Breaking News
ইমোনিটি
ইমোনিটি

ইমোনিটি কি,কিভাবে তৈরি হয়,টিকা দেয়ার পরও কেন কাজ করেনা।

রোগ অনাক্রম্যতা(ইমোনিটি)শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা,টিকা এবং ভ্যাক্সিনেশন

রোগ অনাক্রম্যতা(ইমোনিটি)ঃহচ্ছে শরীরে অর্জিত স্বাভাবিক সামর্থ যার দ্বারা নিজের থেকে বহিরাগত বস্তুকে পার্থক্য করতে পারে,ক্ষতিকর জীবাণূ এবং বস্তুকে দূরীভূত করে ,তাদের কার্যকারিতা নস্ট করে,কিছু বিশেষ কোষ যেমন শ্বেত রক্ত কণিকার দ্বারা তাদেরকে গিলে ফেলে,কিছু নিঃসরণ যেমন পাকস্থলীর এসিড,এনজাইম ইত্যাদির দ্বারা নস্ট করে, কিছু প্রতিবন্ধক যেমন চামড়া,মিউকাস মেমব্রেন এর দ্বারা বাধা দিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারে তাকে রোগ অনাক্রম্যতা বা ইমোনিটি বলে।

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ

যে পদ্ধতির দ্বারা বহিরাগত কিছু বস্তু(নির্দিস্ট কিছু জীবাণূ হতে তৈরি) শরীরে প্রবেশ করিয়ে এন্টিবডি উৎপন্ন করা হয় যা ঐ নির্দিষ্ট জীবাণূর আক্রমনের  দ্বারা ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তাকে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বলে। নির্দিস্ট প্রকারের ব্যক্টেরিয়া,ভাইরাস,প্রোটোজোয়া কিংবা ফাংগাসের বিরোদ্ধে এরুপ ব্যবস্থা নিয়ে শরীরকে তাদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা হয়।এই কাজে লিম্ফোসাইট  এবং তাদের অন্যান্য ডেরিভেটিভ কোষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

প্রকৃত পক্ষে বাচ্চার দেহে ২ ধরণের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ঊঠে।এই কাজে ২ ধরণের লিম্ফোসাইট প্রয়োজন হয়.

২ পদ্ধতি নিন্মরূপঃ

১।T পদ্ধতিঃ(থাইমাস পদ্ধতি)ঃ

ছোট বাচ্চাতে কিছু অপরিপক্ষ লিম্ফোসাইট কুসুম থলি এবং অস্থিমজ্জায় উৎপন্ন হয় যা থাইমাস দিয়ে অতিক্রম করে তাদেরকে টি লিম্ফোসাইট বলে।এখানে তারা পরিপক্ষ হয়,বেশি করে জন্মায় এবং লিম্ফয়েড অংগ যেমন প্লিহা,সিকামের টন্সিল,হার্ডেরিয়ান গ্যান্ড এবং অস্থিমজ্জায় জমা হয় বাচ্চা ফুটার কয়েক সপ্তাহ পর পর্যন্ত ।টি লিম্ফোসাইট  এন্টিবডি উৎপন্ন করে না কিন্তু তাদের লিম্ফোকাইন্স উৎপন্ন করার ক্ষমতা আছে যাদেরকে বলা হয় ত্রূটি পূর্ণ কোষ(Defector cell).এন্টিবডির উপস্থিতি ছাড়াই তাদের সরাসরি সংস্পশে বহিরাগত কোষ ধ্বংস হয়।ইহাকে বলা হয় কোষ মধ্যস্থিত ইমোনিটি(cell mediated immunity) বা কোষীয় ইমোনিটি(cellular immunity)।কোষ মধ্যস্থিত ইমোনিটি তৈরি হওয়া এক জটিল পদ্ধতি।এই পদ্ধতিতে কাজ হওয়ার একটি দিক হচ্ছে বহিরাগত জীবাণূ কে গিলে ফেলা(phagocytosis).টি কোষ ম্যাক্রোফেজ থেকে তৈরিকৃত এন্টিজেন গ্রহণ করে।ম্যাক্রোফেজ বা অন্যান্য মনোসাইট মনোকাইন্স উৎপন্ন করে যা টি কোষকে উত্তেজিত করে।টি কোষও লিম্ফোকাইন্স উৎপন্ন করে  যা বি কোষ এবং অন্যান্য লিম্ফয়েড কোষকে আঘাত করে(effect)।গুরুত্বপূর্ণ লিম্ফোকাইন্স যেমন ইন্টাফেরণ ভাইরাসের বংশ বিস্তারে এবং ইন্টারলিউক্লিন্স উৎপন্ন তৈরিতে বাধা দেয়।ইন্টারলিউকিন্স রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সাড়া জাগানোর একটা বড় নিয়ন্ত্রক,উত্তেজনাকারী এবং বাধাদানকারী

২।বি(B) পদ্ধতিঃ(bursal system)

এক্ষেত্রে ছোট বাচ্চায় টি কোষ এবং অন্যান্য লিম্ফোসাইট বার্সা ফেব্রিকাস এর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে।বার্সার নালীর মুক্তদার অঞ্চলে টি কোষ থাকে।প্লাজমা কোষ তৈরি হয় বি পদ্ধতির দ্বারা ।এ ছাড়া বার্সা,প্লিহা এবং সিকাল টন্সিলেও তৈরি হয়।বাচ্চা মুরগিটি্র সমস্ত জায়গাই রোগ প্রতিরোধের জন্য এন্টিবডি উৎপন্ন হয়,বাস্তবে বি পদ্ধতিতে টি পদ্ধতির তুলনায় ৭০০গুণ বেশি এন্টিবডি উৎপন্ন হয় কিন্তু কম সময় কার্যকরী থাকে এবং ভাল প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠে ।বিশেষ করে ভাইরাস জনিত রোগের বিরুদ্ধে(মেরেক্স,পক্স,লিম্ফয়েড লিউকোসিস রোগ ব্যতিত।বার্সা পদ্ধতিতে(Humoral)অথবা সঞ্চালন(circulating) ইমোনিটি বলে.এখানে কিছু টি লিম্ফোসাইকে দমিত (suppress) করে তাদেরকে দমনকারী কোষ বলে।অন্যরা টি লিম্ফোসাইটকে উত্তেজিত করে এন্টিবডি উৎপন্ন করে তাদেরকে সাহায্যকারী কোষ বলে।

বাচ্চা অবস্থায় কোন রোগ যদি থাইমাস বা বার্সাকে আক্রান্ত করে তাহলে টি অথবা বি কোন পদ্ধতিই ভাল কাজ করে না।

এনাম্নেস্টিক সাড়া দেওয়া(Anamnestic response):

বি পদ্ধতির পরে যে লিম্ফোসাইট উৎপন্ন হয় তারা মেমোরি কোষ(memorry cell) হিসাবে কাজ করে,এদের সাড়া দেওয়াকে এনাম্নেস্টিক সাড়া দেওয়া বলে।উদাহরণ হিসেব বলা যায় কোন রোগের বিরুদ্ধে ২য় ভ্যাক্সিন দিলে ২য় ভ্যাক্সিন থেকে ভাল ভাবে এবং তাড়ারাড়ি ঐ রোগের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

কিভাবে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অবদমিত হয়ঃ

কিছু রোগ এবং অন্যান্য অবস্থা যা বাচ্চার থাইমাস এবং বার্সা ফব্রিকাস গঠনে বাধা দেয় ফলে গ্রন্থিগুলো ধ্বংস হয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্থ হয়।
টি(T)পদ্ধতি অবদমিত হয়

১।মারেক্স
২।অতিরিক্ত গরম ও ঠান্ডায়
৩।বংশগত কারণে
৪।অসম্পূর্ণ ভ্যাক্সিন বিক্রিয়ায়
৫।আলফাটক্সিকোসিস
বি(B)পদ্ধতি অবদমিত হয়
১।গাম্বোরো.
২।অতিরিক্ত গরম ও ঠান্ডায়
৩।লিম্ফয়েড লিউকোসিস.
৪।সঠিক পুস্টির অভাব
৪।বিষক্রিয়ায়
৫।কম পরিমাণ এন্টিবডি উতপাদনের কারণে
৬।আলফাটক্সিকোসিস

এন্টিবডি এবং ইমোনিটি(immunity)
বহিরাগত বস্তু মুরগির শরীরে প্রবেশ করলে শরীর তা বের করে দেয়।এই বস্তুর কিছু অংশ হজম না হয়ে পায়খানা এবং প্রসাব দিয়ে বের হয়ে যায়।ব্যাক্টেরিয়াও এক ধরণের প্রোটিন যা পাখির জন্য বহিরাগত বস্তু।এই বহিরাগত প্রোটিনের বিষাক্ত বিক্রিয়ায় রোগ সৃস্টি হয়।শরীর এদেরকে বের করতে এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরিত করে যা বহিরাগত জীবাণূকে অকার্যকর করে তাকে এন্টিবডি বলে।

#নির্দিস্ট জীবানূর নির্দিস্ট স্ট্রেইন থেকে তৈরিকৃত এন্টিবডি নির্দিস্ট স্ট্রইনের জীবানূকে প্রতিহত করে।
#এন্টিবডি দ্রুত বা দেরিতে উৎপন্ন হওয়া নির্ভর করে
কি পরিমাণ জীবাণু দেওয়া আছে প্রাথমিক আক্রমণের জন্য
জীবাণুর কর্মক্ষমতা
পাখির শারীরিক অবস্থা অর্থাৎ কতটা ধকল থেকে মুক্ত আছে তার উপর
কি ধরণের জীবাণুর টিকা
#রোধ প্রতিরোধ ব্যবস্থার স্থায়িত্ব এক এক ধরনের টিকার এক এক রকমের হয়।
#সমস্ত ধরনের জীবাণুর বিরুদ্ধেই তার নির্দিস্ট এন্টিবডি পুরোপুরি কাজ করে না।যেমন সালমোনেলা পুলোরাম জীবাণু।এক্ষেত্রে জীবাণু সংকোচিত ডিম্বানূতে রক্ত প্রবাহ ঠিক মত হয় না।তাই এন্টিবডি তৈরি হবার সুযোগ নাই।এদিকে সালমোনেলা পুলোরাম জীবানূ নস্ট হয়ে(degenerated) যাওয়া  ডিম্বানুতে বেচে থাকে এবং বংশ বিস্তার করে।
ফলে সালমোনেলা টিকা দেওয়ার পরেও রোগ হবার সম্বাবনা থেকে যায়।
এন্টিবডি উৎপন্ন হওয়ার তারতম্য

#এন্টিবডি বেশি উৎপন্ন হলে টাইটার মাত্রা বেশি  হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও ভাল হবে।

#বাচ্চাতে রোগকে প্রতিরোধ করতে বেশি এন্টিবডি প্রয়োজন হয় কিন্তু কিছু রোগে বয়স্ক পাখীতেও বেশি এন্টিবডি প্রয়োজন হয় যেমন লিউকোসিস।

#বয়স্কের তুলনায় বাচ্চাতে দ্রুত এন্টিবডি টাইটার নিচে নেমে যায়।

প্যাসিভ ইমোনিটিঃ

প্যারেন্টে এন্টিবডি টাইটার (কোন রোগের জন্য) বেশি থাকলে ডিমে আসবে।তার থেকে বাচ্চাতেও বেশি এন্টিবডি থাকবে।সেই বাচ্চা সহজে রোগে আক্রান্ত হবে না।তবে বাচ্চাতে পিতামাতা হতে প্রাপ্ত এন্টিবডি কম আসলে কিংবা না আসলে বাচ্চা পরবর্তিতে সহজে রোগে আক্রান্ত হয়।পিতা মাতা হতে বাচ্চাতে এন্টিবডি না এসে যদি রোগের জাীবাণূ বাচ্চা ফুটানো ডিমে যায়(hatching egg) যেমন সালমোনেলা.

এখানে এই জীবাণুর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত এন্টিবডি তৈরি না হয়ে ফুটে বের হওয়া বাচ্চা ঐ রোগে বেশি আক্রান্ত হবে।রানিক্ষেত রোগের ক্ষেত্রেও বাচ্চাতে আসে।(passive immunity).

ভ্যাক্সিন ও ভ্যাক্সিনেশনঃ

যে পদ্ধতিতে কোন জীবাণূসহ জীবাণূর এন্টিজেন অংশকে পাখী বা অন্য জীবের শরীরে প্রবেশ করিয়ে এন্টিবডি উৎপন্ন করা হয় যা বাহিরে থেকে আসা ঐ জীবাণূকে প্রতিহত করে ঔ রোগ থেকে পাখী বা ঐ জীবকে রক্ষা করে তাকে ভ্যাক্সিনেশন বলে এবং যা শরীরে প্রবেশ করিয়ে রোগ প্রতিরোধ করা হয় তাকে ভ্যাক্সিন বলে।

ভ্যাক্সিন কিভাবে কাজ করে

জীবাণূকে শরীরে প্রবেশ করিয়ে মৃদু আক্রমণ ঘটিয়ে মৃদু প্রকৃতির রোগ সৃস্টি করা হয়।প্রবেশ করা জীবাণূর এন্টিজেন অংশ নির্দিস্ট কিছু অংগ যেমন প্লীহা,বার্সা ফেব্রিয়াস,হার্ডেরিয়ান গ্রন্থি,সিকাল টন্সিল,থাইমাস এবং লিম্ফয়েড এ এন্টিবডি উৎপন্ন হয় যা বাহির থেকে আসা ঐ নির্দিস্ট জীবাণূকে আক্রমণ করতে প্রতিহত করে।

ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা বা কাজের তীব্রতা নির্ভর করে কি নিয়মে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং কেমন ক্ষমতা সম্পন্ন জীবানূ কি পরিমাণ দিয়ে ভ্যাক্সিন তৈরি করা হয়েছে তার উপর যেমন

১।তীব্রতর জীবানূ দিয়ে তৈরি

২।কম তীব্রতর  জীবাণু দিয়ে তৈরি

৩।মৃত জীবাণু দিয়ে তৈরি

কেমন করে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হয়

১।মাংস পেশীতে

২চামড়ার নিচে

৩।চোখে

৪।নাকের ছিদ্রে.

৫।মুখে

৬।পানির দ্বারা শ্বাসনালীতে

৭।পাউডার ভ্যাক্সিন নাকের ছিদ্র দিয়ে শ্বাসনালিতে প্রবেশ করিয়ে

৮।পায়ু পথে

৯।পাখনার নিচে

১০।পালক গ্রন্থিতে

১১।স্প্রে করে

টিকার প্রকারভেদ

কার্যকারিতা এবং তৈরি পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে টিকাকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে

১।জীবন্ত ভাইরাস টিকাঃমৃদু আক্রমণ সৃস্টির পরে এন্টিবডি উৎপন্ন করে বহিরাগত ঐ নির্দিস্ট জীবাণূকে প্রতিহত করে রোগ মুক্ত রাখে।

২।দুর্বল জীবাণূ  (attenuated)থেকে তৈরি টিকা

বিভিন্ন পদ্ধতিতে সচল জীবাণূকে দূর্বল করে ভ্যাক্সিন উৎপন্ন করা হয়।

৩।মৃত টিকাঃজীবাণূকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে মৃত করে টিকা উৎপন্ন করা হয়।এক্ষেত্রে জীবন্ত বা দূর্বল জীবাণূ থেকে তৈরি টিকার অনুরুপ দ্রুত এবং পর্যাপ্ত এন্টিবডি উৎপন্ন হয় না।সাধারণত মেসোজেনিক স্ট্রেইন থেকে কিল্ড টিকা তৈরি করা হয়।

পিতামাতা থেকে প্রাপ্ত এন্টিবডি এবং টিকা প্রয়োগঃ

প্রাথমিকভাবে প্যারেন্ট এ জীবন্ত টিকা সঠিকভাবে প্রয়োগের পর নিষ্ক্রিয়(Oil emulsion killed vaccine) টিকা প্রদান করলে প্যারেন্টের দেহে উচ্চ মাত্রায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়।

লেয়ার প্যারেন্ট এ পদ্ধতিতে শুধু রোগ প্রতিরোধ করে না বরং পরবর্তি প্রজন্মে এর প্রভাব থাকে।প্যারেন্ট লেয়ারের রক্তে যে এন্টিবডি তৈরি হয় তা রক্ত থেকে ইয়ক সেকে চলে যায়।ভ্রূণ তৈরি হবার সময় ইয়ক স্যাক থেকে ভ্রূণে স্থানান্তরিত হয় এবং ডিম থেকে বাচ্চা ফুটার পর কিছুদিন বাচ্চার দেহে থেকে যায়,যাকে ম্যাটার্নাল এন্টিবডি বলে।প্যারেন্ট মুরগির এন্টিবডি টাইটার বেশি হলে বাচ্চার দেহেও এন্টিবডি টাইটার বেশি থাকবে।বাচ্চার দেহে কোন কোন ক্ষেত্রে ২/৩ সপ্তাহ পর্যন্ত এম ডি এ থেকে যায়।বাচ্চার দেহে  (MDA) এর উপস্থিতিতে জীবন্ত টিকা সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয় কারণ এম ডি এ যেমন পরিবেশের ভাইরাসকে প্রতিহত করে,ঠিক একইভাবে ভ্যক্সিন ভাইরাসকেও প্রতিহত করে।ফলে টিকার দ্বারা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠা না।এম ডি এ যখন নিম্ন স্থরে চলে আসে তখনই টিকা করলে টিকা কার্যকর হয়।

ধকল এবং টিকা প্রয়োগ

টিকা প্রদানে সুস্থ স্বাভাবিক পাখীতেও মৃদু প্রতিক্রিয়ার সৃস্টি হয়।এর সংগে ধকল এই প্রতিক্রিয়াকে আরো স্পস্ট করিয়া তোলে অর্থাত পাখীতে শারীর বৃত্তীয় পরিবর্তন আনে।ফলে অনেক সময় টিকার রিয়াকশনে রোগ হয়ে যেতে পারে।

কোন ধকলে টিকা দেয়া যাবেনা

যখন খাবার খায় না

তাপমাত্রা যদি ৩৫ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট এর বেশি হয়

পাখিতে যদি অন্য কোন রোগ থাকে যেমন কক্সিডিওসিস ,কৃমি ,মাইকোপ্লাজমোসি

অন্য কোন রোগের টিকার প্রতিক্রিয়া চলাকালীন

রোগে আক্রান্ত অবস্থায়

ঠোটকাটার পরপরই

মোল্টিং চলাকালীন এবং ১-২ সপ্তাহের মধ্যে

সালফার ড্রাগ বা জেন্টামাইসিন চলাকালীন

কন্টামিনেটেড ভ্যাক্সিন

যে জীবাণুর বিরুদ্ধে টিকা উৎপন্ন করা হচ্ছে তার মধ্যে যদি অন্য জীবাণূ থাকে তাহলে ক্ষতিকর হবে।

টিকা বানানোর জীবাণূ যদি ভ্রূণে জন্মানো(harvest) হয় তাহলে অন্য জীবাণূ জন্মিয়ে তা বাণিজ্যিক টিকায় আসার সম্বাবনা থাকে।বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তিতে এই ক্ষতিকর সম্বাবনা দূর করা সম্বব।বেশির ভাগ উন্নত দেশে COFAL) মুক্ত এবং মাইকোপ্লজমা মুক্ত টিকা উৎপন্ন করা হয়।

টিকা দেয়া পরও কেন রোগ হয়

ক।টিকার সমস্যা

টিকা তৈরি থেকে শুরু করে মুরগিতে প্রয়োগ পর্যন্ত সব স্তরে কুলিং চেইন রক্ষা করতে হয়।

