, বাঁকা মুখমন্ডল বা চোখ ডাবানো হয়।
৪) জন্মগত প্যারালাইসিস বেড়ে যায়।
৫) বাঁকা পা বা পায়ের গড়ন অস্বাভাবিক হয়।
৬) বাঁকা ঠোঁট হতে পারে।
৭) স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট চোখ হতে পারে।
৮) এক বা দুইটি চোখই না ফোটতে পারে।
৯) পা একটি ছোট আরেকটি কিছুটা বড় হতে পারে।
১০) জন্ম অন্ধত্ব।
১১) স্নায়ুকোষের ক্ষয় হতে থাকে।
১২) নবজাতক বাচ্চার উচ্চ মৃত্যুহার।
১৩) নিম্নতর জন্ম ওজনে জন্ম নেয়া।
১৪) ডিম ও মাংসের উৎপাদন কম হওয়া।
১৫) শুক্রাণুর উর্বরতা কমে যাওয়া।
১৬) দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
১৭) পুরুষ প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা না থাকা অর্থাৎ বন্ধাত্ব।
১৮) পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পারা।
১৯) প্রতি জেনারেশনেই ২৫% জেনেটিক গুনাগুন হ্রাস পায়।
আামার দৃষ্টিতে এটাই প্রকৃত কারন যার জন্য আামরা টার্কিকে বস্তা বস্তা খাবার খাইয়েও আশানুরূপ ফলাফল পাচ্ছিনা।

এটা থেকে বাঁচার উপায় একটা আছে, তা হল: #আউট ব্রীডিং।
এটা আবার কি? আসুন তাহলে জেনে নেই –
যাদের সাথে রক্তের সম্পর্ক নাই তাদের মিলন হল আউটব্রিডিং (Out Breeding) পদ্ধতি। এপদ্ধতিতে চমৎকার, শক্তিশালি, উর্বর, সুস্থ, বাচ্চা জন্মায়। আউটব্রিড প্রাণী হতে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন পাওয়া যায়। তাই আামাদের অবশ্যই আউট ব্রিডিংয়ের দিকে মনোযোগী হতে হবে।

এখন চলুন জেনে নেই ইনব্রিডিং থেকে মুক্ত থাকার উপায় গুলো কি কি?
ক) রক্তের সম্পর্কের মধ্য প্রজনন না করানো।
গ) একই পুরুষ প্রাণী পুনঃপুনঃ প্রজনন কাজে ব্যবহার না করা।
ঘ) প্যারেন্টস স্টক তৈরির ক্ষেত্রে একই ফার্ম হতে বেশী পরিমাণ টার্কি সংগ্রহ না করা।
ঙ) ইনব্রীডিং সম্পর্কে যে ফার্মারের ধারনা নাই, প্যারেন্টস তৈরির ক্ষেত্রে এসব ফার্ম হতে বাচ্চা সংগ্রহ এড়িয়ে চলা।
চ) সিলেক্টেড ব্রীডিং করানো।
ছ) প্রত্যেকটি প্যারেন্টস এর রেকর্ড সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
জ) ব্লাড ভিন্ন করার জন্য বিভিন্ন ফার্ম হতে যেমন: এক ফার্ম হতে শুধু পুরুষ, অন্য ফার্ম হতে শুধু মহিলা সংগ্রহের চেষ্টা করা।
ঝ) জাতোন্নয়নের জন্যে দেশের বাইরে হতে ভাল ভাল ব্রীড এনে সংকরায়ন করা।
ঞ) ফার্মাররা একে অন্যকে সহযোগিতা করা। যেমনঃ আামাদের শখের খামার এগ্রো প্রজেক্টের ইনব্রীডিং সম্ভাবনার কিছু টম টার্কির সাথে অন্য যেকোনো ফার্মের ইনব্রীডিং সম্ভাবনার টম এক্সচেঞ্জ করে নেয়া। এতে করে উভয়েরই ইনব্রীডিং মুক্ত থাকা সম্ভব হবে।

★যেহেতু আামাদের দেশে এখনো পর্যন্ত পোল্ট্রির মত টার্কির বাচ্চা উৎপাদনকারী কোন বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। তাই টার্কির অস্তিত্ব তথা আামাদের টার্কি খামারীদের নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ইনব্রীডিং এর কুফল জানতে হবে এবং এটা হতে বেঁচে থাকতে নিজেদেরই এগিয়ে আাসতে হবে।

বিঃদ্রঃ ইনব্রীডিং শুধুমাত্র টার্কি নয়, এটা আামাদের হাঁস-মুরগিসহ পুরো প্রাণী সম্পদের জন্যেই হুমকি স্বরূপ। তাই এখনই সময় সচেতন হওয়ার।

Please follow and like us:

About admin

Check Also

ইঁদুর

ফার্মে মাছি ও ইঁদুর,মশা,জোক কেন হয়,কি কি রোগ ছড়ায় এবং করণীয় (বিস্তারিত)

ফার্মে মাছি ও ইঁদুর ,মশা,জোক কেন হয়, কি কি রোগ ছড়ায় এবং করণীয় (বিস্তারিত) মাছি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »