এটিও একটি ব্যাবসা- যেখানে অন্য ব্যাবসার মত আয়ের যেমন সুযোগ আছে লসেরও তেমন সম্ভাবনা আছে।অতএব মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই নামতে হবে।
ফেসবুক সেলিব্রিটিদের কথায় ভাবার কোন কারন নেই ডেইরিতে শুধু টাকা আর টাকা।আমি দেখেছি এমন ডেইরি উদ্যোগত্তা যিনি নামার আগে হিসেব পেয়েছেন ৪০ লাখ টাকায় ২০ টি গাভি কিনলে আর ঘরের পিছনে ২০ লাখ সহ মোট ৬০ লাখ পুজি দিলে প্রতিদিন ৪০০ লি দুধ। খরচ দিনে ২০টি গাভি কর্মচারী বাবদ ৮০০০/ টাকা আর দিনে দুধ বিক্রি ৪০০ লি ৭০.০০ টাকা হারে ২৮,০০০/ টাকা। মানে দিনে ২০,০০০/ টাকা হারে মাশে ৬০০,০০০/ টাকা লাভ বছরে ৭২,০০,০০০/ বাহাত্তর লক্ষ।
আর বাস্তব অবস্থা হলো ৬০ লাখ টা বিনিয়োগ করে ২ বছর পর সব গরু বিক্রির পর মোট পুজি ফেরত ১৬,০০,০০০/টাকা।এটাই বাস্তবতা।
আবার অনেকে ৩-৪ লাখ ৫-১০ টি গরু দিয়ে শুরু করে আজ দুশ-তিনশ।গাভির মালিক।
এর কারন যদি খুজতে যান তবে বেরিয়ে আসবে থলের বিড়াল। প্রথমজন না বুঝে ফেসবুক বিশেষজ্ঞ গনের তালে পড়ে নেমেছেন আর দিতিয়জন বুঝে শিখে এবং প্রানিসম্পদ বিভাগ বা এগ্রি ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ গনের পরামর্শ নিয়ে নেমেছেন প্লান মত ধিরে ধিরে এগিয়েছেন।
অতএব সব ব্যাবসার মত এটিও একটি ব্যাবসা এবং এতেও প্রশিক্ষণ এবং ব্যাক্তিগত স্কিল ও কঠোর পরিশ্রম দরকার এটা মেনে নিয়েই নামতে হবে।এখানে মাংশের গরু দিনে ১.৮ কেজি করে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বাড়া বা সব গাভি অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত দিনে ২০ কেজি পর্যন্ত দুধ দেয়া অলিক কল্পনা।এসব হিসেব যারা দেয় বুঝতে হবে তাদের অন্য কোন উদ্যেশ্য আছে।তাই সব সময় প্রানিসম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ করে তারপর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন।
তাইলে কি ডেইরি বা ফ্যাটেনিং করব না?
অবস্যই করব কিন্তু বুঝে শুনে নিকটস্থ প্রানিসম্পদ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং নিয়ে,পড়াশোনা করে, শিখে, অন্য খামার ঘুরে অভিজ্ঞতা নিয়ে তার পর।
কিভাবে শুরু করব?
তাইলে এবার আসল কথায় আসি কিভাবে শুরু করব ডেইরি বা ফ্যাটেনিং ব্যাবসা। প্রথমেই করতে হবে জায়গা নির্বাচন। কারন খামার এমন জায়গায় হতে হবে যেখানে কাছাকাছি বাজারজাত করার ব্যাবাস্থা আছে কারন দুধ পেরিশেবল আইটেম।
তাছাড়া ডেইরি বা ফ্যাটেনিং এ ভাল করতে হলে প্রথমেই পর্যাপ্ত ঘাসের যোগানের ব্যাবস্থা করতে হবে।হাওর এলাকায় যেখানে বছরের ৪-৬ মাস পানি থাকে সেখানে সাইলেজ এর ব্যাবস্থা জরুরি।তার পরেও শুকনার সময়ে সাইলেজের সাথে কিছু কাচা ঘাস দিতে হবে।
শুরু কি জাতিয় গরু দিয়ে করব ফ্যাটেনিং নাকি ডেইরি?