টিকার বোতলের ছিপি ভাল ভাবে না আটকালে বাতাসের আর্দ্রতা টিকাকে নস্ট করে

আলোর প্রভাবে টিকা নস্ট হয়

টিকা গলানোর পানির অম্লতা বা ক্ষারের কারণে টিকার গুণগত মান ন্স্ট হয়।

টিকায় পর্যাপ্ত এন্টিজেন না থাকলে

টিকার ডোজ ঠিক মত না হলে ১২০০ মুরগিকে ১০০০ ডোজ দিলে

লাইভ টিকার ক্ষেত্রে যদি এন্টিজেন মারা যায় বা দূর্বল অবস্থা থেকে রোগ তৈরি করার ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়

জীবাণুর নির্দিস্ট স্ট্রেইনের এন্টিজেন অন্য স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে কাজ নাও করতে পারে।

টিকার যে এন্টিজেন বা জীবাণূ ব্যবহার করা হয়েছে তা যদি মৃদু বা ইন্টামেডিয়েট টাইপের অথচ ফিল্ড ভাইরাস যদি হয় ভাইরোলেন্ট টাইপের অর্থাৎ বেশি আক্রমাণাত্মক তাহলে ঐ টিকা দ্বারা রোগ প্রতিরোধ হবে না।

ক্লাসিকেল বা স্ট্যান্ডার্ড স্টেইন যা দ্বারা টিকা তৈরি করা হয়েছে,এখন যদি একই প্রজাতির ভিন্ন বা ভাইরোলেন্ট স্ট্রেইনের ভাইরাস দ্বারা মুরগি আক্রান্ত হয় তাহলে ঔ টিকা কাজ নাও করতে পারে।

জীবন্ত টিকা কোন কোন সময় মিউটেশন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন জটিল রোগ করতে পারে,এতে মূল রোগের প্রতিরোধ হয় না।

 খ।কারিগরী বা ব্যবহারিক ত্রুটি

যে টিকা শরীরে যে স্থানে কিংবা যে পদ্ধিতে ব্যবহার করার কথা,সেভাবে যদি ব্যবহার করা না হয়

নির্দিস্ট বয়সে নির্দিস্ট টিকা ব্যবহার না করলে

যদি টিকা গলানোর অনেক পরে ব্যবহার করা হয়(মেরেক্স,আই বির ও পক্সের টিকা ১-১.৫ ঘন্টার মধ্যে ব্যবহার না করলে)

সিরিঞ্জে দিয়ে সঠিক পরিমাণ টিকা যদি মুরগির শরীরে না ঢুকে

 গ।মুরগি বা বাচ্চার নিজস্ব সমস্যা

মুরগি যদি আগেই কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে

মুরগির শরীরে যদি আমিষ ,ভিটামিন্স ও মিনারেলসের ঘাটতি থাকে

ধকল অবস্থায় টিকা দিলে( পরিবহণ,অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা)

যে রোগের টিকা দেয়া হয়েছে সেই রোগ যদি আগেই মুরগির শরীরে সুপ্ত অবস্থায় বা সাবক্লিনিকেল রুপে থাকে।

মুরগি যদি পরজীবী কৃমি বা কক্সিডিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয়।

ইমোনোসাপ্রেসিভ রোগ যেমন গাম্বোরো,রিও,মেরেক্স এবং মাইকোটক্সিকোসিস,মাইকোপ্লাজমোসিস দ্বারা যদি মুরগি আক্রান্ত হয়।

 ঘ।প্যারেন্ট ফার্ম বা হ্যাচারীতে সমস্যা

#প্যারেন্ট খামার মালিক ফ্লকের সাল্মোনেলা ক্যারিয়ার মুরগি ধ্বংস না করে উৎপাদিত ডিম ফুটানোর জন্য বিক্রি করে থাকে কিংবা নিজেরাই বাচ্চা ফুটিয়ে থাকে এবং হ্যাচারি সালমোনেলা মুক্ত না করে বাচ্চা ফুটিয়ে থাকে।বাণিজ্যিক খামারে বাচ্চা আসার পরেই শুরু হয় পুলোরাম এবং ফাউল টাইফয়েড রোগ।এই সময় অনেক ধরণের টিকার সিডিউল থাকে।রোগ থাকা অবস্থায় টিকা দিলে টিকার কাজ হয় না।

#নোংড়া পরিবেশে প্যারেন্ট ফার্মে এবং হ্যাচারীতেঃ ই- কলাই জীবাণূ আক্রমণ বাচ্চাতে কুসুম পচা রোগ হয়।মায়ের প্রাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ডিমের কুসুমের মাধ্যমে বাচ্চাতে পোঁছে থাকে যা কুসুম পচা রোগাক্রান্ত বাচ্চায় সম্বব হয় না।

#অতি সংবেদনশীল গাম্বোরো সমৃদ্ধ এলাকায় প্যারেন্টে ফ্লকে ১৮-১৯ সপ্তাহে একবার ,৪০-৪৫ সপ্তাহে আর একবার মৃত টিকা দেওয়া হয় কারণ এই ফ্লকের উৎপাদিত ডিম থেকে ফুটানো বাচ্চায় গাম্বোরো রোগের এন্টিবডি এভাবেই পোঁছে  দেওয়া হয়।এই প্যারেন্টের উৎপাদিত বাচ্চায় MDA  এর অবস্থান না জেনে টিকা প্রয়োগ করলে টিকা কার্যকরী হবে না।

এজন্য হ্যাচারীতে ইলাইজা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

#একই প্যারেন্ট ফ্লকের উৎপাদিত ডিমের বাচ্চায় এম ডি এ  এর অবস্থান মোটামুটি কাছাকাছি থাকে।কিন্তু ভিন্ন ফ্লকের ডিম একত্রে ফুটিয়ে ঐ বাচ্চা পালন করলে এম ডি এ এর অবস্থান ভিন্ন হওয়াতে সঠিক টিকা দানের বয়স নির্ণয় করা যায় না এবং টিকার কার্যকারিতা ব্যর্থ হবার সম্বাবনা থাকে।ভ্যাক্সিন ভাইরাস দ্বারা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠার আগে বহিরাগত ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়।

 ঙ ।খাদ্য সমস্যাঃ

সুষম খাবার না হলে পুস্টির অভাবে ভ্যাক্সিন দিলেও ভাল টাইটার উঠবে না।খাদ্যে মোল্ড  থাকলে সেখান থেকে উৎপাদিত মাইকোটক্সিন এবং অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণূ ইমোনিটিকে নস্ট করে দেয়।

 চ।খামারীর পোল্ট্রি বিষয়ে না জানা থাকলেঃ

ক্ষতিকর মেডিসিন ও অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ব্যবহার করলে টিকার ফল ভাল আসে না।

খামারে বায়োসিকিউরিটি ভাল না হলে

এলাকাভিত্তিক সম্মিলিত টিকা কর্মসূচী পালন না করলে

নোট ঃ ভ্যাক্সিন টাইটার ও এন্টিবডি টাইটার

এক মিলিলিটারে কি পরিমাণ জীবাণূ (জীবিত,মৃত, দূর্বল) তাকে ভ্যাক্সিন টাইটার বলে।

এন্টিবডি টাইটার পরিমাপিত হয় কি পরিমাণ এন্টিজেন প্রকৃত পক্ষে কি মাত্রায় এন্টিবডি উৎপন্ন করতে পেরেছে তার উপর।আবার এন্টিবডি টাইটার মাত্রাই সব সময় ইমোনিটির পরিমাপক নয়।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস ঃযে ভুল গুলি খামারী করে থাকে

১।সূর্য্যের আলোতে ভ্যাক্সিন গুলায়

২।ডাবল ডোজে ভ্যাক্সিন দেয় যা মুরগির জন্য (ধকল) এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়

৩।গাম্বোরো ভ্যাস্কিন ৭দিনের আগে  দিলে কাজ করে না কারণ এন্টিজেনের রিসেপ্টর তখনো ডেভেলপ করে নি।

৪।তেমনি এন ডি টিকা ও ৭দিনের আগে দেয়া বিতর্কিত বিষয় কারণ এন্টিজেনের রিসেপ্টর ডিভেলপ না করা।

৫। আই বি ,পক্স ,মেরেক্স এই ভ্যাক্সিন গুলো খুব ফ্রাজাইল এবং তৈরি করার ১ঘন্টা পর পটেন্সি নস্ট হতে থাকে।

মেরেক্স ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে পানির তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি রাখা উচিত।

প্রাইমারী ভ্যাস্কিন সব সময় চোখে বা নাকে দেয়া উচিত আর ব্রুস্টার ভ্যাস্কিন গুলো পানিতে দেয়া যায়।

৬।ভ্যাক্সিন দেয়ার সময় যদি রক্তপাত হয় তাহলে বুঝতে হবে প্রেসার বেশি এবং ভ্যাক্সিন লিকেজ হচ্ছে।

যদি মাথা ফোলে যায় তাহলে ভুল ভ্যাক্সিনেশন

৭।যদি কোন  রোগ এলাকায় না থেকে তাহলে সে রোগের লাইভ টিকা দেয়া যাবে না কিন্তু অনেকেই তা করতেছে।

৮।আই বি টিকা যদি স্প্রে করে ১ দিনের বাচ্চায় দেয়া হয় তাহলে সবচেয়ে ভাল।

৯।ফার্ম যদি নোংড়া থাকে তাহলে ভ্যাক্সিন ভাল কাজ করে না।

১০।প্রাইমারী ও ব্রুস্টার ভ্যাক্সিন একই কোম্পানীর হলে ভাল

১১। আই বি ও এন ডি টিকা দেয়ার আগে কৃমিনাশক দেয়া উচিত।

১২।কিল্ড ভ্যাক্সিনের বোতলে যদি ২টি লাইন দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে ইমালশন ভেংগে গেছে আর যদি ৩ লাইনস দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে ভ্যাক্সিন বাতিল।

কিল্ড ভ্যাক্সিনের জন্য নিডলের মাপ ১৯-২১গজ আর লাইভ টিকার জন্য ২০ গজ ভাল

১৩।খাবারে যদি টাইলোসিন ও সি টি সি দেয়া থাকে তাহলে পানিতে ভ্যাক্সিন দেয়া ঠিক না।

১৪ পাখি যদি দূর্বল,অসুস্থ ,ওজন কম থাকে তাহলে ভ্যাক্সিন পরে করতে হবে।

১৫।লাইভ টিকা দেয়ার পর কিল্ড টিকা ভাল কাজ করে(কলেরা,করাইজা,পক্স ছাড়া)

১৬।ইন্ট্রামাস্কোলার ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে  বুকের মাংস  হলো সবচেয়ে ভাল

১৭।গাম্বোরোর ক্ষেত্রে মুখে আর আই বির ক্ষেত্রে চোখে সবচেয়ে ভাল

১৮।ফ্রিজে ভ্যাক্সিনের সাথে অন্যান্য জিনিস রাখা ঠিক না।

১৯।আবহাওয়া পরিবর্তনের আগে এ আই,এন ডি ,আই বির ব্রুস্টার টিকা দেয়া উচিত।

২০।কিল্ড টিকা দেয়ার ২৪ ঘন্টা আগে বিশেষ করে কোম্পানীর নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাক্সিন  ফ্রিজ থেকে বের করা উচিত কিন্তু ৮০% কিল্ড ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না।ভ্যাক্সিন আগে নামালে ভিস্কোসিটি কমে যায়।

২১ নিপল লাইনের ক্ষেত্রে পানির লাইন ডিসইনফেকট্যান্ট দিয়ে ওয়াশ করতে হবে এবং পানি বের করে দিতে হবে।

 

 

 

 

Please follow and like us:

About admin

Check Also

পোল্ট্রির রেস্পিরেটরী ও মাস্কুলার সিস্টেম

.Respiratory system: is involved in absorption of oxygen,realease of co2 and heat,deoxification of  chemicals,rapid adjustments …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »