- নীলি-রাভী মহিষঃ
———————————-
পাকিস্থানের সুতলেজ নদীর তীরস্থ এলাকায় নীলি জাতের মহিষের অবস্থান। নদীর পানির বর্ণ নীল এবং নদীর পাড়ে বিচরণ করে বিধায় নীলি নাম দেয়া হয়েছে। পাকিস্থানের রাভী নদীর অববাহিকায় পাওয়া যায় বিধায় এ মহিষের নাম দেয়া হয়েছে রাভী।
পাকিস্থানের মন্টেগোমারী ও মুলতান এবং পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলায় নীলি জাতের মহিষের আদি বাসস্থান।
নীলি-রাভী জাতের মহিষের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর মাঝারী দেহের পিছনের অংশ মোটাসোটা, চোখ-কপাল-লেজ সাদা, লেজ বেশ লম্বা, মাথা বড় ও চওড়া, শিং ছোট, শিংয়ের মাঝখানে উপরে ফোলানো, মাথা-মুখের পশম মোটা, গলা লম্বা ও সরু, চওড়া গোলাকৃতি বুক, বলিষ্ট পা, পিঠ সোজা, গলকম্বল থাকে না, নাভীর ফাঁপা ছোট থাকে, গায়ের রং কালো, কপালে ক্ষুরে সাদা বর্ণ, সারা শরীরে সাদা ছাপ আছে। স্বাভাবিক ভাবে এই জাতের মহিষের ষাঁড়ের ওজন ৬০০ কেজি এবং গাভীর ওজন ৪৫০ কেজি।
নীলি-রাভী মহিষ প্রথম বাচ্চা প্রসবের পর প্রতিদিন ৯-১৮ লিটার হিসাবে মোট দুধ দানকালে ২৫০দিনে প্রায় ৩৬০০ লিটার দুধ দেয়।
নিরীহ ও শান্তশিষ্ট বিধায় ডেইরী খামারে পালন করা যায় এবং কৃষি কাজের জন্য বেশ উপযোগী।
সবচাইতে মজার ব্যাপার হলো খুলনা সরকারি মহিষ প্রজনন কেন্দ্রে দেশ স্বাধীনের পূর্ব থেকেই পাকিস্তান থেকে নীলি-রাভী জাতের মহিষ এনে জাতোন্নয়নের কার্যক্রম চলছে!!
মুরাহ্ মহিষঃ
———————————-
মুরাহ্ মহিষ দিল্লী মহিষ নামেও পরিচিত।শিং কুঞ্চিত (মুরাহ্) ও কুণ্ডলীকৃত বলে মুরাহ্ নামকরণ করা হয়েছে।
এই জাতের মহিষের শরীর জামকালো বর্ণের, কোন কোন সময় লেজের আগা, কপাল ও পায়ের নিচে সাদা ছাপ থাকে, মোটাসোটা, পেছনের অংশ বেশ চওড়া, দেহের তুলনায় মাথা ছোট তবে কপাল চওড়া; গাভীর গলা লম্বা ও চিকন, চ্যাপ্টা ছোট শিঙের প্রথমাংশ পিছনের দিকে গিয়ে পরে উপরে উঠে পাকিয়ে থাকে।
মুরাহ্ মহিষের ওলান দেখতে সুন্দর, বড় আকৃতির, লম্বা বাঁট, পিছনের বাট লম্বা।
প্রথম বাচ্চা প্রসবের পর প্রায় দশ মাসে ১৪০০-২০০০ লিটার (গড়ে প্রতিদিন ২.২-২.৭ লি.) দুধ দেয়, দুধের চর্বি প্রায় ৭% যা ঘি ও মাখন তৈরির জন্য বেশ চাহিদাপূর্ণ।
পুরুষ মহিষ কৃষি কাজের জন্য উপযোগী, মহিষের জাত উন্নয়ণের ক্ষেত্রে কৃত্রিম প্রজননে ষাঁড় ব্যবহৃত হয়।
মেহসানা জাতের মহিষঃ
———————————-
ভারতের গুজরাট রাজ্যের উত্তরে মেহসানা জেলা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় এ জাতের মহিষ বসবাস করে। মুরাহ্ ও সুরতি জাতের মহিষের মাধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে মেহসানা জাতের মহিষের উৎপত্তি হয়েছিল।
মেহসানা জাতের মহিষের দেহের গড়ন মধ্যম, মুখ ও ঘাড় লম্বাটে, হালকা পা, চওড়া কপাল, কালো বর্ণ, মুখ, পা ও লেজের আগায় সাদা ছাপ আছে, উন্নত বাটে সমৃদ্ধ বেশ বড় ওলান, নাকের ছিদ্র বড়, গলকম্বল নেই. কাঁধ বেশ চওড়া এবং কাস্তে আকারের বাঁকা শিং।
মেহসানা জাতের ষাঁড় প্রায় ৫৪০ কেজি এবং গাভী-মহিষের ওজন ৩৬৫-৪৫৫ কেজি।
তুলনামূলকভাবে অতি অল্প বয়সে মেহসানা জাতের মহিষ বাচ্চা দেয়, প্রতিবার বাচ্চা প্রসবের পর দৈনিক ২৬ লিটার হিসাবে প্রায় ২৬৭০ লিটার দুধ দেয় এবং দুধে চর্বির পরিমাণ ৬.৫%-৯.৩%।
জাফরাবাদী মহিষ
ভারতের গিরবন এবং জাফরাবাদ শহরের চারপাশে জাফরাবাদী মহিষ বসবাস করে।
এই জাতের মহিষের বৃহদাকৃতির দেহ, কপাল খুবই স্পষ্ট, প্রশস্ত মোটা শিং ঘাড়ের উভয় পাশে উঁচু হয়ে থাকে, ঘাড় মাংসল, গলগম্বল ও ওলান সুগঠিত, শরীর দীর্ঘ ও লম্বাটে এবং গায়ের রং কালো বা গাঢ় ধূসর। স্বাভাবিক ভাবে জাফরাবাদী পুরুষ ও স্ত্রী মহিষের উচ্চতা যথাক্রমে ১৪০ এবং ১৩০ সে.মি., দৈর্ঘ্ যথাক্রমে ১৬৭.৫ ও ১৬০ সে.মি. এবং ওজন যথাক্রমে ৫৯০ ও ৪৫০ কেজি।
স্ত্রী মহিষ প্রতিদিন ১৫-২০ লিটার দুধ দেয় যাতে চর্বির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে; পুরুষ মহিষ চাষাবাদ ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়।
সুরতি জাতের মহিষঃ
————————————-
সুরতি জাতের মহিষ দেশী বা নাডিয়াডি নামেও পরিচিত। ভারতের গুজরাট রাজ্যের কায়রু ও বড়োদা জেলায় এ জাতের মহিষ পাওয়া যায়।
গায়ের রং প্রধানত কালো ও তামাটে হয়, পশমের রং তামাটে ও ধূসর বর্ণের মিশ্রণ, গাভীর গলা চিকন, ষাঁড়ের গলা মোটা ও ভারী, লম্বা চওড়া মাথা, শিংয়ের মধ্যস্থল বেশ উঁচু ও উত্তলাকৃতির, শিং লম্বা কাস্তের মত চ্যাপ্টা, গলকম্বল-চুঁড়া থাকে না, সোজা চওড়া পিঠ, লেজ সরু লম্বা, লেজের পশম সাদা এবং ওলান বড় ও সুবিন্যস্ত।
সুরতি মহিষ শুধুমাত্র দুধ উৎপাদনের জন্য পালিত হয় যা দৈনিক ৬ লিটার হিসাবে প্রতি বিয়ানে ১৫৫০-১৬০০ লি. দুধ দেয় এবং দুধে চর্বির পরিমাণ প্রায় গড়ে ৭.৫%।
কুন্ডি জাতের মহিষঃ
————————————–
কুন্ডি জাতের মহিষ পাকিস্তানের সিন্ধু এলাকায় পাওয়া যায়। খাটো মোচরানো শিং, গায়ের রং গাঢ় কাল, শক্তিশালী খাটো পা, ওলান ও বাঁটের গঠন উন্নত।
এদের বয়োঃসন্ধি একটু দেরীতে হয়। চার-পাঁচ বৎসর বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয় এবং প্রায় ১০ বৎসর বয়স পর্যন্ত এরা দুধ দেয়।
ওজন প্রায় ৬০০ কেজি, প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ লিটার দুধ দেয়, দুধ দেয়া ছাড়া অন্য কোন কাজের জন্য তেমন উপযোগী নয় কুন্ডি জাতের মহিষ
মুক্তি মাদমুদ