Breaking News
ডেইরীর সমস্যা ও সমাধান
ডেইরীর সমস্যা ও সমাধান

“ডেইরীর প্রধান সমস্যা ও তার সমাধান”

“ডেইরীর প্রধান সমস্যা ও তার সমাধান” কাহিনীঃ-

চিকিৎসা শাস্ত্রে কোন রোগের প্রতিকারের চেয়ে এর কারনতত্ত্ব (Etiology) নিয়ে বেশি আলোচনা করা হয়।

এর কারন হল রোগ নির্ণয় বেশি গুরুত্বপূর্ণ- একবার অসুস্থতার কারন অর্থাৎ রোগটি কি তা নির্ণয় করা গেলে তার সমাধান সহজ হয়ে পড়ে।

অর্থাৎ সঠিক রোগ নির্ণয়ই চিকিৎসকের কেরামতি- কোন রোগের কি ঔষধ তা তো ঔষধ বিক্রেতাও জানেন।

আমাদের ডেইরী সেক্টরটি রোগাক্রান্ত। না ভাই- আমি এফ এম ডি বা তড়কার কথা বলছি না।

বলছি পুরো ফার্মিং সিস্টেমটি (Farming System) ব্যাধিগ্রস্ত। অর্থাৎ পুরো ব্যবস্থাটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে- এর চিকিৎসা প্রয়োজন।

নয়তো একে বাঁচানো যাবে না। তাই ভাই, সমাধান দেয়ার আগে কারনতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা দরকার।

 

আমাদের ডেইরি সেক্টরের সবচেয়ে বড় সমস্যা কি? এ প্রশ্ন করলে একেকজন একেকটি উত্তর দিবেন।

কিন্তু কারনতত্ত্ব (Etiology) তা বলে না। কারনতত্ত্ব অনুযায়ী- কোন রোগের একটিমাত্র প্রধান কারন থাকে, বাকী কারণগুলো প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

যেমন টাইফয়েডের প্রধান কারন হল “সালমোনেলা টাইফি” নামক ব্যাক্টেরিয়া। তাই টাইফয়েডের প্রধান সমাধান হল এমন একটি এন্টিবায়োটিক যা এই ব্যাক্টেরিয়াকে মারবে। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামিল, খেতে না পারলে স্যালাইন হল সহযোগী চিকিৎসা।

একইভাবে ডায়াবেটিসের প্রধান কারন হল শরীরে ইনসুলিন এর মাত্রা কমে যাওয়া। তাই সমাধানের লক্ষ্যটিও সহজ- শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন বাড়ানো বা কৃত্রিমভাবে ঘাটতি পূরণ করা।

মূলকথায় আসি- ডেইরী সেক্টরের ধুকতে থাকার মূল কারন কি? নানান রকম উত্তর মাঠে প্রচলিত।

এর মধ্যে একটি উত্তর বেশ জনপ্রিয়- এখানে বলা হচ্ছে প্রধান সমস্যা ৪ টি- ম্যাস্টাইটিস, অনুর্বরতা, গিরাফোলা, ক্ষুরারোগ।

অনেকে বলেন- ভাল গরু পাওয়া যায় না। অনেকে বলেন- খাদ্যের দাম বেশি ইত্যাদি ইত্যাদি।

ভাই, এসব সমস্যাগুলোও অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কোনভাবেই প্রধান সমস্যা নয়।

ডেইরী সেক্টরের প্রধান সমস্যা একটিই আর তা হল ‘জেনেটিক্স’। এটিই প্রধান ও মূল সমস্যা।

যতক্ষণ না আমরা সমস্বরে ‘জেনেটিক্স’ কেই আমাদের প্রধান সমস্যা হিসেবে ঘোষণা ও স্বীকৃতি দিব ততক্ষণ এর সমাধানে কাজ হবে না- এবং সমাধানও আসবে না।

যারা আমরা বুঝি জেনেটিক্সই প্রধান সমস্যা তারা তো এর সমাধানের জন্য কাজ করছি। কিন্তু বাকীদের জন্য এটিকে মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করার কারন দর্শানোর দায় থেকে যায়।

তাই জেনেটিক্সকে কেন প্রধান সমস্যা বলছি তার কারন ব্যাখ্যা করছিঃ-

১. জেনেটিক্স বলতে আমি বোঝাচ্ছি একটি গাভীর জীনে তার পারফরমেন্স এর মেরিট কতটুকু। এখানে দুধ উৎপাদন, প্রজনন ও বাচ্চা জন্মদেয়ার ক্ষমতা, আয়ু, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, উষ্ণ ও আর্দ্রতায় হীট স্ট্রেস না হওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি ইত্যাদি সকল মেরিটই গুরুত্বপূর্ণ।

আলোচনার সুবিধার জন্য শুধু দুধ উৎপাদনই বার বার উল্লেখ করব– বাকীগুলো উহ্য থাকবে– বুঝে নেবেন।

২. যে গরুর দুধ উৎপাদনের জেনেটিক মেরিট ২০ লিটার তার কাছ থেকে আপনি ১৫ লিটারের বেশি দুধ কিছুতেই পাবেন না (আমাদের আবহাওয়ার কারনে জেনেটিক মেরিটের টরাইন অংশের ৭৫ ভাগের বেশি পাওয়া যায় না।) কোন খামারীই গরুকে না খাইয়ে রাখেন না।

তিনি ড্রাই ম্যাটার, ক্রুড প্রোটিন, মেগাজুল আর শক্তির হিসাব না বুঝলেও- কোন একটা রাফেজ, দানাখাদ্য, পানি, ভিটামিন-মিনারেল গরুকে খেতে দেন।

তাই মোটামুটি একটা খাদ্য ব্যবস্থাপনা কম-বেশি বজায় থাকে। তাই, আপনি খাদ্য ব্যবস্থাপনা, খামার ব্যবস্থাপনা যতই উন্নত করেন না কেন ২০ লিটার জেনেটিক মেরিটের গরু থেকে ১৫ লিটারই পাবেন, ৩০-৪০ লিটার পাবেন না।

ব্যবস্থাপনা খারাপ হলে হয়তো ১৫ এর জায়গায় ১২ বা ১০ এ নেমে আসবে- পার্থক্য এতটুকুই।

৩. ১৭.৫-১৮% প্রোটিন সমৃদ্ধ সুষম দানাদার খাবার খাওয়ালে একটি ১৮ লিটারের গরুকে সর্বোচ্চ ৯ কেজি খাওয়ানো যায়।

দুধের পরিমান বাড়তে বাড়তে ৪০ লিঃ হলেও দানাখাদ্য কিন্তু ঐ ৯ কেজিই থাকে।

আমরা জানি, দানাখাদ্যের খরচ সবচেয়ে বেশি- এবং এখানে সস্তা খুজে কোনভাবেই পরিপূর্ণ সুষম পুষ্টি বজায় রাখা সম্ভব না।

আর আমাদের দেশে দানাখাদ্য অপ্রতুল হওয়ায় দাম বেশি এবং এটি বাড়তেই থাকবে।

অতএব ১৮ লিটারের বেশি দুধ হলে বাড়তি দুধটুকু পেতে অতিরিক্ত কোন খরচ লাগছে না।

তাই ১৮ লিটারের বেশী দুধটুকুর মধ্যে আপনার-আমার সফলতার পরশপাথর লুকিয়ে আছে।

এটি যতক্ষণ আপনি-আমি না পাচ্ছি ততক্ষণ আমাদের মুক্তি নেই। শুধু শুধু খাদ্যের দাম বেশি কেন??

সাইলেজের দাম বেশি কেন??- এসব কান্নাকাটি করে কোন লাভ নেই।

সারা পৃথিবীতে ক্যাপিটালিজম (পুঁজিবাদ) চলছে। ব্যবসায়ীরা লাভ করবেই।

সবকিছুর দাম কম থাকুক- এটি সমাজতন্ত্রে চাওয়া যায়- মুক্তবাজার অর্থনীতিতে নয়।

অতএব, নিজেদের উতপাদন বাড়াতে হবে। অর্থনীতিতে ‘Economies of Scale’ বলে একটা ব্যাপার আছে- যার মূলকথা হল- উৎপাদন বাড়াতে পারলে প্রতিলিটার দুধের উৎপাদন খরচ কমে যাবে।

ফলে আপনি দুধ কমমূল্যে বিক্রয় করলেও লাভবান থাকবেন।

অতএব ভাই, ১৮ লিটার দুধের যে দুষ্টচক্রে আমরা আবদ্ধ আছি তা ভাংতে হবে।

আমাদের খামারের সকল গাভী ১৮ লিটারের চেয়ে বেশি হতে হবে।

আমাদের দেশে বর্তমানে যেসব সিমেন বাজারে আছে- এগুলোর জেনেটিক্স খুবই খারাপ। এগুলোতে ১৮ লিটারের বেশি দুধের গরু তৈরি হয় না বললেই চলে।

দৈবক্রমে ২-১ টা তৈরি হলেও তা যথেষ্ট নয়। এটিই আমাদের মূল সমস্যা।

ভাল জেনেটিক্সের অভাব- এটি এতই বড় একটি সমস্যা যে অন্য সকল সমস্যার যোগফলের চেয়েও এটির ওজন বেশি।

”The problem of low quality Genetics outweighs all the other problems collectively.”

৪. আমাদের দেশের জন্য ভাল জেনেটিক্সের ক্রাইটেরিয়াটা জানা এবং তাকে খামারী ও সরকার উভয়পক্ষ থেকে স্বীকৃতি দেয়াটাও জরুরীঃ-

ক) হলস্টিনের ক্ষেত্রে ৫০-৬২.৫% এর উপরে যাওয়া যাবে না।
খ) বাকী জেবু অংশ পুরোটা বা সর্বোচ্চ যতটুকু সম্ভব শাহীওয়াল বা ব্রাজিলিয়ান গীর হতে হবে।
গ) জার্সির ক্ষেত্রে ৬২.৫% এর উপরে যাওয়া যাবে-তবে কতটুকু যাওয়া যাবে- সেটা স্পষ্ট নয়, হয়তো ৭৫-৮০% পর্যন্ত সম্ভব।

এই যে একজন নন-ভেট, নন-এনিমেল হাসবেন্ড্রিয়ান, নন-জেনেটিসিস্ট হয়েও শুধুমাত্র কমনসেন্স থেকে, খামারী পরিচয়ে এই ক্রাইটেরিয়া গুলো দিয়ে দিলাম- আপনি আমার ঔদ্ধত্যকে প্রশ্ন করতেই পারেন- আপনার সে অধিকার আছে। আপনি আমাকে প্রশ্ন করতেই পারেন- আমি কোথায়, কোন রিসার্চে পেয়েছি যে ৫০-৬২.৫% ফ্রিজিয়ান আমাদের আবহাওয়ার জন্য ভাল?

ভাই, প্রতিউত্তরে আমিও তো জিজ্ঞেস করতে পারি- আপনি কোন রিসার্চে পেয়েছেন যে এগুলো ভাল নয়??

আসলে ভাই, আমাদের দেশে এ সংক্রান্ত কোন রিসার্চই হয় নাই। দেশের সরকার ও উৎকর্ষতার কেন্দ্রবিন্দু (Center of Excellence) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ নিয়ে কোন রিসার্চ হয় নাই। কেন হয় নাই? এর কারন হতে পারে দুটি- হয় ফান্ড নাই অথবা “তাহারা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেন নাই”।

সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় স্যারদের বলছি– স্যার, আপনারা এই Conscience নিয়ে রাতে ঘুমাতে যান কি করে???

তাই, এই ক্রাইটেরিয়াগুলো ঠিক করতে আমাকে তাকাতে হয়েছে পৃথিবীর অন্যান্য ট্রপিকাল, হিউমিড (অর্থাৎ আমাদের মত উষ্ণ ও আর্দ্র) দেশ ও অঞ্চলগুলোর দিকে।

ব্রাজিলের গিরোলান্ডো, মালয়েশীয়ার মাফ্রিওয়াল, অস্ট্রেলীয়ার AFS, মিল্কিং জেবু, জ্যামাইকার জ্যামাইকা হোপ আর ভারত ও পাকিস্তানের ডেইরী সেক্টরের দিকে তাকালে আপনিও এই ক্রাইটেরিয়াগুলোই খুঁজে পাবেন।

আমাদের দেশে বহু পুরোনো খামার থাকলেও Malik Omar ভাই ছাড়া অন্য কেউ পার্সেন্টেজের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন কিনা তা আমার জানা নাই।

FAO এর ওয়েবসাইটে (Chapter 5: Review of Literature on Dairy Cattle Crossbreeding in the Tropics) পড়লে আপনি দেখবেন ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় এমনকি সিন্ধু-গঙ্গা সমতলে (Indo-Gangetic Plane- বাংলাদেশ যার অন্তর্ভুক্ত) ৫০-৫০% জেবু-টরাইন ক্রসেই সবচেয়ে ভাল রেজাল্ট এসেছে।

৩৭.৫-৬২.৫% এর অবস্থান ঠিক তার পরেই।

আমাদের দেশে অনেকেরই ধারনা পার্সেন্টেজ বাড়াতে থাকলে হীটস্ট্রেস ও অন্যান্য সমস্যা বাড়লেও দুধও বাড়ে।

অতএব, দুধ বাড়িয়ে লাভবান থাকতে পারলে অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলা করা যাবে। ভাই, এই ধারণাটি ঠিক নয়।

রিসার্চ পেপারগুলোতে স্পষ্টই বলছে পার্সেন্টেজ ৫০ এর কম থাকলে যেমন দুধ কমে, তেমনি ৫০ এর বেশি থাকলেও দুধ কমতে থাকে ও গর্ভধারণের হার কমে, সাথে বাচ্চা মৃত্যুহার বাড়ে।

৫. আমাদের দেশে ৫০% থেকে ১০০% পর্যন্ত নানান পদের সিমেন পাওয়া যায় এবং এগুলোর প্রায় সবগুলোরই কোন পেডিগ্রি-প্রোজেনী টেস্ট- EPD নাই।

আর কোন কোনটির তথ্য থাকলেই আমরা খুশি হয়ে যাই। ভাই, তথ্য পেয়েই খুশি হবার কিছু নেই। তথ্যটি যাচাই করে দেখতে হবে এতে খুশি হওয়ার মত কিছু আছে কিনা।

যখন জানলাম ৮১.২৫% প্রুভেন বুলের দুধ মাত্র ১৩ লিঃ- এই তথ্য আমাকে খুশি করতে পারে নাই। এই বুলের প্রভাব সারা ডেইরি সেক্টরের উপর চিন্তা করে শিরদাঁড়া দিয়ে শিহরণ বয়ে গেছে।

৬. ভাই, এবার কি বুঝতে পেরেছেন- গরুর জীনের ভিতরে বেশি দুধ দেয়ার ক্যাপাসিটি না থাকলে তারে যতই ভাল ভাল খাওয়ান কোন লাভ হবে না। TMR নিয়ে লিখতে বসেছিলাম, কিন্তু যে দেশের লোকেদের নামাজ-রোজা-হজ্জ্ব-যাকাতের ঠিক নাই, সেখানে কবর জিয়ারতের ফায়দা বর্ণনা করে কি লাভ??

গরুর জেনেটিক্সের দিকে নজর না দিয়ে TMR নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। ভাই, আমি TMR এর বিরুদ্ধে বলছি না।

তবে মনে রাখবেন, TMR মূলত খাদ্য ডেলিভারি সিস্টেম। যারা ৫০-১০০-২০০টি গরু পালেন তাদের জন্য TMR. যাদের ৫-১০-২০ টি গরু তাদের জন্য TMR না। TMR একটি মিশ্রণ- এটি খাদ্যগুণ বাড়ায় না। ভাল TMR পেতে হলে ভাল উপাদান মিক্স করতে হবে।

একইভাবে সাইলেজও ঘাষের পুষ্টি বাড়ায় না, শুধু সংরক্ষণ করে। তাই TMR করতে যেমন সবচেয়ে পুষ্টিকর ভাল উপাদানগুলো মিশ্রিত করতে হয়, সাইলেজেও তেমনি ঘাস বা ফসলের যে স্টেজে সবচেয়ে বেশী পুষ্টি থাকে তখন সাইলেজ করতে হয়।

নিম্নমানের উপাদান মিশ্রিত করলে ভাল TMR তৈরি হবে না, আবার যে ঘাসের যে স্টেজে পুষ্টি কম- সেই স্টেজে সাইলেজ করলেও তা ভাল সাইলেজ হবে না।

৭. ৫০-৬২.৫% এর মধ্যে তাত্ত্বিকভাবে ৫০-৫২ লিটার জেনেটিক মেরিট খুবই সম্ভব।

৪০-৪২ লিটার বাস্তবে দুধ পাওয়ার উদাহরণ এ দেশেই অজস্র আছে।

ভাই, ৫০% এর একটি ৪০ লিটারের গাভীকে আপনি অব্যবস্থাপনা আর অজ্ঞতা দিয়ে কতটুকু দুধ কমাতে পারবেন? ন্যুনতম খাদ্য-যত্ন তো সবাই করে।

আর ১২-১৪ লিটারের গরুকে আপনি সর্বোচ্চ খাবার আর ব্যবস্থাপনা দিয়ে দুধ হয়তো ২-৪ লিটার বাড়াতে পারবেন- এর বেশি নয়।

আমরা এতটাই অজ্ঞ আর মূর্খ যে, কেউ কেউ তেলাকচুর পাতা আর কালিজিরা খাইয়ে দুধ বাড়ানোর পরামর্শ দেয়। গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে পাতার ধুলা পরিষ্কারে পানি স্প্রে করার পরামর্শ আরকি!!!

তো ভাই, আমরা যদি সবাই একযোগে চোখ-কান খোলা রেখে ‘জেনেটিক্স’ই আমাদের প্রধান সমস্যা এটি মেনে নেই- তবেই সমাধান আসতে পারে।

কম পার্সেন্টেজে (৫০-৬২.৫%), বেশি পারফর্মেন্স (২৫-৩০-৪০লিটার) পেতে নিচের পরামর্শ গুলো সমাধানের উপায় হতে পারেঃ-

১. বাজারে প্রচলিত ইম্পোর্টেড সিমেনগুলোর (১০০%) পেডিগ্রী-EPD থাকে। তাই এগুলোই বর্তমানে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সিমেন।

কিন্তু এগুলোও ১০ বছরের পুরোনো জেনেটিক্স- অর্থাৎ মন্দের ভাল। কিন্তু সাদাকালো গরুতে তো ১০০% বীজ ব্যবহার করা যাবে না।

কারন গাভীটি যদি ২৫% এর বেশি হয় তবে ১০০% বীজ ব্যবহারে পরবর্তী প্রজন্মে ৬২.৫% এর বেশি ফ্রিজিয়ান পার্সেন্টেজ চলে আসবে।

আর সাদা কালো গাভী তো চোখে দেখে পার্সেন্টেজ বোঝা যায় না। নিম্নমানের সিমেন আর ইনব্রীডিং এর কারনে আমাদের দেশে কম দুধেরও হাই-পার্সেন্টেজ গাভী অজস্র আছে।

তাই ১০০% সিমেন দিতে হবে জেবু জাতে অর্থাৎ শাহীওয়াল, দেশী-শাহীওয়াল ক্রস বা না পেলে দেশীতে।

কিন্তু এ প্রক্রিয়াটি খুব একটা জনপ্রিয় হচ্ছে না, কারন সিমেন দিলে যদি বকনা বাচ্চা হয় তবে সে প্রথম বিয়ানের পর দুধ দিবে- অর্থাৎ কমপক্ষে তিন বছর সময় দরকার।

এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া- অনেকের পক্ষেই সম্ভব না। যাদের পক্ষে সম্ভব- তাদের মধ্যেও আগ্রহ দেখছি না। আমাদের ভাই ধৈর্য অনেক কম!!! সবকিছু আমাদের রাতারাতি দরকার!!!!!!!

২. দেশে যত সাদাকালো অর্থাৎ ফ্রিজিয়ান ক্রস গরু আছে সেগুলোর পার্সেন্টেজ কেউ জানে না।

বাজারে অনেকেই দুধের পরিমান দিয়ে পার্সেন্টেজ হিসাব করে থাকে। এটি একেবারেই ভুল।

এরকম উপদেশ বিতরণকারীদের থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন- এরা বিশেষজ্ঞ নয়- এরা কোয়াক (Quack). পার্সেন্টেজ অজানা এসব গরুতে দিতে হবে ৫০% শাহীওয়াল-ফ্রিজিয়ান সিমেন।

তাহলে পার্সেন্টেজ যাই থাকুক তা পরবর্তী প্রজন্মে সংশোধন হওয়া শুরু করবে– কষ্ট করে ৩টি প্রজন্ম পার করলেই সকল গরু ৫০-৬২.৫% এ চলে আসবে।

কিন্তু সমস্যা হল- এই সিমেন পাওয়া যায় না বললেই চলে। ২০০৭ এর প্রজনন নীতিমালায় শাহীওয়াল-ফ্রিজিয়ান বাদ দিয়ে ভাল ভাল বুলগুলোকে গায়েব করে দেয়া হয়েছে।

তবে শুনেছি পরবর্তী নীতিমালার সংশোধনীতে এটি আবার ঢোকানোর প্রক্রিয়া চলছে। সেটি কবে হবে কে জানে? দেশে যে ৫০% দেশী-ফ্রিজিয়ান ক্রস আছে সেগুলো দিয়ে ১৮ লিটারের বেশি পাওয়া যাবে না।

অতএব ভাই, এই একটি সিমেনের অভাবই আমাদের সকল সমস্যার উৎস।

যদি টিকে থাকতে চান, যদি তাড়াতাড়ি সঠিক পথে ফিরে আসতে চান, যদি ডেইরী খামার করে বাঁচতে চান তাহলে ৫০% শাহীওয়াল-ফ্রিজিয়ান বা গির-ফ্রিজিয়ান সিমেন লাগবে। কোথায় পাবেন তা??

এই মুহূর্তে আমাদের দেশে নেই। ভারত, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া সহ অনেক দেশে আছে।

আমরা যদি সরকারকে বোঝাতে পারি- তবে প্রক্রিয়া শুরু করলেও এই সিমেন তৈরী হয়ে আমাদের হাতে আসতে অনেকদিন সময় লাগবে। ততদিন কি আমরা বসে থাকব? না ভাই, সরকারকে সিমেন আমদানীর অনুমতি দিতে হবে- আমাদেরকে এই অনুমতি আদায় করতে হবে।

যতদিন অনুমতি না দিচ্ছে ততদিন আমরা কি করব?? ভাই, ততদিন কি করবেন জানি না, কিন্তু কি করা উচিৎ তা বলতে পারিঃ-

“যেকোন মূল্যে” ৫০% শাহীওয়াল-ফ্রিজিয়ান বা গির-ফ্রিজিয়ানের প্রোজেনী টেস্টেড বা কমপক্ষে জিনোমিক টেস্টেড সিমেন আমাদের লাগবে।

ভাই যদি প্রয়োজনীয়তা দৃঢ়ভাবে উপলব্ধি করতে পারেন তবে সাত-পাঁচ হিসাব করার সুযোগ আছে কি? ৫০% সিমেন যদি আপনার একান্ত চাহিদার বস্তু হয়ে থাকে তবে তা আপনি যোগাড় করবেনই, সহজ-কঠিন তো শুধুই ছলনা।

আপ্রাণ চেষ্টা করে হলেও সিমেন আমদানীর অনুমতি আদায় করুন- চাইলে তো বাঘের দুধও মেলে। চাওয়ার মত চাইতে হবে।

এত কথা বলার পরেও কারও বক্তব্য যদি এমন হয়-
“তোরা যে যা বলিস্ ভাই,
আমি শুধু ১০০% সিমেন ই চাই”
— তবে তার জন্য শুধুই একরাশ সমবেদনা!!!

ফেসবুক থেকে নেয়া

Please follow and like us:

About admin

Check Also

নবজাতক বাছুরের যত্ন ও করণীয় :

নবজাতক বাছুরের যত্ন ও করণীয় : স্তন্যপায়ী প্রায় সকল প্রাণীর জন্মপ্রক্রিয়া প্রায় একই হলেও কিছু …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »