#আপনাকে প্রথমে জানতে হবে ছাগল খামারের ধরন সম্বন্ধে
ছাগল খামারের ধরন সাধারণতঃ ছাগল খামার ৫ ধরনের হতে পারে-
১।পারিবারিক ক্ষুদ্র খামার।
২। মুক্তভাবে ছাগল পালন।
৩। আধা-নিবিড় (সেমি-ইন্টেনসিভ) খামার।
৪। নিবিড় (ইন্টেনসিভ) খামার।
৫। সমন্বিত (ইন্টিগ্রেটেড) খামার।
১। পারিবারিক ক্ষুদ্র খামারঃ-
এই জাতীয় খামারে পারিবারিক ভাবে পালনের জন্য ২-৫ টি ছাগল রাখা হয়। এক্ষেত্রে ছাগলের জন্য পৃথক আবাসনের প্রয়োজন হয় না। খামারি গোয়াল ঘরে বা নিজেদের ঘরে ছাগল রাখতে পারেন। ছাগলকে খাওয়ানোর জন্য এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পরিমান ঘাস এবং দানাদার খাদ্য দিতে হবে। সাধারনত ১৫-২০ কেজি ওজনের বয়স্ক ছাগলের জন্য দৈনিক ১.৫-২.০ কেজি কাঁচা ঘাস প্রয়োজন।ভাল চারনভূমি থাকলে অতিরিক্ত ঘাস খাওয়ানোর প্রয়োজন নাই। অন্যথায় বাড়ির আশে পাশে, আবাদী বা অনাবাদী জমিতে উচ্চ ফলনশীল ঘাস চাষ করা যেতে পারে। সাধারনত ছাগল কে কুড়া, ভুষি, চাউলের ক্ষুদ, ভাতের মাড় ইত্যাদি দানাদার খাদ্য হিসেবে স রবরাহ করা যেতে পারে।
#পারিবারিক ক্ষুদ্র খামারের সুবিধাসমুহঃ-
◗ স্বল্প পুঁজি ও স্বল্প বিনিয়োগের জন্য স্বল্পবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত সকলেই এধরনের খামার করতে পারে।
◗ এক্ষেত্রে আলাদা আবাসন বা অন্যান্য উপযোগের প্রয়োজন হয়না পারিবারিক খামারে উৎপাদিত উপজাত থেকে ছাগল পালন সম্ভব।
◗ স্বল্প সংখক ছাগল পালন করায় এদের স্বাস্থ্যের ব্যবস্থাপনা ও বাজারজাত করণ তুলনা মুলক ভাবে সহজ।
পারিবারিক ক্ষুদ্র খামার অসুবিধাসমুহঃ-
◗ স্বল্প সংখ্যক ছাগল পালন করায় এধরনের খামারে আয়ের পরিমাণ স্বল্প যা কেবল সংসারে বাড়তি আয়ের উৎস হতে পারে।
◗ বানিজ্যিক ভিত্তিতে করা হয়না বিধায় ছাগলের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের বিষয় যথাযথ যত্ন নেয়া হয়না। ফলে উৎপাদন সব সময় আশানুরূপ হয়না।
২। মুক্তভাবে ছাগল পালনঃ-
সাধারনত এই জাতীয় খামারে ৮-১২ টি ছাগল পালন করা যায়। যেসব পরিবারের চাষ যোগ্য জমি নেই কিন্তু চাষাদের অনুপযোগী উঁচু জমি যেমন পাহাড়, পুকুর পাড়, রাস্তার ধার ইত্যাদি রয়েছে তারা এই ধরনের খামার করতে পারে। এক্ষেত্রে ছাগলের পাল কে পাহাড়ের ঢাল, নদীর তীর, রাস্তার ধারের লতা গুল্ম ইত্যাদি খাওয়ানো যায়। শুধু রাতে তাদের আবাসনের ব্যবস্তা করলেই হয়।
#মুক্তভাবে ছাগল পালনের সুবিধাসমূহঃ-
◗ ছাগলের খাদ্য উৎপাদনের জন্য আলাদা ঘাস চাষের প্রয়োজন হয় না। পাহাড় বা চর এলাকায় মুক্তভাবে চরানোর মাধ্যমে ছাগল তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করে।
◗ চরে খাওয়ার সময় ছাগলের খাদ্য ও অন্যান্য রক্ষনাবেক্ষন খরচ কম।
◗ চরে খাওয়া ছাগলের রোগবালাই তুলনামুলক কম।
মুক্তভাবে ছাগল পালনের অসুবিধাসমূহঃ-
◗ ছেড়ে পালা ছাগলের চরানো ও এর রক্ষনাবেক্ষন ঝুঁকিপূর্ণ।
◗ মুক্তভাবে পাল ছাগলের প্রজনন, প্রসব ও বাচ্চা পালন কষ্টকর এবং ব্যয়বহুল।
◗ বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেশের অধিকাংশ স্থানেই মুক্তভাবে ছাগল পালন প্রায় অসম্ভভব।
৩। আধা-নিবিড়(সেমি-ইন্টেনসিভ)খামারঃ
-আধা-নিবিড় (সেমি-ইন্টেনসিভ) খামারে ছাগলকে দিনে চড়ানো হয় এবং রাতে তাদের আবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়। তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের জন্য ঘাস ও দানাদার খাদ্য সম্পূরক হিসেবে সরবরাহ করা হয়।
আধা-নিবিড় (সেমি-ইন্টেনসিভ) খামারের সুবিধাসমূহ-
◗ বানিজ্যিক বিত্তিতে পালন করা হয় বিধায় ছাগলের পুষ্টি, প্রজনন , স্বাস্থ্য বিষয়ে যথাযথ যত্ন নেয়া সম্ভব। ফলে আশানুরূপ হয়।
◗ বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বানিজ্যিকভাবে ছাগল পালনের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বিশেষ উপযোগী।
◗ এক্ষেত্রে একদিকে যেমন মাঠে ঘাটে প্রাপ্ত খাদ্যের ব্যবহার সম্ভব অন্যদিকে সম্পূরক খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে ছাগলের উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
আধা-নিবিড় (সেমি-ইন্টেনসিভ) খামারের অসুবিধাসমূহঃ-
◗ এক্ষেত্রে ছাগল উৎপাদন খরচ ও বিনিয়োগ অপেক্ষাকৃত বেশী।
◗ এক সাথে অধিক ছাগল থাকে বিধায় বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগ যেমন-চর্মরোগ, একথাইমা, ডায়েরিয়া ইত্যাদি রোগের প্রকোপ বেশী দেখা যায়। ◗ অধিক সংখ্যক ছাগল এক সাথে বাজারজাতকরণে সমস্যা হতে পারে।
৪। নিবিড় (ইন্টেনসিভ) খামারঃ-
নিবিড় (ইন্টেনসিভ) খামারে ছাগলেকে সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়। ছাগলের পুষ্টি সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি ঘাস ও দানাদার খাদ্য
সরবরাহের মাধ্যমে করা হয়।
নিবিড় (ইন্টেনসিভ) খামারের সুবিধাসমূহঃ
–
◗ বানিজ্যিক ভিত্তিতে পালন করা হয় বিধায় ছাগলের পুষ্টি প্রজনন ও স্বাস্থ্য বিষয়ে যথাযথ যত্ন নেয়া সম্ভব। এজন্য কাঙ্গিত উৎপাদন আশা করা যায়।
◗ অল্প জায়গায় অধিক পরিমানে ছাগল পালন করা যায় এবং প্রাপ্ত বিভিন্ন উপজাতস মূহের সুষ্ঠ ব্যবহার করা যায়।
◗ বৃহদাকার খামারের সুষ্ঠ প্রজনন ব্যবস্থার মাধ্যমে উন্নতজাতের প্রজনশীল ছাগল উৎপাদন করে তা অধিক মূল্যে বিক্রয় করা সম্ভব।
◗ জাতীয় ও আন্তর্জাতীক চাহিদা পূরণে এবং ছাগল উৎপাদনকে শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে ইন্টেনসিভ পদ্ধতি সুবিধাজনক।
নিবিড় (ইন্টেনসিভ) খামারের অসুবিধাসমূহঃ-
◗ প্রাথমিক বিনিয়োগ এবং উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে বেশী।
◗ এক সাথে অধিক সংখ্যক ছাগল থাকায় সুষ্ঠ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগ যেমন- চর্মরোগ, একথাইমা, ডায়েরিয়া, কনজেংটিভাইটিস ইত্যাদি রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দেতে পারে।
◗ সুষ্ঠ বাজারজাতকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকলে ইন্টেনসিভ পদ্ধতিতে ছাগল পালন কখনো লাভজনক হতে পারে না।
৫। সমন্বিত (ইন্টিগ্রেটেড) খামারঃ-
সমন্বিত (ইন্টিগ্রেটেড) খামারে ছাগলকে নারিকেল, সুপারী, রাবার, আম, কাঠাল, পেয়ারা বা লিচু বাগানে আধনিবিড় বা পারিবারিকভাবে ছাগল পালন করা যেতে পারে ।ফলজ বৃক্ষের নিচে পারা, মাসকালাই প্রভৃতি ঘাস চাষ করে সেখানে ছাগল চরানো যেতে পারে। তাছাড়া ফল বাগানের বিভিন্ন পাতাও খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সমন্বিত (ইন্টিগ্রেটেড) খামারের সুবিধাসমূহঃ-
◗ সমন্বিত খামারে ছাগল পালনের মাধ্যমে খামারের অন্যান্য খাত থেকে আসা খাদ্য ও অন্যান্য বাই-প্রোডাক্টের অপচয় রোধ হয় এবং প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার হয়।
◗ সমন্বিত খামারে ছাগল পালনে খাদ্য, শ্রমিক ও অন্যান্য উপযোগ খরচ কম হয়।
◗ ছাগল খামারে উৎপাদিত জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে খামারে মাটির পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়, জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায় ফলে কৃষিজাত ফসলের ফলজ, বনজ উৎপাদন বেড়ে যায়।
◗ সমন্বিত খামারে ছাগল পালনের মাধ্যমে পরিবেশ প্রতিকুল রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে যায় ফলে খামারী পরিবেশগতভাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন।
সমন্বিত (ইন্টিগ্রেটেড) খামারের অসুবিধাসমূহঃ-
◗ খামারে অনেকগুলো খাত একই সাথে পরিচালনা করতে হয় বিধায় কোন খাতই মনযোগ পায় না।
◗ সমন্বিত খামারে ছাগল পালনে পুষ্টি, প্রজনন, স্বাস্থ্য, আবাসনসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনা যথাযথ নেয়া সম্ভব হয় না বিধায় আশানুরূপ উৎপাদন হয় না।
◗ ছাগল কখনো কখনো সমন্বিত খামারে অন্য খাত যেমন- সবজী বা ফলের বাগানের ক্ষতির কারন হতে পারে।
এম এ ইসলাম