ট্রইকোমোনিয়াসিস
Trichomoniasis
গরুর প্রজনন সংকট এর মুল হোতা ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis) রোগ।
এ রোগে আক্রান্ত গাভীর জরায়ু থেকে পুঁজ নির্গত হওয়া, গর্ভপাত, অস্থায়ী প্রজননহীনতা সহ যৌনাঙ্গের নানান জঠিলতা দেখা দেয়।
মুলত এটি একটি প্রোটোজোয়া জনিত রোগ। প্রোটোজোয়া দ্বারা সংঘটিত এই রোগকে মারাত্বক রোগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কারন একবার যদি কোন ষাড় বা গাভী এই প্রোটোজোয়া রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে সারা জীবন সে এই রোগের জীবানু বহন করবে।
আক্রান্ত গাভীকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ্য করে কৃত্রিম প্রজনন করা এবং আক্রান্ত ষাঁড় গরুকে সম্পুর্ন যৌন বিশ্রাম দিতে হবে।
তা নাহলে আক্রান্ত ষাঁড়ের মাধ্যমে সুস্থ্য বকনা বা গাভীতে প্রজনন করানোর সময় সংক্রামিত করতেই থাকবে। অর্থাৎ এটি একটি যৌন-ব্যাধি, ঠিক যেমন মানুষের এইডস রোগ যেভাবে যৌন মিলনের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।
গরুর জরায়ু, যোনীমুখ, গর্ভপাতের ভ্রুন, ভ্রুনাবরন, ষাঁড়ের লিঙ্গাবরন ও লিঙ্গমুন্ডের উপরি ভাগ এ রোগের জীবানু বহন করে।
এ রোগের কারন Trichomonas feotus নামক এক প্রকার লেজযুক্ত প্রোটোজোয়া যৌনাঙ্গে সংক্রামিত হয়ে অসুস্থ্য গাভী থেকে সুস্থ্য গাভীতে এ রোগের সৃষ্টি করে থাকে।
লক্ষন
> আক্রান্ত গাভী বাচ্চা ধারন করলেও তা কিছু দিনের মধ্যে গর্ভপাত (Abortion) হয়ে যায়।
> গাভীকে প্রজনন করানোর পর যখন জরায়ুতে ভ্রুন তৈরী হয় তখন ওই ভ্রুন মারা যেয়ে জরায়ু প্রদাহ সৃষ্টি করে।
> এ রোগের অন্যতম লক্ষন হলো যোনীমুখ দিয়ে জরায়ু হতে পুঁজ নির্গত হওয়া এবং জরায়ু ও যোনী শ্লৈষ্মিক প্রদাহ হবে।
সম্ভাব্য ব্যবস্থা
ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis) আক্রান্ত গরুকে নিকটস্থ একজন Registered Veterinarian দ্বারা নিন্ম লিখিত ব্যবস্থা গ্রহন করা যেতে পারে।
® গাভীর ক্ষেত্রে যদি জরায়ুতে পুঁজ, জরায়ুতে ভ্রুন নষ্ট ও বাচ্চা গর্ভপাত হয় তাহলে শুধুমাত্র একদিন ডুস ক্যান (Dush Can) এর সাহায্যে জরায়ুর ভিতর 1% Acriflavin solution দ্বারা ধুয়ে নিতে হবে।
® সালফাডায়াজিন ১০০০মি.গ্রা. & ট্রাইমেথোপ্রিম ২০০মি.গ্রা. ইউএসপি গ্রুপের Tab: Renatrim vet (Renata) দৈহিক ৪০ কেজি/বডি ওজন হিসাবে ১ ট্যাবলেট গুড়া করে ৩০-৩৫ মিলি পানির সাথে মিশিয়ে এ.আই টিউবের মাধ্যমে দিনে একবার করে পরপর তিন দিন জরায়ুতে দিতে হবে।
® ষাঁড়ের ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থান (লিঙ্গাবরন ও লিঙ্গমুন্ডের উপরি ভাগ) এ এক্রিফ্লাভিন ১% সলুশন অথবা এক্রিফ্লাভিন ১% মলম দিনে একবার করে পরপর ৫-৭ দিন লাগাতে হবে।
® চিকিৎসা চলাকালে যৌনসঙ্গম ২/৩ মাস বন্ধ রেখে বিশ্রাম দিলে অনেক সুফল পাওয়া যায়।
প্রতিরোধ
> ষাঁড় দিয়ে প্রজনন না করিয়ে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এ রোগের সংক্রমন খুব সহজেই বন্ধ করা যায়।
> Trichomoniasis আক্রান্ত গাভীকে যে ষাঁড় দিয়ে প্রজনন করানো হয় উক্ত ষাঁড় দিয়ে আর কোন সুস্থ্য গাভী বা বকনা প্রজনন করানো যাবে না।
> মারাত্বক আক্রান্ত গরুকে পালে না রেখে কসাই এর মাধ্যমে জবাই দিয়ে দেওয়া উচিত।
> রোগাক্রান্ত গরুর ব্যবহৃত সকল দ্রব্যাদি, ঘড়, পরিচর্যাকারীর হাত ও শরীর ভালো ভাবে পরিষ্কার ও জীবানু মুক্ত রাখতে হবে।
> প্রজনন কাজে ব্যবহৃত ট্রাইকোমোনিয়াসিস আক্রান্ত ষাঁড়কে যৌন বিরতি দিয়ে দেওয়া উচিত।
> নিয়মিত আইভারমেকটিন Preparation গ্রহন করা।