কোরবানী ও কোরবানীর পশু নিয়ে বিস্তারিত
কুরবানির প্রানি ক্রয়/বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়সমুহ ও সম্ভাব্য করনীয়ঃ
(১) কুরবানির প্রানি হতে হবে শারীরিক ভাবে নিখুঁত ও পারিপাশ্বিক অবস্থার প্রতি সজাগ(আকর্ষিক শব্দে সাড়া দেওয়া ও গায়ে মশা, মাছি পড়লে লেজ দিয়ে তাড়াবে) ।
(২) কুরবানির প্রানি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া উচিত।সাধারণত স্থায়ী ছেদন/কর্তন দাঁত দেখে আমাদের দেশে কুরবানির প্রানির বয়স নির্ধারণ করা হয়।
পশুর বয়সঃ উটের জন্য নিম্নে পাঁচ বছর,গরু ও মহিষের জন্য দুই বছর ।
ছাগল,ভেড়া ও দুম্বার জন্য একবছর হতে হবে। এর কম হলে কুরবানী বৈধ হবে না । কিন্তু দুম্বার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, দুম্বার বয়স যদি ছয় মাসও হয় কিন্তু শারীরিক গঠন দেখতে এক বৎসরের সমান মনে হয় তাহলে উক্ত দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা বৈধ (বিষয়টি ছাগলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়)। (শামী খঃ ৯ পৃঃ ৪৬৫, আলমগীরী খঃ ৫ পৃঃ ২৯৭, রহিমিয়া খঃ ১০ পৃঃ ৪৭)
গরুর বয়সের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ ২ টি স্থায়ী ছেদন/কর্তন দাঁত দেখে গরুর ২ বছর বলা যায়।
মহিষের বয়সের ক্ষেত্রে কেন্দ্রিক ৩০-৩৭ মাস, মধ্যবতি ৩৬-৪৮ মাস, পার্শ্ববর্তী ৪৮-৬০ মাস, প্রান্তিক ৬০-৭২ মাস।
ছাগলের বয়সের ক্ষেত্রে কেন্দ্রিয়(২ টি বড় দাঁত) দেখে ১৫-১৮ মাস, মধ্যবতি (৪ টি বড় দাঁত) দেখে ২১-২৪ মাস, পার্শ্ববর্তী (৬ টি বড় দাঁত দেখে) ২৫-২৮ মাস এবং প্রান্তিক (৮ টি বড় দাঁত দেখে) ২৯-৩৬ মাস।
মেষ/ ভেড়ার বয়সের ক্ষেত্রে কেন্দ্রিয়(২ টি বড় দাঁত) দেখে ১৪-২০ মাস, মধ্যবতি (৪ টি বড় দাঁত) দেখে ২১-২৭ মাস, পার্শ্ববর্তী (৬ টি বড় দাঁত দেখে) ৩০-৩৫ মাস এবং প্রান্তিক (৮ টি বড় দাঁত দেখে) ৩০-৪৩ মাস।
উটের বয়সের ক্ষেত্রে দাঁত থেকে দুই বছরঃ সব নিম্ন incisors সামান্য পরিধেয়, শিশু canines incisors থেকে আলাদা। ‘ দাঁত তিন বছর: সব নিম্ন incisors পরিধান, পরিধেয় canines থেকে করে আলাদা। দাঁতের চারটে বছর: সব incisors অনিয়মিত আকৃতির এবং পাতলা ছোট প্রবাহিত করতে ক্লান্ত গভীর পরিধান করে থাকে। চার বছর বয়সী উট ‘ দাঁত: কেন্দ্রীয় শিশু incisors স্থায়ী incisors মাধ্যমে যেমন ২ চামচ সূত্রপাত হয়েছে যে প্রতিস্থাপন করা হয়। শিশুর ১ম ও ২য় মাড়ি গভীর পরিধান পাশাপাশি শিশুর canines হয়।
এত কিছুর পরও প্রকৃতির নিজস্বতা বলে তো কিছু কথা আছে। ছেদন দাঁত পরীক্ষা করে পশুর বয়স মোটামুটি ধারণা করা গেলেও সুনিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। পশুর অস্থায়ী ছেদন দাঁত গজানো ও পড়া এবং স্থায়ী দাঁত গজানো ও ক্ষয় হওয়া ইত্যাদির পিছনে প্রধানত নিম্নোক্ত কারণগুলি রয়েছে ।
ক)পশুর খাদ্যের প্রকৃতি (চরে খাওয়া বা বেঁধে খাওয়া)।
খ)পশুর পুষ্টির অবস্থা।
গ) পশুর জাতের পার্থক্য (দেশী/ বিদেশী)
ঘ) একক পশুর পার্থক্য (individual variation)।
নিরাশ হবেন না, শিং চক্র বা রিং পরীক্ষা করেও বয়স নির্ণয় করা যায়।গরুর শিংয়ের রিং বা চক্র দেখে বয়স ধারনা করা যায়। সাধারণত শিংয়ের প্রথম রিং ২.৫-৩ বছর বয়সে সৃষ্টি হয়। এরপর প্রতিবছর একটি রিং সৃষ্টি হয়। একটি গাভীর বাচ্চা দেয়ার সাথে রিং সৃষ্টির সম্পর্ক রয়েছে। কারন প্রতিবছর একটি বাচ্চার জন্য একটি রিং সৃষ্টি হয়ে থাকে। অর্থাৎ গাভীর মোট বয়স= শিংয়ের আংটির সংখ্যা + ২.৫-৩ বছর। উল্লেখ্য শিং দেখে পশুর বয়স নির্ণয় খুব একটা নির্ভরযোগ্য বা বিজ্ঞান সম্মত নয়। কারণ অনেক সময় অসৎ ব্যবসায়িরা বয়স কম করে দেখাবার জন্য শিংয়ের রিং ঘষে উঠিয়ে দেয় আর সব গরুর শিং থাকে না।
যারা ভাবছেন, এত বড় বিপদ বয়স নির্ণয় করতে গিয়ে তো কোরবানিই মনে হয় হবে না তাঁদের জন্যে বলব মনে সংশয় নিয়ে কুরবানির পশু কিনবেন না তাহলে কোরবানি দিয়ে আত্মতৃপ্তি পাবেন না, আর কোরবানি উদ্দেশ্য যদি মাংস খাওয়া বা ফ্রিজে ভর্তি করা হয় তাহলে অন্য কথা…।
(৩) কেনার সময় প্রানির শরীরের তাপমাত্রা পরখ করে দেখতে হবে প্রাণীদের যেকোনো রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হল তার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া ।
প্রানির শরীরে অত্যাধিক জ্বর সংক্রামক রোগের লক্ষণ(তাপমাত্রা ১০৫-১০৭ ডিগ্রী ফাঃ অ্যানথ্রাক্স রোগের লক্ষণ )।
কুরবানি তালিকায় প্রানিদের সবার শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা জানা থাকা বাঞ্ছনীয়।
গরুঃ ১০১.৩(৯৯.৫-১০৩.১) ডিগ্রী ফাঃ ,
মহিষঃ ৯৯.৫(৯৯.৫-১০২.১)ডিগ্রী ফাঃ,
ভেড়া/ মেষঃ ১০২.২(১০১.৩-১০৪.০)ডিগ্রী ফাঃ
,ছাগলঃ ১০৩.১(১০১.৩-১০৪.৯) ডিগ্রী ফাঃ, উটঃ৯৮.৬(৯৩.২-১০৪.০)ডিগ্রী ফাঃ।
উল্লেখ্য যে, ক্লান্ত পশু বিশেষ করে রেলে বা পায়ে হেটে অনেক রাস্তা ভ্রমন করেছে তাদের গায়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়।
(৪) প্রানির নাক, মুখ, পায়ু পথে কোন অস্বাভাবিক নিঃসরণ আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখুন। অস্বাভাবিক কিছু দেখলে ঐ প্রানি কেনা হতে বিরত থাকুন।চোখ দিয়ে অত্যধিক পানি পড়া চোখের গোলকৃমি রোগের লক্ষণ এবং চোয়ালের নিচে পানি জমা বা সাব –ম্যান্ডিম্বুলার এডিমা যকৃতের পাতাকৃমি রোগের লক্ষণ ।সুস্থ্য প্রাণীর মাজলে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমবে।
(৫) গরু কেনার আগে এর ক্ষুর , জিহ্বা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নিন এটি ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত নয়। এ রোগে গরুর ক্ষুরে ঘা এবং জিহ্বায় ফোস্কা দেখা যায়।ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত প্রাণীর চামড়ার গুণগত মান ভাল হয় না।
(৬) প্রান চঞ্চল ও চটপটে স্বভাবের প্রানি দেখে কিনুন। ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রানিতে রোগব্যাধি থাকার সম্ভাবনা প্রবল। সুস্থ সবল প্রানি লেজ, কান ইত্যাদি স্বাভাবিকভাবে নাড়াচাড়া করবে। প্রানি অসুস্থ হলে এর গায়ের লোম খুব রুক্ষ দেখাবে। তাই প্রানির গায়ে হাত বুলিয়ে দেখুন লোম মসৃণ ও চকচকে কিনা।
(৭) বেশি পরিমান মাংস প্রাপ্তির আশায় অধিক মোটা তাজা গরু কিনতে যাবেন না।যদিও প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর গরু মোটাতাজা/হিষ্ট-পুষ্ট করণে যেকোনো স্টেরয়েড ড্রাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে তথাপিও কিছু অসাধু খামারি নামধারি ব্যবসায়ি বাণিজ্যিক ভাবে গরুকে বিভিন্ন স্টেরয়েড ড্রাগ প্রয়োগ করে নাদুস নুদুস ফিগার বানিয়ে কুরবানির হাটে নিয়ে আসে।
(৮)স্টেরয়েড ড্রাগ দিয়ে হিষ্ট-পুষ্ট প্রানির শরীরের মাংসল অংশে আঙ্গুল দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে দেখুন আঙ্গুলের দাগ বসে যায় কিনা বা পচ পচ শব্দ হয় কিনা। এ ধরনের ক্ষেত্রে অন্য প্রানি দেখুন।
(৯) স্ত্রী প্রানি কেনার ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাণীটির পেটে বাচ্চা নেই নিশ্চিত হয়ে তবেই কিনুন।
গর্ভ পরীক্ষা ২ ভাবে করা যেতে পারে গাভী বা বকনার ২/৩ মাসের গর্ভবতী হলে বহুল প্রচলিত রেক্টাল পাল্পপেশন এর মাধ্যমে যদিও দক্ষ বা অভিজ্ঞ না হলে এ পদ্ধতি মাধ্যমে পরীক্ষা করে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল/ সফলতা নাও আসতে পারে।
আরেকটি হল বহু পুরাতন আবিষ্কৃত(Discover)পদ্ধতি গরু,ছাগল,ভেড়ার মুত্র পরীক্ষার মাধ্যমে।
মিশরীয় প্যাপিরাস পাতায় লিখিত কাগজে দেখা যায় মিশরীয়রা অঙ্কুরোদগমক্ষম গমের বীজ দিয়ে গর্ভবতী মায়েদের প্রসাবের মাধ্যমে পরীক্ষাটি করতেন। পদ্ধতিটি খুব সহজ, সস্তা, পরিবেশ বান্ধব ও খামারী বান্ধব। বিশ্বের অনেক দেশ যারা পরিবেশ সচেতন তাঁরা এ পদ্ধতিটি ব্যবহার করে থাকে।
পরবর্তীতে এই গবেষণাটি আমার জানামতে উপমহাদেশে ভারত ও বাংলাদেশে হয়। ভারতীয়রা অঙ্কুরোদগমের বীজ হিসেবে গম ও সবুজ ছোলা ব্যবহার করে।
বাংলাদেশে এই গবেষণাটি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের Animal Husbandry Faculty -এর আনিম্যাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক, ডঃ মনিরুজ্জামানের তত্থাবধানে তারই এম,এস ছাত্র মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম গবেষণাটি করেন, যার কাছ থেকে আমি ও আমার সহকর্মিরা এই পদ্ধতিটা শিখি। তিনি পরীক্ষাটি করার ক্ষেত্রে অঙ্কুরোদগমক্ষম গমের বীজ ব্যবহার করেন।
পরীক্ষাটির পদ্ধতিটি এরূপ প্রজননকৃত গাভী, বকনা, ছাগল ও ভেড়ার প্রজননের ১৪,২১,২৮ ও ৪৫ দিনের ভোর/সকালবেলার প্রথম প্রসাব/ মুত্র সংগ্রহ করতে হয় তারপর ১ ভাগ মুত্র/প্রসাব ৪ ভাগ পানির সাথে মেশাতে হয় । পানি ব্যাবহারের ক্ষেত্রে distilled বা ট্যাপের পানি বিষয় নয়। এরপর প্রসাবের সাথে অঙ্কুরোদগম বীজ দিয়ে উপযুক্ত পরিবেশে(তাপ,আলো, পানি ও বাতাস) রাখলে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বা কোন ক্ষেত্রে ৭২ ঘন্টা পর্যবেক্ষন করতে হয়। বীজ গাঁজালে বা অঙ্কুরোদগম / অঙ্কুরিত হলে বুঝতে হবে উক্ত প্রাণীটি গর্ভবতী নয়(Non-pregnant) আর এর বিপরীত ঘটনা ঘটলে অর্থাৎ বীজ না গাঁজালে বা অঙ্কুরোদগম / অঙ্কুরিত না হলে প্রাণীটি গর্ভবতি(Pregnant).
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় যেসব গবাদি প্রানি গর্ভবতী নয় তাঁদের যোনি ও ভালভা ফোলা ফোলা/ থলথলে ও আকারে বড় হয় গর্ভবতী প্রানির তুলনায়। গর্ভবতী প্রানির যোনি ও ভালভা সাধারণত সঙ্কুচিত এবং তা পায়ুমুখে ধাবিত হয়।
(১০) সম্ভব হলে দেশি প্রানি ও দেশে উৎপাদিত প্রানি কিনুন । গৃহস্থের নিকট হতে গরু –ছাগল ক্রয় সবচেয়ে উত্তম।
(১১) পা ভাঙ্গা, শিং ভাঙ্গা, শরীরে কাটা বা ঘায়ের চিহ্ন যুক্ত প্রানি পরিহার করুন।
কোরবানির প্রাণির খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ
অনেকে কোরবানির জন্য ক্রয়কৃত প্রাণীর রেশন সম্পর্কে জানতে চান তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানাই, অযথা কোরবানির রেশন নিয়ে চিন্তিত হবেন না।
১। যেসব পশু ৭২ ঘণ্টা বা অধিক সময় দীর্ঘ রাস্তা ভ্রমণ করেছে সেসব পশুর পর্যাপ্ত বিশ্রাম, স্বল্পখাদ্য ও পানি সরবরাহের প্রয়োজন। খাদ্য প্রদানের ক্ষেত্রে অল্প ঘাস(ডাল জাতীয় বা লিগুমিনাস ব্যতিত) ও খড় প্রদান করতে হবে। দানাদার খাদ্য পরিহার করতে হবে কেননা অতিরিক্ত ধকলে দানাদার খাদ্য খেলে এসিডোসিস হতে পারে এবং লিগুমিনাস ঘাস খাওয়ালে ব্লট হতে পারে। প্রাণীর স্ট্রেস প্রতিরোধে পানি প্রদানের সময় ১০ লিটার পানিতে ৪ খাবার স্যালাইন গুলিয়ে খাওয়াতে হবে বা ঘরে তৈরি স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
২। জবাই করার পূর্বে পর্যাপ্ত পরিস্কার পানি পানের বাবস্থা রেখে ২৪ ঘণ্টা পূর্ব থেকে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। গরুর চামড়াতে ফেসিয়া থাকার কারনে জবাইয়ের ২৪ ঘণ্টা পূর্ব থেকে পানি পান করালে চামড়া ছিলতে সুবিধা হয় এতে চামড়ার সাথে মাংস লেগে থাকে না ফলে চামড়ার গুনগত মান ঠিক থাকে।
উল্লেখ্য যে,দীর্ঘ যাত্রায় (প্রায় ২৪ ঘণ্টা) গরুর ২০ কেজি পর্যন্ত ওজন হ্রাস পেতে পারে।জবাইখানা বা কসাইখানার পশুকে স্টক-ইয়ারড ও খোঁয়াড়ে কমপক্ষে একদিন শুধু পানি খাওয়ান হয় কিন্তু কোন খাদ্য দেয়া হয় না।
পশু/ প্রানির সাথে আচরণের ব্যাপারে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মণ্ডলী একটি শব্দের সংক্ষিপ্ত রুপ TLC(Tender, love & care) ব্যবহার করতেন যার সাথে Animal welfare অঙ্গাওঙ্গিভাবে জড়িত। কুরবানির প্রাণীর সাথেও TLC পদ্ধতিতে আচরন করতে হয়।
কুরবানির প্রানি বাসায় নিয়ে আসার পর করনীয়ঃ
কুরবানির পশু/ প্রানি বাসায় আনার পর যে বিষয় গুলি বেশী নজর দেওয়া প্রয়োজন তা হল প্রাণীটিকে পূর্ণ বিশ্রামের বাবস্থা করতে হবে। প্রাণীটিকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি( অনেকদুর থেকে আনিত প্রাণীর জন্য স্যালাইন পানি ভাল) ও দানাদার খাদ্য ব্যতিত অল্প পরিমাণ ঘাস (ডালজাতীয় ব্যতিত) ও খড়ের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে রাতে পশুটি যেখানে বিশ্রাম নিবে তাতে পরিমিত আলো ও বাতাস থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে মেঝেতে খড় বিছিয়ে দিতে হবে । মশা বা মাছির উপদ্রপ থাকলে তা প্রতিরোধের বাবস্থা করতে হবে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সময় প্রাণীর গায়ে চট বিছিয়ে দিতে হবে।মোট কথা প্রানিকে এমন ভাবে রাখতে হবে যাতে তার মনে কোন ভিতী না থাকে। নতুন পরিবেশে প্রাণীটি ছটফট করতে থাকলে বা চঞ্চলতা দেখালে মুখ দিয়ে চুক চুক শব্দ করে প্রাণীর গলকম্বল ও মাথায় চূলকে বা হাত দিয়ে আদর করুন দেখবেন শান্ত হয়েছে । জবাইয়ের পূর্বে প্রাণীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা তা না হলে ঠিকমত রক্তপাত হবে না এবং পায়ে হাটা ও দীর্ঘ দাড়িয়ে থাকাজনিত কারনে অবাত শ্বসন জনিত কারনে প্রাণীর শরীরে ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয় যার ফলে ধকলকৃত প্রাণীর মাংসের গুনাগুন ও সংরক্ষণ ক্ষমতা কমে যায়।
The energy required for muscle activity in the live animal is obtained from sugars (glycogen) in the muscle. In the healthy and well-rested animal, the glycogen content of the muscle is high. After the animal has been slaughtered, the glycogen in the muscle is converted into lactic acid, and the muscle and carcass becomes firm (rigor mortis). This lactic acid is necessary to produce meat, which is tasteful and tender, of good keeping quality and good colour. If the animal is stressed before and during slaughter, the glycogen is used up, and the lactic acid level that develops in the meat after slaughter is reduced. This will have serious adverse effects on meat quality.
প্রাণীকে জবাই পূর্ববর্তী পর্যাপ্ত পানি পান করালে রক্তের ঘনত্ব কমে যায় জবাইয়ে রক্তক্ষরণ পরিপূর্ণ হয়। গরুর চামড়ায় ফেসিয়া থাকার কারনে পর্যাপ্ত পানি খাওয়ালে চামড়া ছিলতে সুবিধা হয়।প্রাণীর ঠিকমত রক্তক্ষরণ না হলে মাংস ও চামড়ার গুনাবলি নষ্ট হয়ে যায়।
কুরবানির প্রাণীকে শোয়ানোর পদ্ধতি:
জবাইয়ের প্রানি মাটিতে/ মেঝেতে ফেলার সময় করনীয় ও লক্ষণীয় বিষয় সমুহঃ.
১।পশুকে ভালভাবে গোসল করিয়ে নিন।লক্ষ করুন, মেঝেতে যেন কোনপ্রকার ইট বা পাথরের কুচি না থাকে মানে জবাইয়ের সময় চামড়া থেতলে না যায়। চামড়া থেতলে গেলে ঠিকমত রক্ত ক্ষরণ হবে না ফলে চামড়া সংরক্ষণ গুনাগুন কমে যাবে।পশু কোরবানির স্থান হিসেবে সমতল জায়গা বেছে নেওয়া উচিত।কংক্রিটের মেঝে অথবা এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় গরু জবাইয়ের ব্যবস্থা করা ঠিক নয়। কংক্রিটের মেঝে পিচ্ছিল হয় ফলে পশু নিয়ন্ত্রন করা কঠিন হয়ে পড়ে। পশু জবাইয়ে কসাইখানা উত্তম।
২। লক্ষ রাখতে হবে, প্রানি যেন কোন প্রকার উত্তেজিত বা ভয় না পায়। এজন্য একটি প্রাণীর সামনে আরেকটি প্রানি জবাই করা যাবে না। প্রানি ভয় পেলে বা উত্তেজিত হলে হরমোনাল কারনে ঠিকমত রক্তপাত হয় না।
৩। জবাইকৃত প্রাণীর রক্ত যাতে ঠিকমত বের হতে পারে এক জায়গায় জমা হতে পারে সেজন্য একটু ঢালু করে গর্ত করতে হয়।
প্রানি জবাইয়ে কিরুপ ছুরি ব্যবহার করতে হয়?
কোরবানির সময় পশুর যেন কষ্ট না হয় সে জন্য জবাইয়ের সময় অত্যন্ত ধারালো(সামনে- পিছনে) লম্বা ছুরি ব্যবহার করতে হবে।
কুরবানি করার সময় বিবেচ্য বিষয়ঃ কুরবানির পশুকে ঠিকমত পা বাধতে হবে এবং তা নিয়ন্ত্রনে রাখতে পর্যাপ্ত লোক লাগবে। সুস্থ সামর্থ্য অভিজ্ঞ হুজুর দিয়ে কোরবানি করা উচিৎ। অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে কুরবানি করলে দুর্ঘটনার সম্ভবনা থাকে। জবেহ করার সময় যে ব্যক্তিদ্বয় মাথা ও গলা ধরে তাদেরকে শক্তিশালী হতে হয় যাতে করে জবাইয়ের সময় পশু নড়াচড়া করলে তাঁরা নিয়ন্ত্রন না হারায়।
জবাই করার পদ্ধতিঃ
কুরবানির পশুকে জবাই করার সময় জগুলার ভেন ও ক্যারটিড আর্টারি কর্তন করা হয়। জবাইকৃত পশুর কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্র বিশেষ করে স্পাইনাল কর্ডের ক্ষতি হয় না এবং দেহ থেকে রক্ত নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত হৃতপিন্ডের স্পন্দন চলতে থাকে যার ফলে পূর্ণ রক্তক্ষরণ হয়।
চামড়া ছিলাতে কিরুপ ছুরি ব্যবহার করতে হয়?
চামড়া ছাড়ানোর জন্য ব্যবহার্য ছুরি সামনে বিশেষ ভাবে বাঁকানো অপেক্ষাকৃত কম ধারালো হতে হবে কারণ ধার বেশি হলে চামড়া কেটে যেতে পারে।
কোরবানির সময় অদক্ষ লোকজন কোনো নিয়ম-কানুন না মেনে ইচ্ছামতো পশুর চামড়া ছাড়ানোর কাজ করে। ফলে অনেক চামড়া ত্রুটিপূর্ণ হয়ে যায়।মনে রাখতে হবে, চামড়া আমাদের দেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ যা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আনয়ন করে। কোরবানির সময় এ জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু প্রক্রিয়াজাত, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দিকে দৃষ্টি রাখা আমাদের সব নাগরিকের দায়িত্ব।
চামড়া ছিলানোর সঠিক সময়ঃ
পশুর দেহের প্রাণস্পন্দন একেবারে থেমে যাওয়ার পর চামড়া ছাড়ানো শুরু করতে হবে অর্থাৎ জবাইকৃত প্রানির দেহ টাণ্ডা হওয়ার আগেই । প্রাণীর শরীর ঠাণ্ডা হলে চামড়া ছিলতে সমস্যা হয় এবং ঠিকমত চামড়াও ছিলান যায় না,মাংস চামড়া সাথে উঠে আসে। অনেক বাণিজ্যিক কসাই পশুর দেহের প্রাণস্পন্দন থাকার সময়ই চামড়া ছিলতে শুরু করে এটা ধর্ম ও বিজ্ঞান সম্মত নয় এবং Animal welfare এর সাথে সাংর্ঘসিক।
কিভাবে চামড়া ছিলতে হয়?
পশুকে শিরদাঁড়ার ওপর চিৎ করে শুইয়ে দুই পাশে ঠেস দিতে হবে। এরপর ছুরির মাথা দিয়ে গলার জবাই করার স্থান থেকে গলা, সিনা ও পেটের ওপর দিয়ে মলদ্বার পর্যন্ত সোজাভাবে হালকা করে কাটতে হবে। সামনের দুই পায়ের গোড়ার কাটা থেকে পায়ের ভিতর অংশ দিয়ে সোজা চামড়া ফাড়া দিয়ে ঊরু ফলকের ওপর দিয়ে কেটে বুকের লম্বা কাটার সঙ্গে সংযোগ করতে হবে। পেছনের দুই পায়ের ক্ষেত্রেও একইভাবে চামড়া কাটতে হবে।
এরপর পায়ের গোড়া থেকে সম্পূর্ণ পা এবং পেটের চামড়ার কিছু অংশ ছাড়িয়ে নিতে হবে।পায়ের চামড়া মুঠ পর্যন্ত কেটে হাত দিয়ে জোরে টান দিলে এমনিই খুলে আসে। পরে চার পা এবং নাড়িভুঁড়ি ছাড়াতে হবে। ছাগল ও ভেড়ার চামড়া ছাড়ানোর সময় যদি উঁচুতে কোনো কিছুর সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া যায় তাহলে চামড়া ছাড়ানো সহজ ও সুবিধাজনক হবে।
ছাগল ও ভেড়ার চামড়া ছাড়ানোর সময় ছুরি ব্যবহার না করে কাঠ বা পিতলের মুণ্ডু অথবা হাতের মুঠি দিয়ে ঠেসে ঠেসে মাংস হতে চামড়া আলাদা করা যায়।
চামড়া ছিলানোর সময় বিবেচ্য বিষয়ঃ
১। জবেহ করার পর অন্ননালীকে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে যাতে ইনজেস্টা দিয়ে মাংস দূষিত না হয়।
২। পেটের চামড়া ছিলানোর সময় যাতে ভুঁড়ি ছিদ্র না হয় সেদিকে সতর্ক হবে।
৩। বিশেষ করে কুজ ও পিঠের দিকের চামড়া ছিলানোর সময় লক্ষ রাখতে হয় সাবধানে চামড়া ছিলাতে হয় কেননা এসব অংশ ছিলানোর সময় চামড়া কাটে বেশী।
মাংস কাটার সময় বিবেচ্য বিষয়ঃ
ঈদ এর সময় অনেকেই সখ করে কুরবানির মাংস কাটে দেখা যায় এতে করে অনেকের শরীরে প্রচণ্ড ব্যাথার সৃষ্টি হয় তাঁদের জন্যে বলব মাংস সরাসরি বঁটি / ছুরি দিয়ে না কেটে আগে দাঁ/চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নিন তারপর কাটুন এক্ষেত্রে শরীর তেমন ব্যথা করবে না।আর হঠাৎ করে মাংস কোপাতে গিয়ে যাতে হাঁতে ফোস্কা না পড়ে তাই দা/চাপাতির হাতলে কাপড় পেঁচিয়ে নিন। আঁশ জাতীয় মাংস গুলি লম্বা আঁশ গুলি ছোট করে কাটুন তাতে খাওয়ার সময় দাতের ফাকে ঢুঁকে বিড়ম্বনার সৃষ্টি না করে। কলিজা আলাদা করার সময় সতর্ক হন কোন ক্রমেই যাতে পিত্ত থলি কেটে না যায়। পিত্তথলি কেটে বাইল মাংসে মিশলে তা পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মাংস কাটার সময় হাঁতে চর্বি জমে হাত পিচ্ছিল হয় এক্ষেত্রে হাঁতে খাবার আটা মাখতে পারেন।
কিসে মাংস কোপাবেন?
মাংস কোপাতে এমন গাছের গুড়ি ব্যবহার করতে হয় যাতে তাতে মাংস লেগে না থাকে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম তেঁতুল গাছের গুড়ি।
চামড়া যখন বিপদ তখন কিভাবে সংরক্ষণ করবেন?
চামড়া ছাড়ানোর পর তা শিগগিরই সম্ভব বিক্রয় কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে চামড়া বিক্রি না হলে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক সময় আবহাওয়া জনিত কারণ বা অন্য কারনে চামড়া বিক্রিতে বিলম্ব হয় তখন কি করতে হবে, ছাগল ও ভেড়ার চামড়ার মোট ওজনের ৪০-৫০% এবং গরু মহিষের চামড়ার মোট ওজনের ৩০-৪০% লবন যোগ করতে হবে। । এক্ষেত্রে চামড়া ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। চামড়ায় লেগে থাকা অতিরিক্ত গোশত, চর্বি ও ঝিল্লি ভালোভাবে ছুরি দিয়ে উঠিয়ে ফেলতে হবে। এটা সঠিকভাবে না করলে ওইসব স্থানে লবণ প্রবেশ করবে না। চামড়া সমান মেঝেতে বিছিয়ে চামড়ার ভিতরের দিকে সর্বত্র লবণ ছিটিয়ে ভালোভাবে লেপে দিতে হবে। প্রথমবার দেওয়া লবণ শুষে নিলে পুনরায় একইভাবে লবণ মাখাতে হবে। একটি মাঝারি সাইজের গরুর চামড়ার জন্য চার-পাঁচ কেজি এবং একটি ছাগলের চামড়ার জন্য এক কেজি পরিমাণ লবণ দরকার হয়।সাধারণ লবন যেহেতু পানিগ্রাহি তাই সাধারণ লবনের সাথে আনহাইড্রাস সোডিয়াম সালফেট মিশানো হয়।
কুরবানি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল সমুহঃ
যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে যদি নিজের পক্ষ থেকে কুরবানী না করে পিতার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তার ওয়াজিব আদায় হবেনা। বরং তার উপর দ্বিতীয় আরেকটি কুরবানী করা আবশ্যক। উল্লেখ্য, কেউ যদি নিজের পক্ষ থেকে কুরবানী করে এবং নিজের যে কোন আত্মীয় স্বজনদের জন্য সাওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করে, তাহলে তার ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। (ফাতওয়ায়ে দারুল উলূম খঃ ২ পৃঃ ৭৯৪)
জবাই সংক্রান্ত মাসায়েল
১. بسم الله الله اكبر বলে জবাই শুরু করবে। (ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া খঃ ৬ পৃঃ৪৪১, শামী খঃ ৯ পৃঃ ৪৩৭)
২. জবাই করার শরয়ী পদ্ধতি – পশু কে উত্তর-দক্ষিণে কিবলামুখী করে শোয়ানোর পর “বিসমিল্লাহি আল্লাহ আকবার”বলে এমন ভাবে ছুরি চালাবে যাতে পশুর চারটি রগ কেটে যায়। রগ চারটি হলঃ ১.খাদ্যনালী ২.শ্বাসনালী ৩.শাহ্রগ(ডান) ৪.শাহ্রগ (বাম)। এ চারটি থেকে যদি তিনটি রগ কাটা যায় তাহলেও জবাই সহীহ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি দুটি কাটা যায়, তাহলে সহীহ হবে না। (আহসানুল ফাতওয়া খঃ ৭ পৃঃ ৪০৫,হিন্দিয়া খঃ ৫ পৃঃ২৮৭ )
৩. بسم الله الله اكبر অর্থাৎ জবাইকালীন আল্লাহর নাম উচ্চারণ আরবীতে হওয়া জরুরী নয়। তাই কেউ যদি আরবীতে বলতে অক্ষম হয়, তাহলে বাংলা অথবা অন্য কোন ভাষায় বললেও জবাইকৃত প্রাণী হালাল হয়ে যাবে। (আহসানুল ফাতওয়া খঃ ৭ পৃঃ ৪০৫, হিন্দিয়া খঃ ৫ পৃঃ২৮৫)
৪. জবাইকারী এবং যিনি তাঁকে ছুরি চালানোতে সহযোগিতা করবেন উভয়ের উপর بسم الله পড়া জরুরী। পশুকে শোয়ানো ইত্যাদিতে যারা সহযোগিতা করেন, তাদের উপর بسم الله পড়া আবশ্যক নয়। (ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া খঃ ৬ পৃঃ৪৪১, শামী খঃ ৯ পৃঃ ৪৩৮)
৫. জবাই করার সময় পশুর মাথা শরীর থেকে পৃথক করা মাকরুহ।তবে এমন হলেও গোশ্ত হালাল থাকবে। (ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া খঃ ৬ পৃঃ৪৪৩, শামী খঃ ৯ পৃঃ ৪২৭,আলমগীরী খঃ ৫ পৃঃ২৮৭)
৬. মেশিন অথবা ,যন্ত্রের সাহায্যে জবাইয়ের ক্ষেত্রে যদি শরীয়ত কর্তৃক আরোপিত শর্তাবলী (মুসলমান হওয়া, বিসমিল্লাহ পড়া, গিঁঠ এর নিচে জবাই করা ইত্যাদি )পাওয়া যায় তাহলে জবাই সহীহ হবে।অন্যথায় নয়।(ফাতওয়ায়ে হাক্কানিয়া খঃ ৬ পৃঃ৪৪৫)
৭. প্রাণীকে শোয়ানোর পূর্বে ছুরি ইত্যাদিকে ধার করে রাখা মুস্তাহাব। শোয়ানোর পর ধার দেয়া মাকরূহ্। (আলমগীরী খঃ ৫ পৃঃ২৮৭, শামী খঃ ৯ পৃঃ ৪২৬)
কুরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ
আসলে কুরবানীর বর্জ্য এই বাক্যটি আমি একমত নই। কুরবানীর পর যে সমস্ত জিনিসকে আমরা বর্জ্য খোলা চোখে বলছি তাদের যদি Animal Husbandry ডিগ্রী ধারীদের জ্ঞান থাকত তাহলে বুঝত প্রতিটি বর্জ্য আসলে একেকটি সম্পদ।
প্রানি থেকে যে রক্ত ও পেট থেকে অপরিপাককৃত খাদ্য যেগুলো কে আমরা বর্জ্য হিসেবে গণ্য করে ফেলে দেই এবং যেগুলো খোলা ময়দানে দুগন্ধ ছড়ায় তা প্রক্রিয়াজাত করে অনায়াসে প্রানি খাদ্য ঘাটতির এই দেশে ব্যবহার করতে পারতাম। তাছাড়াও এসব বর্জ্য বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যেত তাহলে………।
যাই হোক কোরবানির মাংস প্রক্রিয়ার কাজ শেষ হয়ে গেলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন ওই স্থান খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করা। সব বর্জ্য পদার্থ ঠিকভাবে অপসারণের পর ওই স্থানের রক্ত ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে সেখানে জীবাণুনাশক বা ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করতে হবে। পরিবেশ যেন সব সময় সুন্দর, পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত থাকে সেদিকে আমাদের সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে তাই কুরবানির বর্জ্য সরকার নির্ধারিত ডাস্টবিনে ফেলতে হবে এজন্য সবার সচেতেননা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
কিভাবে গরু/ ছাগল/ ভেড়ার নাড়ীভুঁড়ি পরিস্কার করবেন?
প্রথমে নাড়ীভুঁড়ি থেকে অপরিপাককৃত খাদ্য ও গোবর চিকন মাথাযুক্ত ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে বাহিরে ফেলুন। এগুলো পরিস্কার পানিতে ধুয়ে ফেলুন এরপর ফুটন্ত পানিতে নাড়ীভুঁড়ি গুলো কিছুক্ষণ চুবিয়ে রাখুন এবং বঁটির সাহায্যে পরিস্কার করুন। নাড়ীভুঁড়ি পরিস্কারে চুনও ব্যবহার করা যেতে পারে।
কিভাবে গরু/ ছাগল/ ভেড়ার পা প্রস্তত করবেন?
জলন্ত আগুনে ক্ষুর দিয়ে তা দাঁ/ চাপাতি দিয়ে আঘাত করলে ক্ষুর খুলে আসবে তারপর পা পছন্দ মোট সাইজ করুন।
মাংস সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ
মাংস সংরক্ষন অনেক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আছে তা এ মুহুর্তে লিখে আপনাদের মাথা নষ্ট করার বিন্দুমাত্র অভিপ্রায় আমার নেই।
একটা সময় ছিল যখন কুরবানির মাংস সিদ্ধ করে গুনা/ তার/ সুতাতে মালা করে শুকিয়ে রাখা হত মহরমে খাবার জন্য। এখন ফ্রিজ আসাতে মাংস শুকাতে কদাচিৎ দেখা যায় ফলে আমরা শুকনো মাংসের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
রেফ্রিজারেশন পদ্ধতিতে -৮ ডিগ্রী সেন্ট্রিগ্রেড তাপমাত্রার নিচে জীবাণুজনিত মাংসের পচন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা যায়।
মাংস খাওয়া না খাওয়া নিয়ে ভ্রান্ত ধারনা ও Human Physician দের কাছে
একটি মানবিক আবেদন আমার প্রান্তিক খামারীদের বাঁচান প্লিজঃ
যদিও রেড মিট খাওয়া ও এর সাথে হার্ট ডিজিসের সম্পর্ক নিয়ে মত পার্থক্য রয়েছে। মাংসের ব্যাপারে যাদের উচ্চ কোলেষ্টেরলের সমস্যা আছে তারা চর্বিযুক্ত গরুর মাংসের পরিবর্তে মহিষের মাংস বা মুরগীর বুকের মাংস খেতে পারেন অনায়াসে।
ছাগলের মাংসে অত্যধিক কম মাত্রায় সাচুরেটেড ফ্যাট এবং উচ্চ মাত্রায় মনো ও পলি-সাচুরেটেড ফ্যাট থাকে মানে কম কোলেস্টেরলযুক্ত বা সুসাস্থ্যের জন্য উপযোগী। “Goat meat has a lower cholesterol levels and lower saturated fats compared with other meat, thus serves as a good red meat alternative”.
আমেরিকায় উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট ডিজিজের রোগীদের খাবারের মেনুতে মহিষের মাংস রাখা হয়।
মাংস অর্ধসিদ্ধ বা অতিরিক্ত তাপে পুড়িয়ে খাওয়া ঠিক নয়।
অর্ধ সিদ্ধ করে খেলে parasite ও ব্যাকটেরিয়া ঘটিত জীবাণু সংক্রমন হতে পারে।
অতিরিক্ত তাপে আমিষ trans fat এ পরিনত হয় যা অপরিমিত ভাবে খেয়ে খেয়ে নেশাতে পরিনত করলে তা থেকে ক্যান্সার হতে পারে।
নবীর তরীকা মত কুরবানির মাংস ভক্ষণ করুন পেটের অসুবিধা হবে না, ইনশাল্লাহ।
খাওয়ার আগে পানি পান করুন, খাবার সময় গলা পর্যন্ত না খেয়ে ৩ ভাগ খেয়ে ১ ভাগ খালি রাখুন। খাবার কমপক্ষে ১ ঘন্টা পর যত খুশি পানি পান করুন এতে কোন বাধা নেই।
কালেক্টেড(লেখকের নাম জানাগেলে এড করে দিবো)