এর জবাব হলো যদি এলাকায় দুধের চাহিদা ও দাম পাইকারি লিটার প্রতি ৫০/ টাকার উপর থাকে তাইলে বানজ্যিক ডেইরি করা সম্ভব।এর কম দাম হলে হাউঝহোল্ড ডেইরি করা সম্ভব কিন্তু পুরো বানিজ্যিক নয়।
বকনা নাকি দুধের গাভি দিয়ে?
এর উত্তর ও পাবেন আপনার বাজেট ও অবস্থান অনুযায়ী নিকটস্থ প্রানিসম্পদ দপ্তরে।
আর যদি এলাকায় দুধের দাম ও বাজার না থাকে তবে ফ্যাটেনিং এর চিন্তা করা যেতে পারে।
শুরুটা কিভাবে হবে
প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনার অভিজ্ঞতা ও বাজেট অনুযায়ী কিভাবে শুরু করা যায়।যদি আপনার বাজেট কম থাকে কিন্তু মাশে মাশে ইনভেস্ট করার সামর্থ্য থাকে তবে শুরুটা বকনা দিয়ে করা যায়।কিন্তু এতে কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর ও জড়িত
অনেকভাবেই ডেইরী খামার শুরু করা যায় যেমনঃ –
১। ক্রস ভালো দুধের গাভী দিয়ে?
২। বকনা বাচ্চা দিয়ে?
৩। দেশী গাভী থেকে জাত উন্নয়ন করে?
৪। ফ্যাটেনিং বুল দিয়ে- তা হতে পারে নিজের খামারের ষাড় বাছুর বা কেনা বাছুর দুই দাতের শুকনো কিন্তু সুস্থ ষাড় কেনার মাধ্যমে?
“আসলেই উত্তরটা বেশ জটিল”
১ঃ –
তারপরেও বলি দেখুন যদি আপনি ফুল টাইম পেশা হিসেবে ডেইরী ফার্মিংকে নিতে চান তবে অবশ্যই ক্রস গাভী দিয়ে শুরু করুন। তবে শুরু করার আগে অবশ্যই প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন খামার থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় ও প্রাণী সম্পদ বিভাগের পরামর্শ নিন। ফেইসবুক বা ইউটিউবের নয়।
বানিজ্যিক ডেইরি খামার করার জন্য এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে যেখানে দুধের পাইকারি মুল্য ৫০/ টাকার বেশি থাকে।নইলে বানিজ্যিক খামার লাভজনক হবে না।পারিবারিক ভাবে ছোট আকারে কয়েকটি গাভি পালা যেতে পারে।কারন বাড়ি সংলগ্ন পারিবারিক খামারে খরচ কম হয়।
একমাত্র ক্রস গাভী আপনাকে দিনে প্রথম দিকে ১৫-২৫ লিটার দুধ দেবে যা দিয়ে আপনি পুন পুন ব্যাবহার করে খামার চালাতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন কোন অবস্থাতেই প্রশিক্ষণ না নিয়ে এই জাতীয় গাভী কেনা যাবে না। ১ম দফায় কেনা গাভীগুলোর দুধ ৩/৪ মাস পর কমতে থাকবে। তাই আরো অন্তত দুইবার গাভী কেনার টাকা জমা রাখতে হবে। গাভি কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে ফ্রিসিয়ান পারসেন্টেজ ৫০-৬২.৫% এর মধ্যে থাকে।এর চেয়ে বেশি পারসেন্টেজ ফ্রিসিয়ান গাভি পালন করা কস্টকর।
যদি আরো দুই দফায় গাভি কেনা সম্ভব না হয় তবে ডেইরি ব্যাবসায় না আসাই ভাল। কারন অনেকেই কিছুদিন পর প্রথমে কেনা গরুগুলোর দুধ কমে গেলে অর্থকস্টে পড়ে খামার বন্ধ করে দিতে দেখেছি। মনে রাখতে হবে একটি গাভি কখোনও ৭-১০ মাসের বেশি দুধ দেবে না।এবং দুধের পরিমান ধিরে ধিরে কমে আসবে।
তবে মনে রাখতে হবে এই ক্রস গাভীগুলো খুব সাবধানতার সাথে পালন করতে হবে। এর খাদ্য ব্যবস্থাপনা (পর্যাপ্ত ঘাস ও পরিমান মত মান সম্পন্ন দানাদার) ঠিকভাবে দিতে হবে এবং কোনরকম রোগবালাই দেখা দিলে সাথে সাথে প্রাণীসম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে।
২ঃ –
এরপর আসি বক্না কিনে খামার শুরু করার কথায় :
এটি আপনি শুধুমাত্র তখনি শুরু করতে পারবেন যদি আপনার অন্য পেশা থেকে নিজের ও পরিবারের খরচ চালিয়েও মাসে মাসে কিছু টাকা বক্নার খাদ্য, কাজের লোকের বেতন ও অন্যান্য খরচ নির্বাহ করতে পারেন।কারন এগুলো উতপাদনে আসতে ১-২ বছর সময় লাগবে।
অবশ্য গ্রামের বাড়িতে ২/৩টি বক্না কাজের লোক না রেখেও নিজে এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা পালতে পারবেন ।এবং বাড়ির আংিনায় বা সামান্য ধানি জমিতে ঘাস চাষ করে ঘাসের যোগান দিতে পারবেন। এতে খরচ অনেক কমে যাবে।
বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় এখন পরিবারিকভাবে বিভিন্ন খামার থেকে বকনা সংগ্র করে তা লালন পালন করে বাচ্চা দেয়ার পরপরই বিক্রয় করে অনেকে সংসার চালাতে দেখেছি। আবার অনেকে অন্য কাজের পাশাপাশি বেশি ইনভেস্ট করে লোক নিয়োগ করে নিজের তত্বাবধানেও বকনা পালন করে বিক্রয় করে থাকেন।
তবে এতে কিছু কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর জড়িত। যেমন- কিছু কিছু বকনা গাভিন হয় না বা অনেক সময় দেখা যায় যে গাভিন হলেও ২/১টি দুধ অত্যন্ত কম দেয় যা কসাইর কাছে বিক্রয় করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
৩ঃ –
এবার আসি দেশী গাভী থেকে ১০০% ফিসিয়ান দিয়ে জাত উন্নয়ন ঃ- এটি কিন্তু সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যাদের মুলতঃ পারিবারিকভাবে দেশী গাভী আছে এবং তা কমপক্ষে ৩ লিটার দুধ দেয় যা একটি ফিসিয়ান ক্রস বাচ্চার জন্য প্রয়োজন এবং তারা ১ম দুই মাস সম্পূর্ণ দুধ বাচ্চাকে খাইয়ে পালন করার মানসিকতা থাকলে তবেই তাদের ১০০% ফিসিয়ান দিয়ে প্রজনন করা উচিত।
এতে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ভাল গাভীর স্টক তৈরী করা সম্ভব। তবে পারিবারিকভাবে গাভী না থাকলে নূতন দেশী গাভী কিনে কর্মচারী রেখে পালন করা লাভজনক নয়। তবে নিজে গ্রামে বাস করলে ও সকাল বিকাল গরুকে সময় দিতে পারলে ২/৩ টা দেশী গাভী কিনে জাত উন্নয়ন করা যেতে পারে।
৪ঃ –
ফ্যাটেনিং, বাজেট অনুযায়ী স্থানীয় ভাবে ষাড় বাছুর বা সংরহ করে বা সিমান্ত এলাকা থেকে ষাড় সংরহ করে শুরু করতে পারেন।তবে এখেত্রেও আপনার গরু চেনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে বা নিকটস্থ প্রানিসম্পদ দপ্তরের বা আশেপাশের অভিজ্ঞ খামারিদের থেকে পরামর্শ নিন।কারন গরু কেনায় ঠকলে লাভ করা কঠিন হয়ে যাবে।
ফ্যাটেনিং বিভিন্ন মেয়াদের হতে পারে ৩ মাস, ৪ মাস, ৬ মাস বা ১ বছর মেয়াদি হতে পারে। আপনার সামর্থ ও স্থানীয় বাজার হিসেবে সিদ্ধান্ত নিন।
গরু নিজে দেখে কিনুন ব্রান্ডেড সাপ্লাইয়ার থেকে নয়।কারন উনারা লাভের শিংহভাগ নিজেরাই নিয়ে নেবে।আপনি কিছুই পাবেন না।মনে রাখবেন উনারাও সিমান্ত এলাকার হাটগুলো থেকে সংরহ হরে সরবরাহ করে।তা আপনি নিজেই পারবেন অনেক টাকা বেচে যাবে।
সাবধানতা :
১) নিজে না জেনে প্রশিক্ষণ না নিয়ে খামার শুরু না করা।
২) সকল ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ফেসবুক বা ইউটিউব বিশেষজ্ঞ থেকে দূরে থাকা।
৩) যে কোন পরামর্শের জন্য নিকটস্থ প্রাণী সম্পদ দপ্তর বা ভেটেরিনারী কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় এর বিশেষজ্ঞগণের পরামর্শ গ্রহণ।
৪) সময়মত কৃমিনাশক ও টিকা প্রদান।
৫) পর্যাপ্ত ঘাসের ব্যবস্থা করতে না পারলে এ ব্যবসায় না আসা।
৬) স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা।
এবং স্থানীয় ভাবে সব খামারিরা সংগঠিত থাকা।
৭) স্থানীয়ভাবে অভিজ্ঞ খামারীদের সাথে যোগাযোগ রাখা যাতে কোন ইমার্জেন্সী হলে সহযোগিতা পাওয়া যায়। কারণ বিশেষ বিশেষ কিছু সময়ে আপনি প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সেবা নাও পেতে পারেন। যেমন ঈদ ও বিভিন্ন সরকারী ছুটিতে এবং সরকারী জরুরী কোন অনুষ্ঠান থাকলে।
৮) গরু কেনার সময় ফেসবুক বা ইউটিউব গরু ব্যবসায়ী থেকে দূরে থেকে নিকটস্থ গরু ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা নেওয়া। এতে ঠকার সম্ভাবনা কম থাকে। ফেসবুকে পরিচিত অনেকের কাছ থেকে গরু কিনে বিভিন্নজন ঠকেছে বলে শুনা যায়।
#রেকর্ড কিপিং জিনিসটা কি?
#কেন করব?
#এর কি কোন প্রয়োজনীয়তা আছে?
#করে কি লাভ হবে না লস?
#সাস্টেনিটির উপর এর কোন প্রভাব আছে কি না?
#কিভাবে করব?
এবার আসি রেকর্ড কিপিং আসলে কি?
এটিকে বলতে পারি সহজ কথায় খামারের পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতিয় তথ্য, যেমন হিসাব নিকাশ ও গাভি,বাছুর ও ষাড় এর বিস্তারিত যেমন এর বয়স,জাত,জন্মতারিখ, বাবা মা এর পরিচয়,টিকা দেয়ার ও কৃমির অসুধ দেয়ার তারিখ ও কি দেয়া হয়েছে।
কোন গাভিটি ল্যাক্টেশনের কোন অবস্থায় দিনে কতটুকু দুধ দেয়।আমরা প্রতিদিন দেখছি বা করছি এগুলোই ভবিষ্যতের জন্য কাগজে লিখে রাখা।
হিসাব কিন্তু আমরা সবাই ই লিখি কিন্তু এর সাথে এখন থেকে গরুর বিস্তারিত আমাদের সার্থেই আমাদের লিখে রাখা উচিৎ।
একই সাথে প্রতিটি গাভি ও বাছুর এর অসুখ, চিকিৎসা ও তার জন্ম ওজন,বৃদ্ধির হার, খাদ্য প্রদান এর সাথে বৃদ্ধির ও দুধ উতপাদন এর সম্পর্ক ইত্যাদি। এগুলো আমরা প্রতিদিন বা মাসিক ভাবে জানি বা দেখছি । কিন্তু লিখে না রাখায় তা কিছুদিন এর মধ্যে ভুলে যাই।
এবার আসি এই রেকর্ড কিপিং আমরা কেন করব?
