ভেটেরিনারি শিক্ষার গুরুত্ব***
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ । বর্তমানে কৃষির উপখাত হয়ে থাকলেও প্রাণিসম্পদ কৃষির অন্যতম চালিকাশক্তি ।
আরএ প্রাণীসম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান ।
প্রাণি চিকিৎসকরাই সাধারণত ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে পরিচিত ।প্রানি চিকিৎসা, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও সার্বিক কল্যাণ সাধন একই সাথে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া ভেটেরিনারিয়ানদের কর্তব্য ।
বহু বছর পূর্বে ফ্রান্সের লিয়ন শহরে ১১৭৬ সালে পৃথিবীর প্রথম ভেটেরিনারি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ।
মানুষের প্রয়োজনে আবিষ্কৃত ওষুধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, রোগ প্রতিষেধক টিকা এবং প্রতিকারের উপায় বের করতে ভেটেরিনারিয়ান’দের অবদান অনস্বীকার্য ।
একটি দেশের পুষ্টি, বিশেষ করে প্রোটিন, আমিষের চাহিদার ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করেন প্রাণী চিকিৎসকরাই ।
এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণা, বিভিন্ন প্রাণীর নতুন জাত উদ্ভাবন ও জাত উন্নয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি যেমন – দুগ্ধ উৎপাদন, ডিম উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন ।
বিশ্বে যতগুলো সাবজেক্ট আছে তন্মধ্যে ভেটেরিনারি অন্যতম চাহিদাপূর্ণ সাবজেক্ট ।
একটা সময় বাংলাদেশে ভেটেরিনারি শিক্ষা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারনা কম থাকলেও বর্তমানে এদেশে ভেটেরিনারিয়ান’দের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে, ফলে কর্মক্ষেত্রের পরিধিও বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
এনথ্রাক্স, বার্ডফ্লু প্রভৃতির মতো ভয়াবহ জুনোটি রোগের প্রাদুর্ভাবের ফলে ভেট’দের চাহিদাও এখন প্রচুর ।
সৃষ্টির উষালগ্ন_সেই আদিকাল হতে আদিম বনবাসী, গুহাবাসী মানুষ সভ্যতার আলো দেখেছিল পশুপাখির হাত ধরে ।
যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন যেমন – যাতায়াত যোগাযোগ, অর্থনৈতিক নির্ভরতা, খাদ্যে নির্ভরতা’য় পশুপাখি ব্যবহৃত হচ্ছে ।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ভেটেরিনারি অতীব পরিচিত একটা বিষয় কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এদেশে এ পেশার যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্ত্বেও লোকজন সচেতন নয় ।
১৮ কোটি মানুষের এদেশে ভেটেরিনারি শিক্ষাকে গুরুত্বসহকারে সম্পৃক্ত করতে না পারলে পুষ্টি, খাদ্য সমস্যার সমাধান, শিল্পায়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি কোনটিই সম্ভব নয় ।
এই গুরুত্বপূর্ণ ভেটেরিনারি শিক্ষা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় শিক্ষার্থী এমনকি অভিভাবকরাও ক্যারিয়ার গঠনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না ।
তাই ভেটেরিনারি শিক্ষার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলোঃ- – ভেটেরিনারি শিক্ষা একটি প্রফেশনাল শিক্ষা যা ভেটেরিনারি কাউন্সিল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যেমন- মেডিকেল কাউন্সিল, বার কাউন্সিল ইত্যাদি ।
– ভেটেরিনারি শিক্ষা এখন মেডিকেল , ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য সমমানের পেশার ন্যায় মর্যাদাপূর্ণ একটি পেশা । – এছাড়া ইন্টার্ণশীপ সময়ে আপনি প্রতিমাসে যে টাকা পাচ্ছেন তা শুধু ভেটেরিনারি ও মেডিকেলেই সম্ভব ।
পড়াশোনার শেষ বছরে দেশের বাইরে ইন্টার্ণশীপের সুযোগ রয়েছে ,যা ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । – বহির্বিশ্বে বৃত্তির দ্রুত সুযোগ ভেটেরিনারির মত অন্য কোনো সাবজেক্টে সম্ভব নয় ।
– দেশের বাইরে যেমন- অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, ফিনল্যান্ড, আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে সম্মানজনক চাকরির সুযোগ রয়েছে ।
– দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে একই কমন সাবজেক্ট হতে (যেমন-বাংলা, ইংরেজি, পদার্থ, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান ইত্যাদি) প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী এক সাথে বের হয়, ফলে চাকরির বাজারে স্বল্প বেতনের চাকরি খুঁজতে জুতার তলা ক্ষয় হয়ে যায় ,
অন্য দিকে ভেট গ্রাজুয়েটদের চাকরির বেতন শুরু হয় মূল স্কেল ২০,০০০-২৫,০০০ টাকা হতে, সাথে কোম্পানীর আরো লোভনীয় সুযোগ সুবিধা যোগ করলে প্রায় ৪০,০০০-৫০,০০০ টাকা হয়ে যায়।
– ডিবিএম পাস করার পর যেকোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাইক্রোবায়োলজি, বায়োক্যামিস্ট্রী, ফার্মেসীসহ যে কোনো সাবজেক্টে মাস্টার্স করার সুযোগ রয়েছে। – বিসিএস-এ রয়েছে স্পেশাল কোটা (প্রাণিসম্পদ) শুধুমাত্র ভেট গ্রাজুয়েটদের জন্য ।
এছাড়া বিসিএস এ ভেট গ্রাজুয়েটরা অন্যান্য ক্যাডারেও প্রতিযোগিতা করতে পারবে । –
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেমন- আইসিডিডিআরবি, বিএলআরআই, এলআরআই, এফআরআই ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার ও বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে।
– সেনাবাহিনীতে ভেটেরিনারি পেশার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট কোরহ যার নাম আরভিএফসি (রিমাউন্ট ভেটেরিনারি এন্ড ফার্ম কোর) এবং বছরে ২ বার এ সুযোগ পাওয়া যায় সরাসরি সেকেন্ড লেফটেনেন্ট হিসেবে।
– দেশের বিভিন্ন ফিড মিল, হ্যাচারীতে আকর্ষণীয় বেতনের চাকরীর সুযোগ রয়েছে ।
যেমন- কাজী ফার্মস লি., আফতাব গ্রুপ, প্যারাগন, নারিশ, নিউ হোপ গ্রুপ, আমান ফিড, আগাতা ফিড, ঢাকা হ্যাচারী, গোয়ালন্দ হ্যাচারী, এগস এন্ড হেন, রাফিদ হ্যাচারী ইত্যাদিসহ কয়েক’শ প্রতিষ্ঠান ।
– অনেকের মধ্যে একটা দ্বিধা থাকে যে, ভেটেরিনারি পড়ে অন্য কোনো চাকরি করা যাবে কিনা, তাদের জন্য বলা- চিন্তার কোনো কারণ নেই, কেউ যদি ডাক্তারী পেশা নিতে ইচ্ছুক না হন , তাহলে এই গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি দিয়ে বিভিন্ন অফিস, ব্যাংক এ মর্যাদাপূর্ণ চাকরি করা যাবে ।
– বিভিন্ন চিড়িয়াখানায়, সাফারী পার্কে, সুন্দরবনে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও চিকিৎসক হিসেবে চাকরীর সুযোগ রয়েছে ।
– বিভিন্ন মিডিয়া যেমন- এ্যানিমেল প্লানেট, ডিসকোভারী, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি এগুলোতে হ্যান্ডসাম বেতনের চাকরির সুযোগ রয়েছে
বাংলাদেশে এ শিক্ষা শুধুমাত্র সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু থাকায় এর প্রসার ও প্রচার কম হওয়ার কারণে কৃষির অন্যান্য খাত থেকে এখনও পিছিয়ে রয়েছে পানিসম্পদের উন্নয়ন ।
বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে দক্ষ ভেটেরিনারিয়ানদের অপর্যাপ্ততা এখনও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্যতম প্রতিবন্ধকতা ।
প্রতিবছর বিদেশ থেকে এদেশে অসংখ্য ভেটেরিনারিয়ান আসছে আমাদের দেশে । শুধুমাত্র কি এই, এখন পর্যন্ত আমরা বিপুল সম্ভাবনাময় রপ্তানিমূখী হতে পারছি না একমাত্র মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত ভেট না থাকার কারনে ।
ফলে দিনে দিনে এই বিষয়ের গুরুত্ব তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের আকৃষ্ট করছে ।
প্রাণি চিকিৎসার মতো একটি মহান পেশাকে ব্রত করে অনেক তরুন বাংলাদেশকে একটি মেধাভিত্তিক, উন্নত, সমৃদ্ধশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে স্বপ্ন দেখছে ।
তাই বেসরকারিভাবে এই শিক্ষা চলে আসা একটি সময় উপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত বলে বিবেচ্য ।
এর ফলে আগ্রহী অনেকে এ শিক্ষা গ্রহন করে উদ্দোক্তা ও উদ্দোক্ত তৈরী করা সহ রপ্তানি মূখী প্রানিসম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে |