ইউরিয়া মোলাসেস ব্লকএকটি শক্তিশালী আমিষ সমৃদ্ধ জমাট খাদ্য । খড়ের সাথে পরিপূরক খাদ্য হিসেবে ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যায় । তাছাড়া বন্যা, খরা ও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সময় গো-খাদ্য সংকট নিরসনকল্পে এটি মজুদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে ।
ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক তৈরি পদ্ধতি
চুন, ইউরিয়া, ও লবণ একত্রে ভালভাবে মিশাতে হবে ।
গ্রামীণ পর্যায়ে কম খরচে ১০ কেজি ব্লক তৈরির পদ্ধতি নিম্নরূপ :
প্রথমে ৩ কেজি ৯০০ গ্রাম চিটাগুড় মেপে নিয়ে একটি বড় গামলার মধ্যে রাখতে হবে । তারপরে ঐ গামলায় ৫০০ গ্রাম লবণ ও ৮০০ গ্রাম ইউরিয়া হাত দিয়ে ভালভাবে মিশাতে হবে এবং ঐ মিশ্রণকে একরাত্রি বা ১২ ঘন্টা ঘরের এক কোণে ভালভাবে ঢেকে রাখতে হবে। পরের দিন গামলার মিশ্রণ হাত দিয়ে পুনরায় মিশাতে হবে এবং এতে উপরে উল্লিখিত পরিমাণ অনুসারে গমের ভূষি, চালের কুঁড়ো ও চুন ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে । এরূপে তৈরি মিশ্রণকে ৯ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, ৫ ইঞ্চিপ্রস্থ ও ৫ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট লোহার ছাঁচে রেখে ভালভাবে চাপ দিয়ে ব্লক তৈরি করা হয় । এরূপে ছাঁচে তৈরি ব্লক ৩ কেজি ওজনের হয় । এ ব্লককে ছাঁচ থেকে বের করে ১৫ ঘন্টা রেখে দিলে শক্ত হয়ে যাবে এবং সেটা প্রাণির খাওয়ার উপযুক্ত হবে ।
খাওয়ানোর পদ্ধতি:
১। ব্লকের উপর মোড়ানো পলিথিনটি খুলে ফেলে, পরে প্রাণিকে খেতে দিতে হবে ।
২। ব্লকটিকে একটি শুকনো পাত্রে বা কাঠের বাক্সে প্রাণিকে খেতে দিতে হবে ।
৩। ব্লকটি কখনও গুড়ো করে খেতে দেয়া যাবেনা ।
৪। দৈনিক গরু মহিষের জন্য ৩০০ গ্রাম এবং ছাগল ভেড়ার জন্য ১০০ গ্রাম এর বেশী দেয়া যাবেনা ।
৫। প্রথমে ব্লক গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া খেতে চাইবেনা । অভ্যাস করার জন্য ব্লকের উপর কিছু লবণ বা গমের ভূষি ছিটিয়ে দিতে হবে । এভাবেই আস্তে আস্তে অভ্যস্ত করতে হবে ।
৬। অন্যান্য খাবার যেমন খড়, ঘাস ও পানি যথারীতি দিতে হবে ।
উপকারিতা:
১। ব্লক খাওয়ালে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার দৈহিক ওজন, শক্তি ও দুধ উৎপাদন বেড়ে যায় ।
২। ব্লক খাওয়ালে খড় জাতীয় গো- খাদ্যের পাচ্যতা ও গ্রহণ ক্ষমতা বাড়ে । এটা উক্ত খাদ্যের ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক সংরক্ষণ প্রযুক্তি
# খাদ্য উপাদানগুলোর সাথে শতকরা ০.৫-১.০ ভাগ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত প্রোপিওনিক এসিড স্প্রে করে ব্লক উৎপাদন ও সংরক্ষণ করলে সারা বছরেও ছত্রাক ধরেনা ।
# প্রোপিওনিক অ্যাসিড গরুর দেহের জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয় । এ ধরনের অ্যাসিড গরুর পাকস্থলীতে খাদ্য হতে উৎপন্ন হয় এবং বাছুরের দেহে গ্লুকোজ ও শক্তি সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হয় ।
অতএব, প্রোপিওনিক অ্যাসিড দ্বারা সংরক্ষিত ব্লক কখনও নষ্ট হবে না এবং বাছুরের ক্ষতিও করবেনা । ব্লক সংরক্ষণে বানিজ্যিকভাবে উৎপাদিত প্রোপিওনিক এসিড ব্যবহার করে খামারিগণ উপকৃত হবেন।
#ইউরিয়ার ব্যবহার ও সতর্কতা
আমাদের দেশে কৃষিক্ষেত্রে হিসেবে ইউরিয়ার ব্যবহার বহুল প্রচলিত। এটা মাটিতে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। গবাদিপশুতে প্রোটিনের চাহিদা পূরণেও ইউরিয়া একটি সহজ এবং সাশ্রয়ী উপাদান। রুমিনেন্ট তার খাদ্যে ২ ভাবে নাইট্রোজেন পেয়ে থাকে।
১.প্রাকিতিক ঘাস ও প্রানিজ উৎস
২.নন- প্রোটিন নাইট্রোজেন তথা ইউরিয়া/ এমোনিয়া।
ইউরিয়াতে ৪৫% নাইট্রোজেন থাকে আর প্রোটিনে থাকে ১৬%
রুমিনেন্ট ইউরিয়েজ এনজাইম এর সাহায্যে ইউরিয়া ভেঙে এমোনিয়া তৈরি করে।পরবর্তিতে রুমেন মাইক্রোফ্লোরার সাহায্যে কিটোএসিডের সাথে যুক্ত হয়ে এমাইনো এসিড তৈরি করে( প্রোটিন)।
মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া খাওয়ালে/খেলে অতিরিক্ত এমোনিয়া তৈরি হয় যা রুমেনে শোষিত হয়ে সিস্টেমিক সার্কুলেশনের (রক্ত) মাধ্যমে লিভারে ডিটক্সিফাইড হয়।কোন কারণে লিভার ড্যামেজ হলে বা অতিরিক্ত এমোনিয়া উৎপাদন হলে লিভার লোড নিতে পারে না (ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়) ফলে রক্তে এমোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
বিষক্রিয়ার কারণঃ
#সঠিক মিক্সিং না হলে ফিডে NPN এর কনসেন্ট্রেট পকেট তৈরি হয়।
#ইউরিয়া খাওয়ানোর সময় মাত্রার সঠিক হিসাব না করলে।
#হঠাৎ করে বেশি ইউরিয়া খাওয়ানো শুরু করলে( ৫-৭ দিন সময় নিয়ে adapted করতে হবে)
#খাবারে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম থাকলে কম কিটোএসিড তৈরি হয় ফলে এমোনিয়া থেকে এমাইনোএসিড তৈরি ব্যাহত হয়।
#ইউরিয়া পশুর নাগালের ভিতরে থাকলে সহজেই খেয়ে বিষক্রিয়াই আক্রান্ত হয়।
এছাড়া ক্ষুধার্ত পশু,এলকালাইন রুমেন,কম পানি পান,উচ্চ তাপমাত্রা ইউরিয়েজের কার্যকরীতা বেড়ে যায়, লিভার ডিজিজ, স্ট্রেস ইত্যাদি কারণে বিষক্রিয়া তরান্বিত হয়।
ইউরিয়া খাওয়ানোরর প্রচলিত পদ্ধতি
১. ইউরিয়া মোলাসেস খড়(UMS)ঃ
এক্ষেত্রে
৮২%.খড়
১৫% মোলাসেস/লালি/চিটাগুড়
৩% ইউরিয়া একত্রে মিশিয়ে UMS তৈরি হয়।
সহজ ভাবে
খড়ের অর্ধেক পানি(লিটার) –> পানির অর্ধের চিটাগুড় (কেজি)–> ৩০ গ্রাম ইউরিয়া/কেজি খড়ের জন্য।
মোটাতাজা করণের ক্ষেত্রে ১-১.৫ কেজি থাকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪-৫ কেজি পরিমাণ খাওয়ানো যায়।
৬ মাসের কম বয়সি বাছুরে ১ কেজি খড়ের সাথে ১০ দিন পরপর ৫ গ্রাম করে মাত্রা বাড়াতে হবে।
একবার প্রস্তুতকৃত UMS ৩ দিন পর্যন্ত খাওয়ানো যায়।
২. ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক(UMS) /ইউরিয়া মোলাসেস মিনারেল ব্লক(UMMB)
গমের ভূষি ৩ কেজি
চিটাগুড় ৬ কেজি
ইউরিয়া ৯০ গ্রাম
মিনারেল সল্ট ৩৫ গ্রাম
ডিসিপি ৫০০ গ্রাম
একত্রে মিশিয়ে কাঠের ফ্রেমের সাহায্যে ব্লক তৈরি করতে হবে।
১কেজি ব্লকে ৯ মেগাজুল শক্তি এবং ২৪০ গ্রাম প্রোটিন থাকে।
গরুকে দৈনিক ৩০০ গ্রাম করে খাওয়ানো যায় এবং একবার তৈরিকৃত ব্লক ৩ দিন খাওয়ানো যায়।
চিকিৎসা
৫% এসিটিক এসিড /ভিনেগার ২-৪ লিটার বড় গরুকে খাওয়াতে হবে।
বাছুর,ছাগল,ভেড়ার ক্ষেত্রে মাত্রা কমিয়ে দিতে হবে।
ভিনেগার না পাওয়া গেলে ১-২ কেজি তেঁতুল পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে
প্রয়োজনে ১-২ ঘন্টা পরপর খাওয়াতে হবে