এটি খামার ভিত্তি মজবুত করার একটি হাতিয়ার তাই করতেই হবে।
তাইলে প্রশ্ন আসবে কিভাবে?
আমরা কিন্তু ডেইরি খামার করি দীর্ঘ মেয়াদের জন্য।যেহেতু এটি দির্ঘ মেয়াদি একটি প্রকল্প তাই এর ভিত মজবুত করার জন্য ব্রিডিং জরুরি। আর এই ব্রিডিং এ সফলতা পেতে হলে ইনব্রিডিং প্রতিরোধ জরুরি। এই ইনব্রিডিং প্রতিরোধ এ রেকর্ড কিপিং এর কোন অল্টারনেট নেই।
তাইলে প্রশ্ন আসে ইনব্রিডিং কিঃ সহজ উত্তর হলো ইনব্রিডিং হলো নিকটাত্মীয়ের মধ্যে প্রজনন।
যেমন টি আমাদের ক্ষেত্রে সব ধর্মেই ধর্মীয় ভাবে নিষেধ।
কেন? এর উত্তর যতটা না সামাজিক সমস্যা তার চেয়ে বেশি বৈজ্ঞানিক ভাবে ক্ষতিকর প্রমানিত ।প্রতিটি প্রানির মধ্যেই কোটি কোটি জিন রয়েছে এর মধ্যে ভাল জিন যেমন আছে খারাপ জিনও তেমন আছে।
নিকটাত্মীয়ের মধ্যে প্রজননের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রজননে খারাপ জিনের আধিক্য ঘটতে পারে তার দুধ ও মাংস উতপাদন মারাত্তক ভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে,বাছুর বিকলাঙ্গ হতে পারে বা বাছুর এর মৃত্যুহার বেড়ে যেতে পারে।এগুলো সবগুলোই খামারের ভবিষ্যৎ আর্থিক খতির কারন হতে পারে।এটি যেহেতু রেকর্ড কিপিং নিয়ে লিখা তাই ইনব্রিডিং নিয়ে এটুকুই শুধু সহজ ভাষায় বলি একটি বুল এর সাথে তার আপন ও সৎ বোন,মা, মেয়ে এজাতিয় সম্পর্কে প্রজননই ইনব্রিডিং,পরে এব্যাপারে বিস্তারিত লিখার চেস্টা করব।
তাছাড়া আমাদের দেশে প্রায় ৫০ বছর হতে চলল ক্রসব্রিড গাভি পালার। কিন্তু আমরা খামারিরা বা সরকার বা ব্রীডিং কোম্পানিগুলো কেউওই এখনো জানি না আমাদের দেশে কোন কোন কম্পোজিশন এর ক্রসব্রিড বুলটির বাছুর বকনা হলে আমাদের জন্য ভালমানের ও বেশি দুধ, ষাড় হলে অল্প খাদ্য খেয়ে ধ্রুত বৃদ্ধি ও বেশি মাংস দেবে।রোগ বালাই কম হবে ও আমাদের আবাহাওয়ায় ভাল ভাবে মানাবে।
এখনো আমরা অন্ধের মত পথ চলছি।বুল এর তথ্য খামার এর রেকর্ড / হার্ডবুক থেকে সংগ্রহ করে তা ব্রিডিং কোম্পানিগুলোর প্রকাশ করার কথা। কিন্তু আমাদের রেকর্ড না রাখার কারনেই তারাও তা করতে পারছে না।
আমরা এখোনও আনাড়ির মত একটি বিজ দেয়ার আগে বুলের তথ্য না জেনে বিজ দেয়ার পর বুল নং প্রকাশের মাধ্যমে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে চাই।এটা কি যৌক্তিক?
বিজ দেয়ার আগেই বুলের বিস্তারিত প্রকাশিত তথ্য খামারির জানার অধিকার আছে।এমনকি এর প্রমানিত কোন তথ্য না থাকলে বা এটি প্রজেনি টেস্টিং এর আওতায় থাকা বুল হলেও তা জানার অধিকার খামারিদের রয়েছে।
এগুলো থেকে উত্তরনের জন্য রেকর্ড কিপিং জরুরি। আমরা খামারিরা যদি রেকর্ড রাখি করি তবে ৫ বছরের বেশি বয়সি সব বুলের পারফরম্যান্স বিভিন্ন খামারে খোজ নিয়ে এর রেকর্ড দেখেই বলে দিতে পারা যাবে কোন কোন বুলের বাচ্চা ভাল করছে আর কোনটা খারাপ।এর ফলে খারাপ বুল ধ্রুত ব্রিডিং লাইন থেকে বাদ যাবে এবং ভাল বুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এতে ব্রিডিং কোম্পানি গুলো যেমন লাভবান হবে খামারিদের তারচেয়ে বেশি লাভ হবে।দেখুন এখন কিছু কিছু খামার রেকর্ড রাখায় আমরা সরকারি কিছু ভাল বুলের কথা জানতে পারি।কেউ রেকর্ড না রাখলে এগুলো অজানাই থেকে যেত।
তাছাড়া আমরা অনেক সময়েই টিকা দেওয়ার তারিখ ঠিকভাবে লিখে রাখি না ফলে সময়মত টকা না দেয়ায় অনেক খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আবার ক্রসব্রিড গাভি বা ষাড় এর কৃমির আক্রমণ বেশি হয় অতএব নিয়মিত সময়ে তা না দিলে কৃমি আক্রান্ত হয়ে উতপাদন মারাত্তক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমনকি অনেক সময় হাই পারসেন্টেজ গাভি,বাছুর বা বুল মারাও যেতে পারে।
তাইলে আসি এটি কিভাবে শুরু করব?
এটা একদমই সোজা একটা কাজ দিনে ১০ -২০ মিনিট সময় দিলেই ছোট বা মাঝারি একটি খামারের সব রেকর্ড রাখা সম্ভব।আর বড় খামারের জন্য আকার ভেদে ৩০-৬০ মিনিট সময় ব্যায় হবে।
প্রথম ধাপ হবে এনিম্যাল আইডিন্টিফিকেশন। অর্থাত প্রতিটি গরু বা বাছুর কে একটি নাম বা নাম্বার দিয়ে আইডেন্টিফাই করা এবং তা কানে ট্যাগ বা প্লাস্টিকের ছোট চাকতিতে লিখে গলায় ঝুলিয়ে দেয়া। এর পর হিসেবের খাতার বাইরে এক বা একাধিক খাতা নিয়ে তাতে গরুর বিস্তারিত লিখে শুরু করা।এবং এতে
ছক করে এক পাতায়ই একটি গরুর বিস্তারিত লিখে রাখা সম্ভব।
যেমন তার পেডিগ্রি, দুধ উতপাদন, বৃদ্ধির হার,কৃমির অসুধ ও টিকা প্রদান সংক্রান্ত এবং বিভিন্ন সময়ে তার অসুখ ও চিকিৎসা ইত্যাদি।
সবাই আসুন প্রথমে প্রতিটি গরুর নাম বা নাম্বার দেয়ার মাধ্যমে শুরুটি করি।আর নিচের ছকে দেয়া একটি খাতা সস্তায় স্ক্রিন প্রিন্ট করে বা হাতে ছক করে তইরি করে শুরুটা করি
মালিক ওমর