“পেডিগ্রী- প্রজেনী- EPD” কাহিনীঃ
সিমেনের মান ও বুলের তথ্য বুঝতে চাইলে ‘পেডিগ্রী’ ও ‘প্রজেনী’ শব্দ দুটির মানে আগে বুঝতে হবে। ‘পেডিগ্রী’ শব্দের অর্থ পূর্বপুরুষ- অর্থাৎ ষাঁড়ের বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, বড় দাদা- বড় দাদী, বড় নানা-বড় নানী ইত্যাদির তথ্য সম্বলিত চার্ট বা EPD-ই (‘Expected Progeny Difference’) হল ষাঁড়ের পেডিগ্রীর তথ্য। আর ষাঁড়ের নিজের EPD হল তার প্রজেনীর তথ্য।
“প্রজেনী” শব্দের অর্থ হল সন্তানাদি। একটি ষাঁড়ের পেডিগ্রী বা পূর্বপুরুষ ভাল হলেই যে সে ভাল হবে এর কোন নিশ্চয়তা নেই। সৈয়দ বংশের পোলারাও কুলাঙ্গার হয়। তো, কোন ষাঁড় তার ভাল পেডিগ্রীর ভাল ভাল গুন যদি তার কন্যাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে না পারে – তবে সে অযোগ্য। ষাঁড়ের এই যোগ্যতার বিচার অর্থাৎ কন্যারা ভাল গুন পাবে কিনা তা বোঝার রাস্তা দুইটি –
একঃ প্রজেনী টেস্টঃ
একটি সম্ভাবনাময় বুলের সিমেন সমমানের অনেকগুলো গাভীতে দিতে হবে। তাতে যে বকনা বাচ্চা আসবে তা যখন দুধ দিবে তখন এই বাচ্চাদের গুনাগুনের পরিসংখান নিয়ে দেখতে হবে যে, বুলটি তার কন্যাদের মধ্যে জেনেটিক গুনাগুন কতটা ট্রান্সমিট করতে পারল।
বুলটির এই মূল্যায়ন ব্রিডিং ভ্যালু, PTA (Predicted Transmitting Ability), REL (Reliability) ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে করা হয়। জটিল আলোচনায় গেলাম না- শুধু জেনে রাখুন প্রজেনী টেস্ট সারা পৃথিবীতে ব্রীডিং বুল মুল্যায়নের সবচেয়ে ভাল ও সর্বজন গ্রাহ্য উপায়।
অন্তত কয়েকশত বাচ্চার রেজাল্ট ভাল আসলেই কেবল বুলের সিমেন বাজারে ছাড়া হয়। সাথে প্রকাশ করা হয় EPD। আর হাজার হাজার বাচ্চার বৈশিষ্ট্য চমৎকার হলে বুলটিকে প্রূভেন ঘোষনা দেয়া হয়।
এইযে বাচ্চাদের গুনাগুন বিচার করে বুলকে স্বীকৃতি দেয়া হল- এরই নাম প্রজেনী টেস্ট।
প্রজেনী টেস্ট ছাড়া শুধুমাত্র পেডিগ্রি দেখে কোন বুলকে ব্রীডিং বুলের স্বীকৃতি দেয়া যায় না। এ জন্যই খামারের বুল ব্রীডিং বুল নয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমাদের দেশে প্রজেনী টেস্ট ছাড়াই সিমেন বিক্রি চলছে। (সরকারের একটিমাত্র প্রজেক্ট ছাড়া। এই প্রজেক্টেও যে প্রক্রিয়াতে প্রূভেন বুল ঘোষণা দেয়া হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক মানের নয়)।
দুইঃ জিনোমিক টেস্টঃ
প্রজেনী টেস্টের রেজাল্ট আসতে যেহেতু বেশ সময় লাগে তাই শর্টকাট হল জিনোমিক টেস্ট। অত্যাধুনিক জেনেটিক রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে ষাঁড়ের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জীন পরীক্ষা করে বলে দেয়া যায় তার কন্যাদের মাঝে বৈশিষ্ট্য কতটুকু ট্রান্সমিট হবে- এটাই জিনোমিক টেস্ট। জিনোমিক টেস্টে কোন বুলের রেজাল্ট ভাল আসলে কম বয়সেই তার সিমেনগুলি বাজারে ছাড়া যায়। একই সাথে চলতে থাকে প্রজেনী টেস্ট। এই জিনোমিক টেস্টিং “ব্রীডিং বুল” ইন্ডাস্ট্রিকে এক ধাক্কায় অনেকদূর এগিয়ে দিয়েছে।
ভাই, পশ্চিমারা আধুনিক এসব প্রযুক্তি নিয়ে যে কতদূর এগিয়েছে- তা কল্পনাতীত। শুনলে, ঘাটাঘাটি করলে মনে হয় আমরা এখনো প্রস্তর যুগে বসে আছি।
ফেসবুক থেকে নেয়া।